অলিভ অয়েলকে বলা হয় কিচেন ইনগ্রেডিয়েন্ট। শুধু হেলথ বেনিফিটই নয়, অলিভ অয়েল সুন্দর চুল ও ত্বক পেতেও খুব ভালো কাজ করে। অর্থাৎ এই অয়েলের রয়েছে মাল্টিপল বেনিফিটস। অলিভ অয়েলের বিভিন্ন ব্যবহার নিয়েই জানাবো আজ।
অলিভ অয়েল এর মাল্টিপল বেনিফিটস
ত্বকের যত্নে
১) সাইনস অফ এজিং রিডিউস করে
অলিভ অয়েল অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সাইনস অফ এজিং রিডিউস করে। এতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রিংকেল ও এজিং সাইনস হওয়ার জন্য দায়ী ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে ফাইট করে। এতে আরও আছে অলেয়িক অ্যাসিড, যা স্কিনে হাইড্রেশন ও ময়েশ্চার প্রোভাইড করে। এতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকে সেল মেমব্রেনকে সুরক্ষিত রাখে, কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায় এবং চেহারায় ফিরিয়ে আনে উজ্জ্বলতা।
২) ক্ষত সারায়
অলিভ অয়েলে আছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ, যার কারণে এটি ইনফেকশন প্রিভেন্ট করতে খুব ভালো কাজ করে। ক্ষত’র জায়গা হাইড্রেটেড রাখে বলে দ্রুত সেরে যায়। তাছাড়া প্রোটেক্টিভ ব্যারিয়ার ক্রিয়েট করে বলে ডার্ট ও ব্যাকটেরিয়া সহজে আক্রমণ করতে পারে না, তাই হিলিং প্রসেসও দ্রুত হয়।
৩) ত্বক পরিষ্কার রাখে
পোরস থেকে ডার্ট ক্লিন করে, স্কিন ময়েশ্চারাইজড রাখতে এবং সাইনস অফ এজিং রিডিউস করতে অলিভ অয়েল খুব ভালো কাজ করে। এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ রেডনেস ও ইনফ্ল্যামেশন কমিয়ে স্কিনে সুদিং ফিল দেয়।
৪) ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে
এই অয়েলে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই, যা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ও এয়ার পল্যুটেন্ট থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। এর লাইট টেক্সচারের কারণে এটিকে অয়েল বেইজড ময়েশ্চারাইজারও বলা যায়, যা নন স্টিকি বলে সব ধরনের ত্বকেই স্যুট করে এবং লং লাস্টিং ইফেক্ট দেয়।
৫) ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে
অলিভ অয়েল ত্বকের কোনো ধরনের ক্ষতি না করে সহজেই ডেড স্কিন সেলস রিমুভ করে বলে এটিকে ক্লিনজার হিসেবেও ব্যবহার করেন অনেকে। মেকআপ রিমুভ করতে এবং ত্বক নরম ও কোমল রাখতে এই অয়েলের জুড়ি নেই।
চুলের যত্নে
১) ড্যানড্রাফ দূর করে
স্ক্যাল্প যদি ড্রাই ও ইরিটেটেড থাকে, তাহলে ড্যানড্রাফের সমস্যা বাড়তে পারে। অলিভ অয়েলে থাকা হাইড্রেটিং ইনগ্রেডিয়েন্ট স্ক্যাল্পের হাইড্রেশন ফিরিয়ে আনে এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন রোধ করে। ড্যানড্রাফ কমানোর সাথে সাথে বিভিন্ন হেয়ার ইস্যুও সলভ করে এই অয়েল।
২) চুল ফাটা রোধ করে
অলিভ অয়েলকে ন্যাচারাল কন্ডিশনারও বলা হয়, যার কারণে এটি চুলকে হাইড্রেট করে। নিয়মিত ব্যবহারে চুল হয়ে ওঠে সফট ও স্মুথ। আর এ কারণে স্প্লিট এন্ডও রোধ হয় অর্থাৎ চুল ফাটা বন্ধ হয়।
৩) চুল মজবুত করে
অলিভ অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা স্ক্যাল্প বুস্ট করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে বলে ড্যামেজ প্রিভেন্ট হয়। এই অয়েলের বিভিন্ন বেনিফিটের কারণে ড্রাইনেস একদম কমে যায়। ফলে স্প্লিট এন্ড হয় না, ব্রেকেজ কমে, চুল মজবুত হয়। অনেক সময় ওভার স্টাইলিং, হিট ও কেমিক্যালের কারণে চুল ড্যামেজ হয়ে যায়। অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন এ ও ই এই ড্যামেজ রিপেয়ার করে চুলে ফিরিয়ে আনে হারানো উজ্জ্বলতা। এর ব্যবহারে চুলের প্রোটিন কেরাটিন সুরক্ষিত থাকে এবং ময়েশ্চার লক হয়।
শরীরের যত্নে
চুল ও ত্বক ছাড়াও শরীরের যত্নে নানাভাবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হয়। এক কথায় আল্টিমেট বডি কেয়ারে এই অয়েল বেনিফিট দেয়।
১) আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা হাত ও পায়ের নখ ভেঙে যাওয়া নিয়ে সমস্যায় ভোগেন। এ সমস্যা দূর করতে অলিভ অয়েল হালকা গরম করে হাত ও পায়ের নখে ২ মিনিট ম্যাসাজ করুন। নখ হেলদি থাকবে, ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। কিউটিকল অয়েল হিসেবে এই অয়েলের জুড়ি মেলা ভার।
২) এই অয়েল দিয়ে বডি এক্সফোলিয়েটও করা যাবে। ১/২ কাপ কফি গুঁড়ো, ১/২ কাপ চিনি, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে জেন্টলি রাব করুন বডিতে। এই প্যাকটি বডি এক্সফোলিয়েট করার পাশাপাশি স্কিনকে সফট ও স্মুথ করে তুলবে।
৩) চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল, পাফিনেস, রিংকেলস খুব কমন সমস্যা। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ২ ফোঁটা অলিভ অয়েল চোখের চারপাশে ম্যাসাজ করে নিন। সকালে উঠে দেখবেন স্কিন খুবই ফ্রেশ লাগছে। ফোলাভাব কমবে, সেই সাথে নিয়মিত ব্যবহারে এজিং সাইনসও কম ভিজিবল হবে।
৪) দীর্ঘ সময় বসে বসে কাজ করলে ঘাড়, পিঠ, কোমড় টানটান হয়ে যায়। এতে বেশ অস্বস্তি লাগে। এই অস্বস্তি বা ব্যথা কমাতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল হাতের তালুতে নিয়ে ম্যাসাজ করুন। বেশ রিলিফ পাবেন।
৫) অনেকেরই হাত ও পায়ের জয়েন্টে ব্যথা হয়। নানাকিছু করেও এই ব্যথা থেকে সহজে রিলিফ পাওয়া যায় না। সময়মতো যদি এই ব্যথা না সারানো যায়, তাহলে বয়স বাড়লে আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ে। অলিভ অয়েলে আছে Oleuropein নামক এক ধরনের উপাদান, যা এই ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই অয়েল ম্যাসাজ করলে ব্লাড সার্কুলেশন তো বাড়েই, কমায় আর্থ্রাইটিস হওয়ার চান্স।
৬) স্ট্রেচ মার্কের কারণে কমবেশি সব মেয়েদেরই মন খারাপ হয়। অনেকের ওজন কমে গেলেও স্ট্রেচ মার্ক দেখা যায়। এই সমস্যার সমাধানেও অলিভ অয়েল ভালো কাজ করে।
ঠান্ডার সমস্যা কমাতে
ঠান্ডা লাগলে আমাদের সবারই খুব অস্বস্তি হয়। নাক বন্ধ হয়ে থাকা, কাশি হওয়া, হাঁচি দেয়া, মাথাব্যথা, সাইনাস সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত, ঠান্ডার কারণে নিঃশ্বাস না নিতে পেরে মুখ খুলে ঘুমানো এমন অনেক সমস্যার সমাধান দেয় অলিভ অয়েল।
১) কাশি যদি একবারেই না সারে, তাহলে এক চা চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে গলায় ও বুকে মালিশ করুন। এটি কাশির সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকর।
২) এক চা চামচ এডিবল অলিভ অয়েলের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি বডিতে পাওয়ারফুল ডিটক্সিফায়ারের কাজ করে। ঠান্ডার কারণে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে গেলে, সচল করতে সাহায্য করে এই অয়েল।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
ডায়েট করার সময় যে খাদ্যতালিকা দেয়া হয়, সেখানে অলিভ অয়েল অবশ্যই থাকে। এই অয়েল দিয়ে তৈরি যে কোনো খাবার বা সালাদ খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। রেগুলার এক্সারসাইজ করার পাশাপাশি তাই নিউট্রশনিস্টরা এই অয়েল দিয়ে তৈরি খাবার খেতে বলেন। কারণ এতে ওজন কমে। তাছাড়া এই তেল ব্যবহারে আরও কিছু সুবিধা আছে-
১) হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে
২) ব্লাড সার্কুলেশন ইমপ্রুভ হয়
৩) কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়
৪) হজমে সহায়ক
৫) অ্যালঝেইমার্সের ঝুঁকি কমায়
৬) ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে
৭) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
অলিভ অয়েল এমন একটি ম্যাজিক ইনগ্রেডিয়েন্ট যে, এক অয়েলেই চুল, ত্বক, শরীরের নানা সমস্যার উপশম, স্বাস্থ্যসুরক্ষা সব করা সম্ভব। সঠিক তথ্য না জানার কারণে আমাদের অনেকেরই মনে হয় অলিভ অয়েল শুধু খাবারে অ্যাড করলে ওজন কমে। অথচ এর বাকি বেনিফিটগুলোর কথা আড়ালেই থেকে যায়। আজকের আর্টিকেলে জানিয়ে দিলাম কীভাবে এই অয়েলটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জন্য হলিগ্রেইল একটি প্রোডাক্ট। তাই সুস্থ থাকতে হলে ডেইলি লাইফে অলিভ অয়েল অ্যাড করুন। চারদিকে’র দুটি আউটলেট রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়াতে আল জয়নাল ট্রেড সেন্টারে। ফিজিক্যালি কিনতে চাইলে এই দুটি আউটলেট ঘুরে আসতে পারেন। আর ঘরে বসে প্রোডাক্ট হাতে পেতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন চারিদিকে’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপে।
ছবি – চারদিকে