মুসলিম নারীদের জন্য হিজাব কেবলই পর্দার একটা অংশ নয়; বরং এটি নারীর সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুন। আর তাই, হিজাব এখন ফ্যাশন ট্রেন্ড হিসেবেও বেশ প্রচলিত। বাইরের ধুলোবালি থেকে চুলকে সুরক্ষিত রাখতে হিজাব যেমন উপকারী; তেমনি এটি চুলের জন্য কিছু ক্ষেত্রে অপকারীও বটে। হিজাব ব্যবহারে চুলের কি কি ক্ষতি হতে পারে এবং কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়েই আমাদের আজকের এই ব্লগ হিজাবি হেয়ার কেয়ার সাজানো হয়েছে।
হিজাবের জন্য চুলের কি কি ক্ষতি হতে পারে?
- চুল পড়া।
- খুশকি হওয়া।
- উকুন হতে পারে।
- চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া।
- মাথার ত্বক আঠালো হয়ে যাওয়া।
- চুলকানি হতে পারে।
কিভাবে হিজাব চুলের ক্ষতি করতে পারে –
১. আমাদের মাথার ত্বকে ন্যাচারাল ওয়েল থাকে। দীর্ঘসময় ধরে হিজাব বেধে রাখলে আবদ্ধ অবস্থায় আমাদের ত্বক ঘেমে যায়। এই ঘামের সাথে মাথার ত্বকের স্বাভাবিক তেল মিশে তা ফাংগাস এর জন্য ভাল খাদ্য তৈরি করে। এজন্য খুব সহজেই চুলে ফাংগাস বা খুশকি হয়।
২. হিজাব দিয়ে মাথা আবদ্ধ থাকার জন্য মাথার ত্বকে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। বিশেষ করে গরমকালে এই সমস্যা আরো বেড়ে যায়। এতে ত্বক চটচটে বা আঠালো হয়ে যায়। চুলও আঠালো লাগে।
৩. হিজাবের জন্য মাথায় যে ঘাম হয় তা চুলের গোড়ায় আটকে চুলের গোড়া নরম করে দেয়। ফলে সহজেই চুল পড়ে।
৪. হিজাবের জন্য তেল আর ঘাম আটকে মাথার ত্বক অপরিষ্কার হয়ে থাকে। নিয়মিত পরিষ্কার না করলে অপরিষ্কার ত্বকে চুলকানি এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
৫. অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে বাইরে যাওয়ার সময় ভেজা চুল বেধেই হিজাব পড়া হয়। এতে চুলে উকুনের সংক্রমণ বাড়ে এবং চুলের গোড়া নরম হয়।
সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় –
হিজাবি হেয়ার কেয়ার জন্য চুলের এতসব সমস্যা দেখে ঘাবড়ে যাবেন না একদমই। সমস্যা যেখানে আছে, সমাধানও সেখানে রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হিজাবে আবদ্ধ চুলের পরিচর্যা এবং যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত।
১. চুল পরিষ্কার রাখা: হিজাবের জন্য ঘামে আমাদের চুলে যে ময়লা আটকে যায় তা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। সপ্তাহে ২-৩ বার ভাল কোন শ্যম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে হবে। এজন্য মাইল্ড শাম্পু ব্যবহার করতে হবে। অবশ্য, বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করাটা বেটার। এতে কেমিক্যাল কম থাকে। সামান্য খুশকির সমস্যা দেখা দিলে খুশকিনাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। তবে কেমিক্যালের পাশাপাশি কিছু ন্যাচারলার সমাধানও রয়েছে।
হোম রেমেডি – চুলের খুশকি দূর করার জন্য পরিমাণ মত মেহেদীর সাথে, পেপের রস এবং কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে ব্যবহার করতে হবে। এক ঘন্টার মত চুলে রেখে তারপর এন্টি ডেন্ড্রফ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
২. চুলের রুক্ষতা দূর করা: চুলের রুক্ষতা দূর করে চুল সিল্কি এবং সফট করার জন্য ভিটামিন, হেয়ার প্রোটিন কিংবা কেমিকাল হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। শ্যম্পুর পর ভাল মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল সিল্কি হয়।
ন্যাচারাল রেমেডি – প্রাকৃতিকভাবে সমাধানের জন্য একটি পাকা কলা, একটি ডিম, তিন চামচ টক দই একসাথে মিশিয়ে ২ ঘন্টার মত চুলে রেখে দিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভাল মানের কম কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। হারবাল শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. চুল পড়া রোধ – চুল পড়া খুব কমন একটি সমস্যা। হিজাবের ঘাম আটকে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। বাতাস আটকে থাকে ফলে চুল পড়ে খুব সহজেই। এক্ষেত্রে বাজারে বেশ ভাল মানের হেয়ার অয়েলের প্রচলন রয়েছে। চুল পড়া রোধে সবথেকে বেশি কার্যকর হচ্ছে নারিকেল তেল। তাছাড়া রয়েছে বাদাম তেল, টি ট্রি ওয়েল, জাফরান হেয়ার অয়েল। সপ্তাহে দুই-তিনদিন রাতে হেয়ার অয়েল দিয়ে চুল মাসাজ করে পরদিন হেয়ার ফল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
ন্যাচারাল রেমেডি – চুল পড়া বন্ধ করার জন্য এবং নতুন চুল গজানোর জন্য সপ্তাহে দুইবার পেয়াজের রস, আমলকির রস, মেথি গুড়া, এলোভেরা মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে এক-দেড় ঘন্টা চুলে রেখে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। সপ্তাহে একবার আলাদা করে মেহেদী দেয়া যেতে পারে। এতে চুল পড়া কমে এবং চুল সুন্দর হয়।
৪. হিজাবের কাপড় নির্বাচন – গরমে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় পাতলা নরম সুতি কাপড়ের হিজাব ব্যবহার করতে হবে। হিজাবি হেয়ার কেয়ার সিল্ক কিংবা ভারী কাজের কাপড়ের হিজাব এড়িয়ে চলতে হবে।
৫. ভেজা চুলে কোন অবস্থাতেই হিজাব বাধা যাবে না। চুল ভাল করে শুকিয়ে তারপর হিজাব পড়তে হবে। এক্ষেত্রে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. হিজাবের নিচে দীর্ঘসময় চুল বেধে রাখার জন্য চুলের আগা মুচড়ে ফেটে যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিত চুলের আগায় এসেনশিয়াল হেয়ার ওয়েল ম্যাসাজ করতে হবে। ২-৩ মাস পর পর চুলের আগা হাল্কা ছেটে নিতে হবে।
৭. শক্ত ব্যান্ড বা রাবার দিয়ে শক্ত করে চুল বেধে হিজাব পড়া যাবে না। এতে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়, চুল ভেঙ্গে যায়। এক্ষেত্রে নরম ব্যান্ড দিয়ে কিছুটা আলগা করে চুল বেধে হিজাব পড়তে হবে।
৮. হট বাথ বা গরম পানিতে গোসল এড়িয়ে যেতে হবে। চুলের গোড়ায় গরম পানি লাগলে চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
৯. সবসময় পরিষ্কার হিজাব পরিধান করতে হবে। পরিহিত হিজাব নিয়মিত ভালভাবে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে। এতে সহজেই ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস আক্রমণ করতে পারবে না । এক্ষেত্রে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে হিজাব পরিষ্কার করাটা বেটার।
১০. চুল সুন্দর এবং হেলদি রাখতে নিয়মিত চুলের যত্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপাদানের মিশ্রনে ভাল হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে হবে এবং অবশ্যই চুলে তেল দিতে হবে। এতে চুল আঠালো হবে না। তেল হচ্ছে চুলের খাবার। তেল ছাড়া সুন্দর চুল অসম্ভব।
সোর্স –