টোনার এসেন্স সিরাম এবং অ্যাম্পুলের মধ্যে পার্থক্য?
ক্লিনজিং, টোনিং এবং ময়শ্চারাইজিং – ত্বকের যত্নের প্রধান সূত্র। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর ত্বকের জন্য এই সূত্রের কোন বিকল্প নেই। তবে অনেকেই এই নিয়ম মানে না। এমনকি জানেই না সুত্রগুলোর কার্যকারিতা। আর আজকের আয়োজনে এই সূত্রের উপাদানগুলো কি এবং তার কার্যকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হবে।
দিনকে দিন কোরিয়ান বিউটি প্রোডাক্ট বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করছে। যেজন্য এমন অনেক প্রোডাক্টই বর্তমানে বাজারে আছে যেগুলো নাম, কার্যকারিতা, ব্যবহারবিধি ইত্যাদি অনেকেই জানে না। কিন্তু বিউটি কেয়ার বা স্কিনকেয়ারের ক্ষেত্রে প্রোডাক্টগুলো আবশ্যিক। এরকমই চারটি প্রোডাক্টের নাম হচ্ছে টোনার, এসেন্স, সিরাম এবং অ্যাম্পুল।
বেশিরভাগ মানুশের কাছেই এই চারটি প্রোডাক্ট পরিচিত। তবে সবাই এর চারটিকে একই ধরনের প্রোডাক্ট বলে মনে করে থাকে। কিন্তু আসলে সৌন্দর্যের বিচারে চারটির কার্যকারিতা চার রকমের। তাই বলা যায় যে, টোনার, এসেন্স, সিরাম এবং অ্যাম্পুলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক –
টোনার
ক্লিনজিং, টোনিং এবং ময়শ্চারাইজিং রুটিনের দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে টোনারের ব্যবহার। পোরস থেকে ময়লা সাফ করা, এবং হোয়াইটহেড আর ত্বকে জমা থাকা মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে ফেলাই টোনারের কাজ। ক্লিনজিং প্রোডাক্টের পাশাপাশি টোনার ত্বকের পিএইচ লেভেলও ঠিক রাখতে সহায়তা করে। ত্বকের রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত তেল নিঃসরণেও সাহায্য করে।
টোনার হচ্ছে ওয়াটারি একটি ঘন উপাদান; যা দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। অর্থাৎ দ্রুতই ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়। টোনারে প্রয়োজনীয় পানির সঙ্গে থাকে তেল, উদ্ভিদের নির্যাস, এবং আরো অন্যান্য সক্রিয় উপাদান যা ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করে।
একটা পরিষ্কার কটন প্যাডে খানিকটা টোনার স্প্রে করে নিয়ে পুরো মুখমণ্ডলে প্রয়োগ করতে হবে। কটন প্যাডেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা যেমন মৃত ত্বকের কোষ, ময়লা, ধুলাবালি, তেল চিটচিটে ভাব উঠে আসবে।
শুধুমাত্র ফেইস ওয়াশ বা মেকআপ রিমুভার দিয়ে মুখ ধুলেই সেটা যথেষ্ট নয়। টোনিং হচ্ছে ডাবল ক্লিনজিং একটা পদ্ধতি। ত্বকের শুকিয়ে যাওয়া বা ডিহাইড্রেটেড এবং তেল চিটচিটে ভাব দূর করে টোনার। টোনার কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলবেন না। বরং টোনারের পরে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন এতে টোনার প্রয়োগের উদ্দেশ্য সফল হবে।
এসেন্স
এসেন্স হচ্ছে কোরিয়ান স্কিনকেয়ার রুটিনের প্রাণস্বরূপ। এটি স্কিনকে রিজেনারেট করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ত্বকের রিঙ্কেলস, বলিরেখা, অনুজ্জ্বল ভাব দূর করে ত্বককে করে তোলে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। টোনার ব্যবহার করার পরই এসেন্স ব্যবহার করার নিয়ম এবং উচিতও বটে।
এসেন্স লাইট ওয়াটার বেজড প্রোডাক্ট। পানিই এটির প্রধান উপাদান। এতে আরো অন্যান্য সক্রিয় উপাদানও থাকে। যেমন – উদ্ভিজ্জ নির্যাস এবং এইচসিএএস (হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইন) ত্বককে উজ্জ্বল করতে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।
এসেন্স ব্যবহারের আগে পরিষ্কার করে মুখ ধুয়ে টোনার ব্যবহার করে নিতে হয়। হাতের তালুতে প্রোডাক্টটি নিয়ে আলতোভাবে প্রয়োগ করতে হয়। এটি ওয়াটারি এবং দ্রুতই ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়। তবুও, স্কিনকেয়ার রুটিনের পরবর্তী ধাপে যাবার আগে কিছু সময় নিতে হবে।
আমাদের ত্বক সূর্য এবং ধুলাবালির সংস্পর্শে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। এগুলো কেবল ক্ষতিকারকই নয়; বরং এগুলো ত্বকের আর্দ্রতাকে শুষে নেয়; যার ফলে ত্বক দেখায় অনুজ্জ্বল এবং টায়ার্ড। ফলে সময় গড়ালেই ত্বকে বলিরেখা এবং রিঙ্কেল দেখা দেয়। আর এসব থেকে মুক্তির জন্যেই নিত্যদিন এসেন্স ব্যবহার করতে হয়। নিয়মিত এসেন্স ব্যবহারে স্কিন ব্যারিয়ার ভালো থাকে এবং বয়সের ছাপও তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
সিরাম
সিরাম হচ্ছে জেল জাতীয় হালকা ওজনের একটি স্কিনকেয়ার ফর্মুলা। যেটাতে অনেক শক্তিশালী উপাদান থাকে যা রিঙ্কেল, বলিরেখা, পিগমেন্টেশনের চিকিৎসা করে। টোনার এবং এসেন্সের চাইতে খানিকটা ভারী উপাদান সিরাম। কেননা, এতে অত্যন্ত ঘন এবং শক্তিশালী সক্রিয় সব উপাদান থাকে।
সিরাম হচ্ছে জেলের মতো, অনেক ঘন তবে ওজনে হালকা। খুব সহজেই তাই ত্বকে মিশে যায় এটি। সিরামে অনেক সক্রিয় উপাদান থাকে। যা পেপটাইড কোষের বৃদ্ধি এবং পুনরূদ্ধারে কাজ করে; এছাড়া সিরামে ভিটামিন সি, এইচসিএ (হাইড্রোক্সিসিট্রিক এসিড) এবং এএইচএস (আলফা হাইড্রক্সি এসিড) থাকে। এগুলো ত্বকের তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ, ত্বককে ময়েশ্চারাইজ ও এক্সফোলিয়েট করতে, এবং ত্বকের নমনীয়তা বাড়িয়ে ত্বককে করে তোলে কোমল।
সিরামের বোতলের সঙ্গে একটা ড্রপার থাকে। ড্রপার দিয়ে কয়েক ড্রপ সিরাম নিয়ে তা পুরো মুখে মাখতে হবে। আর সিরাম ত্বকে শুষে যেতে তেমন কোনো সময়ও নেয় না। তাও অন্তত মিনিট দুয়েক অপেক্ষা করা ভালো।
সিরাম অনেকটা ম্যাজিকের মতোই কাজ করে। ত্বকে প্রয়োগ করলেই এর উপকারিতা দৃশ্যমান হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের ক্ষতির মাত্রাও বাড়তে থাকে এবং কোলাজেনের উৎপাদনও হ্রাস পায়। যার ফলে রিঙ্কেলসের সৃষ্টি হয় এবং ত্বক ঝুলে পড়ে। সিরাম আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য সুন্দর, উজ্জ্বল ও উন্নত রাখতে সক্রিয় এবং শক্তিশালী সব উপাদান সরবরাহ করে থাকে।
অ্যাম্পুল
কোরিয়ান বিউটি প্রোডাক্ট তালিকায় আরেকটি দারুণ প্রোডাক্ট হচ্ছে অ্যাম্পুল। সিরামের অত্যন্ত ঘন সংস্করণই হচ্ছে অ্যাম্পুল। আর এটা বুস্টারের মতোই কাজ করে থাকে ত্বকে। তবে অ্যাম্পুল ব্যবহার করা হয় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। অর্থাৎ মুখের কালো ছোপ ছোপ দাগ, শুষ্ক ত্বক, ত্বকের অসমান রঙ ইত্যাদি দ্রুত নিরাময়ে অ্যাম্পুল বেশ কার্যকরী একটি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট। অ্যাম্পুল নিত্যদিনের স্কিনকেয়ার রুটিনের জন্য আবশ্যক নয়।
অ্যাম্পুলের সঙ্গে সিরামের বেশ মিল আছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের উপর ভিত্তি করে ঘনও যেমন হয় তেমনি পাতলাও হতে পারে। অ্যাম্পুলে অনেক সক্রিয় উপাদান থাকে, যেমন – পেপটাইড, উদ্ভিদের নির্যাস, ভিটামিন এবং প্রয়োজনীয় এসিড। এগুলো অত্যন্ত ঘনীভূত থাকে ফলে দারুণ শক্তিশালী ও কার্যকরী হয়। সেজন্যই এটি নিত্যদিনের স্কিনকেয়ার রুটিনে ব্যবহারের উপযুক্ত নয়। বরং ত্বকের বিশেষ সমস্যা সমাধেন এটি আবশ্যক।
ত্বক ক্লিনজিং এবং টোনিং করার পর অ্যাম্পুল ব্যবহার করতে হয়। সিরামের মতোই ড্রপার দিয়ে খানিকটা নিয়ে মুখে ঘষতে হয়। তবে অনেক অ্যাম্পুল আবার ক্যাপসুলের মতো জারেও থাকে, এটা মূলত নির্ভর করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের উপর।
অ্যাম্পুল নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহারের পণ্য এবং এটি নির্ধারিত সময়ের জন্যই ব্যবহার করাই ভালো। এতে থাকা সক্রিয় এবং অন্যান্য উপাদানগুলো অত্যন্ত ঘন এবং শক্তিশালী; যা আপনার নিত্যদিনের বিউটি কেয়ারের সঙ্গে মানানসই নয়।
লিংক:
📞 ত্বকের সমস্যার জন্য প্রোডাক্ট সাজেশন পেতে কল করুনঃ 01790 270066 অথবা ইনবক্স করুন। 🌐 ১০০% অরিজিনাল কোরিয়ান প্রোডাক্টঃ https://chardike.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © chardike blog 2021