একনে বা ব্রণ সমস্যা দূর করার জন্য কতকিছুই না করছেন! মুখে নানা ধরনের ফেইসপ্যাক, নানাজনের কাছ থেকে নাম শুনে শুনে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্লিনজার ব্যবহার করা, নিমপাতা বেটে মুখে লাগিয়ে রাখা – এমন কত কী! তাই না? থামুন! থামুন! সবার কথা শুনে মুখে সবকিছু অ্যাপ্লাই করে ত্বকের অবস্থা নাজুক করে ফেলছেন না তো? ভাবছেন, এসব যদি না করেন, তাহলে একনে প্রন স্কিনের যত্ন কীভাবে নিবেন? এ সমস্যা সমাধানের জন্য আছে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত বেশ ভালো একটি ক্লিনজার। আজ সেই ক্লিনজার সম্পর্কেই জানাবো আপনাদের।
একনে প্রন স্কিনের যত্ন
যারা বেশ অনেকদিন ধরে ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন তারা জানেন এর ভোগান্তি। তাই তো এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে যে কোনোকিছু করতে তারা প্রস্তুত থাকেন। কিন্তু আমি যদি বলি একনে প্রন স্কিনের যত্ন নেয়া যাবে খুব সহজেই, তাও মাত্র একটি ক্লিনজার দিয়েই? বিশ্বাস হচ্ছে না তো? আমি নিজেও ব্রণের সমস্যায় ভুগছিলাম বেশ কিছুদিন ধরে। বেস্ট সল্যুশন খুঁজতে খুঁজতে চারদিকে’র ওয়েবসাইটে এই কোরিয়ান ক্লিনজারটির সন্ধান পাই। যেহেতু কোরিয়ান প্রোডাক্টের রিভিউ বেশ ভালো, আর আমি আগেও কিছু প্রোডাক্ট ব্যবহার করেছি, তাই ভাবলাম এটাও ব্যবহার করে দেখি। ব্যবহার করার পর আমি সত্যিই খুব খুশি। তাই ভাবলাম আমার ব্যবহার করা এই ক্লিনজারটি সম্পর্কে আপনাদেরও জানাই। এতক্ষণ ধরে যে ক্লিনজারটির কথা আমি বলছিলাম সেটি হচ্ছে GFORS SALICYLIC ACID DEEP CLEANSING FOAM। চলুন তাহলে এর রিভিউ জেনে নেয়া যাক এবার।
GFORS SALICYLIC ACID DEEP CLEANSING FOAM
একনে প্রন স্কিনের যত্ন নেয়ার জন্য যে ক্লিনজারটি আমি বেছে নিয়েছি সেটিতে এমন কিছু ইনগ্রেডিয়েন্ট ছিল যেগুলো ত্বকের জন্য উপকারী। ব্যবহারের পর বুঝতে পেরেছি এগুলো আসলে কতটুকু বেনিফিসিয়াল ত্বকের জন্য। তাই আপনাদেরকেও জানিয়ে দিচ্ছি উপাদান ও ক্লিনজারটির ব্যবহারবিধি ও কার্যকারিতা সম্পর্কে।
ক্লিনজারের মেইন ইনগ্রেডিয়েন্টস
যে কোনো প্রোডাক্ট কেনার আগে তার ইনগ্রেডিয়েন্টস দেখে নেয়া জরুরি। কারণ এমন ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকতে পারে যা হয়ত আপনার ত্বকে স্যুট করবে না। তাই আগে থেকে জেনে নিলে সুবিধা হবে। তবে এমন সমস্যা হওয়ার চান্স খুব কম। কারণ স্পেসিফিক প্রবলেমের জন্য স্পেসিফিক ইনগ্রেডিয়েন্টই বেছে নেয়া হয় যেন প্রবলেম সলভ করতে পারে। এই ক্লিনজারের মেইন ইনগ্রেডিয়েন্ট তিনটি।
- স্যালিসাইলিক অ্যাসিড
- লরিক অ্যাসিড
- অ্যালোভেরা
ইনগ্রেডিয়েন্টগুলোর উপকারিতা
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড
এই উপাদানটি মূলত ব্রণকে টার্গেট করেই কাজ করে। এতে আছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ, যা একনে দ্রুত কমিয়ে স্কিনে সুদিং ফিল দেয়। স্কিনকে এক্সফোলিয়েট করে ডেড স্কিন সেলস রিমুভ করে বলে স্কিন থাকে সফট। প্রতিদিন বাইরের ধুলোবালি, ময়লা, মেকআপ পার্টিকেলস জমে স্কিনের পোরস ক্লগ হয়ে যেতে পারে। যা থেকে একনে প্রবলেম আরও বাড়তে পারে। ক্লিনজারে থাকা এই উপাদানটি পোরস আনক্লগ করতে হেল্প করে বলে স্কিন থাকে ফ্রেশ।
একনে ছাড়াও আমাদের মধ্যে অনেকেরই ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডসের প্রবলেম বেশি থাকে। স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত প্রোডাক্ট নিয়মিত ব্যবহারে এগুলো থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। ত্বকের অয়েলিনেস কমিয়ে ত্বককে ডিপলি ক্লিন করে এবং ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডসের সমস্যা কমে আসে।
সাধারণত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টসে ০.৫ থেকে ২% পর্যন্ত স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয় এবং এই পরিমাণটাই সেইফ। এর বেশি হলে স্কিনের জন্য তা হার্মফুল হতে পারে। ত্বকের সুস্থতার জন্য এই ক্লিনজারেও এই পরিমাণ স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়েছে।
অ্যালোভেরা
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজযুক্ত অ্যালোভেরা একনে কজিং ব্যাকটেরিয়াগুলোকে রিডিউস করতে এবং কন্ট্রোল করতে হেল্প করে। ন্যাচারাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বলে ইরিটেশন কমায় এবং স্কিনে দেয় সুদিং ফিলিং। এতে থাকা ন্যাচারাল অ্যাস্ট্রিনজেন্ট প্রোপার্টিজের কারণে স্কিনের এক্সেস অয়েল ডিজলভ হয় এবং স্কিন থাকে ময়েশ্চারাইজড। স্কারস, একনে স্পট ফেইড করতেও এটি বেশ কার্যকর। পোরস টাইট করতে, সিবাম ও ডার্ট ডেড সেলস রিমুভ করতেও অ্যালোভেরা খুব ভালো কাজ করে।
অ্যালোভেরাতে ন্যাচারাল কিছু এনজাইম আছে, যা স্কিন এক্সফোলিয়েট করতে হেল্প করে। সেই সাথে ডেড স্কিন সেলস রিমুভ হয় এবং পোরস আনক্লগ হয়। তাছাড়া ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস ফর্মেশনকেও প্রিভেন্ট করে অ্যালোভেরা।
লরিক অ্যাসিড
লরিক অ্যাসিডে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ। একনে রিমুভ করার জন্য এই উপাদানটি খুবই কার্যকর। আমাদের স্কিনে Propionibacterium acnes নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে, যেটা সাধারণত ত্বকেই পাওয়া যায়। এগুলো যখন বেরে যায়, তখন একনে বেড়ে যায়। লরিক অ্যাসিড এই ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা কমায় এবং ইনফ্ল্যামেশন রিডিউস করে। অনেক গবেষণায় এটাও জানানো হয়েছে যে, একনে ট্রিটমেন্টে যে বেনজয়েল পারঅক্সাইড ব্যবহার করা হয়, তার চেয়েও লরিক অ্যাসিড বেশি কার্যকর। তাই বলা যায়, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরিযুক্ত এই উপাদানটি যে শুধু একনে কমাতেই সাহায্য করে তাই নয়, বরং ভবিষ্যতে একনে হওয়ার সম্ভাবনাকেও কমায়।
এক নজরে এর কার্যকারিতা
- একনে ব্রেকআউট কমায়
- ডার্ট ও এক্সেস অয়েল জেন্টলি রিমুভ করে
- একনে প্রন ও সেনসিটিভ স্কিনের জন্য বেশি কার্যকরি
- এতে থাকা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ডেড স্কিন সেলস রিমুভ করে বলে নতুন সেলস তৈরি হয়
- স্কিন রাখে সফট ও ময়েশ্চারাইজড
- একনে ও ব্লেমিশ রিডিউস হয় বলে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল
স্মেল ও টেক্সচার
প্রোডাক্ট কেনার পর যদি সেটার স্মেলই ভালো না লাগে তাহলে ব্যবহারের ইচ্ছাটাও কমে যায়। অনলাইনে অর্ডার করে হাতে পাওয়ার পর এই ব্যাপারটি আমি আগে চেক করে নিয়েছিলাম। একদমই হতাশ হইনি। মাইল্ড একটা স্মেল আছে এতে যা ব্যবহারে রিফ্রেশ ফিল হয়। এটি ব্যবহার করে মুখ ধোয়ার পর সুদিং একটা ফিলও পাওয়া যায়।
ক্লিনজারটি ক্রিমি টেক্সচারের হলেও বেশ লাইটওয়েট। স্কিনে হেভি ফিল দিবে না। ১৫০ মি.লি. এর টিউবে পাওয়া যাচ্ছে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- অল্প পরিমাণ হাতে স্কুইজ করে নিন।
- জেন্টলি ফোম তৈরি করুন এবং ম্যাসাজ করে ভেজা মুখে অ্যাপ্লাই করে নিন। চোখের এরিয়াটুকুতে লাগাবেন না।
- জেন্টলি রাব করে কয়েক সেকেন্ড পর মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
কেন আপনাদের সাজেস্ট করছি?
একনে প্রন স্কিনের যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে সবার প্রথমে আমরা ভাবি যে ক্লিনজারটি আমরা বেছে নিচ্ছি সেটা আমাদের জন্য সেইফ হবে কিনা। স্কিনকে যদি ওভারড্রাই করে দেয়? ত্বকের অয়েলিনেস যদি না কমে? যদি আবারও ব্রণের সমস্যা বেড়ে যায়? এই চিন্তাগুলো করা খুবই স্বাভাবিক। আমি নিজেও এর বাইরে নই। কেনার আগে আমি এর প্রাইসটাও দেখেছিলাম। যখন বাজারের অন্যান্য প্রোডাক্টের চেয়ে কিছুটা বাজেট বেশি দিয়ে কিনব, তখন সেটি আমার স্কিনের জন্য কতটুকু সেইফ হবে সেটা আমি অবশ্যই ভাবব। তবে কোরিয়ান প্রোডাক্ট বলে ভাবনাটা খুব বেশি সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কেনার সিদ্ধান্ত দ্রুত নিয়েছি।
ব্যবহারের পর বুঝলাম আমার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। এটি ব্যবহারে আমার ত্বকে যে কয়েকটি একনে ছিল, সেগুলো ধীরে ধীরে কমে গিয়েছে। কয়েকদিন তো হয়ে গেলো, এখনও কোনো পিম্পল বা একনে হয়নি। স্কিন ড্রাই করেনি। ব্যবহারের পর ত্বক হাইড্রেটেডই ছিল। সব মিলিয়ে আমার এক্সপেরিয়েন্স বেশ ভালো। আমার পরিচিত আরও দুইজনকে আমি এই ক্লিনজারটি রিফার করেছিলাম। তাদের রিভিউও বেশ ভালো। অথেনটিসিটির জায়গায় বেশ ভালোভাবেই উতরে গিয়েছে এই ক্লিনজারটি। এবার আপনারাই বলুন, কম দামী প্রোডাক্ট কিনে ত্বকের ক্ষতি করার চেয়ে একটু বাজেট বাড়িয়ে ত্বকের জন্য বেস্ট প্রোডাক্টটি চুজ করাই কি ওয়াইজ ডিসিশন নয়?
স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন চারদিকে থেকে। চারদিকে’র দুটি আউটলেট রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়াতে আল জয়নাল ট্রেড সেন্টারে। ফিজিক্যালি কিনতে চাইলে এই দুটি আউটলেট ঘুরে আসতে পারেন। আর ঘরে বসে প্রোডাক্ট হাতে পেতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন চারদিকে’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপে।
ছবি- চারদিকে, অ্যাটলান্টিয়া অ্যালো