একটি সময় ছিলো যখন নারীদের পেশা বলতে শুধুমাত্র ডাক্তার বা শিক্ষকতার মতো নির্দিষ্ট কিছু পেশাকে বিবেচনা করা হতো। তবে এখন সময় বদলে গেছে। দিন বদলের হাওয়ায় পরিবর্তন এসেছে নারীদের পেশার ধরণেও। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, আর্মি, বিসিএস ক্যাডার তো রয়েছেই, এগুলোর পাশাপাশি এখন ভিন্ন ধরনের পেশা যেমনঃ ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, কন্টেন্ট রাইটিং, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, গ্রাফিক ও অ্যানিমেশন ডিজাইন, ফ্রিল্যান্সিং, আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটি, মেহেদি আর্ট ইত্যাদিতে নারীরা সগৌরবে বিচরণ করছেন এবং প্রতিনিয়ত রেখে চলেছেন তাদের সফলতার ছাপ।
নারীরা কী ধরণের ভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হচ্ছেন?
যদি নারীদের ভিন্ন পেশা নিয়ে কথা বলতে যাই, তাহলে সবার আগে বলতে হয় ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে। ফ্রিল্যান্সিং হলো এমন একটি পেশা যেখানে একজন মানুষ নিজের বাড়িতে বসে নিজের পছন্দমত সময়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। যতদিন যাচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং হয়ে উঠছে নারীদের অন্যতম পছন্দের একটি পেশা। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন কারণে বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারেননা, তাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত পেশা। নারীরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কনটেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন।
নারী যখন ফ্রিল্যান্সার
শুধু ফ্রিল্যান্সিংই নয়, এর পাশাপাশি এখন নারীরা বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানেও গ্রাফিক ডিজাইনার অথবা কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে চাকুরি করছেন। নারীদের এই রাইটিং কিংবা গ্রাফিক ডিজাইন সেক্টরে কাজ করার মূল কারণ হলো এসব সেক্টরের প্রতি তাদের প্যাশন এবং অবশ্যই স্কিল!
নারী যখন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
নারীদের আরেকটি জনপ্রিয় ভিন্ন পেশা হচ্ছে কন্টেন্ট ক্রিয়েশন৷ কনটেন্ট ক্রিয়েশন হলো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ইউটিউবে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কন্টেন্ট তৈরি। যেমনঃ লাইফস্টাইল ভ্লগ, কুকিং, মেকআপ অ্যান্ড স্কিনকেয়ার ইত্যাদির ওপর ছবি, আর্টিকেল বা ভিডিও শেয়ার করা৷ যারা ক্যামেরার সামনে যেকোনো বিষয়ে নির্দ্বিধায় ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে যেতে পারেন তারাই মূলত এ পেশা বেছে নিচ্ছেন। এর পাশাপাশি যাদের রান্নাবান্না, মেকআপ কিংবা স্কিন কেয়ার নিয়ে যথেষ্ট নলেজ রয়েছে এবং এগুলো অন্যদের জানানোর আগ্রহ রয়েছে তারাও এ পেশাটি বেছে নিচ্ছেন আর খুব ভালো কাজ করছেন।
নারী যখন ফটোগ্রাফার বা ভিডিওগ্রাফার
এগুলোর পাশাপাশি এখন ফটোগ্রাফি কিংবা ভিডিওগ্রাফি সেকশনেও নারীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আগেকার দিনে মানুষের ধারণাই ছিলো ফটোগ্রাফার কিংবা ভিডিওগ্রাফার হতে হবে কেবলমাত্র পুরুষদেরকেই। কিন্তু আমাদের নারীরা সে ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে এখন বিভিন্ন ইভেন্ট, ম্যাগাজিন, এডভার্টাইজমেন্ট এমনকি ওয়েডিং ফাংশনেও ফটোগ্রাফার ও ভিডিওগ্রাফার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফির প্রতি ভালোবাসাই নারীদের আগ্রহী করে তুলছে এই পেশায়।
নারী যখন মেহেদী আর্টিস্ট
যারা ভালো মেহেদী পরাতে পারেন তারা এখন পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন মেহেদী আর্ট। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের কল্যাণে তারা এখন এসব প্লাটফর্মে নিজেদের পেজ ক্রিয়েট করে নিজের মেহেদী আর্ট সবার সাথে শেয়ার করতে পারছেন এবং এর মাধ্যমে অনেক ক্লায়েন্টও পাচ্ছেন যারা নিজেদের বিয়ে কিংবা অন্যান্য ফাংশনে মেহেদী পরতে আগ্রহী। যেসব নারী ক্রিয়েটিভ এবং যাদের মেহেদী ডিজাইন করতে ভালো লাগে তারাই এ পেশায় বেশি আসছেন।
নারীরা কেন ভিন্ন পেশায় আসতে আগ্রহী হচ্ছেন?
আজ থেকে ১০ -১৫ বছর আগেও কোনো ভিন্ন পেশায় কাজ করতে চাইলে নারীদেরকে মুখোমুখি হতে হতো পরিবার ও সমাজ থেকে আসা বিভিন্ন প্রতিকূলতার। সে প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে বেশিরভাগ নারীই নিজেদের পছন্দের পেশা বেছে নিতে পারতেন না৷ তবে এখন আর লোকে কি বলবে কিংবা সমাজের ভয়ে নারীরা নিজেদের ইচ্ছাপূরণে ভয় পান না।
ক্যারিয়ার হিসেবে কোনো পেশা বেছে নেয়ার আগে নারীরা নিজেদের পছন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য প্রাধান্য দেন সবার আগে। এর পাশাপাশি আজকের যুগের নারীদের নতুন কিছু এক্সপ্লোর করার প্রবণতা অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, তারা সবসময় নিজেদের প্যাশন ফলো করতে চান। এ কারণে আমরা এখন বহু নারীকে দেখতে পাই যারা অন্যান্যদের মতো চাকরি কিংবা ব্যবসা না করে নিজের প্যাশনকে বেছে নিয়ে সে অনুযায়ী ক্যারিয়ার ডেভেলপ করছেন৷
ভিন্ন পেশায় নারীদের সংখ্যা বাড়ার আরেকটি কারণ হলো অন্যদের দেখে ইন্সপায়ার্ড হওয়া। হয়তো একজন নারী ফেসবুকে আরেকজন নারীর গল্প পড়লেন যিনি একজন সাকসেসফুল রাইটার। গল্প পড়ার পর তার হয়তো মনে হলো, “আচ্ছা আমিও তো ভালো লিখতে পারি, একটু চেষ্টা করে দেখি ই না!” এভাবেই অন্যের থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়েও নারীরা ভিন্ন পেশায় আসছেন।
তবে কারণ যাই হোক, একজন নারী নিজের শখ বা প্যাশনকেই প্রফেশনে কনভার্ট করছেন, এটি ভাবতেও দারুণ লাগে, তাইনা? তাই আমরা চাই এ ধরণের পেশাগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়ুক এবং গোটা বিশ্ব নারীদের এ উন্নয়নের সাক্ষী হোক।