বিয়ের সময় কনের পারফেক্ট লুকের জন্য কি কি ধাপ ফলো করা উচিত??

Untitled-1

‘ওয়েডিং সিজন’ বা ‘বিয়ের মৌসুম’ শুরু হয়ে গেছে। বিয়েতে বরের সাজ নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা না হলেও নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে চান সব কনে-ই। তাই এ সময় সাজতে গিয়ে ত্বকের আর্দ্রতার ব্যাপারটি মাথায় রাখা জরুরি। বিয়েবাড়িতে আকর্ষণের কেন্দ্র থাকেন কনে। তাই বিয়ের দিন প্রতিটা কনে নিজেকে আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে তুলতে চান। সে কারণে প্রয়োজন একটু বিশেষ যত্ন। বিয়ের কয়েক মাস আগে থেকে বাড়িতে অথবা সম্ভব হলে পারলারে গিয়ে ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বিয়ের আগেও কনেকে কিছু দরকারি প্রস্তুতি নিতে হবে। শারীরিক, মানসিক—দুই দিক থেকেই চাপমুক্ত থাকতে হবে। নিজেকে ফিট রাখতে হবে, নজর দিতে হবে চুল থেকে নখের প্রতিটি কোণে।  

আজকাল বিয়ে হবে বলে বেশিরভাগ মেয়ে বিয়ের কেনাকাটা, দৌড়ঝাঁপ, সব কিছুতেই অংশ নেন। যারা চাকরি করেন, তাঁদের তো বাড়তি চাপ রয়েছেই। তা ছাড়াও বিয়ের আগে অনেক মেয়েই নানা বিষয় নিয়ে কমবেশি মানসিক চাপে ভুগতে থাকেন। অনেকেরই খাওয়াদাওয়া কমে যায়, মুখে ক্লান্তির ছাপ পড়তে শুরু করে। বিয়ের দিনে প্রত্যেকের নজর থাকে কনের দিকেই। তাই ত্বকের পরিচর্যায় কমতি থাকলে, মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলে কিন্তু হাজার মেকআপেও সেই জৌলুস ফুটে উঠবে না আপনার মুখে। 

শীতে কেমন হওয়া উচিত কনের ত্বকের যত্ন

শীতে আবহাওয়া শুষ্ক হওয়ায় ত্বক তার আর্দ্রতা হারিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। শীতে বিয়ের সাজ এ এমন সব প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত, যেগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা ও আর্দ্রতা দুটোই ধরে রাখবে। শীতের মৌসুমে বিশেষ পুষ্টি ও আর্দ্রতা যোগান দেবে এমন প্রসাধনী ব্যবহার করা প্রয়োজন, পাশাপাশি চাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস।

বিয়ের পোশাক

বিয়ের সাজে লাল শাড়ি, লাল লিপস্টিক ও লালটিপ ছাড়া বউয়ের সাজ ভাবাই যেত না। তবে দিন বদলেছে, বউয়ের বিয়ের সাজে এসেছে অনেক রঙ। এ সময়ের কনেরা বিয়ের সাজে ট্র্যাডিশনাল লুককে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।

বিয়ের সাজে কনের কাপড়ের ধরনটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শাড়ি দেখেই কনের বিয়ের সাজের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। আবার কনের পেশা বা পছন্দের ওপর নির্ভর করে বিয়ের সাজে স্পেশাল লুক আনা সম্ভব হয়।

 শীতে বিয়ের সাজ এ মেকআপ টিপস

এখন ‘মেকআপ’ সম্পর্কে কম বেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় মেকআপ এর লং লাস্টিং নিয়ে। তাই শীতেও চাই ওয়াটারপ্রুফ বা ট্রান্সলুসেন্ট মেকআপ। শীতে বিয়ের সাজ এ ত্বক ঘামে না, মেকআপ দেখায় ভাল, টেকেও বেশিক্ষণ। 

শীতে বিয়ের সাজ এ সঠিক মেকআপই আপনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে পারে কয়েকগুণ, মেনে চলুন নিচের টিপসগুলি-

ফাউন্ডেশন

তৈলাক্ত ত্বকে ফাউন্ডেশন বা পাউডার লাগানোর আগে অবশ্যই ভালো ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এরপর ময়েশ্চারাইজার এপ্লাই করে তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফাউন্ডেশন লাগান। মেকআপ সহজে ঘেমে যাবে না। ফাউন্ডেশন হলো যে কোনো মেকআপ-এর বেস। আর বেস মেকআপ করার পদ্ধতি যদি ভালো না হয় তাহলে পুরো মেকআপ টাই বৃথা। তাই যখনি ফাউন্ডেশন কিনবেন, দেখে নেবেন যে আপনার গায়ের রঙের সাথে ফাউন্ডেশনের কোন রঙটা সবচেয়ে বেশি ব্লেন্ড হচ্ছে।

আইলাইনার

চোখের শেপকে নজরকাড়া আইলাইনারের তুলনা হয়না। আইলাইনার দিয়ে নানারকমের স্টাইলে চোখ আঁকা যায়, যা প্রতিবার আপনাকে এক একটা নতুন লুক দেবে। আপনি লিকুইড কিংবা পেন্সিল লাইনার ব্যবহার করতে পারেন। শীতে বিয়ের সাজ এ আপনি চাইলে গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে সরে নীল, গাঢ় সবুজ বা অন্যান্য যে কোনো রং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। আই পেনসিলের কাজল কিছুক্ষণ পর মুছে যায়। তার বদলে লিক্যুইড আই লাইনার ব্যবহার করুন।

কনসিলার

যদি চোখের কোণে কালি থাকে তাহলে চোখ দেখতে আরও ছোট ও ক্লান্ত লাগে। তাই মেকআপ শুরু করার আগে কনসিলার দিয়ে চোখের কোলের কালি ঢেকে নিন। এতেই চোখ দেখতে কিছুটা বড় লাগবে। কালি পড়া চোখে কাজ লাগালে কিন্তু দেখতে আরও ক্লান্ত লাগবে। মুখের দাগ-ছোপ, চোখের পর্ক সার্কেল, লালচে ছোপ ইত্যাদি লুকোনোর জন্য কনসিলার ব্যবহার করা হয়। যদি আপনার গায়ের রং ফর্সা হয়, তাহলে কনসিলার কেনার সময় অবশ্যই নিজের মুখের রঙের সাথে ভালোভাবে ব্লেন্ড হচ্ছে এবং শেডই কিনবেন।

লিপ্সটিক

সবার ঠোঁটে সবরকম লিপস্টিক মানায় না। তাই কেনার আগে দেখে নিন কার কোন টেক্সচারে লিপস্টিক আপনাকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে। শীতে বিয়ের সাজ এ গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করাই ভালো। লিপস্টিক লাগানোর আগে ঠোঁটে কিছুটা ফাউন্ডেশন লাগান। তাহলে লিপস্টিক সহজে উঠে যাবে না। লিপস্টিকের রঙের সাথে মিলিয়ে প্রথমে ঠোঁট সুন্দর করে লিপলাইনার দিয়ে এঁকে নিয়ে লিপস্টিক দিতে হবে। গায়ের রঙের সাথে মানানসই লিপস্টিক ব্যবহার করবেন। চুল খোলা রাখলে লিপগ্লস না লাগালেই ভালো হয়। কারণ চুল এলোমেলো হয়ে উড়ে এসে লিপগ্লসে আটকে যেতে পারে।

আইশ্যাডো

আইশ্যাডোর রঙ যত হালকা হবে চোখ দেখতে তত বড় লাগবে। বাইরের দিকে গাঢ় রঙের আইশ্যাডো লাগালেও চোখের ভিতরের কোলে হালকা আইশ্যাডো লাগান। সাদা, সিলভার, গোল্ডেন বা ব্রঞ্জ আইশ্যাডো ব্যবহার করুন। গোটা চোখ জুড়ে মোটা করে আইলাইনার লাগাবেন না। চোখের নীচের অংশে আইল্যাশের ভিতর দিকে আইলাইনার লাগাবেন না। আইল্যাশের বাইরে দিয়ে লাগান। চোখের কোল পর্যন্ত টানবেন না। তার একটু আগে ছেড়ে দিন। দিনের সাজে চোখের মেইকআপের জন্য প্যাস্টেল শেইড। যেমন- হালকা নীল, হালকা সবুজ, হালকা বেগুনি ইত্যাদি রং বেছে নেওয়া যেতে পারে। সোনালি শিমারের বদলে ব্রঞ্জ বা ম্যাট সিলভার রং বেছে নিতে পারেন। রাতে অনুষ্ঠান হলে মাশকারা ও আইশ্যাডো ব্যবহার করুন। পোশাকের রঙে  মিলিয়ে আইশ্যাডো ব্লেন্ড করেও দেওয়া যেতে পারে। ভ্রু পেন ব্যবহার করুন একদম নিজস্ব স্টাইলে।

হাইলাইটার

ত্বকের উঁচু অংশগুলোতে হাইলাইটার বুলিয়ে নিন। বিয়ের কনেদের সোনালি বা হালাকা গোলাপি শেইডের হাইলাইটারে বেশি ভালো লাগবে। নাকের উপরে, গালের উঁচু অংশে, ঠোঁটের উপরে, থুতনিতে এবং কপালে হালকা করে হাইলাইটার বুলিয়ে নিতে হবে।

ফেসিয়াল 

যাঁরা নিয়মিত ফেসিয়াল করেন, তাঁরা ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে রয়েছেন। তবে যদি ফেসিয়ালে অভ্যস্ত না থাকেন তাহলেও বিয়ের ২-৩ দিন আগে ফেসিয়াল করাতে যাবেন না! যে ফেশিয়ালটা করে আপনি অভ্যস্ত, সেটাই নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে করে যান। ইচ্ছে করলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনার ত্বকের ধরনের সঙ্গে মানানসই কোনও বিশেষ ফেশিয়াল করাতে পারেন। ত্বকে কালচে ছোপ, ব্রণ বা ওই ধরনের কোনও সমস্যা থেকে থাকলে তা কমানোর দিকে নজর দিন।

সুন্দর ত্বক পেতে সম্ভব হলে বিয়ের ছয় মাস আগে থেকে নিয়মিত ফেসিয়াল করা উচিত। গোল্ড, সিলভার, পার্ল অথবা ডায়মন্ড ফেসিয়াল করিয়ে নিতে পারেন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে ফেসিয়াল করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

ঘরোয়া যত্ন

প্যাক হিসেবে প্রতিদিন চালের গুঁড়ার সঙ্গে টক দই মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। এই প্যাকটি ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।

হাত ও পায়ের যত্ন

বিয়ের অন্তত একমাস আগে থেকে হাত ও পায়ের যত্ন নিন। সপ্তাহে দু’বার স্ক্রাবিং আর ময়শ্চারাইজ়িং করবেন। নখ কেটে ফাইল করে রাখুন। বিশেষ নজর দিন হাঁটু, গোড়ালি, কনুইয়ের পিছনদিকের ত্বকে। 

ঠোঁটের যত্ন

ঠোঁটের কালো ভাব দূর করতে কাঁচা দুধ তুলায় নিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার আলতো করে ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দুধের সর ও চিনি দিয়ে প্রতিদিন মাত্র দুই মিনিটের ম্যাসাজেও ভালো ফল পাবেন।

চুলের যত্ন

চুলের যত্নে হট অয়েল ম্যাসাজ খুব জরুরি। পুরো রাত তেল দিয়ে রাখা সম্ভব না হলে শ্যাম্পু করার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে তেল দিয়ে নিন। এ ছাড়া অ্যালোভেরা, টক দই, ডিমের সাদা অংশ ও একটি কলা ভালো করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিয়ে চুলে লাগানো যেতে পারে। চুল ঝলমলে ও সিল্কি হয়ে উঠবে। চুলের শেপ কেমন রাখবেন, সেটাও বিয়ের ১৫–২০ দিন আগে ঠিক করে নিন। চুল কাটানোর পর সেট হতে এই সময়টা লাগবে।

চুলের সাজ

ঠাণ্ডা বাতাস এবং শুষ্ক হাওয়ায় আপনার চুলের স্টাইল নষ্ট করতে পারে। শীতে বিয়ের সাজ এ সাধারণত চুল বেঁধে রাখার চলটাই বেশি দেখা যায় তবে চুলের স্টাইল নির্ভর করবে আপনার পোশাকের ওপর। পোশাক যদি হয় শাড়ি তাহলে হাত খোঁপা করে চুলে ফুল লাগাতে পারেন। আর চুল যদি ছোট হয় তাহলে ছেড়ে রেখে দিন। এতেই আপনাকে অনেক সুন্দর লাগবে।

কিরকম গহনা পরবেন?

আগের দিনের মত ভারী গহনার চল এখন নেই বললেই চলে তবে মেটাল, এন্টিক বা রূপার গহনা পড়তে পারেন, এতে বেশ কম্ফোর্টেবল থাকবেন। হাতে পড়ুন চুড়ি অথবা ব্রেসলেট। তবে কানে বড় এক জোড়া দুল পড়লে গলায় কিছু না পড়লেও চলে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে টিপ পরতে পারেন।

শীতে বিয়ের সাজ এ আরও কিছু

প্রতিদিন অন্তত দু’ লিটার পানি খেতে শুরু করুন। ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে এক চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার আর মধু মিশিয়ে খান। গাজর, শসা বা তুলসির রস খেলেও উজ্জ্বলতা বাড়বে। 

বিয়ের আগে অন্তত তিন সপ্তাহ সময়মতো খাওয়াদাওয়া করুন, সময়ে ঘুমোতে যান। প্রতিদিন একটা নিয়মের মধ্যে থাকলে চুল আর ত্বক এমনিতেই ঝকঝকে হতে শুরু করবে। তার সঙ্গে ত্বক পরিষ্কার আর টোনড করে রাখবেন।

তাই শীতে বিয়ের সাজ এ সুন্দরী হয়ে উঠতে হলে পরিচর্যা শুরু করতে হবে হাতে সময় নিয়েই। শুধু বাইরে থেকে পরিচর্যা নয়, সুস্থ থাকতে হবে ভিতর থেকেও। ভিতর থেকে সতেজ, ঝলমলে থাকলে তার ছাপ পড়বে আপনার মুখেও।

 

0 I like it
0 I don't like it

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.