শীতে ত্বক এবং ঠোঁট যেমন গাছের পাতার মত নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে তেমনি তার থেকেও বেশি নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে আমাদের চুল। একে তো ঠাণ্ডার দিনে চুলের যত্ন নেয়া হয়ে উঠে দুঃসাধ্য তার উপর বাইরের ধূলা বালি, কম আর্দ্রতা এইসব কিছু মিলিয়ে চুলের বেহাল দশা হয়ে যায়। চুল পড়া, ড্রাই স্ক্যাল্প, খুশকী, রুক্ষ্ম চুল এইসব সমস্যা যেন একসাথে হামলে পড়ে। তাই শীতে যতই কস্ট হোক না কেনো সুস্থ ও ঝলমলে চুল পেতে চুলের দরকার একটু বাড়তি কেয়ার। আর এই এক্সট্রা কেয়ারের জন্য মানতে হবে ছোটখাটো কিছু টিপস।
১। চুলে গরম পানি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
এই শীতে কাঁপতে কাঁপতে গরম পানি দিয়ে গোসল করলেও চুলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন নরমাল তাপমাত্রার পানি। কারণ বেশি তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করলে আপনার চুল ময়েশ্চার হারাবে, ন্যাচারাল অয়েল হারাবে, স্ক্যাল্প ড্রাই হবে, যার কারণে মাথা চুলকাবে, খুশকি হবে এবং চুল গোড়া থেকে নরম হয়ে চুল পড়বে। এছাড়া চুল ড্রাই আর ফ্রিজি হয়ে যাবে। তাই যতই হাড় কাঁপানো শীত থাকুক চুলের জন্য ব্যবহার করুন নরমাল টেম্পারেচারের পানি।
২। হেয়ার ড্রায়ার পরিহার করুন
ঠাণ্ডার দিনে চুল শুকানো বিরাট ঝামেলার ব্যাপার। ভেজা চুল নিয়ে চলাফেরা করলে শীত যেন একদম জেঁকে বসে তাই হেয়ার ড্রায়ার হয়ে ওঠে আমাদের নিত্য সঙ্গী। কিন্তু নিয়মিত এই হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারে চুল হয়ে ওঠে রুক্ষ, শুষ্ক এবং এর সাথে চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই চুল শুকাতে ব্যবহার করুন পুরান নরম কাপড় যা চুলের আগা ফাটা রোধ করতে সাহায্য করবে এবং ভেজা চুলেই জট ছাড়াতে সাহায্য নিন কাঠের বড় দাঁতের চিরুনী। এরপর হালকা রোঁদে চুল শুকানোর চেষ্টা করুন। চুল থাকবে স্বাস্থ্যবান এবং ঝলমলে।
৩। চুলে এন্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পুর পরিমিত ব্যবহার
শীতের দিনে আমাদের স্ক্যাল্প হয়ে ওঠে অতিরিক্ত ড্রাই যার ফলে চুলে খুশকীর প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই শীতের দিনে এন্টি ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পুর ব্যবহারও বেড়ে যায় কিন্তু নিয়মিত এন্টি ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারে চুলের ময়েশ্চারাইজার হারিয়ে যায় আর চুল হয়ে ওঠে ড্রাই ও ফ্রিজি। তাই এন্টি ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু নিয়মিত ব্যবহার করা পরিহার করুন এবং ব্যবহারের পর একটি কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এছাড়া খুশকী দূর করতে ডিম অথবা টকদই এবং মধু ও কলার সাথে আমলকী পাউডার মিশিয়ে একটি ভালো হেয়ার প্যাক বানিয়ে সপ্তাহে অন্তত একদিন ব্যবহার করলে খুশকীর সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
৪। সঠিক উপায়ে তেলের ব্যবহার
আমরা অনেকেই মনে করি যত বেশি সময় পর্যন্ত চুলে তেল রাখা যায় তত বেশি উপকার পাওয়া যাবে। এটি নিতান্তই ভুল ধারণা। তেলের কাজ মূলত চুলের গোড়া মজবুত করা এবং ময়েশ্চারাইজ করা আর এই কাজগুলোর জন্য চুলে ১ থেকে ২ ঘণ্টার জন্য তেল থাকলেই যথেষ্ট। চুলে অতিরিক্ত তেল বা অধিক সময় পর্যন্ত তেল থাকলে চুলের গোঁড়া পাতলা হয়ে যায় এবং তেল বাইরের সব ধুলাবালি চুলের দিকে টানতে থাকবে। তাই শ্যাম্পু করার ১ থেকে দুই ঘন্টা আগেই চুলে তেল ব্যবহার করুন।
৫। বালিশের কভার রাখুন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন
চুলের যত্ন সবকিছুই করছি কিন্তু তাও চুল পড়া কমছেই না। নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু করার পরও চুল খুব জলদি ময়লা হওয়ার কারণ কোনো ভাবেই খুঁজে পাচ্ছেন না? হয়তো ভুলটা আপনার বালিশের। প্রতি রাতে যেই বালিশের উপর চুল গুলো ঠাই পায় সেই বালিশের কভার টাই যদি হয় ময়লা তাহলে আর চুল ধুয়ে লাভ কি হলো? তাই নিয়মিত বালিশের কভার ধোয়ার চেষ্টা করুন। সবথেকে ভালো হয় যদি মাথার বালিশের জন্য ব্যবহার করেন সিল্ক কিংবা স্যাটিন। সিল্ক বা স্যাটিনের কাপড় চুলের ময়েশ্চারাইজ ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই এখন থেকেই সিল্কের কভার ব্যবহারের অভ্যাস করুন, কিছুদিনের মধ্যেই চুল তার আগের প্রান ফিরে পাবে।
আমরা সবাই ত্বকের ব্যাপারে সচেতন তেমনিভাবে আমাদেরকে চুলের ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে। বিশেষকরে শীতকালে যখন চুলের বেশি যত্ন প্রয়োজন। ঠিকভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে তার জন্য উপরোক্ত টিপস গুলো ফলো করা যেতে পারে। একটুখানি বাড়তি কেয়ার পেলেই আপনার চুল হবে স্বাস্থ্যবান ও ঝলমলে।