অসুখ-বিসুখ আমাদের কারোরই কাম্য নয়। কিন্তু চাইলেও আমরা সব সময় সুস্থ থাকতে পারিনা। এমন কয়েকটি রোগ রয়েছে যেগুলোর প্রকোপ প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে ডেঙ্গু অন্যতম। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই রোগ অনেক বেশি হতে দেখা যায়। এটি এমন একটি রোগ যেটির সঠিক সময়ে চিকিৎসা না দেয়া হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। আজকের লেখায় আমরা জানবো ডেঙ্গু হলে কোন কোন পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে আপনারা দ্রুত সুস্থতা লাভ করতে পারবেন সে সম্পর্কে।
এই রোগ হলে জ্বর কেন হয়?
এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এই রোগের প্রধান বাহক হল স্ত্রী এডিস মশা। ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছে এমন ব্যক্তিকে কামড়ানোর মাধ্যমে স্ত্রী এডিস মশা এ ভাইরাসের বাহক হয়ে ওঠে। তারপর যখন এটি কোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ায়, তখন সে মানুষটিও এই রোগে আক্রান্ত হয়।
এই রোগের প্রধান লক্ষণ কী কী?
কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে প্রথম যে লক্ষণটি দেখা যায় সেটি হল জ্বর। এটিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আপনার জ্বর আসে, তাহলে তাপমাত্রা ৯৯ থেকে ১০৬ ফারেনহাইটের ভেতর থাকবে। অনেকে মনে করেন ডেঙ্গু হলে বোধহয় মানুষের টানা জ্বর থাকে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে ছেড়ে ছেড়েও জ্বর আসতে পারে। তবে যখনই জ্বর আসুক না কেন, তাপমাত্রা মোটামুটি বেশিই থাকে। এর আরো কয়েকটি লক্ষণ হলো মাথা ও চোখের পেছনদিকে ব্যথা, মাংসপেশিতে ও জয়েন্টে তীব্র ব্যথা, শরীরে র্যাশ ওঠা ইত্যাদি।
সাধারণত মানুষ তিন ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এগুলো হলো এ,বি ও সি টাইপ ডেঙ্গু। যারা এ টাইপ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, তাদের জ্বর ও মাথা ব্যাথা ছাড়া অন্যান্য কোনো লক্ষণ সেভাবে থাকে না। তাই তাদের হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা করতে পরামর্শ দেয়া হয়।
অপরদিকে বি ও সি ক্যাটাগরির ডেঙ্গুতে যারা আক্রান্ত হন, তাদের অতিসত্বর হাসপাতালে ভর্তি হতে বলা হয়। সবচাইতে ভয়াবহ ধরনের ডেঙ্গু হল সি টাইপের ডেঙ্গু, কেননা এর মাধ্যমে আমাদের কিডনি, লিভার কিংবা ব্রেন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই রোগ হলে কী করবেন?
আপনার ডেঙ্গু হয়েছে কিনা সেটি বোঝার উপায় হলো রক্ত পরীক্ষা করা। তাই যদি জ্বরের পাশাপাশি অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার ডেঙ্গু হয়েছে কিনা। যদি ডেঙ্গু হয়ে থাকে, তাহলে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন –
- ডেঙ্গু হলে বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম করুন। এ সময় দেহে যেন পানির ঘাটতি দেখা না দেয়, সেটি নিশ্চিত করতে প্রচুর তরল জাতীয় পানীয় পান করুন। যেমনঃ পানি, জুস, স্যালাইন ইত্যাদি।
- পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। বিশেষ করে খাবারে যেন পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ভিটামিনের যোগান থাকে, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিন। বাইরের জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড কিংবা অতিরিক্ত স্পাইসি খাবার এ সময় এড়িয়ে চলুন।
- ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অনেকে নিজেরাই জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল কিংবা ব্যথা কমানোর জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খেতে চান। এটি মোটেও করা যাবে না। যদি কোন ওষুধ খেতেই হয়, তাহলে সেটি ডাক্তারের পরামর্শে খান।
- ডেঙ্গু হলে বাড়িতে থাকা অবস্থায় জ্বর কমার ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর যদি কোনো গুরুতর লক্ষণ যেমন রক্ত বমি, পেটে ব্যথা, দাঁত কিংবা নাক দিয়ে রক্ত আসা ইত্যাদি দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করুন।
- যেহেতু এটি হলে রক্ত থাকা প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যেতে শুরু করে, এ কারণে প্লাটিলেট সংখ্যা ঠিকঠাক আছে কিনা সে ব্যাপারে সজাগ থাকুন। কেননা প্লাটিলেটের সংখ্যা যত কমে, শরীর থেকে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা তত বেড়ে যায়। একারণে নিয়মিত প্লাটিলেট চেক করুন।
এটুকুই ছিল ডেঙ্গু নিয়ে আজকের আলোচনা। এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য ঘুমানোর সময় সব সময় মশারি ব্যবহার করুন। এছাড়াও আপনার বাড়ির আশেপাশে যদি কোথাও পানি জমে থাকে, সে স্থানটি পরিষ্কার করে ফেলুন। কেননা এই পানি জমে থাকা স্থানেই ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা ডিম পাড়ে। এভাবে যদি একটু সর্তকতা অবলম্বন করতে পারেন, তাহলেই ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে পারবেন।