বর্তমান সময়ে রূপচর্চার জন্য শীট মাস্ক দিনকে দিন দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শীট মাস্ক ব্যবহারের ট্রেন্ডটি মূলত দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পুরুষ এবং নারী উভয়ই তাদের নিত্যদিনের স্কিনকেয়ার ট্রিটমেন্টের রুটিনে শীট মাস্ক ব্যবহার করে থাকে। তাই, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যেই বিউটি ট্রিটমেন্টের অপরিহার্য অংশে পরিণত হচ্ছে। এমনকি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের জগতেও এটি বর্তমানে রাজত্ব করছে।
শীট মাস্কের কাজগুলো হচ্ছে ত্বক থেকে অতিরিক্ত ওয়েল বা তৈল শুষে নেওয়া, ত্বকের ভারসাম্য রক্ষা করা, ত্বককে শান্ত রাখা, এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা। সর্বোপরি শীট মাস্ক ইনস্ট্যান্ট নারিশমেন্ট এর সাহায্যে ত্বকে চটজলদি গ্লো আনে। গতানুগতিক ধারার সিরাম টাইপ স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টগুলো নিত্যদিনের ব্যবহারের চাইতেও খুব বেশি ফলাফল দেয় শীট মাস্ক।
শীট মাস্ক কি?
শীট মাস্ক হচ্ছে মানুষের মুখের আদলে তৈরি করা এক ধরনের ফেব্রিক/পেপার; যা সিরামের পুষ্টি-প্যাকে ভেজানো থাকে। সহজ ভাষায়, শীট মাস্ক হচ্ছে প্যাকেটজাত একটি ফেস মাস্ক। তবে সাধারণ ফেস মাস্ক আর শীট মাস্কের মধ্যে ব্যাপক তফাৎ রয়েছে। সাধারণ ফেস মাস্কের মতো এত ঝামেলা নেই শীট মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে। সাধারণত একবার ব্যবহারের জন্য, আলাদা প্যাকেট করা, দ্রুত কার্যকর, সহজলভ্য এবং সহজেই ব্যবহারযোগ্য বলে শীট মাস্ক ব্যাপক জনপ্রিয়।
শীট মাস্কগুলো সাধারণত পেপার, ফাইবার বা জেল টাইপ উপকরণগুলোর সমন্বয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে বাছাই করা হয় রমন কিছুই যেটা যতটাই ঘন ঠিক ততটাই নমনীয়। এক্ষেত্রে ফেক্সিবল পেপার, সেলুলোজ, ফেব্রিক বা কটন উল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার, অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সিনথেটিকে ফাইবার; যা অত্যন্ত শোষণযোগ্য এবং কোনো অসুবিধা ছাড়াই যেটা অনেক বেশি জল ধরে রাখতে সক্ষম। তবে ইদানীংকালে শীট মাস্ক তৈরিতে হাইড্রো জেলও ব্যবহার করা হচ্ছে।
ব্যবহারবিধি
শীট মাস্ক হচ্ছে ত্বকের ব্যবহারে সবচাইতে সহজ বিউটি প্রোডাক্ট। শুরুতেই প্যাকেট খুলে বেশ আলতোভাবে মাস্কটি বের করে আনতে হবে। কেননা, পেপার/ফাইবারে তৈরি এসব মাস্ক খুবই হালকা এবং নমনীয়। তাই জোর প্রয়োগে ছিঁড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। বের করে আনার পর মূল অংশটি বাদের খোসাটি ফেলে দিতে হবে। আর মূল অংশটি পরিষ্কার মুখের উপর চোখ-নাকের গ্যাপগুলো বুঝে শীটটি লাগাতে হবে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট মাস্কটি ওভাবেই মুখে রেখে দিতে হবে। মজার বিষয় হচ্ছে, শীট মাস্ক তুলে ফেলার পর গতানুগতিক ফেস মাস্কের মতো মুখ ধোঁয়ার ঝামেলা নেই। শীট মাস্ক সার্বজনীন মানুষের চেহারার আদলে নির্মিত হয় বলে এটি খুব সহজেই মুখে সেট হয়ে যায়। শীটটি পরার সময় এবং উঠানোর সময় চেষ্টা করবেন কপালের দিক থেকে নীচের দিকে ধীরে ধীরে তুলতে। এতে খুব সহজেই মাস্কটি মুখ থেকে উঠে আসবে।
কার্যকারিতা
প্রতিটা শীট মাস্কই ঘন সিরামে সিক্ত থাকে; যাতে ত্বকের জন্য উপকারী হায়ালুরোনিক এসিড এবং ভিটামিনের মতো উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলি সাধারণত দ্রবীভূত হবার জন্য ওয়াটার ফেইজ পর্যায়ে সংরক্ষিত থাকে। ফলে শীটটি দ্রুত বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াকে স্থিমিত রাখে এবং ত্বকের গভীর পুষ্টিগত উপাদানগুলো পৌঁছানোর সময়সীমাকে বর্ধিত করে।
প্রয়োজনীয়তা
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে দ্রুত প্রভাব বিস্তার করতে শীট মাস্কের বিকল্প নেই। সিরামটি বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজে পূর্ণ থাকে ফলে পেস্ট-টাইপ ফেস মাস্কের মতো ত্বক শুকিয়ে যাবার ভয় থাকে না। শীট মাস্কগুলোতে সাধারণত অ্যালোভেরা, ভিটামিন সি, শিশিরবিন্দু, শামুকের নির্যাস এবং সমুদ্র শৈবালের মতো উপকারী এবং প্রাকৃতিক উপাদানে পূর্ণ থাকে। এছাড়া, ব্যাকটেরিয়া/ছত্রাক দূষণের প্রতিরোধের জন্য প্যারাবেন এবং ফিনোক্সসিয়েথিনাল থাকে; যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং কার্যকরী।
শীট মাস্কের অন্যতম উপকারীতা হচ্ছে জলয়োজন বা হাইড্রেশন। সিরামে সিক্ত শীট মাস্কটি আপনার ত্বকের গভীরে থাকা ডিহাইড্রেশন বা জলবিয়োজন এবং শুষ্কতা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে। হাইড্রেশনের কারণে ত্বক আরো সুন্দর ও মসৃণ হয়ে উঠে। কেননা, এই মাস্ক ত্বককে ঠাণ্ডা রাখে, প্রদাহ হ্রাস করে, সূর্যের সংস্পর্শ, ব্রণ এবং ত্বকের লালচে ভাবের বিরুদ্ধে কাজ করে। ত্বকে দীপ্তি আনে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক টোনটাকে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের বিবর্ণতা এবং ত্বকে থাকা যে কোন দাগের প্রভাব কমিয়ে এনে গ্লো করে ত্বককে।
শীট মাস্কগুলো সিরামটাকে আপনার ত্বকে একটা দীর্ঘ সময় ধরে রাখে। ফলে সিরামের সব পুষ্টিগুণ নিমিষেই সিক্ত হয় আপনার ত্বকে। কিছু শীট মাস্ক তো ত্বকের গ্লো এবং ত্বককে মজবুত করতে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
শীট মাস্ক হচ্ছে আল্টিমেট রিল্যাক্সেশন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। ২০ থেকে ৩০ মিনিটের ব্যবহার ত্বকের জন্য দারুণ রিলাক্স ভাব নিয়ে আসে। ফলে, স্পাতে যাওয়ার তুলনায় শীট মাস্কগুলো অত্যন্ত সহজলভ্য এবং দ্রুত কার্যকরী।
শীট মাস্কের মূল উদ্দেশ্য হলো ত্বকে সঠিক পুষ্টির যোগান দেয়া; এক্সফোলিয়েট বা ত্বকের আঁশকে ধীরে ধীরে তুলে ফেলা এবং ত্বককে পরিষ্কার করা নয়। এক্ষেত্রে শীট মাস্কগুলো পেস্ট-টাইপ ফেস মাস্কের তুলনায় এক্সফোলিয়েট এবং ত্বককে পরিষ্কার করার জন্য কার্যকর নয়।
তাছাড়া, নিম্ন মানের শীট মাস্কগুলোতে থাকা সিরাম ত্বকের গভীর পৌঁছানোর পূর্বেই বাষ্পীভূত হয়ে যায়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় ধরে ত্বকে শীট মাস্ক না রাখা হয়। কেননা, এতে উলটো প্রতিক্রিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে।