গরমে সুস্থ ও ভালো থাকতে চান? জেনে নিন উপায়গুলো

Summer

বাইরে গেলে তো বটেই, ঘরে থাকলেও ইদানিং যেন গরমের হাত থেকে রেহাই মিলছে না। কী করলে শরীর ঠান্ডা থাকবে, আরাম হবে এসব নিয়েই এখন সবার নিত্য ভাবনা। প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু ও বৃদ্ধ সব বয়সীদের জন্যই গরমে সুস্থ ও ভালো থাকা কঠিন। কীভাবে গরমে সুস্থ ও ভালো থাকতে পারবেন সেই বিষয়ে জানিয়ে দিচ্ছি কিছু পরামর্শ।

গরমে সুস্থ ও ভালো থাকতে যা যা করবেন

গরমকালে খাবার খাওয়া আর পোশাকের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। সেই সাথে ঘর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় মানতে হবে সচেতনতা। কীভাবে এই সময়ে জীবনযাপন করলে গরমেও স্বস্তিতে থাকা যাবে চলুন জেনে নেই এ বিষয়ে বিস্তারিত।

কী ধরনের পোশাক পরবেন?

গরমকালে পোশাক অবশ্যই আরামদায়ক হতে হবে। নইলে গরম বেশি লাগবে, অস্বস্তি হবে, চুলকানিও হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের পোশাক অবশ্যই নরম কাপড়ের হতে হবে। এক্ষেত্রে সুতি, লিনেন, শিফন বা খাদি কাপড়ের পোশাক হলে বেশি ভালো। আর অবশ্যই পোশাক ঢিলেঢালা হতে হবে। টাইট ফিটিং হলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হবে না। এই সিজনে অনেকেই স্লিভলেস পোশাক পরেন। ভাবেন, গরম কম লাগবে। কিন্তু স্লিভলেস পরলে হাতে রোদের তাপ লাগবে, যার কারণে গরমও লাগবে বেশি। তাছাড়া ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে। এজন্য যতটা সম্ভব বড় হাতার পোশাক পরুন।গরমে সুস্থ ও ভালো থাকতে পোশাক হতে হবে আরামের

আমরা জানি যে, সাদা রঙের পোশাকে সূর্যের তাপ কম প্রবেশ করে, যার কারণে গরম কম লাগে। সাদা ছাড়াও হালকা নীল, বেগুনি, গোলাপি, হলুদ রঙের পোশাক বেছে নিন। এতেও আরাম পাবেন। এ সময় কালো পোশাক বেছে না নেয়াই ভালো। বাইরে বের হলে মাথা ঢেকে বের হোন। হালকা রঙের স্কার্ফ বা ক্যাপ পরতে পারেন। এতে যেমন গরম কম লাগবে, তেমনই চুলও ভালো থাকবে।

ত্বকের সুরক্ষায় কী করবেন?

ঘরে বা বাহিরে যেখানেই থাকা হোক না কেন, গরমে ত্বকের উপর দিয়ে বেশ বড় ধকল যায়। রোদের তাপে ত্বক পুড়ে যায়, চামড়ায় দেখা যায় কালচেভাব। এই সমস্যা দূর করতে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। ২/৩ ঘন্টা পর পর রিঅ্যাপ্লাই করতে হবে। কাজে যাওয়ার সময় যারা মেকআপ করছেন তাদের মনে রাখতে হবে এ সময়ের মেকআপ হতে হবে খুব লাইট। ভারী মেকআপের কারণে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা হতে হবে। আর বাড়ি ফিরে ডাবল ক্লিনজিং অবশ্যই করতে হবে। মেকআপ পার্টিকেলস, ডার্ট, পল্যুশন ভালোভাবে রিমুভ না হলে স্কিনে র‍্যাশ, একনে, পিম্পলের মতো প্রবলেম দেখা দিতে পারে। মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।

বাইরে গেলে মুখ ঘামবেই। এজন্য ব্যাগে টিস্যু, রুমাল বা ফেসিয়াল ওয়াইপস রাখুন। কিছুক্ষণ পর পর মুখ মুছুন। খুব ভালো হয় যদি ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে পারেন মুখে। এতে ত্বক আরাম পাবে। এ সময় ঠোঁট ফাটে অনেকের। ময়েশ্চারাইজেশনের অভাবে এবং পর্যাপ্ত পানি না পান করলে এ সমস্যা দেখা দেয়। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করার পাশাপাশি লিপ বাম, চ্যাপস্টিক বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করতে হবে।গরমে শরীর ঘামে বেশি। তাই এ সময় একবার গোসল পর্যাপ্ত নাও হতে পারে। শরীর যেন আরাম পায় সেজন্য দিনে ২/৩ বার গোসল করতে পারেন। রাতে শোয়ার আগে গোসল করলে শরীর ঠান্ডা থাকবে।

যা যা খাবেন

গরমের সময় সতর্ক থাকতে হয় খাবার বিষয়ে। খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, মাংস ইত্যাদি। শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করবে এমন খাবার খেতে হবে যতটা সম্ভব। সবজি তালিকায় যুক্ত করুন কাঁচা পেঁপে, পটল, ধুন্দল, শসা, চিচিঙ্গা, গাজর, লাউ, টমেটো, পালংশাক, কচু শাক ইত্যাদি। যে তরকারিটা খাবেন সেটা রান্না করবেন ঝোল ঝোল করে। গরু বা খাসির মাংসের বদলে দেশি মুরগীর ঝোল করতে পারেন আলু বা পেঁপে দিয়ে। নানা ধরনের শাক, সিদ্ধ ডিম, বুটের ডালের তরকারি খান। চা কফি এড়িয়ে চলাই ভালো এ সময়।গরমে সুস্থ ও ভালো থাকতে খেতে হবে সবুজ শাকসবজি

মৌসুমি ফলমূল খান প্রতিদিন কিছু না কিছু হলেও। আমের শরবত, আখের রস, বেলের শরবত, পুদিনার শরবত, জিরাপানি, লেবু পানি পান করুন। তাছাড়া তরমুজ, বাঙ্গি, নাশপাতিও খেতে পারেন। ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল নিয়মিত খান। খোসাসহ ফল, লেবু ও কাঁচা সালাদ খান।

শিশুর প্রতি যত্নশীল হোন

বড়রা যেমন নিজেদের খারাপ লাগা বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে, শিশুরা কিন্তু তা পারে না। বরং তাদের অস্থির লাগলে প্রকাশ করতে পারে না বলে দ্রুত অসুস্থ হয়। এজন্য তাদের প্রতি বিশেষভাবে যত্নশীল হতে হবে। নিয়মিত তাদের গোসল করানো, সুতি পোশাক পরানো, শরবত খাওয়ানো, ঘেমে গেলে শরীর মুছে দেয়া, পরিষ্কার করে হাত ধোয়ার নিয়ম শিখিয়ে দিতে হবে। বাচ্চাদের চুল বেশি বড় হলে ঘাম বেশি হবে। তাই চুল ছেঁটে রাখুন। আরামের জন্য শিশুরা ঠান্ডা পানি খেতে চাইবে বারবার। কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি বা আইসক্রিম কোনোটাই তাদের দেয়া যাবে না। এতে ঠান্ডা লেগে জ্বর বা সর্দি হতে পারে। খেয়াল রাখবেন, গরমের মধ্যে শিশু যেন বেশি সময় বাইরে খেলাধুলা না করে। আর বাসায় ফিরে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে পোশাক বদলে দিন।

ঘর শীতল রাখবে যেসব গাছ

এমনিতেই গাছ পরিবেশ ঠান্ডা রাখে। বাগান, ছাদ বা পার্ক যেখানে গাছ আছে সেখানে পরিবারের সবাই মিলে বিকালে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারেন। আর ঘরে এমন কিছু গাছ রাখতে পারেন যেগুলো ঘর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। যেমন- মানিপ্ল্যান্ট, রাবার গাছ, অ্যালোভেরা, পিস লিলি, এরিকা পাম, স্নেক প্ল্যান্ট, স্পাইডার লিলি, ব্যাম্বু প্ল্যান্ট ইত্যাদি। ঘরে যদি পোষা প্রাণি বা শিশু থাকে, তবে গাছ তাদের নাগালের বাইরে রাখুন।ইনডোর প্ল্যান্ট

বাইরে যাওয়ার আগে যা যা নিবেন

ঘর থেকে জাস্ট মানিব্যাগ আর মোবাইল নিয়ে বাইরে চলে গেলেই কিন্তু গরম থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। গরমে সুস্থ ও ভালো থাকতে ব্যাগে ক্যারি করতে হবে কয়েকটি জিনিস। যেমন-

সানগ্লাস – চোখকে যদি সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করতে চান, তাহলে অবশ্যই ভালো মানের সানগ্লাস কিনতে হবে। কমদামী হলে চোখের উপকার তো হবেই না, বরং ক্ষতিই হবে। তাই দাম একটু বেশি হলেও ভালো মানের সানগ্লাস কেনা জরুরি।

ছাতা – মাথার উপর সূর্য যখন গনগনে হয়ে জ্বলছে, তখন বাইরে বের হলে আপনিও তাপে পুড়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। এই তাপ থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে ছাতা। শুধু বৃষ্টির সময় নয়, রোদ থেকে বাঁচতেও ছাতার ব্যবহার করা জরুরি। তাই বাইরে যাওয়ার সময় ব্যাগে অবশ্যই একটি ছাতা রাখুন।

পানির বোতল – গরমে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয় পানির অভাবে। এ থেকে হিটস্ট্রোক হওয়ার চান্স বেশি থাকে। তাই ব্যাগে সব সময় একটি পানির বোতল রাখুন। সাথে একটি স্যালাইনের প্যাকেট। শরীরে পানিশূন্য বোধ হলে এক গ্লাস স্যালাইন বানিয়ে পান করবেন। তাছাড়া ডাবের পানিও পান করতে পারেন।

ত্বকের যত্নে সানস্ক্রিন

জুতা বা স্যান্ডেল নির্বাচন – এমন জুতা পরবেন না যেটা পরলে পা বেশি উত্তপ্ত হয়ে যায়। অনেক জুতার সোল আছে যেগুলোর কারণে পায়ের তালুতে গরম বেশি লাগে। তাই এ সময় জুতা নির্বাচন করতে হবে বুঝেশুনে।

গরমে সুস্থ ও ভালো থাকতে কী কী করবেন তার জন্য জন্য কিছু পরামর্শ আপনাদের জানিয়ে দিলাম। নিজে সুস্থ থাকার পাশাপাশি নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ এর চিন্তাও আমাদেরকেই করতে হবে। তাই পরিবেশকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য গাছ লাগানো জরুরি। নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হোন, গাছ লাগান, পরিবেশের তাপ কমাতে সহায়তা করুন।

ছবি – সাটারস্টক

0 I like it
0 I don't like it