‘কিরে তোকে এমন মলিন দেখাচ্ছে কেন? স্কিনকেয়ার করা ছেড়ে দিয়েছিস নাকি?’ বান্ধবীর এই কথায় আয়নার দিকে তাকিয়ে কিছুটা মন খারাপ হয়ে গেলো নিকিতার। আসলেই তো! আজ কতদিন ধরে সেভাবে ত্বকের যত্নই নেয়া হচ্ছে না। রোজ বাসা আর অফিস করতে করতে নিজের দিকে তাকানোর সময়ই পায়নি। কিন্তু এভাবে আর না। অলরেডি চেহারার উজ্জ্বলতা কমে গিয়েছে, পোরস ভিজিবল হচ্ছে, হাইপারপিগমেন্টেশনও বোঝা যাচ্ছে। নিকিতা সিদ্ধান্ত নিলো আজ থেকেই স্কিনকেয়ার রুটিন নিয়মিত মেনে চলা শুরু করবে। কিন্তু কনফিউশন হচ্ছে সিরাম কোনটা ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে। কারণ একেক সিরাম তো একেক কনসার্ন অনুযায়ী কাজ করে। তাহলে উপায়? নিকিতার মতো কনফিউশনে যেন আপনি না পড়েন সেজন্য স্কিনের গ্লো ফিরিয়ে আনতে ৫টি কার্যকরী সিরামের কথা আজ আপনাদের জানাবো।
সিরামের কাজ কী?
প্রতিদিনের নানা স্ট্রেস, সূর্যরশ্মি, ধুলাবালি সব মিলিয়ে ত্বকের উপর নানা ধকল যায়। দিন দিন এসবের পরিমাণ বাড়ে, আর স্কিনে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা যায় দ্রুত। সাথে পোরস ভিজিবল হওয়া, স্কিন রাফ হয়ে যাওয়া, হাইপারপিগমেন্টেশন দেখা দেওয়ার সমস্যা বাড়তে থাকে। যান্ত্রিক এই জীবনে সময় কোথায় ত্বকের এত যত্ন নেয়ার? কিন্তু ত্বক ভালো না থাকলে কনফিডেন্স কীভাবে গ্রো হবে বলুন তো? নিজের যত্ন না নিলে কোনো কাজ করতেও আগ্রহ পাওয়া যাবে না। ত্বকের এসব সমস্যার সমাধান করতে তাই স্কিনকেয়ার রুটিনে অ্যাড করতে হবে সিরাম। সিরামে আছে এমন কিছু ইনগ্রেডিয়েন্ট যার ব্যবহারে স্কিনের গ্লো ফিরে আসে অল্প সময়ে, ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল, তারুণ্যদীপ্ত। দিন দিন স্কিনকেয়ার রুটিনে অপরিহার্য হয়ে উঠছে সিরামের ব্যবহার।
সিরামে কয়েক ধরনের অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকে। এগুলো স্কিনের বিভিন্ন কনসার্ন যেমন- রিংকেলস, ফাইন লাইনস, সান ড্যামেজ, একনে, হাইপারপিগমেন্টেশন এর মতো প্রবলেমগুলো সলভ করতে কাজ করে। এগুলো সরাসরি স্কিনে ব্যবহার করা যায় না। বিভিন্ন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টে যুক্ত করা হয়। এসব প্রোডাক্টের মধ্যে সিরাম একটি।
সিরামে থাকা কয়েকটি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হচ্ছে –
- ভিটামিন সি
- রেটিনল
- নিয়াসিনামাইড
- হায়ালুরোনিক অ্যাসিড
- সেরামাইড
- গ্লাইকোলিক অ্যাসিড
- আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড
- বেনজয়েল পার অক্সাইড
স্কিনের গ্লো ফেরাতে ইফেক্টিভ ৫টি সিরাম
skin’O Advanced Brightening Serum
দিন দিন ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাচ্ছে? কীভাবে স্কিনের গ্লো ফেরাবেন বুঝতে পারছেন না? স্কিনকেয়ার রুটিনে ক্লিনজিং, টোনিং এর পর সিরাম অ্যাপ্লাই করা জরুরি। ব্রাইটনেস ফেরানোর জন্য ইফেক্টিভ একটি সিরাম হচ্ছে skin’O Advanced Brightening Serum। এই সিরামটি কোরিয়ান ফর্মুলেশনে তৈরি।
সিরামটির বেনিফিটস
- স্কিনের কমপ্লেক্সন দূর করে ত্বকে ফিরিয়ে আনে উজ্জ্বলতা
- ডিসকালারেশন রিডিউস করে স্কিন ইভেন টোন করে তোলে
- ডার্ক স্পটস ও একনে মার্কসের ভিজিবিলিটি কমায়
- এজিং সাইনস ও হাইপারপিগমেন্টেশন কমিয়ে দেয় তারুণ্যদীপ্ত উজ্জ্বল ত্বক
Pour La Peau Brightening Shot Serum
ব্রাইটেনিং সিরাম খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছেন? বেছে নিন Pour La Peau Brightening Shot Serum। হোয়াইটেনিং এই সিরামটি স্কিনের ব্লেমিশ কমাতে হেল্প করবে এবং স্কিনটোন ইমপ্রুভ করবে। দিনে ও রাতে ব্যবহার করা যায়। সূর্যরশ্মিতে ত্বকের ক্ষতি করবে না, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে।
সিরামটির বেনিফিটস
- স্কিন টেক্সচার ইমপ্রুভ করে
- ত্বক করে তোলে উজ্জ্বল
- ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সিরামটি খুবই কার্যকর
- দ্রুত অ্যাবজর্ব হয়ে যায়
- এটি বেশ লাইট এবং একদমই স্টিকি নয়
Cos De BAHA Vitamin C 15% Serum (VA)
অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার ইনগ্রেডিয়েন্টের মধ্যে সবচেয়ে উপরের দিকে আছে ভিটামিন সি এর নাম। এই উপাদানটি স্মুথ, ইভেন, গ্লোয়ি কমপ্লেক্সন দিতে খুবই কার্যকর। আর এই উপাদানটি দিয়েই তৈরি হয়েছে Cos De BAHA Vitamin C 15% Serum (VA)।
সিরামটির বেনিফিটস
- পিগমেন্টেশন ফেইড করতে হেল্প করে
- মেলানিন প্রোডাকশন কমায়
- রেডনেস কমায়
- স্কিনের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে
- সান ড্যামেজ থেকে সুরক্ষা দেয়
অনেকের ভিটামিন সি তে রিয়্যাকশন হতে পারে। যেমন-
- ইরিটেশন
- ব্রেকআউট
- ফ্লেকি স্কিন
যাদের এ ধরনের সমস্যা হয় তারা ভিটামিন সি এর বদলে ব্রাইটেনিং এর জন্য অন্য ইনগ্রেডিয়েন্ট বেছে নিতে পারেন।
The Ordinary Niacinamide 10% Plus Zinc 1%
আমাদের স্কিনের ব্যারিয়ার যদি স্ট্রং না হয় তাহলে ধীরে ধীরে ত্বক মলিন হয়ে যাবেই। এই মলিনতা কমিয়ে স্কিনের গ্লো ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী একটি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হচ্ছে নিয়াসিনামাইড। এটি ভিটামিন বি৩ এর একটি ফর্ম। ইনফ্ল্যামেশন ও এনভায়রনমেন্টাল ড্যামেজ এর ইফেক্ট কমাতে এর কার্যকারিতা অনেক। এটি স্কিনের ইলাস্টিসিটি বাড়ায় এবং এপিডার্মিসের সেরামাইড লেভেল ইমপ্রুভ করে। স্কিনের এনলার্জ পোরস মিনিমাইজ করতে, স্কিন টোন ইভেন করতে, রিংকেলস রিডিউস করতে, দিনের বেলা অয়েল প্রোডাকশন কন্ট্রোলে রাখতে নিয়াসিনামাইড খুব ইফেক্টিভ। স্কিন ব্যারিয়ার রিপেয়ার করতে এবং স্কিন ময়েশ্চারাইজড রাখতে এই উপাদানটি খুবই হেল্পফুল। স্কিনকেয়ার রেঞ্জে ২-১০% নিয়াসিনামাইড অ্যাপ্লাই করাই ভালো। জিংক স্কিন হাইড্রেটেড রাখতে এবং অয়েল প্রোডাকশন কন্ট্রোল করতে হেল্প করে। স্কিনকেয়ারের কার্যকরী এই দুটো উপাদান দিয়ে তৈরি হয়েছে The Ordinary Niacinamide 10% Plus Zinc 1% টি।
সিরামের বেনিফিটস
- ব্রেকআউট টার্গেট করে কাজ করে
- পোরস মিনিমাইজ করে
- সিবাম প্রোডাকশন কন্ট্রোল করে
- কমপ্লেক্সন রিডিউস করে
- স্কিনের ব্লেমিশ কমায়
Iunik Tea Tree Relief Serum
একনে রিডিউস করে স্কিনের গ্লো ফিরিয়ে আনতে কার্যকর একটি সিরাম হচ্ছে Iunik Tea Tree Relief Serum। একনে সমস্যায় যারা অনেকদিন ধরে ভুগছেন, তারা স্কিনকেয়ার রুটিনে এই সিরামটি অ্যাড করতে পারেন।
সিরামটির বেনিফিটস
- টি ট্রি ও সেন্টেলা এশিয়াটিকা ইনফিউজড এই সিরামটি স্কিন হিল করতে এবং সুদিং রাখতে সাহায্য করে
- সেনসিটিভ স্কিনেও ভালো স্যুট করে এবং স্কিনে দেয় সুদিং ফিল
- ক্লিয়ার ও ডিউয়ি কমপ্লেক্সন ক্রিয়েট করে
- ব্লেমিশ দূর করে ক্লিয়ার ও ক্লিন স্কিন টোন পেতে হেল্প করে
- ময়েশ্চার ও নিউট্রিশন লক করে স্মুথ ও সাপল স্কিন প্রোভাইড করে
- রিংকেল দূর করে স্কিন ইমপ্রুভ করে
সিরামে থাকা একেকটি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট একেকভাবে কাজ করে। বেনিফিটও পাওয়া যায় সেভাবে। আমি আজ ৫টি সিরাম নিয়ে আপনাদের জানালাম। স্কিনের গ্লো ফেরাতে আপনারা এগুলো থেকে আপনার ত্বকের ধরন বুঝে যে কোনোটি বেছে নিতে পারেন। মনে রাখবেন, শুধু সিরাম লাগালেই কিন্তু স্কিনকেয়ারে বেনিফিট পাওয়া যাবে না। এর সাথে সাথে বাকি রুটিন যেমন- ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিংও করতে হবে সঠিক উপায়ে এবং নিয়মিত। ত্বকের যত্নে অবহেলা করলে এক সময় ত্বক মলিন হয়ে যাবেই। তাই স্কিনকেয়ার রুটিন নিয়মিত মেনে চলুন।
অথেনটিক সেলফ কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্টস পেয়ে যাবেন চারদিকে’তে। চারদিকে’র দুটি আউটলেট রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়াতে আল জয়নাল ট্রেড সেন্টারে। ফিজিক্যালি কিনতে চাইলে এই দুটি আউটলেট ঘুরে আসতে পারেন। আর ঘরে বসে প্রোডাক্ট হাতে পেতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন চারিদিকে’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপে।
ছবি – চারদিকে, সাটারস্টক, lazada.vn, IUNIK, imanabdulrahim.com