উজ্জ্বল ও ঝকঝকে ত্বক পাওয়ার সহজ কয়েকটি টিপস

skin 1

ঘুম থেকে উঠে আয়নার দিকে তাকালে নিজেকে দেখতে রিফ্রেশ লাগলে কার না ভালো লাগে বলুন? কিন্তু এই ভালো কি শুধু চাইলেই হবে? এর জন্য চেষ্টা করাটাও তো জরুরি! আর মূল সমস্যাটা শুরু হয় চেষ্টাতে এসেই। চাইবো ফ্রেশ লুক, কিন্তু এফোর্টের বেলায় জিরো! তাহলে কি হবে বলুন? উজ্জ্বল ও ঝকঝকে ত্বক পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম তো ফলো করতেই হবে। চলুন তাহলে এ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।

উজ্জ্বল ও ঝকঝকে ত্বক পাওয়ার উপায়

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমতে থাকে। সেই সাথে বাইরের ধুলোবালি, আবহাওয়ার পরিবর্তনের মতো নানা বিষয় তো আছেই। দিন দিন চেহারা মলিন হতে থাকলে আমরা ভাবি স্কিনকেয়ার করে আর কোনো লাভ নেই। অথচ সত্যিটা হচ্ছে ত্বক ভালো রাখার জন্য স্কিনকেয়ার রুটিন মানা খুব জরুরি। তাহলে বয়স বাড়লেও উজ্জ্বলতা মলিন হবে না। চলুন তাহলে উপায়গুলো জেনে নেয়া যাক।

১) ঘুমানোর আগে মুখ পরিষ্কার করে নিন

মুখ পরিষ্কার না করে যত ধরনের স্কিনকেয়ারই আপনি করুন না কেন, কোনো লাভ হবে না। সবার আগে ময়লা দূর করে ত্বক পরিষ্কার রাখা জরুরি। এজন্য রাতে ঘুমানোর আগে মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে মুখ মুছে নিন। এবার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।

২) টোনার ব্যবহার করুন

মুখ ধোয়ার পর স্কিনকেয়ার রুটিন থেকে টোনার একদমই বাদ দেয়া যাবে না। রাতারাতি মুখে যে উজ্জ্বলতা দেখা যায় সেটা এই টোনারের কারণেই। এটা একরকম ম্যাজিকের মতো কাজ করে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনারও বিভিন্ন ধরনের হয়। ড্রাই, অয়েলি, নরমাল স্কিন বুঝে টোনার বেছে নিন আপনার ত্বকের জন্য।

উজ্জ্বল ও ঝকঝকে ত্বক পাওয়ার জন্য টোনিং

৩) ভিটামিন সি যুক্ত সিরাম ব্যবহার করুন

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে ভিটামিন সি খুব ভালো কাজ করে। এই উপাদান যুক্ত সিরাম ব্যবহারে রাতারাতি ত্বক ময়েশ্চারাইজড হওয়ার সাথে সাথে ইনস্ট্যান্ট গ্লো বুস্ট হয়। তাই সকালে উঠে ত্বক দেখায় আরও উজ্জ্বল ও ঝকঝকে। তবে এই উপাদানে অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি অ্যাভয়েড করাই ভালো।

৪) ময়েশ্চারাইজার বাদ দিবেন না 

ক্লিনজিং, টোনিং এর পর আসে ময়েশ্চারাইজিং এর পালা। ত্বক নরম ও কোমল রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজার কোনোভাবেই বাদ দেয়া যাবে না। ত্বকের ধরন ও কনসার্ন বুঝে ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন।

৫) শিট মাস্ক ব্যবহার করুন

দিনশেষে শরীরের ক্লান্তি বোঝা যায় মুখ দেখেই। এই ক্লান্তি দূর করে ত্বকে উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে শীট মাস্ক। এক্ষেত্রে হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার করলে দ্রুত কাজ হবে। তাই হাইড্রেটিং ইনগ্রেডিয়েন্ট যেমন- হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বা সেরামাইড আছে এমন মাস্ক বেছে নিতে হবে। সুদিং ফিল আনার জন্য ঘরে বানানো ফেইস মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে একদিন স্কিন প্যাম্পারিং করলে দেখবেন ফেইসটাও কেমন গ্লো করছে!

উজ্জ্বল ও ঝকঝকে ত্বক পাওয়ার জন্য শীটমাস্ক

৬) ঘরেই করুন এক্সফোলিয়েশন

উজ্জ্বল ও ঝকঝকে ত্বক পাওয়ার জন্য ঘরোয়াভাবে এক্সফোলিয়েশন করতে পারেন। বাইরে না যেয়েও কীভাবে ঘরে বসে এক্সফোলিয়েশন করবেন চলুন জেনে নেয়া যাক-

  • ২ চা চামচ ওটমিল
  • ১ চা চামচ দুধ
  • ১ চা চামচ রোজ ওয়াটার

সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে মুখে ও গলায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর আঙুল দিয়ে আস্তে আস্তে মুখ ঘষে নিন। এতে ডেড স্কিন সেলস উঠে আসবে। এবার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৭) স্লিপিং মাস্ক ব্যবহার করুন

ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য স্লিপিং মাস্ক খুব ভালো কাজ করে। রাতারাতি গ্লোয়িং স্কিন পেতে চাইলে স্কিনকেয়ার রুটিনে স্লিপিং মাস্ক অবশ্যই যুক্ত করুন। চাইলে খুব সহজে ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন এই মাস্ক। আমি দুই ধরনের মাস্ক বানানোর উপায় আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি।

দুধ+আমন্ড ফেইস মাস্ক

এই দুটো উপাদান কমবেশি আমাদের সবার ঘরেই আছে, তাই না? দুধে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড স্কিনকে জেন্টলি এক্সফোলিয়েট করে সফট গ্লো নিয়ে আসে। আমন্ডে থাকা ভিটামিন ই ত্বকে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে।

এই মাস্ক বানানোর জন্য যা যা লাগবে-ত্বকের জন্য দুধ ও আমন্ড

৫/৬টি ভেজা আমন্ড, ২ চা চামচ ঠান্ডা দুধ

আমন্ড ব্লেন্ড করে নিয়ে তার সাথে দুধ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলুন আর ম্যাজিক দেখুন নিজের চোখেই!

ভিটামিন ই + অ্যালোভেরা ফেইস মাস্ক

রাতারাতি উজ্জ্বল ও ঝকঝকে ত্বক পাওয়ার জন্য আরও একটি দারুণ স্লিপিং মাস্ক হচ্ছে এটি। এই দুটোতেই প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও স্কিন সুদিং প্রোপার্টিজ আছে। যা অল্প সময়েই ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে সক্ষম।

এই মাস্ক বানাতে যা যা লাগবে-

২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল, ১ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল

দুটো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে নিন ঘুমানোর আগে। সকালে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখুন ত্বক কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে!

৮) চোখেরও যত্ন নিন

ত্বকের যত্ন নিতে নিতে এক সময় আমরা ভুলেই যাই যে চোখেরও যত্ন নিতে হবে। যদি নিয়মিত চোখের যত্ন না নেয়া হয়, তাহলে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন চোখ ফুলে আছে, ডার্ক সার্কেল পড়ে গেছে। তাই চোখেরও হাইড্রেশন প্রয়োজন। নারিশিং আই মাস্ক আপনি ব্যবহার করতে পারেন, তবে ঘরে বানানো মাস্কও বেশ ভালো কাজ করে এক্ষেত্রে। ঘরে থাকা উপকরণ দিয়েই এই মাস্ক বানানো যায়। চলুন তাহলে জেনে নেই এ সম্পর্কে।

শশা ব্যবহারে ডার্ক সার্কেল দূর হয়

শশার টুকরো বা টমেটো জুস

ভিটামিন ও নিউট্রিয়েন্ট যুক্ত শশা অক্সিডেটিভ ড্যামেজ কমাতে এবং ডার্ক সার্কেল দূর করতে বেশ ভালো কাজ করে। এর ব্যবহারে চোখের ফোলাভাবও কমে।

ডার্ক সার্কেল কমাতে টমেটোও খুব ভালো কাজ করে। টমেটোতে আছে লিকোপেন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি সান ড্যামেজ দূর করতে, স্কিন ব্যারিয়ার বুস্ট করতে, ডার্ক সার্কেল কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে ত্বক থাকে রিফ্রেশ।

আমন্ড অয়েল

আমন্ড অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, যা পিগমেন্টেশন কমাতে, ডার্ক স্পট ও ব্লেমিশ দূর করতে খব ভালো কাজ করে। রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক ফোঁটা আমন্ড অয়েল চোখের চারপাশে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ত্বকের উজ্জ্বলতা দেখে নিজেই অবাক হবেন!

৯) সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

সূর্যরশ্মির কারণে ত্বক একদম নিষ্প্রাণ হয়ে যেতে পারে, দেখা দিতে পারে ডার্ক প্যাচেস। ইউভি রে সরাসরি ত্বকের সাথে মিশে এবং উজ্জ্বলতাকে কমিয়ে দেয়। তাই বছরজুড়ে স্কিনকেয়ার রুটিনে অবশ্যই এসপিএফ যুক্ত একটি সানস্ক্রিন রাখুন।

সানস্ক্রিন ব্যবহারে ত্বক ভালো থাকে

১০) পর্যাপ্ত ঘুমাবেন

ঘুমের যদি ব্যাঘাত ঘটে বা ঘুম কম হয়, তাহলে যেমন আমাদের শরীর যেমন ভালো লাগে না, ঠিক তেমনই ত্বকও ধীরে ধীরে মলিন হতে থাকে। একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির অবশ্যই দিনে ৭/৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। ঘুম ভালো না হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে থাকে। পর্যাপ্ত না ঘুমালে দেখা দিতে পারে রিংকেলস। সেই সাথে ত্বক হারাবে ইলাস্টিসিটি।

উজ্জ্বল ও ঝকঝকে ত্বক পাওয়ার জন্য কী কী করণীয় সে সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য আপনাদের জানিয়ে দিলাম। আশা করি আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল। অথেনটিক স্কিনকেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট কেনার জন্য ভিজিট করতে পারেন চারদিকে’র আউটলেট, ওয়েবসাইট ও অ্যাপ।

ছবি- চারদিকে, Khushiworld, Real Simple, HerZindagi, Ausmetics

3 I like it
0 I don't like it