ত্বকে কোলাজেন এর প্রয়োজনীয়তা

কোলাজেন

জাপান, কোরিয়া, চীনের মানুষদের তারুণ্যোজ্জ্বল ত্বকের অন্যতম প্রধান রহস্য কোলাজেন ডায়েট। কোলাজেন হলো মানবদেহের একটি প্রোটিন যা দেহ এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখতে দারুণ কার্যকরী। তবে বয়স বাড়তে থাকলে কোলাজেনের উৎপাদন মাত্রা কমে আসে। তাই তখন সাপলিমেন্ট নেয়া ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো উপায় থাকে না। কোলাজেনের নানাবিধ প্রয়োজনীয়তা নিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের এই বিউটি ব্লগ। 

কোলাজেন কি? 

কোলাজেন হলো মানব দেহে সৃষ্ট প্রাকৃতিক প্রোটিন। এটি এমন এক ধরনের প্রোটিন যা হাড় এবং কার্টিলেজ থেকে শুরু করে চুল, চোখ, পাচনতন্ত্র, এবং ত্বকের টিস্যু তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনকি রক্তনালী, চোখের মণি এবং দাঁতেও কোলাজেন থাকে। প্রাকৃতিকভাবেই মানবদেহে কোলাজেন সৃষ্টি হয়। এজন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়ম মেনে চলাটা অত্যন্ত জরুরী।  

বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোলাজেনের উৎপাদনও হ্রাস পেতে থাকে। তখন নতুন করে টিস্যু গঠন করতে পারে না বিধায় হাড়, পেশি ইত্যাদি দুর্বল হয়ে পড়ে। ত্বকে ভাঁজ পড়তেও শুরু করে। যেহেতু বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোলাজেনের পরিমাণও হ্রাস পেতে থাকে। তাই অনেকেই অ্যান্টি-এজিং সলিউশন হিসেবে কোলাজেনের সাপলিমেন্ট নিয়ে থাকে। কেননা, তারুণ্য ধরে রাখতে কোলাজেনের কোনো বিকল্প নেই। 

কোলাজেন এর উপকারিতা 

কোলাজেন এ থাকে অ্যামিনো এসিড, গ্লাইসিন, হাইড্রোক্সি প্রোলিন, আরজিনাইন এবং প্রোলাইন সহ আরো নানা পুষ্টিগুণ। এসব শরীর এবং ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী। কোলাজেন এর উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নেয়া যাক – 

  • হজমে সাহায্য করে: কোলাজেন হজমে সাহায্য করে। কেননা, এটা নিজে থেকেই ভেঙ্গে পাচনতন্ত্রের জন্য এমন এক পদ্ধতি তৈরি করে যা সহজেই খাদ্য হজম করে নিতে পারে। কোলাজেন এর হাইড্রোলাইজিং প্রক্রিয়া পেপটাইডগুলোকে পানিতে দ্রবীভূত করে দেয়। ফলে প্রতিদিনের খাবার হজম করাটা অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। 
  • ত্বকের ইলাস্টিসিটি ঠিক রাখে: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক ইলাস্টোসিস প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। তাছাড়া, কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রাও কমতে থাকে তখন। ফলে চামড়ায় যায় কুঁচকে এবং বয়সের ছাপ পড়া শুরু করে। কিন্তু কোলাজেন এর সাপ্লিমেন্ট এক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। ত্বকের ইলাস্টিসিটি ঠিক রাখে, ত্বকের ভারসাম্যময় আর্দ্রতাকে ধরে রাখে এবং ত্বকের মধ্যে কোলাজেন ফাইভারের ঘনত্ব পুনরুদ্ধারে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। যার ফলে ত্বকে তারুণ্য ভাব বজায় থাকে। 
  • হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা নিরাময়: কোলাজেন হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা নিরাময়ের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কোলাজেন পেপটাইড জয়েন্টের ব্যথা সারিয়ে তুলতে দারুণ কার্যকরী। ওরাল কোলাজেন সাপ্লিমেন্ট কার্টিলেজ রিপেয়ারেও সহায়তা করে। 
  • হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা: কোলাজেন শরীরে অ্যামিনো এসিডের ভারসাম্য বাড়ায় এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে শরীর স্বাভাবিক ভাবেই হরমোনের বৃদ্ধি করে এবং তার ভারসাম্য রক্ষা করে। 
  • চুলের যত্নে: চুলের সুস্থ বৃদ্ধির জন্য খনিজ উপাদান, কেরাটিন এবং কোলাজেন এর প্রয়োজন হয়। কেরাটিন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হয় অ্যামিনো এসিডের। যা হাইড্রোলাইজড কোলাজেন এ প্রচুর পরিমাণে থাকে। এছাড়া, কোলাজেন হেয়ার ফলিকলের বৃদ্ধি বাড়ায়, চুলের পরিমাণ ও চুলের সুস্থতাও নিয়ন্ত্রণে রাখে। 
  • লিভারের সুরক্ষায়: কোলাজনে গ্লাইসিন থাকে; যা টক্সিন, অ্যালকোহল শোধন করে লিভারের ক্ষতি আঁটকে দেয়। ফলে লিভার থাকে সুরক্ষিত। 

প্রাকৃতিকভাবে কোলাজেন বৃদ্ধির উপায় 

যেহেতু বয়স বাড়তে থাকলে কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা কমতে থাকে, তাই সাপ্লিমেন্ট নেয়াটাই বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে অনেকের কাছে। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়েই কোলাজেনের বৃদ্ধি করা যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক – 

সঠিক খাদ্যাভাস: পশু-পাখির হাড় সেদ্ধ করলে যে ঝোল তৈরি হয় তাকে ব্রোথ বলা হয়। কোলাজেন এর বেশ ভালো একটা উৎস এই খাবার। মুরগি বা গরুর হাড়ের সংযোগস্থলে যে কচকচে অংশ থাকে; সেটিও কোলাজেন এর বৃহৎ উৎস। মাছের মাথার অংশ এবং চোখেও কোলাজেন পাওয়া যায়। ডিমের সাদা অংশে কোলাজেন গঠনে সহায়তাকারী প্রোলিন অ্যামিনো এসিড থাকে। সবুজ শাকসবজি থেকে প্রচুর পরিমাণে কোলাজেন সংগ্রহ করা যেতে পারে। কোলাজেন তৈরিতে ভূমিকা রাখে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার এবং ফলমূল। সালফার সমৃদ্ধ খাবার থেকেও কোলাজন বাড়ানো যেতে পারে। 

ব্যায়াম বা অনুশীলন: ঘরের হালকা ব্যায়াম বা অনুশীলন অথবা মালিশ করা কোলাজেন গঠনে সহায়তা করে। ফলে শরীরে ও ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, পেশি সুগঠিত হয়, কোষে যথাযথ পুষ্টি সরবরাহ হয় এবং সর্বোপরি তারুণ্য ধরে রাখতে কার্যকরী হয়। 

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি কোলাজেন নষ্ট করে এবং ভেঙ্গে দেয় এর কার্যক্ষমতাকে। ফলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি পদ্ধতি বিঘ্নিত হয়। সানব্লক বা সানস্ক্রিন ব্যবহার করে ত্বক সুরক্ষিত রাখার কোলাজেন এর সুরক্ষাও দেয়া যায়।

ধূমপান বর্জন:  ধূমপানের কারণে কোলাজেন এর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তাছাড়া, সিগারেটের নিকোটিন রক্তনালীতে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ সঠিকভাবে করতে পারে না। 

সোর্স: 8 Potential Health Benefits of Collagen. 
02. Collagen for Your Skin: Healthy or Hype?
03. The Role of Collagen in Skin Care. 
04. কোলাজেনের সেরা উপকারিতা
05. প্রাকৃতিকভাবে কোলাজেন বাড়ানোর উপায়। 
1 I like it
0 I don't like it

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.