ব্রণের দাগ দূর করার যত পদ্ধতি
ত্বকের সবচাইতে বড় শত্রু ব্রণ। ব্রণ নির্মূল করা যায় বটে তবে এর অভিশাপ থেকে রেহাই পাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। মানে হচ্ছে ব্রণ তো চলে যায় কিন্তু রেখে যায় দাগ; যা ত্বকে কালচে আর জেদি রূপে চেপে বসে চেহারার সৌন্দর্যকে করে মলিন। তাই ব্রণের ব্রেকআউট হতাশাজনক; কেননা এটি চেহারা এবং শরীরের অন্যান্য অংশে দাগ ফেলে যায়। আর এসব দাগ মানুষের সামনে বিরক্তিকর আর বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
তবে খানিকটা যত্নবান হলেই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ব্রণের দাগ চিরস্থায়ীভাবে ত্বকে চেপে বসার আগেই চিকিৎসা নিতে হবে। ব্রণ দাগ দূর করতে মেডিকেল ট্রিটমেন্ট যেমন আছে, তেমনি আছে ঘরোয়া পদ্ধতিও। আজকের আলোচনায় উঠে আসবে দুই পদ্ধতিই।
চিকিৎসার পূর্বের রোগের ধরন আর ধারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়াটা অতীব জরুরী। তেমনি ব্রণজনিত ক্ষতচিহ্নের ধরনের উপর নির্ভর করে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ব্রণের দাগের তিনটি প্রকার রয়েছে:
অ্যাট্রফিক স্কারস
এই ধরনের ব্রণের কারণে ত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খাঁজকাটা ভাব তৈরি হয়। এটা হবার কারণ হচ্ছে ত্বক যখন হিলিং প্রসেসে থাকে তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইব্রোব্লাস্ট তৈরি করতে পারে না। ফাইব্রোব্লাস্ট হচ্ছে এমন এক ধরনের কোষ যা ক্ষত নিরাময়ে এবং কোলাজেন সংশ্লেষণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
হাইপারট্রফিক স্কারস
প্রথমটার ঠিক বিপরীত কারণে এই দাগ তৈরি হয় ত্বকে। ত্বক যখন ব্রণের দাগ হিলিং করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে তখন অতিরিক্ত ফাইব্রোব্লাস্ট তৈরি হবার ফলে হাইপারট্রফিক স্কার দেখা দেয়। এর ফলে ত্বকে রক্ত জমাট বাঁধার মতো ফোলা ভাব দেখা দেয়।
কেলয়েড স্কারস
এটা মূলত হাইপারট্রফিকের মতোই তবে কেলয়েড স্কারসে সাধারণ ব্রণের তুলনায় অনেক বড় আর ঘন হয়। পার্শ্ববর্তী ত্বকের চাইতে খুব বেশি গাঢ় এবং লাল বা বাদামীও হতে পারে। কেলয়েড স্কারসে চুলকানি বা ব্যথার মতো লক্ষণগুলিও দেখা দিতে পারে।
সমাধান
সমস্যা হলে সমাধান হবেই। তেমনি রোগ হলে তারও চিকিৎসা আছেই। ব্রণের দাগ থেকে মুক্তির জন্য দুই ধরনের চিকিৎসাই বিদ্যমান। মেডিক্যাল এবং ঘরোয়া – দুই পদ্ধতিতেই ব্রণের দাগ থেকে মুক্তির পাওয়া যেতে পারে।
মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট
কেমিক্যাল পিল
দেখতে ফেইস মাস্কের মতো দেখা গেলেও আসলে এটি ফেইস মাস্ক নয়। কেমিক্যাল পিল খুব শক্তিশালী এসিড যা ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ডিপার স্কারস নির্মূলের জন্য ত্বকের উপরের স্তরটিকে হ্রাস করতে সাহায্য করে। সেজন্যই আপনার ত্বকের সঙ্গে মানানসই এমন কেমিক্যাল পিলই ব্যবহার করা উচিত। কেননা, বাজারে অসংখ্য কেমিক্যাল পিল সলিউশন রয়েছে।
লেজার রিসারফেসিং/ট্রিটমেন্ট
কোনো ধরণের কেমিক্যাল বা স্ক্র্যাব ব্যবহার করা ছাড়াই ত্বককে পুনরুত্থান করা যায় লেজার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে ত্বকের উপরের স্তরটি সরে গিয়ে ত্বকের কমবয়সী কোষগুলো প্রকাশ পায়। ফলে ক্ষতচিহ্ন চেহারা থেকে হ্রাস পেতে থাকে।
ইনজেকশন
কোর্টিকাস্টেরয়েড ইনজেকশন যে কোনো ব্যক্তির হাইপারট্রফিক বা কেলরয়েড স্কারসের সমস্যা সমাধানে দারুণ কার্যকরী হতে পারে। এই ধরণের ট্রিটমেন্টে সাধারণত সিরিজ হিসেবে ইনজেকশন দিতে হয়। সপ্তাহে একবার কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ইনজেকশন নিতে হয়।
ডার্মাব্রেশন
মুখের দাগের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী এবং প্রচলিত চিকিৎসা হচ্ছে ডার্মাব্রেশন। এই পদ্ধতিতে ত্বকের উপরের স্তরে আরো গভীরভাবে এক্সফোলিয়েট করা হয় ব্রাশ বা চাকা দিয়ে।
ফিল্লারস
ব্রণের দাগ পূরণ করতে এবং ত্বককে আরো স্বাস্থ্যবান করে তুলতে ফিল্লারস বেশ কার্যকরী। ফিল্লারস কোলাজেন বা নিজস্ব ফ্যাট থেকে যেমন তৈরি করা যায়; আবার তেমনি কিনতেও পাওয়া যায়। ফিল্লারস ত্বক পৃষ্ঠের গভীরে প্রবেশ করে অবনমিত স্কারসগুলোকে মসৃণ করতে এবং সেটি থেকে দাগ মুছতে সাহায্য করে।
মাইক্রোনিডিলিং
এই পদ্ধতিটি একদমই নতুন বলা চলে। ত্বকের উপর ছোট ছোট সুঁইয়ের রোলার দিয়ে খোঁচানো হয়। এই সূচগুলো অসাড় ত্বককে বিদ্ধ করে যা থেকে ত্বক নিরাময়ের পাশাপাশি কোলাজেনও সৃষ্টিতে সাহায্য করে। মাইক্রোনিডিলিং পদ্ধতিতে ব্রণের দাগ দূর হয় বটে তবে এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
ঘরোয়া পথ্য
স্যালিসিলিক এসিড
স্যালিসিলিক এসিড ময়লা পরিষ্কার, ত্বকের কোষে থাকা অন্যান্য রাবিশ সরিয়ে দেয়। এসব রাবিশই পোরসে জমাট বেঁধে ব্রণ উঠাতে সহায়তা করে। এছাড়াও, স্যালিসিলিক এসিড ফোলা ও লালচে ভাব কমাতে সাহায্য করে। ফলে ক্ষতচিহ্ন হ্রাস হতে থাকে। উপরন্তু, যে কোনো স্কারসের জন্যই এটি উপকারী। তবে সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারীরা পুরো মুখে এই এসিড লাগানোর আগে অল্প একটু জায়গায় লাগিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। শুষ্কতা বা জ্বালা না হলে এটি কার্যকর হবে।
রেটিনয়েডস
ব্রণের দাগ মসৃণ করার মতো উপকারী আরেকটি চিকিৎসা হচ্ছে রেটিনয়েডস। কোষের পুনরুত্থান ত্বরান্বিত করা এবং ত্বকের টেক্সচার ভালো করা ছাড়াও রেটিনয়েড বিবর্ণতা এবং দাগ কমিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
আলফা হাইড্রক্সি এসিড
মৃত ত্বকের কোষ থেকে মুক্তি এবং আটকে থাকা পোরসগুলো প্রতিরোধ করতে আলফা হাইড্রক্সি এসিড দারুণ ভূমিকা পালন করে। ব্রণের চিকিৎসা এবং ব্রণের দাগ হ্রাস করতেও দারুণ কাজ করে এই এসিড। এটি মূলত এসিডের একটি হালকা রূপ যা ত্বকের বাইরের স্তরটিকে সরিয়ে এর ভেতরকার নতুন স্তরটিকে প্রকাশ করে।
ল্যাকটিক এসিড
ল্যাকটিক এসিড মৃত ত্বকের কোষগুলো সরিয়ে নিতে মৃদু খোসার মতো কাজ করে। ব্রণের দাগ ও ক্ষত সারিয়ে তুলতে এবং ত্বকের সামগ্রিক গঠনকে মসৃণ করতে সহায়তা করে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারেও ল্যাকটিক এসিডের উপস্থিতি রয়েছে।
একদমই ঘরোয়া পদ্ধতিতে মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে যেসব উপাদান ব্যবহার করে আসছে –
- নারিকেল তেল
- শিয়া বাটার
- অ্যালোভেরা জেল
- খাঁটি মধু
- বেকিং সোডা
- লেমন জুস