শিয়া বাটারের যত উপাকারিতা
শিয়া বাটার যে ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না; আর সেজন্যেই মেকআপ এবং বিউটিকেয়ার ও স্কিনকেয়ার ফর্মুলেশনে শিয়া বাটারের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। শিয়া বাটারের উপাকারিতা অনেক বেশি এবং এটি ত্বক হাইড্রেট এবং মসৃণ রাখার জন্য শিয়ার বাটারের সুনাম রয়েছে। কিন্তু আপনি জানেন কি এটি অ্যান্টি-এজিং এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবেও ব্যাপক কার্যকরী? এখন তাহলে মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, শিয়া বাটার আসলে কি? এটা আসে কোথা থেকে? আর এর উপকারিতা কি কি? আজকের আলোচনা তাই সাজানো হয়েছে শিয়া বাটারকে কেন্দ্র করেই।
শিয়া বাটার কি?
শিয়া বাটার একইসঙ্গে জটিল এবং অনন্য একটি প্রাকৃতিক উপাদান। বিজ্ঞানীরা এটা নিশ্চিত করেছে যে, শিয়া বাটার পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রোটিনের দারুণ উৎস হিসেবে কাজ করে। রাসয়নিকভাবে, শিয়া বাটার ফ্যাটি এসিড ট্রাইগ্লিসারাইড, স্টিয়ারিক, লিনোলিয়েক, পালমেটিক এবং ওলেক এসিডের সমন্বয়ে গঠিত। এতে স্টেরোলস এবং ফেনোলসের মতো অসম্পূর্ণ উপাদানগুলো থাকে যা সাবান তৈরিতে অ-প্রতিক্রিয়াশীল। আর এজন্যই শিয়া বাটার সাবানে ময়শ্চারাইজার এবং কন্ডিশনার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে।
এটি কীভাবে তৈরি হয়?
শিয়া বাটার আফ্রিকান শিয়া গাছের বাদামসদৃশ একটি ফল থেকে উৎপন্ন হয়। এই গাছ কারাটি বা ওরি গাছ নামেও পরিচিত তবে তা অঞ্চলভেদে। এই গাছে সবুজ এক ধরণের ফল হয় যেটার ভেতরে ছোট বাদাম থাকে, আর সেটাই মূলত শিয়া বাটার তৈরি করে থাকে। তবে এই বাদামের খোল অন্যান্য বাদামের মতো সহজেই ভাঙ্গা যায় না। গাছের ফল পাকা হলে সেগুলো সংগ্রহ করে ভেতরের কার্নেল বা শাঁস বের করা হয়। বীজ এবং তেলযুক্ত শাঁসগুলো গরম পানিতে সেদ্ধ করে শুকানো হয়। পরিপূর্ণভাবে শুকানো হয়ে গেলে পরেই কেবল বাদামগুলো ভাঙ্গার উপযুক্ত হয়।
ভাঙ্গা বাদামগুলো ভাজা হয় অতিরিক্ত উত্তাপে এবং একদম ময়লার মতো গুঁড়ো করে ফেলা হয়। তারপর পানি মিশিয়ে ঘন, মসৃণ এবং রঙ পরিবর্তন হবার আগ অবধি হাত দিয়ে মাখাতে হয় মিশ্রণটিকে। ধীরে ধীরে মিশ্রণটি তেল ছেড়ে দিতে শুরু করে এবং জলের উপরিতলে ভেসে উঠে। এই তেল আলাদা পাত্রে সংগ্রহ করে রেখে দেয়া হয়। এই তেলই পরবর্তীতে থাকতে থাকতে শিয়া বাটারে পরিণত হয়।
শিয়া বাটারের উপকারিতা
প্রায় ২ হাজার বছর ধরে আফ্রিকান খাবারের একটি উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে শিয়া মাখন। এছাড়াও, এটা ঐতিহ্যগতভাবেই মেডিসিন এবং কসমেটিকস হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সূর্যের তীব্র আলো থেকে ত্বককে যেমন বাঁচায় তেমনি চুলের কন্ডিশনার হিসেবে শিয়া বাটার দারুণ কার্যকরী। প্রাকৃতিক এমোলিয়েন্ট হিসেবে কসমেটিক বিশেষজ্ঞরা এটি বিগত ৩০ বছর যাবত ব্যবহার করছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমেই শিয়া বাটারের উপকারিতাগুলো প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং, শিয়া বাটারের উপাকারিতা আমাদের ত্বকের জন্য অপরিসীম।
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি
এই আশ্চর্যজনক উপাদানটিতে ভিটামিন ই এর মতো প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে; যা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে কাজ করে। ছিলে যাওয়া, কাটা অথবা পোড়া নিরাময়ের জন্য এটি পূর্ব পরিচিত। এছাড়াও, সানবার্ণ এবং র্যাশের হাত থেকেও মুক্তি দেয় এটি। পোকামাকড়ের কামড় থেকে চুলকানি এবং পেশি ও বাতব্যথা থেকে মুক্তি দেয় শিয়া বাটার।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
শিয়া বাটারে টোকোফেরল এবং পলিফেনল রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেই পরিচিত। সেজন্যই কসমেটিকস প্রোডাক্টের জন্য এটি আদর্শ এক উপাদানে পরিণত হয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করে, ত্বকের রেডিক্যাল উৎপাদনকে সীমাবদ্ধ রাখে। আর সময়ের সাথে সাথে মসৃণ, স্বাস্থ্যকর এবং কমবয়সী ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে অবদান রাখে এটি।
ময়শ্চারাইজার
প্রতিদিনের ময়শ্চারাইজার হিসেবে শিয়া বাটার ত্বকের শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। ঐতিহ্যগতভাবে এটি সানব্লক এবং আফ্রিকার রুক্ষ তাপমাত্রা থেকে ত্বককে বাঁচাতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ত্বকের প্রাকৃতিক তেল সুরক্ষার মাধ্যমে এটি ত্বককে পুষ্টিকর এবং হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
কোলাজেন বুস্ট করে
শিয়া বাটারে ভিটামিন এ থাকাতে এটি কোলাজেনের উৎপাদনকে আরো চাঙ্গা করে তোলে। ফলে শিয়া বাটার ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বককে তারুণ্যের মতো রাখতেও সহায়তা করে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি ত্বকের ভাঁজ পড়া ভাব দূর করতে এবং ত্বককে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারে।
কোষের পুনর্নবীকরণ
এটির উপকরণে ভিটামিন এ থাকায় কোষের পুনর্নবীকরণে ত্বককে সহায়তা করে। ত্বকের মৃত কোষগুলোকে এক্সফোলিয়েট করে নতুন ও স্বাস্থ্যকর কোষ গঠনে ভূমিকা রাখে শিয়া বাটার।
রোজেসা, ব্রণ এবং লালচে ভাব দূরীকরণ
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যের কারণে শিয়া বাটার ব্রণ ও রোজেসার মতো ত্বকের লালচে ভাব থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম। ত্বকের লালচে ভাব হ্রাস করতে এবং জ্বালা ভাব কমাতে এটি ত্বককে শান্ত করে তোলে।
এছাড়াও, শিশুদের নরম ও তুলতুলে শরীরের জন্য শিয়া বাটার বেশ ভালো একটি প্রাকৃতিক উপাদান। শীতের মৌসুমে ঠোঁট শুষ্ক হওয়া, ফেটে যাওয়া এবং চামড়া ওঠার প্রতিরোধ করে শিয়া বাটার। এছাড়া, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চুলকে সুরক্ষা দেয়া ছাড়াও এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে। শুষ্ক ও রুক্ষ চুল কোমল করতে এবং তা মসৃণ ও দ্রুত বড় করতেও শিয়া বাটার বেশ ভালো কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক উপাদান।
লিংক:
📞 ত্বকের সমস্যার জন্য প্রোডাক্ট সাজেশন পেতে কল করুনঃ 01790 270066 অথবা ইনবক্স করুন। 🌐 ১০০% অরিজিনাল কোরিয়ান প্রোডাক্টঃ https://chardike.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © chardike blog 2021