চুলের যত্নে মানুষ কত কি যে করে! পৃথিবীর সকল দুঃখ যদি থাকে একদিকে তাহলে চুল ঝরে পড়ার দুঃখ থাকবে অন্যদিকে। আর যদি চুল পাকা অর্থা চুল সাদা হতে শুরু করে তাহলে তো দুঃখের সীমা থাকে না মনে হয়। কারণটা কি? কারণ মানুষ আজীবন সৌন্দর্য পিপাসু। তারা নিজেদের চিরতরুণ ভাবতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাছাড়া, শুধু এদেশেই নয়; বরং বিশ্বব্যাপী একটা সংস্কৃতি রয়েছে যে চুল ঝরে পড়া বা সাদা হয়ে যাওয়াটা বৃদ্ধতার লক্ষণ। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। সাদা চুলের কারণ হচ্ছে আপনার ত্বক চুলের পুষ্টির সঠিক যোগান দিতে পারছে না। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে নিতে হবে চুলের যত্ন।
স্বাস্থ্যকর চুল পেতে হলে আপনাকে স্বাস্থ্যকর চুলের অধিকারী হতে হবে, এমনটাই ভাবনা কোরিয়ানদের। আর সেই মোতাবেক নিত্যদিনের রুটিনও ফলো করে কোরিয়ানরা। তাছাড়া, কোরিয়ান বিউটি প্রোডাক্টের সুনাম তো আছেই বিশ্বজোড়া। তাই, কোরিয়ানদের বিউটি রুটিনে ভরসাও আছে বিশ্বজোড়া মানুষদের। ত্বকের যেমন স্কিন কেয়ার রুটিন আছে ঠিক তেমনি আছে চুলের জন্য হেয়ার গাইড রুটিন। আর আজকের আয়োজনে থাকছে কোরিয়ার হেয়ার কেয়ার ফর্মুলা গাইড। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক –
১. স্কাল্প ট্রিটমেন্ট
কোরিয়ান চুলের যত্নের মূল ভিত্তি হচ্ছে – স্কাল্প ট্রিটমেন্ট বা মাথার ত্বকের চিকিৎসা। কোরিয়ান বিউটি এক্সপার্টরা বলেন যে, নিয়মিত মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখলে স্কাল্প স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠে ফলে চুল বাড়তে এবং ঘন করতে সাহায্য করে। তাই তাদের পরামর্শ হচ্ছে স্কাল্প স্কেলার ব্যবহার করা। কেননা, স্কেলার থাকে স্যালিসিলিক এসিড; যেটা মাথার ত্বকে এক্সফোলিয়েটের কাজ করে এবং ত্বক থেকে সকল ধরণের ময়লা, অপরিষ্কার এবং মৃত কোষগুলো সরিয়ে দেয়। আর মাথার ত্বকে ওয়েল তৈরিতে সাহায্য করে। প্রতি সপ্তাহে বা দুই সপ্তাহে একবার শুকনো চুলে শ্যাম্পু করার আগে স্কাল্প স্কেলার ব্যবহার করুন। পুরো স্কাল্পে স্কেলার ব্যবহার করে ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
২. শ্যাম্পু ও স্কাল্প ম্যাসাজ
টেকনিক্যালি হেয়ার কেয়ার ফর্মুলার প্রথম শর্তই হচ্ছে শ্যাম্পু করা। তবে কোরিয়ান হেয়ার কেয়ার ফর্মুলা অনুযায়ী আগেই আপনাকে মাথার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। শ্যাম্পু করার সময় স্কাল্প ম্যাসাজের কাজটাও করে নিবেন। আর স্কাল্প ম্যাসাজের জন্য হাতের আঙ্গুলগুলোর বদলে স্কাল্প ব্রাশ ব্যবহার করুন। এতে বেশ উপকার পাবেন। যেমন – ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে এবং তা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, প্রচুর ফেনা উৎপন্ন করে ফলে ত্বকের ছত্রাক অপসৃত হয়, মৃত কোষ এবং ত্বকের ময়লাকে চুলের গভীর থেকে টেনে বের করে আনে। প্রথমে হাত দিয়ে চুল আর ত্বকে শ্যাম্পু মাখিয়ে নিন। তারপর স্কাল্প ব্রাশ দিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন।
৩. কন্ডিশনার
কন্ডিশনারের কথা শুনলেই মাথায় আসে টু-ইন-ওয়ান মানে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারের যৌথ প্যাকেজের কথা। কিন্তু যেহেতু দুটোর কার্যকারিতা আলাদা তাই চেষ্টা করুন দুটো আলাদাভাবেই ব্যবহার করতে। কন্ডিশনার কেবলই চুলের জট খোলা এবং চুলকে মসৃণ করে না; বরং চুলের কন্ডিশন ঠিক রাখে এটি। চেষ্টা করুন একই ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করতে। চুলে কন্ডিশনার দিয়ে সেট হবার জন্য সময় দিন। সাথে সাথেই চুল ধুয়ে ফেলবেন না। কন্ডিশনার দেয়ার পর চুল ধোয়ার আগ অবধি ভেজাবেন না। কন্ডিশনার স্কাল্পে প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন।
৪. ডিপ কন্ডিশন/হেয়ার মাস্ক
হেয়ার মাস্ক বা প্যাকস নামেই কোরিয়াতে বেশি পরিচিত, এটা হচ্ছে পুষ্টি এবং শক্তিশালী সব উপাদানের এক আল্ট্রা ডোজ। হেয়ার মাস্ক কন্ডিশনারের মতোই কাজ করে তবে তা আরো গভীরভাবে, তাই এটিকে ডিপ কন্ডিশনও বলা হয়ে থাকে। শ্যাম্পু করার পর চুলের অতিরিক্ত পানি ছেঁকে নিয়ে হেয়ার মাস্ক প্রয়োগ করুন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত কন্ডিশনারের ঝামেলা থেকে মুক্তি সপ্তাহে একদিন এই ডিপ কন্ডিশন ব্যবহার করুন।
৫. ভিনেগার ওয়াশ
চুল বা ত্বক, সঠিক পিএইচ লেভেল বজায় রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কাল্প এবং স্কিনের মধ্যে সাধারণ পিএইচ লেভেলের স্তর হচ্ছে ৪.৫ এবং ৫.৫। স্কাল্পে শুষ্ক এবং চুলকানি হলে এটাই ধরে নেয়া হয় যে স্কাল্প প্রচুর ক্ষারযুক্ত হয়ে গেছে এবং জরুরী এসিডের সরবরাহও দুর্বল হয়ে গেছে। যার ফলে ব্রণ, একজিমা এবং খুশকি হয় স্কাল্পে। এরকম সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে ভিনেগার ওয়াশ। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে পিএইচ লেভেল থাকে ৩। পানির সঙ্গে মিশিয়ে এর এসিডের লেভেল ৪ নামিয়ে এনে ব্যবহার করতে পারেন স্কাল্পে। ভিনেগার ওয়াশের কারণে স্কাল্পের অতিরিক্ত এসিড অপসরণ হয় এবং ক্ষারের মাত্রাও কমে যায় পুরোপুরি। ভিনেগারে একটা গন্ধ থাকে। তাই শ্যাম্পু করার পর এবং কন্ডিশনার প্রয়োগ করার এটি ব্যবহার করুন।
সোর্স: 01. Try Korean Hair Care. 02. THE ULTIMATE KOREAN HAIR CARE GUIDE.