সকালবেলা ক্লাসে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই দেখতে পেলেন চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে আছে, সাথে চুলকানিও হচ্ছে, আবার চোখ থেকে ক্রমাগত পানিও পড়ছে! চোখের এই সমস্যাটিকে ইংরেজিতে কনজাংটিভাইটিস বলা হয়। তবে এটিকে আমরা চোখ ওঠা নামেই চিনি।
চোখের সবচাইতে পরিচিত সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে চোখ ওঠা। ইদানীংকালে আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই সমস্যাটি দেখা দিয়েছে। আপনারা খুব সাধারণ কিছু উপায় অবলম্বন করার মাধ্যমে বাড়িতে বসেই চোখ ওঠা থেকে সেরে উঠতে পারবেন। আজকের লেখায় আমরা জানবো চোখ ওঠার কারণ, এটির লক্ষণ এবং চোখ উঠলে কী করবেন সে সম্পর্কে।
চোখ ওঠার সমস্যাটি কেন হয়?
আপনি আপনার চারপাশে এমন একজনকেও খুঁজে পাবেন না যার কখনো চোখ ওঠেনি। মূলত ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলেই চোখ ওঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের চোখে জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি চোখ থেকে পিচুটি আসে, তাদের ক্ষেত্রে এটিকে ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ বলা যায়। অপরদিকে যদি শুধুমাত্র চোখ লাল হয়ে জ্বালাপোড়া করে, তাহলে সেই চোখ ওঠার কারণ ভাইরাসের সংক্রমণ।
আমাদের দেশে ভাইরাসের সংক্রমণে চোখ ওঠার ঘটনাই বেশি দেখা যায়৷ তবে অনেকের ক্ষেত্রে অ্যালার্জির কারণেও এটি হতে পারে। বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে চোখ ওঠার প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়।
চোখ ওঠার লক্ষণগুলো কী কী?
যেহেতু এখন কমবেশি সবারই চোখ উঠছে, তাই চলুন এটির লক্ষণগুলো জেনে নেই –
১। চোখের সাদা অংশে লাল বর্ণের উপস্থিতি।
২। চোখ চুলকানো।
৩। চোখ থেকে অনবরত পানি পড়া।
৪। চোখে ব্যথা এবং ভেতরে কিছু আটকে আছে এমন অনুভূতি হওয়া।
৫। চোখে পিচুটি আসা।
৬। চোখ খুলতে অসুবিধা হওয়া।
৭। চোখে আলো পড়লে অস্বস্তি অনুভব করা।
৮। চোখ জ্বালাপোড়া।
এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো, সবার ক্ষেত্রেই যে এসব লক্ষণ একসাথে দেখা দেবে ব্যাপারটি এমন নয়। বরং একেকজনের সংক্রমণের ধরণের ওপর ভিত্তি করে লক্ষণগুলো ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত চোখ উঠলে এটির লক্ষণ শুরুতে যেকোনো একটি চোখে দেখা দেয়। পরবর্তীতে অন্য চোখটিও আক্রান্ত হয়।
চোখ উঠলে কী করবেন?
চোখ ওঠা ছোঁয়াচে ধরণের হওয়ায় একজনের চোখ উঠলে সেখান থেকে চারপাশের সবার চোখ উঠতে শুরু করে। অনেক সময় দেখা যায়, পরিবারের সবারই একসাথে চোখ উঠেছে! এমন হলে সবাই প্যানিক করা শুরু করেন এবং বুঝতে পারেননা যে কী করবেন।
সবার জন্য আশার কথা এই যে, চোখ ওঠা কোনো ভয়াবহ রোগ নয়। বরং এক সপ্তাহের ভেতরেই এ সমস্যাটি সেরে যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক চোখ উঠলে কী করা যেতে পারে সে সম্পর্কে।
- যেহেতু একজনের চোখ উঠলে তা বাকিদের মধ্যে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এ কারণে যদি আপনার চোখ উঠে থাকে, তাহলে সবসময় সানগ্লাস পরুন। এতে করে আপনার থেকে অন্যজনের ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
- যদি চোখে চুলকানি হয়, তাহলে ভুলেও হাত দিয়ে চুলকাতে যাবেন না। কারণ তখন দেখবেন চুলকানির সমস্যাটি আরো বেড়ে যাবে।
- যদি চোখ বেশি জ্বালাপোড়া ও ব্যথা করে, সে ক্ষেত্রে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চোখে যেকোনো এন্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে নিজে নিজে ফার্মেসি থেকে ড্রপ কিনে চোখে লাগাতে যাবেন না। আবার অন্যজনের ড্রপও নিজের চোখে লাগাবেন না। মনে রাখবেন, আমাদের চোখ অনেক সংবেদনশীল। এ কারণে মেডিসিন নিয়ে কোনো এক্সপেরিমেন্ট করা যাবেনা।
- যদি চোখে পিচুটির সমস্যা হয়, তাহলে সেটি মোছার জন্য নরম সুতি কাপড় ব্যবহার করুন। আর যদি টিস্যু পেপার ব্যবহার করেন, তাহলে প্রতিবার ব্যবহারের পর টিস্যুটি অবশ্যই ময়লার ডাস্টবিনে ফেলে দিন।
- যদি আপনার কোন খাবারে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে সে খাবারগুলো এ সময় পরিহার করাই ভালো।
- যদি আপনার চোখ উঠে থাকে, তাহলে নিজের ব্যবহারের সব জিনিসপত্র কিছুদিন আলাদা করে রাখুন। এতে করে অন্যরা নিরাপদ থাকবে।
- চোখ উঠলে চোখকে বিশ্রাম দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। তাই এ সময়টিতে নিজের বাড়িতে থাকুন।
- যদি চোখে বেশি জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে অতিসত্ত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
এটুকুই ছিল চোখ ওঠা নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। আশা করি চোখ উঠলে কী করবেন সেটি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন।