প্রতি বছর লাখ লাখ তরুণ তরুণী গ্র্যাজুয়েট হয়ে কর্ম জীবনে প্রবেশ করে কিন্তু গ্র্যাজুয়েশনের পর চাকরি যেন সোনার হরিণ। শিক্ষা জীবনের সাথে কর্ম জীবনের বেশ খানিকটা তফাৎ রয়েছে তাই কোনো ধরনের গাইড লাইন ছাড়া হঠাৎ করে চাকরী জীবনে প্রবেশ করতে গেলে অনেকটাই হিমশিম খেতে হয়। আর এই প্রতিযোগিতার যুগে তাল মিলিয়ে চলতে যেয়ে একটু খানি হোচট খেলেই ভর করে চরম হতাশা। তাই কর্ম জীবনে প্রবেশের পূর্বেই কিছুটা বাড়তি প্রস্তুতি আপনার ক্যারিয়ারে এনে দিবে সফলতা।
১। ইন্টারভিউ এর ভয়কে জয়
ইন্টারভিউ বোর্ডে নার্ভাসনেস কাজ করে না এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। যতই প্রস্তুতি নিয়ে যাই না কেনো প্রথম কিছু ইন্টারভিউ আমাদের অনেকটাই কাবু করে দেয়। আমাদের অনেকেরই ইন্টারভিউ নিয়ে ধারণা নেই বললেই চলে, তাই গ্র্যাজুয়েশনের পর হঠাৎ করে ইন্টারভিউ দিতে যেয়ে অনেকেরই বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা পেয়ে হতাশা সৃষ্টি হয়। আর এই হতাশা থেকে ইন্টারভিউ ভীতি আরও বেড়ে যায়। তাই গ্র্যাজুয়েশনের আগেই কিছু ছোট খাটো ইন্টারভিউ এর অভিজ্ঞতা আপনার এই ভয়কে কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। এছাড়া ইউটিউব থেকে কিছু ইন্টারভিউ সম্পর্কিত ভিডিও টিউটোরিয়াল আপনাকে ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রশ্ন সম্পর্কে অগ্রিম ধারণা দিবে যা আপনাকে প্রস্তুতি নিয়ে সাহায্য করবে।
২। আপনার রেজিউম হোক আকর্ষণীয়
একটি ভালো মানের চাকরীর সুযোগ অনেকটাই নির্ভর করবে আপনার রেজিউম বা সিভির উপর। কথায় আছে “আগে দর্শনধারী পরে গুনবিচারী”, এখানেও বিষয়টা অনেকটাই এমন। কারণ সবার প্রথমে আপনার সিভিই আপনাকে রিপ্রেজেন্ট করবে তাই ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজেকে প্রমান করার প্রথম সুযোগটা এই সিভিই আপনাকে এনে দিবে। এখন কথা হচ্ছে এই রেজিউম আকর্ষণীয় কীভাবে হবে? সিভি কি কালারফুল বা অনেক ডিজাইন দিয়ে বানাবো? উত্তর হচ্ছে না, সিভিতে কখনোই কোনো ডিজাইন বা নকশার প্রয়োজন নেই। বরং অতিরিক্ত ডিজাইন, কালার বা অযাচিত তথ্য আপনার সিভির মান আরও খারাপ করে দেয়। সিভির কালার ফরমেট, ফন্ট বা পেইজের সংখ্যা কোনো কিছুতেই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ঠিক নয়। যত অল্প কথায় গুছিয়ে নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ব্যাপারে লেখা থাকবে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক আসার চান্স ততই বেশি হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে একটি কোম্পানী আপনার মত আরও হাজারটা সিভি পেয়ে থাকে তাই খুব অল্প কথায় যখন আপনার দক্ষতা ফুটে উঠবে সেটি চাকরীদাতার আপনার প্রতি একটি আগ্রহ সৃষ্টি করবে।
৩। কোনো কাজই ছোট নয় চাকরী জীবনে
কাজকে তাচ্ছিল্য করলে কাজও আপনাকে তাচ্ছিল্য করবে। কোনো কাজই ছোট বা বড় হয় না তাই কাজকে সম্মান করতে জানলে আপনি অবশ্যই তার ফল একদিন পাবেন। তাই ভার্সিটি লাইফেই ছোট খাটো কোনো কিছু করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার কর্ম জীবন সম্পর্কে একটি বাস্তব ধারনার পাশাপাশি নিজের ব্যাপারে ঝালাই করে নেয়ার একটি সুযোগ থাকে। নিজের কোন কোন বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন সেই ব্যাপারে একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। এছাড়া মানুষের মাঝে নিজের দক্ষতার পরিচিতি তৈরী করতে বা সহজ ভাষায় নেটওয়ার্কিং বাড়াতে আপনাকে সাহায্য করবে।
৪। চাকরী জীবনে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান যথেস্ট নয়
বর্তমানে প্রতিযোগিতার যুগে প্রতিদিন হাজার হাজার তরুণ তরুণী চাকরীর জন্য আবেদন করে। সেখানে হয়তো গুঁটি কয়েকজন মন মতো ক্যারিয়ার গড়তে পারে। কারণ হাজার হাজার জব এপ্লিকেশনের ভিতর শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট আপনার পছন্দের চাকরী এনে দিতে পারবে না। তাই নিজেকে আরো এক ধাপ এগিয়ে প্রস্তুত করতে শিখে রাখুন অতিরিক্ত কিছু স্কিলস। আজকাল সব কিছুই ডিজিটাল ম্যানেজমেন্টের অন্তর্ভুক্ত তাই কম্পিউটার সম্পর্কিত কিছু স্কিলস নিজের আয়ত্তে রাখুন। এটি আপনাকে বাকিদের থেকে বাড়তি কিছু সুবিধা পেতে সাহায্য করবে। এছাড়া বর্তমানে ইংরেজী ভাষা ছাড়া চলাই দায়। তাই ইংরেজিতে দুর্বল থাকলে বাড়তি কিছু কোর্স করে নিজের ভাষাজ্ঞান বৃদ্ধি করার চেষ্টা করুন।
চাকরি বাকরি তে প্রবেশ করার আগে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়া টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টার্ভিউয়ের এর ভয় কে জয় করে নিজের মধ্যে সাহস এনে মুখোমুখি হতে হবে। নিজের সিভি বা রেজুমে কে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে নিতে হবে কারন কোম্পানি আপনার সিভি দেখে আপনার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা লাভ করবে। অবশ্যই কোন কাজকে ছোট করে দেখা যাবে না। সবশেষে, আপনার উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা খুব জরুরি যেটা না থাকলে আপনাকে প্রতি পদে পদে হিমশিম খেতে হবে।