ঠোঁটের যত্নের যত খুঁটিনাটি

ঠোঁটের যত্নের যত খুঁটিনাটি

দেহের অন্যান্য ত্বকের তুলনায় ঠোঁটের ত্বক হয় অত্যধিক পাতলা ও হালকা। তাই খুব সহজেই শুষ্ক হয়, খসখসে হয় এবং ফেটে যায় আর্দ্রতায়। তাই, ঠোঁটের অতিরিক্ত যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে। আমাদের ঠোঁটে তেল গ্রন্থির পরিমাণ থাকে কম এবং সূর্যের জলশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক মেলানিন তৈরিরও ক্ষমতা নেই। মানে হলো ঠোঁটের কার্যত নিজস্ব কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। তাই ঠোঁটের সুরক্ষায় চাই অতিরিক্ত যত্ন সারাবছর জুড়েই। 

শুষ্ক ও ফাটা ঠোঁটের জন্য দ্রুত প্রতিকার হিসেবে কাজ করে লিপবাম। কিন্তু শুধুমাত্র লিপবাম কি ঠোঁটের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে পুরোপুরি? আরো কিছু প্রাথমিক ব্যাপার আছে যেগুলো জেনে রাখলে ঘরে বসেই আপনি নিতে পারবেন আপনার ঠোঁটের যত্ন। আর আজকের আয়োজনটাই ঠোঁটের যত্নের খুঁটিনাটি নিয়েই। চলুন তাহলে শুরু করা যাক। কিন্তু তার আগে ঠোঁটের সমস্যাগুলো জেনে নিতে হবে। 

ঠোঁটের সমস্যা ও তার কারণ: 

ঠোঁটের সুরক্ষা বা যত্ন নেয়ার আগে জানতে হবে ঠোঁটের সমস্যা ও তার কারণসমূহ। চলুন জেনে নেয়া যাক – 

খসখসে ভাব: ঠোঁটের খসখসে ভাবটা যে কোন মৌসুম, এমনকি সারা বছর ব্যাপীও হতে পারে। প্রতিরোধ এবং ট্রিটমেন্ট হিসেবে নিত্যদিন ভালো লিপবামের সহায়তা নিতে হবে। এমন এক ধরণের লিপবাম বাছাই করুন যেটা সূর্য থেকে সুরক্ষা দেয় এবং ভিটামিন এ ও সি অথবা ভিটামিন ই ও এএইচএএস এর মতো উপাদান রয়েছে। 

ফাটা ভাব: ঠোঁটের ফাটল বেশিরভাগ সময়ই রাতের বেলা ঘুমালে দেখা দেয়। কেননা তখন শরীর থাকে রিল্যাক্স এবং বাতাসেও থাকে শুষ্ক। তাই বিছানাতে যাওয়ার আগে ভালো লিপবাম ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি সম্ভব হলে ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখতে একটা হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। 

লিপস্টিক ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ: মুখের চারপাশের ত্বক বয়সের কারণে, অথবা ধূমপানের ফলে কোলাজন এবং ইলাস্টিক বা স্থিতিস্থাপক টিস্যু হারাতে শুরু করলে এমনটা ঘটে। এক্ষেত্রে লিপস্টিক লাইনে রাখার জন্য ওয়েক্সিং লিপ লাইনার ব্যবহার করাই উত্তম। ব্যাপারটিতে নজর না দিলে কোলাজনের ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। 

শীতল কালশিটে ভাব: ভাইরাল ইনফেকশনের কারণে এটা হয়ে থাকে। ফোসকা বা খোসপাঁচড়ার মতোই দেখায়। পুনরায় সংক্রমণ এড়াতে কটন বাড দিয়ে আক্রান্ত স্থানে লিপস্টিক বা লিপবাম দিতে হয় পুরু করে।  

ঠোঁটের যত্নে সহজ ও কার্যকর কিছু টিপস: 

 Laneige Lip Sleeping Mask Berry

Laneige Lip Sleeping Mask Berry

চিকিৎসার চাইতে প্রতিরোধ শ্রেয়! ইতিপূর্বেই আপনি জেনে গেছেন ঠোঁটের সমস্যা ও তার কারণগুলো। তাহলে কেন চিকিৎসার আশায় বসে থাকা? তার চাইতে প্রতিরোধ হোক সঙ্গে হোক যত্নও। তবে ফলাফল দৃশ্যমান হতে যেমন সময় লাগে তেমনি খানিকটা ব্যথাও যদি করে তা সয়ে নিতে হবে। ঠোঁটের যত্নে সহজ ও কার্যকর কিছু টিপস দেয়া হলো – 

ঠোঁট চাটা বা স্পর্শ করা বন্ধ করুন: ঠোঁট চাটার কারনে সাময়িকভাবে ভেজা মনে হলেও এটা ঠোঁটকে আরো বেশি শুষ্ক করে তোলে। এমনকি মুখের লালা শুকিয়ে গেলে সেটাতে থাকা এনজাইম ঠোঁটের ময়শ্চারকে শুষে নেয়। ফলে আরো বেশি শুষ্ক হয় ঠোঁট। মুখ হাঁ করে নিঃশ্বাস নেয়াও বন্ধ করতে হবে। আবার আঙ্গুলের স্পর্শে সেখানে থাকা ব্যাকটেরিয়ারও সংক্রমণ হতে পারে। কিংবা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চামড়া তুলে ঠোঁটের মাধুর্যতাও নষ্ট হতে পারে। 

সপ্তাহে একবার এক্সফোলিয়েট করুন: এক্সফোলিয়েটিং করার মাধ্যমে ঠোঁটের ত্বকের মরা ও শুষ্ক চামড়া সরিয়ে দিয়ে মসৃণ ঠোঁটের দেখা মিলে। লিপ স্ক্রাব, বা টুথব্রাশ, অথবা ধোয়া সুতি কাপড় ব্যবহার করে আলতোভাবে ঘষে ঠোঁটের ত্বকের উপরের স্তরটি তুলে ফেলতে পারেন। ১ টেবিল চামচ (১৫ মিলি) মধু, এক চা চামচ (৫ মিলি) জলপাই তেল, এবং এক টেবিল চামচ (১৫ মিলি) চিনি মিশিয়ে ঘরেই স্ক্রাব বানিয়ে ফেলতে পারেন। তবে অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েট কিন্তু ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। 

হাইড্রেট থাকতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন:  যদি আপনার ভেতরটা হাইড্রেট থাকে তাহলে অবশ্যই বাহিরেও হাইড্রেট থাকবে। অন্তত ৮ গ্লাস পানি নিত্যদিন পানের চেষ্টা করুন। যদি বেশি ঘেমে থাকেন তাহলে আরো বেশি। কফি বা অ্যালকোহল জাতীয় ডিহাইড্রেটেড লিকুইড থেকে দূরে থাকুন। 

লিপবাম ব্যবহার করুন: একটি লিপবাম ঠোঁটের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং সূর্যের অতিবেগুনি ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখে ঠোঁটকে। মলম জাতীয় লিপবাম বেছে নিন যেটার সান প্রোটেকটর ফ্যাক্টরের মাত্রা অন্তত ১৫। সারাদিনের সুরক্ষার জন্য প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর লিপবাম ব্যবহার করুন। মলম জাতীয় লিপবাম ব্যবহারে যদি দিনের বেলা সমস্যা হয় তাহলে রাতের বেলা ব্যবহার করুন। কর্পূর, ইউক্যালিপটাস বা মেন্থল যুক্ত লিপবাম পরিহার করুন। 

ময়েশ্চারাইজ এবং হাইড্রেট রাখে এমন লিপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন: মনে রাখবেন, সঠিক উপাদান আপনার ঠোঁটকে সুরক্ষা দিবে তেমনি শুষ্ক ও ঠোঁট ফাটা ভাবও প্রতিরোধ করবে। তাই, লিপস্টিক, লিপবাম, লিপগ্লস, যাইই ব্যবহার করুন না কেন উপাদানগুলো নজরে রাখুন – ক্যাস্টর সীড ওয়েল, সিরামাইডস, ডাইমেথিকান, হ্যাম্প সীড ওয়েল, মিনারেল ওয়েল, পেট্রোলেটুম, শিয়া বাটার, টাইটেনিয়াম অক্সাইড, জিঙ্ক অক্সাইড এবং হোয়াইট পেট্রোলিয়াম জেলি। তবে সবগুলো খোঁজার চাইতে “হাইপো অ্যালার্জেনিক” প্রোডাক্ট খুঁজলেই চলবে। 

অতিরঞ্জন বা অতি সুগন্ধি লিপ প্রোডাক্ট থেকে দূরে থাকুন: শক্তিশালী কেমিক্যালস আপনার ঠোঁটের ত্বকের জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। তাই, লিপ প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে ন্যাচারাল বা সুগন্ধি মুক্ত পণ্য কিনুন। কর্পূর, মেনথল, ইউক্যালিপটাস, সুগন্ধি, ল্যানোলিন, অক্সিনাক্সেট, অক্সিবেঞ্জন, ফিনাইল, প্রোপাইল গ্যালেট এবং সালসালিক এসিডের মতো কেমিক্যাল থেকে দূরে থাকুন। এমনকি ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক ফ্লেভার, যেমন – দারুচিনি, সাইট্রাস এবং পিপারমেন্ট ইত্যাদিও জ্বালাপোড়া করতে পারে। 

 

সোর্স: Care For Your Lips.
02. How to Take Care of Your Lips. 
03. 5 Tips for Taking Care of Your Lips.
0 I like it
0 I don't like it

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.