সৌন্দর্য চর্চা বা রূপচর্চা সবারই ভালো লাগে। আর তাই তো, বাজার জুড়ে নামীদামী আর নানান ব্র্যান্ডের অসংখ্য বিউটি এবং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের ছড়াছড়ি। তবে এখানে একটা কিন্তু আছে। আর সেটা হচ্ছে অ্যালার্জি। আমাদের ত্বক অনেক সংবেদনশীল। বিউটি এবং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলোতে এমন অনেক কেমিক্যালস ব্যবহার করা হয় যেগুলো আমাদের ত্বকের সঙ্গে ম্যাচ করতে পারে না। ফলে ত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র র্যাশ বা ফুসকুড়ির দেখা মিলে। আর তা অ্যালার্জিতে রূপান্তরিত হতেও খুব বেশি একটা সময় নেয় না। তাই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
কারণ ও লক্ষণ:
এমনও হতে পারে যে, প্রোডাক্ট ব্যবহার করা মাত্রই আপনার ত্বকে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আবার এমনও হতে পারে যে, বছরখানেক কিংবা তারও বেশি সময় ব্যবহার করার পর প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহারে ত্বকে সাধারণত দুই ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। একটা হচ্ছে ইরিট্যান্ট কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস; যেটা প্রকৃতপক্ষেই ত্বকের ক্ষতি করে। আপনার ত্বক জ্বালাপোড়া করবে, চুলকাবে, ব্যথা করবে, কামড়াবে আর নয়তো যেই জায়গায় প্রোডাক্টটি ব্যবহার করেছেন সেখানে লালচে ভাব ফিরে আসবে। এমনকি সেখানে ফুসকুড়ির দানা দেখা দিবে এবং পুঁজও বের হতে পারে যদি আপনি নখ দিয়ে খোঁচাখুঁচি করেন।
আর অন্যটা সরাসরি আপনার ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। এটাকে বলা হয় অ্যালার্জিক কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস। লক্ষণগুলোর মধ্যে লালচে ভাব, ফোলা ভাব, চুলকানি, এবং হাইভস বা আমবাত হতে পারে। আপনার ত্বক লাল হয়ে ক্ষতের মতো দেখাবে। এই ধরনের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া শরীরের যে কোনো স্থানেই হতে পারে। তবে বেশিরভাগ সময়ই এটি মুখ, ঠোঁট, নাক, চোখ, কান – সর্বোপরি মুখমণ্ডলেই দেখা দেয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী করা হয় সুগন্ধী এবং প্রিজারভেটিভ জাতীয় প্রোডাক্টকে। এমনকি গন্ধমুক্ত লেখা প্রোডাক্টেও কেমিক্যালের সুগন্ধ থাকতেই পারে। হয়তো আপনার নাকে তা ধরা দিবে না; কিন্তু এটা আছে এবং এই কারণে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়।
যে প্রোডাক্টে জল থাকে সেটাতে প্রিজারভেটিভও থাকে। প্যারাবিনস, ইমিডাজলিডিনাইল ইউরিয়া, কোয়ার্টেনিয়াম – ১৫, ডিএমডিএম হাইডেনটোন, ফেনোক্সাইথেনোল, মেথাক্লোরোআইসোথায়াজোনাইনি, এবং ফর্মালডিহাইডের ব্যবহার তো একদম সাধারণই বলা চলে। তবে এসব রাসয়নিক পদার্থই স্কিন অ্যালার্জির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবেই যুক্ত।
বিউটি প্রোডাক্ট বা স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের মধ্যে স্নানের সাবান, ডিটারজেন্টস, অ্যান্টিপারস্পায়েন্টস, আই মেকআপ, ময়েশ্চারাইজারস, শ্যাম্পু, দীর্ঘস্থায়ী লিপ স্টেইন, নেইল পলিশ (বিশেষত যেগুলোতে ফর্মালডিহাইড আছে), এবং ফিঙ্গারনেইল গ্ল যেটাতে মেটাক্রাইলেট থাকে। হেয়ার ডাই বা চুল রঙ করার রঞ্জকেও স্কিন অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এসব রঞ্জকে ফেনিলেনডায়ামিন এবং অ্যামোনিয়াম পারসালফেট ব্যবহার করে চুলে রঙ করা হয় এবং চুল পাতলা করা হয়। আর এগুলো থেকেই স্কিন অ্যালার্জি ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে প্রবল।
আলফা-হাইড্রক্সি এসিড থাকে এমন বিউটি প্রোডাক্টের কারণে অনেকেরই ত্বকে লালচে ভাব, ফোলা ভাব, ফোসকা এবং চুলকানি দেখা দেয়। বিশেষত এসব পণ্যে যদি এএইচএ এর মাত্রা ১০% এর বেশি থাকে তাহলে তো কথায়ই নেই। রেটিনোল রিঙ্কেল ক্রিম এবং সিরামেও ইরিট্যান্ট কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস হয় অনেকের। আবার সানস্ক্রিন সেনসিভিটিও রয়েছে অনেকের। তাদের ক্ষেত্রে আবার যে কোনো সানস্ক্রিন প্রটেকশন বিউটি প্রোডাক্টই ডার্মাটাইটিসের প্রতিক্রিয়া বয়ে আনতে পারে।
প্রতিকার:
প্রতিকারের সর্বপ্রথম এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী বিউটি প্রোডাক্টের ব্যবহার বন্ধ করা। প্রাথমিক অবস্থায় সমস্যা সমাধানের জন্য এটাই যথেষ্ট পদক্ষেপ। হাইড্রোকর্টিসোনের প্রস্তুতির জন্য ত্বকের সংবেদনশীল জায়গাগুলোতে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে; তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াটাই অত্যন্ত জরুরী।
স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারে ত্বকের প্রতিক্রিয়া এড়ানো যায় যেভাবে –
- প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সেই প্রোডাক্টের কেমিক্যালস আপনার ত্বকে ক্ষতি করার পূর্বেই তা ব্যবহার বন্ধ করুন।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস এমনিতেই নিরাময় হয়ে যায়। তাই ব্যতিব্যস্ত না হয়ে প্রোডাক্টটির ব্যবহার বন্ধ করে অপেক্ষা করুন।
- মাইনর ইরিটেশনের ক্ষেত্রে বাসাতেই চিকিৎসা নেয়া যায়। তবে গুরুতর অবস্থা হবার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
- স্ক্রাব বা সুগন্ধি সাবান অথবা লোশন, আক্রান্ত জায়গায় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এগুলো ক্ষতকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- যদি ক্ষতের জায়গা অতিরিক্ত শুষ্ক এবং ফাটল ধরে, তাহলে একদমই পাতলা করে পেট্রোলিয়াম জেলি বা জ্বালা কমানোর মলম ব্যবহার করতে পারেন।
- যদি ক্ষতের জায়গা চুলকানো থেকে নিজেকে বিরত রাখা অনেক কঠিন। তা সত্ত্বেও, বিরত রাখুন নিজেকে।
- এমন স্কিন কেয়ার বা বিউট প্রোডাক্ট খুঁজুন যেগুলোতে উপাদানের সংখ্যা সীমিত বা কম। এতে করে ত্বকে প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাও অনেকখানি কমে যায়।
- প্যাচ টেস্ট করে নিন প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে। কনুইয়ের ভেতর দিকে অল্প একটু পরিমাণ বিউটি প্রোডাক্ট নিয়ে রেখে দিন ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টা। যদি লালচে ভাব, ফোলা, ফুসকুড়ি কিংবা চুলকানি অথবা জ্বালাপোড়া করে তাহলে প্রোডাক্টটি ব্যবহার করবেন না।
- সুগন্ধি সবসময় আপনার পোশাকে ব্যবহার করুন, ত্বকে দিবেন না। সুগন্ধি থেকে প্রতিক্রিয়া হ্রাস করার বেশ ভালো একটি পন্থা এটি।
- কেবলমাত্র প্রোডাক্টের লেবেলে লেখা “হাইপো অ্যালার্জিক”, “ডারমাটোলজিস্ট টেস্টেড”, “সেনসিটিভিটি টেস্টেড” বা “নন-ইরিটেটিং” দেখে প্রোডাক্টটির উপর ভরসা করার কোনো কারণ নেই।
সোর্স: Skin Reactions to Beauty Products. 02. Are You Allergic to Your Skincare Products?