আপনারা বিশ্ববিখ্যাত পপ সিংগার ও গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড উইনার লেডি গাগার নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। কিন্তু লেডি গাগা যে দীর্ঘদিন ডিপ্রেশন ও বিভিন্ন মেন্টাল হেলথ রিলেটেড প্রবলেমে ভুগেছেন সে সম্পর্কে কয়জন জানেন? বেশিরভাগই জানেননা!
এখন লেডি গাগার কথা কেন বললাম সেটা বলি। আসলে আমাদের মধ্যে একটা কমন মিসকনসেপশন রয়েছে। আমরা মনে করি একজন মানুষ বিখ্যাত হয়ে গেলে কিংবা অনেক টাকা পয়সা থাকলে তার জীবনে বোধহয় আর কোনো সমস্যাই থাকে না। কিন্তু আসল সত্যিটা হচ্ছে মেন্টাল হেলথ রিলেটেড সমস্যাগুলো যেকোনো সময় যেকোনো মানুষকে আক্রমণ করতে পারে। এ কারণে আমাদের প্রয়োজন এ সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানা এবং সচেতন হওয়া। আজকের লেখায় আমরা জানবো নিজের মেন্টাল হেলথ ভালো রাখার জন্য কী কী করা যেতে পারে সে সম্পর্কে।
বাংলাদেশে মেন্টাল হেলথ রিলেটেড বিভিন্ন সমস্যা যেমনঃ ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি, সুইসাইডাল টেনডেন্সি, বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার কিংবা পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার ইত্যাদিকে কেউ খুব বেশি গুরুত্ব দেননা। বেশিরভাগ পরিবারে এসব সমস্যায় কোনো এক্সপার্টের হেল্প নেওয়া হয় না। তাদের মতে, “যে সমস্যা চোখে দেখা যায়না, তার আবার ট্রিটমেন্ট কেন লাগবে?”
আবার ধরা যাক যদি পরিবারের কেউ ডিপ্রেশনে ভোগেন, তাহলে তাকে বলা হয় যে তিনি নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে সবার অ্যাটেনশন পেতে এমন করছেন। অথচ তার মনের ভেতর কি চলছে সে খবর কেউ রাখেননা। তাই যাদের এসব সমস্যা হয়, তারা মোটামুটি নীরবেই ভুগতে থাকেন এবং এ সমস্যাগুলো পরবর্তীতে আরো প্রকট আকার ধারণ করে।
এ কারণে নিজের মেন্টাল হেলথ ভালো রাখার পরামর্শ হিসেবে আমি শুরুতেই বলবো যদি কেউ কোনো কারণে ডিপ্রেশন বা অন্য যেকোনো সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে শুরুতেই বিশ্বাসযোগ্য কারো সাথে এটা শেয়ার করুন, যিনি আপনাকে জাজ না করে আপনার কথা শুনবেন। সবসময় মনে রাখবেন, মন খুলে কথা বললে তা মনের অস্থিরতা কমাতে দারুণ সাহায্য করে।
এছাড়াও মেন্টাল হেলথ ভালো রাখতে অবসর সময়ে নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন। আপনার যেগুলো করতে ভালো লাগে সেগুলো করতে পারলে দেখবেন মন এমনিতেই ভালো থাকে। চাইলে নিজের পছন্দের কোনো বই পড়তে পারেন, গান শুনতে পারেন, কোনো মুভি দেখতে পারেন। আবার চাইলে নিজের যেকোনো শখের কাজ যেমন বাগান করা, বেকিং, ক্রাফটিং এগুলোও করতে পারেন। এগুলো করলে দেখবেন মন খারাপ থাকলেও ভালো হয়ে যাবে। পাশাপাশি সময়ও কাটবে!
একইসাথে বলা যায়, মেন্টাল হেলথ ভালো রাখার জন্য নিজের সাথে টাইম স্পেন্ড করা খুবই ইম্পরট্যান্ট। কোনো এক ছুটির দিনে একা একা শপিংয়ে যান। কিছু কেনার প্রয়োজন নেই, এমনিতেই ঘুরে দেখুন৷ চাইলে মিউজিয়াম বা লাইব্রেরিতেও যেতে পারেন। অথবা কোনো কফি শপে বসে নিজের পছন্দের কফি ও ব্রাউনি অর্ডার করে খান। এভাবে নিজের সাথে টাইম স্পেন্ড করলে দেখতে পাবেন আগের চেয়ে অনেক বেটার ও কনফিডেন্ট ফিল করবেন।
এবার আরেকটা সাজেশন দেই। নিজেকে মাঝেমধ্যে টুকটাক উপহার দিন। খুব দামি কিছুই যে দিতে হবে এমন নয়, এক্ষেত্রে নিজের পছন্দটা প্রাধান্য দিন। যেমনঃ যদি মেকআপ করতে ভালবাসেন তাহলে নিজেকে মেকআপ আইটেম গিফট করুন, আবার যদি জুয়েলারি পছন্দ হয় তাহলে সেটাই গিফট করতে পারেন।
মেন্টাল হেলথ ভালো রাখার আরেকটা দারুন উপায় হচ্ছে নিজের পরিবার পরিজনদের সাথে সময় কাটানো৷ প্রতিমাসে একবার পরিবারের সবার পছন্দের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করুন। আবার চাইলে প্রতি সপ্তাহের ছুটির দিনে সবাই মিলে রান্নাবান্না করুন, তারপর বিকালে এক কাপ চা হাতে পারিবারিক আড্ডায় বসে পড়ুন, বুঝতে পারবেন জীবন কতটা সুন্দর৷ সম্ভব হলে কয়েক মাস পর পর পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসুন।
এগুলোই ছিল নিজের মেন্টাল হেলথ ভালো রাখার জন্য কয়েকটা কার্যকরী টিপস। এই টিপসগুলোর পাশাপাশি এটাও মনে রাখুন, মানুষের জীবনে সমস্যা আসবেই। তাই আপনার জীবনেও ব্রেকআপ, ডিভোর্স, অ্যাকাডেমিক ফেইলিউর, ফ্যামিলি প্রবলেম, চাকুরিতে হতাশা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্রাইসিস আসতে পারে। তবে যেটাই হোকনা কেন, মনের দিক থেকে কখনোই ভেঙে পড়া যাবেনা।
তাই লেখার শেষে আমি এটাই বলবো মেন্টাল হেলথ রিলেটেড কোন সমস্যা হেলাফেলা করা যাবে না। যদি মনে হয় আপনি মানসিকভাবে ঠিক নেই, আপনার লাইফ স্বাভাবিক নেই কিংবা আপনি নিজেকে আর খারাপ লাগা থেকে সামলাতে পারছেন না, তাহলে অবশ্যই দেরি না করে কোনো এক্সপার্ট সাইকোলজিস্ট কিংবা সাইক্রিয়াটিস্টের পরামর্শ নিন। কোনো পরিস্থিতিতেই মনের খেয়াল রাখতে অবহেলা করবেননা। কারণ দিনশেষে মন ভালো তো সব ভালো!