চেহারায় বয়সের ছাপ কমানোর উপায় আমরা সবাই চাই! চেহারায় বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রাকৃতিকভাবেই রিংকেলস ফাইন লাইনস দেখা দেয়। মূলত বয়সের সাথে সাথে স্কিনে কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যেতে থাকে। ফেইস, নেক এরিয়া, হাত-পা তে বেশিরভাগ সময় বয়সের ছাপ বোঝা যায়। কারন এই এরিয়াগুলো সূর্যের আলোর সংস্পর্শে বেশি আসে। তবে রিঙ্কেল দূর করা বা কমানোর জন্য কোনো উপায় নেই, এমন না। রিংকেল ট্রিটমেন্টে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেয়া যায় যা সিরিয়াস কোনো সার্জারি ছাড়াই সম্ভব।
তবে তার আগে জেনে নেয়া ভালো কী কী কারনে চেহারায় রিঙ্কেলস দেখা দেয়।
- রিংকেলস ও ফাইন লাইনস দেখা দেওয়ার মূল কারন হলো সূর্যের ক্ষতিকর UV Rays. এই UV Rays স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকশন কমিয়ে স্কিন ইলাস্টিসিটি কমিয়ে দেয়। ফলে স্কিন টেক্সচার এর ইমপ্রুভমেন্ট ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। ফলে চামড়ায় ভাঁজ পড়ে, যাকে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস হিসেবে সবাই চেনে।
- আবার, স্মোক করলে বা ডেইলি অ্যালকোহল ইনটেক করলে স্কিনে বেশ তাড়াতাড়ি বয়সের ছাপ পড়ে যায়। কারন এতে স্কিনের ময়শ্চার লস হয় ফলে স্কিন ডিহাইড্রেট হয়ে যায়।
- অন্যদিকে, অনেকেরই ভ্রু কোঁচকানো, চোখ ছোটো করে ফেলার অভ্যেস থাকে। এমন কিছু ফেসিয়াল মুভমেন্ট এর জন্য ও স্কিনে রিংকেলস পড়তে পারে।
- অন্যদিকে, নিয়মিত SPF যুক্ত প্রোডাক্ট বা সানস্ক্রিন ইউজ না করার কারনে স্কিন সান ড্যামেজ এর শিকার হয়। এতে খুব দ্রুত স্কিনে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস পড়ে।
এখন দেখে নেয়া যাক কী কী উপায়ে চেহারে থেকে বয়সের ছাপ দূর করা যেতে পারে।
অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট
Topical Treatment হিসেবে কিছু ইনগ্রেডিয়েন্টস স্কিনকেয়ার রুটিনে অ্যাড করা যেতে পারে। যেমন,
Retinol
কোরিয়ান স্কিনকেয়ার জগতে Retinol (যা কিনা Vitamin A এর ন্যাচারাল ফর্ম) কে বলা হয় বেস্ট অ্যান্টি এজিং ইনগ্রেডিয়েন্ট। কারন এটি একইসাথে স্কিনে কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়, সান ড্যামেজ এর কারনে হাইপারপিগমেন্টেশন কমায়, ফাইন লাইনস ও রিংকেলস কমায়। তবে বিগিনার হিসেবে রেটিনল এর পরিমান ০.২-০.৫% এর মধ্যে থাকাই ভালো। কারন সাইড ইফেক্ট হিসেবে একনে দেখা দেয়া, স্কিন ইরিটেশন হওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
তাই খুব ভালো হয় যদি কম পার্সেন্ট রেটিনল দিয়ে শুরু করা। এরপর ১.৫, ২.৫ এ যাওয়া যেতে পারে। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হলে প্রথমদিকে রেটিনল সিরাম অথবা ক্রিম উইকে দুই দিন ইউজ করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে দিনের পরিমান বাড়ানো যেতে পারে যদি কোনো সমস্যা দেখা না দেয়।
Vitamin C
অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টগুলোতে ভিটামিন সি হলো আরেক স্টার ইনগ্রেডিয়েন্ট যা স্কিনে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে।
স্কিনের ফ্রি র্যাডিক্যালস, যা স্কিনের এজিং প্রসেস বাড়িয়ে দেয়, ফলে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস ভিজিবল হয়। অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট স্কিনে কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়িয়ে স্কিন টেক্সচার ইমপ্রুভ করে। আবার স্কিনের ময়শ্চার লস হতে দেয়না। অন্যদিকে স্কিনকে ন্যাচারলি ব্রাইট করতে ও হেল্প করে।
Chemical Peels
সেইফ কিছু পিলিং সলিউশন স্কিনে এক্সফলিয়েটরের কাজ করে। এক্সফলিয়েশন স্কিনের ডেড সেলস রিমুভ করে, স্কিন টেক্সচার ইমপ্রুভ করে। ফলে স্কিন পরের স্কিনকেয়ার স্টেপ এর জন্য পুরোপুরি রেডি হয়ে যায়। এতে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস পড়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কম থাকে। Alpha Hydroxy Acids, Beta Hydroxy Acids, Glycolic acid, Lactic Acid এর মতো এসিড গুলো এক্সফলিয়েশনে বেশ ভালো কাজ করে।
তারপর ও যদি মনে হয় আপনার স্কিনে আরো কিছু দরকার তাহলে মেডিক্যালি সেইফ কিছু ট্রিটমেন্ট নেয়া যায়। যেমন,
Microneedling
এই ধরনের কোলাজেন ইনডাকশন থেরাপিতে নিডলস ইউজ করা হয়। স্কিনে নিডল দিয়ে ফুটো করার মাধ্যমে এই থেরাপি দেয়া হয়। Microneedling স্কিনের রিংকেলস, ফাইন লাইনস ভিজিবিলিটি কমায়। আবার একনে স্কারস, হাইপারপিগমেন্টেশন, রাফ স্কিন টেক্সচার ইমপ্রুভ করতেও হেল্প করে। এছাড়াও পোরস ছোটো করতে হেল্প করে।
তবে Microneedling কখনই বাসায় চেষ্টা করতে যাওয়া ঠিক না। এতে স্কিনের ক্ষতি হতে পারে। মেডিক্যাল সেফটি ছাড়া এ ধরনের থেরাপি অ্যাপ্লাই করা ভুল সিদ্ধান্ত।
Dermal fillers
Dermal fillers এ জেল টাইপ জিনিস স্কিনে ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করা হয়। যার ফলে স্কিনের ময়শ্চার লস ইমপ্রুভ হয়, রিংকেলস, ফাইন লাইনস কমায় ও স্কিন টেক্সচার ইমপ্রুভ করে।
এ ধরনের থেরাপিতে Hyaluronic Acid এর ব্যবহার সবথেকে বেশি পপুলার। কারন Hyaluronic Acid স্কিনের ময়শ্চার ধরে রাখে, স্কিনকে হেলদি ও গ্লোয়ি লুক দিতে হেল্প করে। পাশাপাশি রিংকেলস ও ফাইন লাইনস কমায়।
এছাড়াও Calcium Hydroxylapatite, Poly-L-Lactic Acid, Polymethylmethacrylate ও Dermal fillers হিসেবে ইউজ করা হয়।
Collagen Supplement
ফার্মাসি ও সুপারশপে Collagen Supplement হিসেবে ট্যাবলেট পাওয়া যায় যা ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নিয়ে খাওয়া যায়। এতে বডিতে কোলাজেন প্রোডাকশন ঠিক থাকে।
ঘরোয়া কিছু উপায় এজিং প্রসেস স্লো করতে হেল্প করে।
Aloevera, Banana mask স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়াতে হেল্প করে। স্কিনের ময়শ্চার লস হতে দেয়না ও স্কিনকে হাইড্রেট রাখে। Avocadoes, Chia seeds, Cinnamon, Egg whites, Ginger, Oatmeal, Salmon, Sardines, Sweet potatoes, Tomatoes, Walnuts স্কিনের জন্য বেশ ভালো। রেগুলার ডায়েট এ এসব সুপারফুড রাখা হলে স্কিন থাকবে ভেতর থেকে সুস্থ।
বিভিন্ন ধরনের এসেন্সিয়াল অয়েল যেমন Argan oil, Grapeseed oil, Jojoba oil, Sandalwood oil, Rosemerry oil, Pomegranate oil স্কিন টেক্সচার স্মুথ করতে, স্কিনের রিংকেলস ও ফাইন লাইনস কমাতে দারুন কাজ করে। তবে যাদের এসেন্সিয়াল অয়েল এ অ্যালার্জি আছে তাদের প্যাচ টেস্ট করে ইউজ করাটা সেইফ।Olive oil স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকশনে হেল্প করে। তাই যদি দৈনন্দিন খাবার এ সয়াবিন তেল এর পরিবর্তে অলিভ অয়েল ইউজ করা যায় তাহলে স্কিনে রিংকেলস পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
তবে অলিভ অয়েল একটু এক্সপেনসিভ হওয়ায় অনেকে Mastard oil ও ইউজ করে থাকেন। Zinc ও Selenium মিনারেল হিসেবে স্কিন কে সুস্থ রাখতে অনেক প্রয়োজন। Oysters, Beans, Almonds, Oatmeal, Peas, Cheese এ প্রচুর পরিমানে Zinc পাওয়া যায়। আবার Selenium পাওয়া যায় sunflower seeds, Yogurt, Spinach, Oatmeal, Bananas এ।
মিনারেল স্কিন হেলথ ঠিক রাখে, সূর্যের ক্ষতিকর UV Rays এর কারনে সান ড্যামেজ কমায়, ফলে রিংকেলস হয়না। হেলদি লাইফস্টাইল, নিজের স্কিনের প্রতি খেয়াল রাখা হলে চেহারায় বয়সের ছাপ অনেক দেরীতে পড়ে। আবার স্কিন ও সুস্থ থাকে।
সুতরাং আমরা দেখলাম চেহারায় বয়সের ছাপ কমানোর উপায়। সবাই আমরা কমবেশি চেহারায় বয়সের ছাপ কমানোর উপায় খুজে থাকি। সঠিক উপায় ফলো করে আমরা অতি সহজেই চেহারায় বয়সের ছাপ কমানোর উপায় পেয়ে থাকতে পারি।