কোনো দিন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পড়েনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। চিরাচরিত ধারণা আছে শুধু বয়স্ক লোকের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ধারনা টা সম্পূর্ণ ভুল। নবজাত শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এই সমস্যায় কম বেশি ভুগে থাকে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হওয়ার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় অনিয়মিত খাওয়া, অনেক বেশি পরিমাণে খাওয়া, অতিরিক্ত তেল-মশলা যুক্ত খাবার গ্রহণ, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি। এই রোগের লক্ষণ হিসেবে বদহজম, টক ঢেকুর, বুকে জ্বালা পোড়া, পেট ফাঁপাকে ধরা হয়। দেখা যায় অনেকেই গ্যাস্ট্রিক হলেই এন্টাসিড খেয়ে নেয়। কিন্তু গ্যাস হলেই কি গ্যাসের ওষুধ খেয়ে নেওয়া উচিৎ? কখনোই না। কারণ অতিরিক্ত গ্যাসের ওষুধ সেবন করার ফলে অনেক সময় আর ওষুধ সেবন করেও গ্যাস্ট্রিক থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। তাই এই সমস্যা প্রতিরোধ করা দরকার। প্রতিরোধ করার প্রথম ধাপ হলো আপনার নিজেকে বের করতে হবে কি কি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমত সেগুলো এড়িয়ে চলুন। কিন্তু তাও গ্যাস্ট্রিক হয়েই গেলে হাতের নাগালের উপাদান দিয়ে তা প্রতিরোধ করুন। চলুন জেনে নেওয়া যাক অতি সাধারণ কিছু ঘরোয়া উপাদান যা আপনার গ্যাস্ট্রিক দূর করতে সহায়ক।
পানিঃ পানি গ্যাসের সমস্যা অনেক টা-ই দূর করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান করুন। এভাবে নিয়মিত পানি পান করতে থাকুন। আপনার গ্যাসের সমস্যা আগে থাকলেও তা দূর হয়ে যাবে। গ্যাস্ট্রিক হলে পানি পান করলে অস্বস্তি ভাব কিছুটা কমে এবং গ্যাস বের হয়ে আসতে চায়। আমাদের শরীরে পানির বিকল্প নেই। এটি গ্যাসের সমস্যা দূর করা ছাড়াও হজমে সহায়তা করে এবং খালি পেটে পানি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। আর আপনার যদি হজমে কোনো প্রবলেম না থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য না হয় তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও থাকবে না। তাই গাফিলতি না করে সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
আদাঃ আদাতে রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে সহায়ক। গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে আদা কুচি করে লবন দিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিন। এটি দারুণ কার্যকরী। যারা এভাবে খেতে অস্বস্তি ফিল করেন তারা আরও একভাবে খেতে পারেন। গরম পানির ভেতর আদা কুচি ছেড়ে দিন। বলক উঠলে তা নামিয়ে নিন। কুসুম গরম অবস্থায় পান করুন।
পুদিনা পাতাঃ গ্যাসের সমস্যায় পুদিনা পাতাও খুব কার্যকরী। তবে অনেকেই এই বিষয়টি জানেন না। গ্যাস উঠলে ২ থেকে ৩ টি পুদিনা পাতা খেয়ে নিন। কিংবা এক কাপ গরম পানিতে পুদিনা পাতা সিদ্ধ করে নিন। পানি সেঁকে খেয়ে নিন। এটি গ্যাসের সমস্যাসহ পেটের জ্বালা পোড়া ভাব দূর করবে।
মেথিঃ প্রথমে মেথি গুড়ো করে নিন। তারপর এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মেথি গুড়ো মিশিয়ে খেয়ে নিন। অথবা আপনি চাইলে এক গ্লাস পানিতে মেথি দানা সারারাত ভিজিয়ে রাখতে পারেন। পরদিন ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ঔ পানি পান করুন। এভাবে নিয়মিত পান করতে থাকুন। পেটের জ্বালা পোড়া ভাব, গ্যাসের সমস্যা দূর হবে।
দারুচিনিঃ অনেকেই দারুচিনি খেতে পছন্দ করে আবার অনেকেই পছন্দ করে না। যাদের দারুচিনি পছন্দ তারা এর গুড়ো এক কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। আর যারা এটি পছন্দ করেন না তারা আস্ত দারুচিনি এক কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে পান করুন। এতে গ্যাসের সমস্যা অনেক টা-ই দূর হয়।
পেঁপেঃ পেঁপে তে রয়েছে প্যাপেইন এনজাইম। এটি আমাদের হজম ক্রিয়া কে সহজ করে। পেট ঠান্ডা রাখে ও স্কিন সুন্দর করে। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন কয়েক টুকরো পেঁপে যা আপনার গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
উপরিউক্ত ঘরোয়া উপাদানগুলো দিয়ে আপনি সহজেই আপনার গ্যাস্ট্রিক কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। অযথা দোকানে দৌড়াদৌড়ি না করে ঘরোয়া উপাদান দিয়ে গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ করুন। লাইফস্টাইল সুন্দর করুন, সুস্থ থাকুন এবং আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।