প্রেগন্যান্সির সময়ে স্কিনকেয়ার এ যা করা যাবে না

প্রেগন্যান্সির সময়ে স্কিনকেয়ার

প্রেগন্যান্সি কিংবা মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অধ্যায়। মাতৃত্ব মানেই পরিবর্তন। এই  পরিবর্তন শুধু শরীরের গঠনেই নয়; পরিবর্তন হতে পারে ত্বকেরও। প্রেগনেন্সির সময় হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য আমাদের ত্বকে অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এসময় অনেক নারীদের ত্বকে ব্রণ, মেছতা, কালো দাগ, শুষ্কতা, চুলকানি, র‍্যাশ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। অনেক নারীই এসময় সোন্দর্য্য নিয়ে বেশি ভোগান্তির স্বীকার হন। কসময় ত্বকের উপর এই বিরূপ প্রভাব এবং এর সমাধান নিয়েই আমাদের আজকের এই ব্লগ। 

স্বাভাবিক ত্বকের সমস্যা আর প্রেগন্যান্সির সময়কালীন ত্বকের সমস্যা – দুটোর কারণগুলোও ভিন্ন হয়। তাই সমাধানের উপায়টাও ভিন্ন। আমরা রূপচর্চায় এমন অনেক কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকি যা আমাদের ত্বক ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করে আমাদের রক্তের সাথে মিশে যেতে পারে। সাধারন কারো জন্য এটি তেমন ক্ষতিকর  না হলেও, প্রেগন্যান্ট নারীর জন্য এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে গর্ভের সন্তানের নানা রকমের সমস্যা হতে পারে। 

প্রেগন্যান্সির সময় একজন নারীর কি কি এড়িয়ে চলা উচিত

স্যালিসাইলিক এসিড – ব্রণের সমস্যায় দারুন কার্যকরি এই স্যালিসাইলিক এসিডে ট্রপিকাল উইলো বার্ক রয়েছে যা প্রেগন্যান্সির জন্য ক্ষতিকর।

রেটিনয়েড বা রেটিনল সমৃদ্ধ ক্রিম – গবেষণায় দেখা গেছে, রেটিন এ/একুটেন, রেটিনয়েড, ভিটামন এ – এগুলোতে এমন কিছু উপাদান পাওয়া যায় যা গর্ভের সন্তানের বার্থ ডিফেক্টরের কারণ হতে পারে। 

কেমিক্যাল সানস্ক্রিন – সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি থেকে সুরক্ষার জন্য কেমিক্যাল সানস্ক্রিন ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। এটি ত্বকের লেয়ার ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করে। পরিবর্তে জিংক অক্সাইড এবং টাইটেনিয়াম অক্সাইড সমৃদ্ধ ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন ব্যববার করা নিরাপদ।

হাইড্রো অক্সিসমূহ – এক্সফ্লোয়েটর হিসেবে অনেকেই এএইচএ, এএইচবি কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকে। এটা প্রেগন্যান্সির জন্য নিরাপদ না। এক্ষেত্রে ন্যাচারাল এক্সফ্লোয়েটর যেমন গ্রিণ টি, গোলাপ জল ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত। 

ত্বক ফর্সাকারী উপাদান – স্টেরয়েড, আরবুটিন, কজিগ এসিড, লিকোরিক এসিড ত্বকে ব্যবহার করা উচিত না। এগুলো ত্বকে এলার্জি তৈরি করতে পারে। তাছাড়া স্টেরয়েড ত্বকের লেয়ার ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে যা রক্তে স্টেরয়েড হরমোন বাড়াতে সক্ষম।

স্নেইল – বেনজয়িল পার অক্সাইড এবং স্নেইল এক্সট্রাক্ট ব্যবহার করা উচিত না।

এসেনশিয়াল ওয়েল – কিছু এসেনশিয়াল ওয়েল থাকে যেগুলিতে উইলো বার্ক এবং নিম রয়েছে। এসব ওয়েল ব্যবহার করা নিরাপদ না। 

ফেসিয়াল – সাধারন ত্বকের জন্য ফেসিয়াল তেমন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু প্রেগন্যান্সির সময় অতিরিক্ত ফেসিয়াল না করাই ভাল। অতিরিক্ত ম্যাসাজ ত্বকের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় যার প্রভাব শরীরের উপর পড়তে পারে। 

ট্যাটু আঁকা – ত্বকে ট্যাটু আকানোর পর কখনো কখনো মারাত্বক ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এতে হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ বাড়তে পারে। প্রেগন্যান্সির সময় এটি এড়িয়ে চলা উত্তম।

তাছাড়া লেজার থেরাপি, বোটক্স, ফিলার ইত্যাদি প্রেগন্যান্সির সময় অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে প্রেগন্যান্সির সময় ত্বকের যত্ন কিভাবে নিতে হবে? এজন্য বেস্ট সলিউশন হচ্ছে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বকের যত্ন করা। তবে কিছু সেফ কেমিক্যালও ব্যবহার করা যাবে। 

প্রেগন্যান্সির সময় ত্বকের সমস্যা এবং সমাধান –

শুষ্ক ত্বক – প্রেগন্যান্সির সময় অনেকের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। এতে ত্বকে চুলকানি হতে পারে। এজন্য হায়ারুলোনিক এসিড সমৃদ্ধ জেল ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা নিরাপদ। হায়ারুলোনিক এসিডের অণু অনেক বড় আকাড়ের হওয়ায় এটি ত্বক ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। এটি ত্বকের উপরে থেকেই ত্বককে হাইড্রেট এবং ময়শ্চারাইজ রাখে। 

ব্রণ – প্রেগন্যান্সির সময় সব থেকে কমন সমস্যাটি হচ্ছে ব্রণ। এসময় হরমোনাল যে পরিবর্তন ঘটে তা আমাদের তেল গ্রন্থির উপর প্রভাব ফেলে। এতে আমাদের ত্বকে তেল বা সিবাম সিক্রেশন অনেক বেড়ে যায়। এই তেল আমাদের ত্বকের ছিদ্রে আটকে ব্রন, পিম্পল, ব্লাকহেডস, হোয়াইডহেডস এর মত সমস্যা তৈরি করে। ব্রণের সমস্যায় এসিড কার্যকরি হলেও এসব এসিডের পরিবর্তে টি ট্রি ওয়েল, গ্রিন ট্রী, ভিটামিন সি ইত্যাদি ব্যবহার  করতে হবে। এতে ব্রণের সংক্রমণ কমবে। নিরাপদ উপাদান এবং অধিকাংশই প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ ক্লিঞ্জার দিয়ে নিয়মিত ফেইস ক্লিন করতে হবে।

পিগমেন্টেশন – প্রেগন্যান্সির সময় ত্বকে মেলানিন উৎপাদন বেড়ে যায়। এতে ত্বকে মেছতা, ছোপ ছোপ দাগ, ত্বক বিবর্ণ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। এর সমাধানে সূর্যের অতি ক্ষতিকর রশ্মি থেকে দূরে থাকতে হবে, ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। পিগমেন্টেশন দূর করতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ বিউটি প্রডাক্ট, অ্যাপল সিডার ভিনেগার  ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে এলোভেরা, মধু, টমেটো, আলু ব্যবহার করতে হবে। 

স্ট্রেচ মার্ক – প্রেগন্যান্সির সময় এবং পরে পেটে, স্তনের চারপাশে, এবং শরীরের অন্যান্য জায়গায় এক ধরনের অগভীর ফাটা দাগ দেখা যায়। এটাকে মেডিক্যালের ভাষায় ফাইবার ফ্র‍্যাকশন বা স্ট্রায়া বলা হয়। এর কারণ হচ্ছে পেটের আয়তন বাড়ার সাথে চামড়ায় টান লাগে। এই টানে চামড়ায় বাইরের দিকটা ফেটে যায়। এই ফাটা দাগ প্রেগন্যান্সির পরেও বেশ কিছুদিন থেকে যায়। এই স্ট্রেচ মার্ক প্রতিরোধে প্রেগন্যান্সির ২-৩ মাস পর থেকেই নিয়মিত পেটে অলিভ ওয়েল, ন্যচারাল সুদিং জেল মাসাজ করা উচিত। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

চুলকানি – গর্ভাবস্থায় এলার্জির প্রবণতা বাড়ায় অনেকের চুলকানি বা র‍্যাশ হয়। এক্ষেত্রে এলার্জি জনিত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শে টপিকাল ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

চুল পড়া – এসময়ে হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। সহজেই চুল পড়ে। এক্ষেত্রে হেয়ার ফল শ্যম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। ভিটামিন, হেয়ার প্রোটিন, নারিকেল তেল নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া কমানো সম্ভব।

স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় গর্ভাবস্থায় আমাদের ত্বক অনেক বেশি সেনসেটিভ থাকে। তাই ইচ্ছেমত যা খুশি আমাদের ত্বকে ব্যবহার করা উচিত না। এসময় ত্বকে ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাসের আক্রমণ অনেক বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে, এবং পরিষ্কার কাপড় পরিধান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মায়ের সুস্থতা মানেই বাচ্চার সুস্থতা। তাই গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেয়াটা ভীষণ জরুরি।

সোর্স: 01. THE BEST KOREAN SKIN CARE PRODUCTS TO MAKE YOUR PREGNANCY GLOW!
02. গর্ভাবস্থায় নিরাপদ ত্বকের যত্ন নিতে মাথায় রাখুন ১০টি টিপস। 
0 I like it
0 I don't like it

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.