সিরামে থাকা অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস কীভাবে ত্বকে বেনিফিট দেয়?

serum 1

উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার জন্য সিরাম ব্যবহার করার কী দরকার? আমি তো রেগুলার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করছিই!’ আপনিও কি তাই ভাবেন? হেলদি ও ব্রাইট স্কিন পাওয়ার জন্য সিরামের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা নেই বলেই হয়ত এমনটি ভাবছেন আপনি। অথচ দিন দিন আমাদের ত্বকের যে মলিনতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর একটি প্রোডাক্ট হচ্ছে সিরাম। সিরামে থাকা কয়েকটি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টের কারণে ত্বক দ্রুত তারুণ্যদীপ্ত হয়ে ওঠে। আজকে আমরা জানবো সিরামে থাকা ইনগ্রেডিয়েন্টস ত্বকের জন্য কী কী বেনিফিট দেয় সে সম্পর্কে।

সিরাম কেন ব্যবহার করা হয়?

প্রতিদিন ত্বকের উপর দিয়ে কতটা ধকল যায় বলুন তো? বাইরের ধুলোবালি, সূর্যরশ্মি, প্রতিদিনের স্ট্রেস সবকিছু মিলিয়ে ত্বকের উপর বেশ খারাপ প্রভাব পড়ে। দিন দিন এসবের পরিমাণ যত বাড়ে, তত দ্রুত স্কিনে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস চলে আসে। স্কিনের হাইড্রেশন কমে যায়, ত্বক হয়ে যায় রাফ, উজ্জ্বলতা একদম কমে যায়। ত্বকের এসব সমস্যা দূর করে অল্প সময়েই ত্বককে প্রাণবন্ত করে তোলার কাজটাই করে সিরাম। সিরামে থাকা কয়েকটি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টের কারণে ত্বক দ্রুত তারুণ্যদীপ্ত হয়ে ওঠে। তাই রেগুলার স্কিনকেয়ার রুটিনে দিন দিন অপরিহার্য একটি প্রোডাক্ট হয়ে উঠছে সিরাম।

অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট কী ও কেন?

সিরামে থাকা কোন অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টের কী কাজ?

অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট কী? সহজ ভাষায় এটি হচ্ছে Spice Of Life! কারণ ত্বকের জন্য বেশ বোরিং একটা পার্টকে সহজেই এক্সাইটিং বানিয়ে ফেলতে এর জুড়ি নেই! স্কিন হেলদি থাকলে, স্কিনের গ্লো দিন দিন বাড়লে মন তো ফুরফুরে থাকবেই! এসব ইনগ্রেডিয়েন্টসে এমন কিছু এলিমেন্ট থাকে যেগুলো স্কিনের বিভিন্ন কনসার্ন যেমন- রিংকেলস, ফাইন লাইনস, সান ড্যামেজ, একনে, হাইপারপিগমেন্টেশনকে টার্গেট করে কাজ করে। তবে এগুলো স্কিনে সরাসরি ব্যবহার উপযোগী নয়। স্কিন টাইপ ও কনসার্ন বুঝে বিভিন্ন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যেমন- ফেইসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার, টোনার বা সিরামে যুক্ত করা হয়। স্কিনকেয়ার রুটিনে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট যুক্ত থাকলে স্কিনের জন্য তা দ্রুত কাজ করে। এসব প্রোডাক্টের মধ্যে অন্যতম হাইপড একটি প্রোডাক্ট হচ্ছে সিরাম। সিরামে কোন ইনগ্রেডিয়েন্ট ত্বকের জন্য কী কী বেনিফিট দেয় সে সম্পর্কেই আজ আমরা বিস্তারিত জানবো।

সিরামে থাকা অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস এর বেনিফিট

বিউটি ইন্ড্রাস্ট্রিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসে। স্কিনকেয়ার অ্যাকটিভিটিজ এ যেমন নিত্যদিন পরিবর্তন চোখে পড়ে, তেমনই এলিমেন্টও একেক সময় একেকটা হাইপে থাকে। তবে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। আজ আমরা এসব ইনগ্রেডিয়েন্ট সম্পর্কেই জানবো।

১) ভিটামিন সি

সব ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মধ্যে ভিটামিন সি হলিগ্রেইলের মতো। সানস্পট, রিংকেল ও ডালনেস কমানোর জন্য এটি বেশ কার্যকর। স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করার জন্য এটি খুবই হেল্পফুল। সেই সাথে স্কিনটোন ইভেন করতে, ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে স্কিন সারফেসকে সুরক্ষিত রাখতেও ভিটামিন সি এর জুড়ি নেই। যদি ত্বকের ব্রাইটনেস ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে ত্বকে এই উপাদান যুক্ত সিরাম অ্যাড করে ফেলুন।

২) রেটিনলসিরামে থাকা অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট রেটিনল

কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যেয়ে দিন দিন ত্বক প্রাণহীন হয়ে পড়ছে? এই কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করার জন্য রেটিনল যুক্ত সিরাম হতে পারে বেস্ট অপশন। ভিটামিন এ ফ্যাট সল্যুবল। এই ভিটামিন এ থেকেই রেটিনল পাওয়া যায়। স্কিনের ড্যামেজ ও এজিং সাইনস কমাতে, সেল টার্নওভার বাড়াতে, স্কিন টেক্সচার ইভেন করতে, হাইপারপিগমেন্টেশন ও ইনফ্ল্যামেশন কমাতে এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। আপনি যদি বিগিনার হয়ে থাকেন, তবে আপনাকে ০.০১% পার্সেন্টেজ দিয়ে রেটিনল ব্যবহার শুরু করতে হবে। এর ম্যাক্সিমাম পার্সেন্টেজ হচ্ছে ১%। এটি খুবই পাওয়ারফুল বলে সেনসেটিভ স্কিন হলে ব্যবহার না করাই ভালো।

৩) নিয়াসিনামাইড

ত্বকের যত্নের কথা যখন আসে, তখন নিয়াসিনামাইডকে গেইম চেঞ্জার বলাই যায়। এটি ভিটামিন বি৩ এর একটি ফর্ম। ইনফ্ল্যামেশন ও এনভায়রনমেন্টাল ড্যামেজ এর ইফেক্ট কমাতে এর কার্যকারিতা অনেক। এটি স্কিনের ইলাস্টিসিটি বাড়ায় এবং এপিডার্মিসের সেরামাইড লেভেল ইমপ্রুভ করে। স্কিনের এনলার্জ পোরস মিনিমাইজ করতে, স্কিন টোন ইভেন করতে, রিংকেলস রিডিউস করতে, দিনের বেলা অয়েল প্রোডাকশন কন্ট্রোলে রাখতে নিয়াসিনামাইড খুব ইফেক্টিভ। সিরামে থাকা এই উপাদানটি স্কিন ব্যারিয়ার রিপেয়ার করে এবং স্কিন ময়েশ্চারাইজড রাখতেও হেল্প করে। স্কিনকে টায়ার্ড ফ্রি রাখতে এবং স্মুথ রেডিয়েন্ট গ্লোয়িং রাখতে কাজ করে এর সুপারপাওয়ার। তবে স্কিনকেয়ার রেঞ্জে ২-১০% নিয়াসিনামাইড অ্যাপ্লাই করাই বেশি কার্যকর। আপনি যদি স্কিনকেয়ার রুটিনে নিয়াসিনামাইডযুক্ত সিরাম রেগুলার রাখেন, তাহলে এটি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করবেন না।

৪) হায়ালুরোনিক অ্যাসিড

ত্বক থেকে বয়সের ছাপ কমাতে এবং ত্বকের ময়েশ্চার লক রাখতে আপনি যদি বেস্ট স্কিনকেয়ার ইনগ্রেডিয়েন্টের কথা ভাবেন, তাহলে হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের নাম আসবেই। ম্যাজিক্যাল এই ইনগ্রেডিয়েন্টটি ড্রাইনেস কমানো থেকে শুরু করে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস কমানোর মতো অনেক কাজ করে। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড তার নিজের ওজনের চেয়ে প্রায় ১০০০ গুণ বেশি পরিমাণে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে। এটি অসাধারণ হিউমিকট্যান্ট হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ স্কিনের উপরিভাগে পানির কণাকে ধরে রেখে স্কিনকে হাইড্রেটেড ও ইয়ুথফুল দেখায়। ন্যাচারালি এই অ্যাসিড আমাদের স্কিনে থাকলেও বয়সের সাথে সাথে এর কার্যকারিতা কমে যায়। তাই আলাদাভাবে এই অ্যাসিডযুক্ত প্রোডাক্ট ইউজ করলে ত্বকে বয়সের ছাপ অল্প সময়েই কমে যায়।হায়ালুরোনিক অ্যাসিড

৫) সেরামাইড

স্কিনকে ইয়ুথফুল করে তোলে বলে সেরামাইডকে বলা হয় ত্বকের বন্ধু। সেরামাইডস হচ্ছে অ্যাসেনশিয়াল লিপিড (ফ্যাটি অ্যাসিড) যা স্কিন সেল অয়েল হাইড্রেট, প্লাম্পি রাখে। যদি আপনার মনে হয় স্কিনের এপিডার্মিস (স্কিনের টপ লেয়ার) ফাটা ফাটা হয়ে আছে তাহলে সেরামাইড স্কিনকে সফট করে তুলবে। পল্যুশন ও ইউভি এক্সপোজার কমিয়ে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে এই উপাদানটি। সেই সাথে ওয়াটার লস প্রিভেন্ট করতে, ইনফ্ল্যামেশন কমাতে, রিংকেলস মিনিমাইজ করতে, ইলাস্টিসিটি বাড়াতে এটি বেশ কার্যকর।

৬) গ্লাইকোলিক অ্যাসিড

এটি এক ধরনের আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড যা পানিতে দ্রবণীয়। স্কিনের ডেড সেলস রিমুভ করতে, এনলার্জড পোরস মিনিমাইজ করতে, কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়াতে, স্কিন হাইড্রেটেড রাখতে, হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে এটি বেশ কার্যকর। স্কিনের জন্য এর অনেক বেনিফিট থাকলেও সপ্তাহে প্রতিদিন এটি ব্যবহার করা যাবে না। এতে স্কিন ড্রাই বা ইরিটেটেড হতে পারে। একদিন পর পর সপ্তাহে ৩/৪ দিন ইউজ করুন।

৭) আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড

হাইড্রক্সি অ্যাসিডের মূল উৎস হচ্ছে বিভিন্ন ফল, চিনি ও দুধ। এটি স্কিন এক্সফোলিয়েশনে হেল্প করে। সেই সাথে ব্রাইটেনিং, হাইড্রেটিং, অ্যান্টি এজিং এর মতো বিভিন্ন বেনিফিট দেয়। স্কিন ডিসকালারেশন কারেক্ট করতে, স্কিনের ব্লাড ফ্লো প্রমোট করতেও এটি হেল্প করে। এই অ্যাসিডের বেশ কয়েকটি ধরন থাকলেও ল্যাকটিক অ্যাসিড ও গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের নামই বেশি পরিচিত।

৮) বেনজয়েল পার অক্সাইডসিরাম

একনে প্রন স্কিন নিয়ে ভুগছেন? তাহলে বেনজয়েল পার অক্সাইড আপনার জন্য ব্লেসিং হতে পারে। সিরামে থাকা এই অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট পোরসের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এতে স্কিনের ব্রেকআউট হওয়ার চান্স কমে যায়। ত্বক থাকে সুরক্ষিত।

সিরামে থাকা অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস এর সংখ্যা কম নয়। একেকটির বেনিফিটও একেক রকম। শুধু উপকারিতা দেখেই সিরাম কিনে ফেলবেন না যেন! ত্বকের ধরন বুঝে, প্যাচ টেস্ট করে, কনসার্ন বুঝে তবেই সিরাম বাছাই করুন। কোন ইনগ্রেডিয়েন্ট কত পার্সেন্ট ইউজ করা যাবে সেটা আগে জেনে ও বুঝে নিন।  অথেনটিক সেলফ কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্টস পেয়ে যাবেন চারদিকে’তে। চারদিকে’র দুটি আউটলেট রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়াতে আল জয়নাল ট্রেড সেন্টারে। ফিজিক্যালি কিনতে চাইলে এই দুটি আউটলেট ঘুরে আসতে পারেন। আর ঘরে বসে প্রোডাক্ট হাতে পেতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন চারিদিকে’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপে।

ছবি – সাটারস্টক

0 I like it
0 I don't like it