গ্রীষ্মকালে ত্বকের যত্ন করবেন কিভাবে?

গ্রীষ্মকালে ত্বকের যত্ন

গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলে আপনার ত্বক নিজে থেকেই বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। গ্রীষ্মের দাবদাহে তাই ত্বককে বাঁচাতে আপনার নিত্যদিনের রুটিনে আনতে হবে ব্যাপক পরিবর্তন। কেননা, সূর্যের প্রখর তাপ আপনাকে ততটা কাবু করতে না পারলেও আপনার ত্বকই কিন্তু প্রধান টার্গেট হিসেবে পরিণত হবে। 

গরমের সময়টাতে দূষণ এবং প্রাকৃতিক অন্যান্য দূষকগুলো আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা কাটিয়ে দেয়। এবং ত্বককে করে তোলে তৈলাক্ত, নিস্তেজ এবং দাগযুক্ত। তাই এই ত্বককে বাঁচাতে হলে নিতে হবে ত্বকের যত্ন। তবে সবার আগে বুঝতে হবে ত্বকের ধরন। আর সেই মোতাবেক নিতে হবে ত্বকের যত্ন। গ্রীষ্মকালে ত্বকের যত্নে কি করবেন এবং কি করবেন না তাই নিয়েই সাজানো আজকের আয়োজন। 

গ্রীষ্মকাল কীভাবে আপনার ত্বকে প্রভাব ফেলে? 

  • আবহাওয়া উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথেই বাতাসের আর্দ্রতাও বাড়তে থাকে। ফলে ত্বকের সেবেসিয়াস গ্রন্থি অতিরিক্ত সিবাম (প্রাকৃতিক তেল/ন্যাচারাল ওয়েল) উৎপাদন করা শুরু করে। এই ওয়েল বা তেল নিঃসরণ হয়ে ত্বকের উপরিপৃষ্ঠে আটকে যায়। যার ফলে ত্বকে তেল চিটচিটে, আঠালো ভাব হয় এবং লোমকূপের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়।  
  • একনে ব্রেকআউট বা ব্রণ বৃদ্ধি গ্রীষ্মের দিনের অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা তাই এই সময়টাতে অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। কেননা, ত্বকের ব্যাকটেরিয়া এবং ওয়েল মিশে গিয়ে লোমকূপের ছিদ্র আঁটকে দেয় এবং ব্রণের জন্ম হয়। 
  • আপনার ত্বক যখন সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসে তখন ত্বক রৌদ্র থেকে বাঁচতে মেলানিন তৈরি করে। মেলানিনে ফটোপ্রোটেক্টিভ গুণ থাকে। ফলে অতিরিক্ত মেলানিনের উৎপাদনে ত্বক হয়ে উঠে ডার্কার এবং ট্যানড। এছাড়াও, ত্বকে চুলকানি, জ্বালাপোড়া, এমনকি ফুসকুড়ি পর্যন্ত হতে পারে। 

গ্রীষ্মকালে যেভাবে আপনার ত্বকের যত্ন নিবেন 

    • তৈলাক্ত ভাব দূর করতে ফেস ওয়াশ বদলান:  গরমের দিনে ত্বক হয়ে উঠে আরো বেশি তৈলাক্ত। তাই শীতের দিনের ফেস ওয়াশ মোটেই কার্যকরি হবে না গ্রীষ্মের দিনে। তাই, গভীরভাবে পরিষ্কার করতে সক্ষম, সব ময়লা এবং চিটচিটে ভাব দূর করতে সক্ষম এমন কোন ফেস ওয়াশ বাছাই করুন। শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের জন্য নন-ফোমিং ক্লিনজার অত্যধিক কার্যকর। নরম, অ্যালকোহল মুক্ত এবং পিএইচ-ব্যালেন্সড ফেস ওয়াশ বাছাই করুন। 
    • একটি ভালো স্কিন কেয়ার রুটিন তৈরি করুন: গরমের দিনের জন্য ত্বকের একটি সুস্বাস্থ্যবিধি তৈরি করুন এবং প্রতিদিন তা মেনে চলতে চেষ্টা করুন। শুষ্ক ত্বকের জন্য জেল বেজড এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ওয়াটার বেজড স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন ক্রিম বেজড প্রোডাক্ট বর্জন করে। দিনে দুইবার ক্লিনিং, টোনিং এবং ময়শ্চারাইজিং আপনার ত্বককে পরিষ্কার ও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। 
    • স্কিন হাইড্রেট রাখার চেষ্টা করুন: গরমের দিনে স্কিন হাইড্রেট রাখার কোন বিকল্প নেই। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় মুখ ধোয়ার পর অতিরিক্ত হাইড্রেশন রাখতে হাইড্রেটিং ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত বিরতিতে মুখ ধৌত করুন এবং ত্বক সতেজ রাখতে ফেশিয়াল মিস্ট ব্যবহার করুন। 
    • স্বাস্থ্যময় ত্বকের জন্য এক্সফোলিয়েট করুন: উজ্জ্বল ও মসৃণ ত্বকের চাবিকাঠি হচ্ছে এক্সফোলিয়েশন। ত্বকের ময়লা এবং মৃত কোষগুলো পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এটি। ঘরোয়া পদ্ধতিতেই আপনি সপ্তাহে অন্তত দুইবার এক্সফোলিয়েট করতে পারেন যাতে করে ত্বক থেকে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব এবং ময়লা পরিষ্কার হবে। তবে অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েট কিন্তু সুফলের বদলে কুফল বয়ে আনতে পারে। 
    • সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন: গ্রীষ্মের দিনে পরম বন্ধু হওয়া উচিত সানস্ক্রিন। এমন একটা বাছাই করুন যেটাতে আল্ট্রা-ভায়োলেট স্প্রেকট্রাম রয়েছে। যদি সূর্যের তাপের বেশিক্ষণ থাকেন তবে তিন ঘণ্টা অন্তর অন্তর ব্যবহার করুন। মুখমণ্ডলের পাশাপাশি হাত, পা, কাঁধ এবং গলাতেও মেখে নিন। 
    • ভারী মেকআপ বাদ দিন: ত্বকের নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয় ভারী মেকআপ। আর্দ্রতা এবং তাপ ত্বকের শ্বাস প্রশ্বাসকে প্রভাবিত করে। ভারী ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য প্রসাধনীর পরিবর্তে, টিন্টেড লিপ বাম, অর্গানিক কাজল এবং টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। 
  • ভালো টোনার ব্যবহার করুন: একটি ভালো টোনার লোমকূপের ছিদ্র গুলো মুক্ত করতে দারুণ কার্যকর। মুখমণ্ডলের টি-জোনেই বেশিরভাগ সেবেসিয়াস গ্রন্থি থাকে। তাই, এই জায়গাটুকুর ছিদ্র গুলো ঘাম এবং ওয়েল দিয়ে বন্ধ রোধ করতে, অ্যালোভেরা বা শসার নির্যাসযুক্ত টোনার ব্যবহার করুন। 
  • ময়েশ্চারাইজার বদলে ফেলুন: গ্রীষ্মে ত্বক সুরক্ষিত রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নন-গ্রীজি ফর্মুলা বেজ ময়েশ্চারাইজার বাছাই করুন। কিন্তু উপাদানগুলো দেখে নিন যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ ও সি তে পূর্ণ কিনা। যদি এসপিএফ থাকে তাহলে তো আরো ভালো। স্নানের পরপরই ময়েশ্চারাইজার মাখুন। 
  • প্রচুর পানি এবং ফলমূল খান: গড়ে প্রতিদিন ন্যূনত্ব ২ থেকে ৩ লিটার পানি খান। নারকেলের পানি, তরমুজ এবং সতেজ ফলের জুস খেলে শরীর হাইড্রেট থাকে। পানি পান করলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলোও দূরীভূত হয়। 
  • প্রাকৃতিকতায় ভরসা রাখুন: মার্কেট বা অনলাইনের স্কিন কেয়ার বা বিউটি প্রোডাক্টগুলো অনেকের জন্যেই অনেক উপকারী। তবে প্রাকৃতিকতায় ভরসা রাখুন। আপনার ঘরই হতে পারে আপনার বিউটি সলিউশনের মূল কেন্দ্র। ওটমিল, কফির গুঁড়ো, চাঁছা শসা, সাধারণ দই এবং সামুদ্রিক লবণসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য অনেক কিছুই আপনার স্কিন কেয়ার সলিউশন হতে পারে। 

 

সোর্স:How to Take Care of Your Skin in Summer. 
02. Essential Skin Care Tips to Follow This Summer. 
03. How to transition your skincare routine for summer
0 I like it
0 I don't like it

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.