প্রতিদিন সকালের কড়া রোদ বুঝিয়ে দিচ্ছে গরমের তীব্রতা বেড়ে গিয়েছে ভালোভাবেই। গরমে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। আর এ কারণে শরীরও প্রচুর ঘামতে থাকে। এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। অনেকেই ভাবেন গরমে ত্বক ভালো রাখার জন্য বারবার মুখ ধুলেই হয়ে যায়। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে শুধু মুখ ধোয়া নয়, এ সময় ত্বকের যত্ন নিতে হবে নানাভাবে। মেনে চলতে হবে প্রোপার স্কিনকেয়ার রুটিন। গরমে বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন কেমন হবে তা নিয়েই আজকের আর্টিকেল।
গরমে আমাদের ত্বকে যে সমস্যাগুলো হয়
বিভিন্ন ঋতুতে আবহাওয়ার কারণে ত্বকে নানা পরিবর্তন হয়। গরমে এই পরিবর্তন হয় অনেক বেশি। চলুন জেনে নেই এ সময় কী ধরনের স্কিন প্রবলেম হতে পারে।
১) সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মির কারণে স্কিনে রেডনেস দেখা দেয়া বা সানবার্নের সমস্যা হতে পারে।
২) আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে ত্বক ঘামে বেশি
৩) অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতার কারণে পোরস ওপেন হয়ে যায়। যার কারণে স্কিন দ্রুত ড্যামেজ হতে শুরু করে।
৪) এ সময় সিবাম প্রোডাকশন বেড়ে যায় বলে স্কিন গ্রিজি হয়, দেখা দেয় ব্রণ।
সামার সিজনে কী ধরনের স্কিন প্রবলেম হতে পারে সে সম্পর্কে তো জানা হলো। কিন্তু এই সমস্যাগুলো থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখবেন কীভাবে? চলুন তাহলে এ বিষয়ে এবার জানা যাক।
গরমে বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন
আবহাওয়া অনুযায়ী স্কিনকেয়ার রুটিনে কিছুটা বদল হয়। তবে সব ঋতুতেই ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং ও স্কিন প্রোটেক্টিং বেসিক থাকে। সেই সাথে যুক্ত হয় আলাদা কিছু। তাহলে গরমে বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন কেমন হবে? জানিয়ে দিচ্ছি এই রুটিনের বিস্তারিত।
১) ক্লিনজিং
স্কিনকেয়ার রুটিনের সবচেয়ে জরুরি ধাপ হচ্ছে ক্লিনজিং। বিশেষ করে গরমে এটি কোনোভাবেই বাদ দেয়া যাবে না। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে পোরস ওপেন হয়ে যায় এবং ঘাম ও ধুলোবালি পোরসে আটকে ব্লক করে দেয়। এতে দেখা দেয় একনে, আনইভেন স্কিনটোন ও রিংকেলস। এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে চাইলে দিনে দুইবার ক্লিনজিং করা মাস্ট। এতে স্কিনের এক্সেস অয়েল, মেকআপ পার্টিকেলস, এনভায়রনমেন্টাল পল্যুটেন্ট ইত্যাদি রিমুভ হয়ে যাবে। জেন্টল, সফট ও নারিশিং ক্লেনজার ব্যবহার করুন। এতে স্কিন থাকবে সফট। সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিনে ক্লিনজার অবশ্যই অ্যাড করুন।
২) টোনিং
এ সময় পোরস ওপেন হয়ে যায় বলে ফ্রি রেডিক্যালের কারণে স্কিন দ্রুত ড্যামেজ হতে থাকে। এই সমস্যা দূর করার জন্য স্কিনকেয়ার রুটিনে অ্যাড করুন টোনার। এটি ব্যবহারে ত্বকের কালচেভাব দূর হবে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে, ত্বক হবে নরম ও কোমল। টোনার সাধারণত রাতে ব্যবহার করা হয়। তবে উপাদান বুঝে দিনের স্কিনকেয়ার রুটিনেও এটি আপনি অ্যাড করতে পারেন। ত্বক পরিষ্কার করার পর তবেই টোনার ব্যবহার করতে হবে।
৩) ময়েশ্চারাইজিং
বাতাসের আর্দ্রতার কারণে ত্বক এমনিতেই ময়েশ্চারাইজড থাকে। আবার ঠিক এই কারণেই অতিরিক্ত ঘাম হয় বলে ময়েশ্চার কমে যায়। তাই গরমে বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন এ এমন প্রোডাক্ট অ্যাড করতে হবে যেগুলো ময়েশ্চার লক করে রাখতে পারে। ময়েশ্চারাইজার চুজ করার আগে তাই দেখে নিন সেগুলোতে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন, অ্যালোভেরা ইত্যাদি উপাদানগুলো আছে কিনা। সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
৪) এক্সফোলিয়েটিং
এ সময় অতিরিক্ত ঘামের কারণে ত্বকে ডেড সেলসের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং দেখা দেয় স্কিন ইমপিওরিটিস। এই সমস্যা দূর করার জন্য সপ্তাহে অন্তত দুইবার এক্সফোলিয়েট করতে হবে।
৫) সানস্ক্রিন
এক্সেসিভ সান এক্সপোজারের কারণে প্রিম্যাচিওর এজিং সাইনস দেখা দেয় দ্রুত। সেই সাথে মেছতা, লালচে হয়ে যাওয়ার সমস্যা তো আছেই। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে চাইলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের সুরক্ষার জন্য এসপিএফ ৩০+ যুক্ত সানস্ক্রিন বেছে নিন।
৬) হেভি মেকআপ অ্যাভয়েড করা
এমনিতেই গরমে মুখ বেশি ঘামে। তাই এ সময় হেভি মেকআপ না করাই ভালো। এতে পোরস ক্লগ হয়ে যাওয়ার চান্স বেশি থাকে। তবে যতটুকুই মেকআপ করা হোক না কেন, বাড়ি ফিরে অবশ্যই মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে ফেইস ক্লিন করে এরপর ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ ডাবল ক্লিনজিং মাস্ট।
৭) নন-কমেডোজেনিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করা
গরমে বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন এ অ্যাড করুন নন-কমেডোজেনিক প্রোডাক্ট। লেবেলের গায়ে দেখে নিন পোরস ক্লগ করবে না এমন ইনগ্রেডিয়েন্টস আছে কিনা। নন-অয়েলি ক্লিনজার, লাইট ক্রিম, হাইড্রেটিং ইনগ্রেডিয়েন্ট যেমন- অ্যালোভেরা, গ্লিসারিন, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, জেন্টল এক্সফোলিয়েটর এজেন্ট যেমন- AHA ও BHA থাকলে সেগুলো বেছে নিন। কোকোনাট, অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল ইত্যাদি এ সিজনে অ্যাভয়েড করে চলাই ভালো, বিশেষ করে যদি আপনার স্কিন একনে প্রন হয়ে থাকে।
৮) শীট মাস্ক অ্যাপ্লাই করা
গরমকালে ত্বকের হাইড্রেশন ধরে রাখার জন্য শীট মাস্ক খুব ভালো কাজ করে। এতে স্কিন রিফ্রেশ থাকে, গ্লোয়ি ও প্লাম্পি হয়। অ্যালোভেরা, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, শশা ইত্যাদি ইনগ্রেডিয়েন্ট যুক্ত ফেইস মাস্কগুলো বেছে নিতে পারেন এই সিজনে।
৯) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের ব্যবহার
এনভায়রনমেন্টাল পল্যুটেন্ট থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে। সিরাম ও ক্রিমে সাধারণত যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো পাওয়া যায়-
ভিটামিন সি – স্কিনকেয়ারে এটি বেশ পাওয়ারফুল একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ফটোড্যামেজ থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়, মেলাজমা ও অন্যান্য স্কিন কনসার্ন দূর করে।
ভিটামিন ই – স্কিনকে সেলুলার লেভেল থেকে রিপেয়ার করতে এবং সানবার্ন স্কিনে সুদিং ইফেক্ট দিতে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশ কার্যকর।
ভিটামিন এ (রেটিনল) – নাইট টাইমে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি বেশ জনপ্রিয়। কারণ এটি ড্যামেজ স্কিন রিপেয়ার করে, রিংকেলস কমায় এবং হাইপারপিগমেন্টেশন ও সানস্পট কমাতে হেল্প করে।
ভিটামিন বি ৩ (নিয়াসিনামাইড) – এটি সাধারণত এসপিএফ যুক্ত প্রোডাক্টগুলোতে বেশি পাওয়া যায়। স্কিনের ন্যাচারাল ব্যারিয়ার বিল্ড আপ করতে এবং ইউভি ড্যামেজ প্রিভেন্ট করতে এটি বেশ কার্যকর।
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড – হাইড্রেশন ও ময়েশ্চার লক করতে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব ভালো কাজ করে, বিশেষ করে গরমকালে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রোডাক্টের ব্যবহার ডিপেন্ড করে প্রোডাক্টের ফর্মুলা ও প্রয়োজনের উপর। যেমন- ভিটামিন এ সাধারণত রাতে ব্যবহার করতে হয় কারণ সূর্যের সংস্পর্শে এলে এটির জন্য স্কিন সেনসিটিভ হয়ে পড়তে পারে। ফটোড্যামেজ থেকে সুরক্ষার জন্য ভিটামিন সি সিরাম দিনে ব্যবহার করা যায়।
ত্বক ভালো রাখতে আরও কিছু পরামর্শ
১) অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার না করা
অনেকেই ভাবেন গরম পানির তাপমাত্রা বেশি হলে শরীরের জন্য সেটি ভালো। এ কারণে অনেকেই হট শাওয়ার নেন রেগুলার। গোসলের পানি বেশি গরম হলে স্কিন ড্রাই হয়ে একজিমা ও ইনফ্ল্যামেশনের মতো সমস্যা হতে পারে। তাই কুসুম গরম বা ঠান্ডা পানি দিয়েই এ সময় গোসল করা ভালো।
২) সুতি পোশাক পরা
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচার জন্য স্কিনকেয়ার হচ্ছে ফার্স্ট লেয়ার, সেকেন্ড হচ্ছে পোশাক। এ সময় এমন কাপড় বেছে নেয়া যাবে না যেগুলো সরাসরি সূর্যের আলোকে অ্যাট্রাক্ট করে। বিশেষ করে কালো রঙের কাপড়। এতে গরম বেশি লাগে, যার কারণে তৈরি হয় অস্বস্তি। গরমের সময় সিন্থেটিকের বদলে সুতি কাপড় বেছে নিন। খেয়াল রাখবেন পোশাক যেন লুজ ফিটিং এর হয়, এতে ত্বকে অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারবে। সিন্থেটিক ফেব্রিক বা টাইট ফিটিং হলে ইরিটেশন ও ইচিং বাড়ে, যা স্কিন ইনফেকশন বাড়ায়।
৩) পর্যাপ্ত পানি পান করা
গরমকালে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে পানি বের হয়ে যায়। তাই এ সময় দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। হাইড্রেটিং বিভিন্ন সবজি ও ফল যেমন – তরমুজ, আনারস, শশা, টমেটো ইত্যাদি খেতে হবে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য ভিটামিনযুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।
গরমে বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে তো জানিয়ে দিলাম। এবার আপনি আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী বেছে নিন দরকারি প্রোডাক্টগুলো। আশা করি আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল। আবারও চলে আসবো নতুন কোনো টপিক নিয়ে। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। অথেনটিক ও সাশ্রয়ী মূল্যে স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে ভিজিট করুন চারদিকে’র আউটলেট, অ্যাপ ও ওয়েবসাইট।
ছবি – চারদিকে, HerZindagi, BBC, Be Beautiful, Only My Health