শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি সমস্যায় ভুগছেন? ঘরে রাখুন এই গাছগুলো

plant

যারা শ্বাসকষ্ট বা অ্যালার্জিতে ভুগছেন, তারা সাধারণত ঘরে গাছ রাখতে ভয় পান। ভাবেন, গাছ থেকে নিঃসৃত রেণু, পাতায় জমে থাকা ধুলো থেকে এসব অসুস্থতা হতে পারে। অবশ্য এটা সত্যি যে কিছু গাছের কারণে শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি হতে পারে। তবে সব গাছই এ জন্য দায়ী নয়। কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট আছে যেগুলো ক্ষতিকর তো নয়ই, বরং অন্যান্য অনেক গাছের থেকে বেশি উপকারী। চলুন আজ এমনই কয়েকটি গাছ সম্পর্কে জেনে নেই।

শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি সমস্যায় যেসব গাছ ঘরে রাখবেন

পিস লিলি

পিস লিলি এক ধরনের ফুলের গাছ। এই গাছে সাদা শুভ্র যে ফুলটি হয়, তা দেখে বৃক্ষপ্রেমী তো বটেই, যারা গাছপ্রেমী নন, তাদেরও ভালো লাগে। স্প্যাথিফাইলাম গোত্রের অনেক ধরনের গাছের মধ্যে কমন একটি গাছ এটি। এটি সাধারণত হাউজপ্ল্যান্ট বা ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবেই থাকে। এই গাছটি বাতাসে থাকা দূষিত পদার্থ ও কেমিক্যাল দূর করে ঘরকে বিশুদ্ধ রাখে। ঘরে যদি এ গাছ কয়েকটি রাখা হয় তাহলে পার্থক্য সহজে বোঝা যায়। শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জিতে ভুগতে থাকা ব্যক্তিরা এই সুবিধা পেলেও গাছটি কিন্তু বিড়ালদের জন্য ক্ষতিকর। তাই যাদের ঘরে বিড়াল আছে তারা এই গাছটি ঘরে রাখলে অবশ্যই তাদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি সমস্যায় পিস লিলি

ইংলিশ আইভি

অনেকের বাড়িতেই ইংলিশ আইভি নামের লতানো এই গাছটি দেখা যায়। ঠান্ডা দেশগুলোতে পুরো বাড়ির দেয়াল জুড়ে এই গাছ থাকে। অতিরিক্ত গরম হলে সেখানে এই গাছ সাধারণত বড় হয় না। তবে ঘরের ভেতর একে বড় করা কিছুটা সহজ। যদি ঘর ঠান্ডা হয়, তাহলে বেশি ভালো। সরাসরি রোদে একে রাখা যায় না। ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে এই গাছ বেশ ভালো ভূমিকা রাখে। পোষা প্রাণীদের জন্য এই গাছ বিষাক্ত, তাই তাদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে এই গাছ।

পথোস

পথোস বা মানিপ্ল্যান্ট আমাদের দেশে খুব কমন। যারা নতুন বাগানী তাদের হাতে কলমে গাছ সম্পর্কে জানতে মানিপ্ল্যান্ট লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এই গাছ লাগাতে ঝামেলাও নেই। মাটিতে বা পানিতে খুব সুন্দরভাবে গাছ বেড়ে উঠতে পারে। পথোসের নানা ভ্যারিয়েশন আছে। গাছপ্রেমীদের বাগানে এই গাছ সাধারণত থাকেই। শুধু দেখতে সুন্দর বা যত্ন নেয়া সহজ এজন্যই যে এর কদর এত বেশি তা নয়, এই গাছ ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতেও সাহায্য করে। এই গাছ থেকে রেণু বাতাসে ভেসে বেড়ায় না, যার কারণে যারা শ্বাসকষ্ট বা অ্যালার্জিতে ভুগছেন, তাদের আতঙ্কিত হওয়ারও কারণ নেই। ঘর সাজাতে নির্দ্বিধায় এই গাছ আপনারা ঘরে লাগাতে পারেন। তবে হ্যাঁ, কুকুর বা বিড়ালের জন্য এই গাছের পাতা বিষাক্ত। এইজন্য অবশ্যই তারা যেন নাগাল না পায়, এমন জায়গায় গাছ রাখতে হবে।পথোশ

স্পাইডার প্ল্যান্ট

কমন ইনডোর প্ল্যান্টের মধ্যে আরও একটি নাম হচ্ছে স্পাইডার প্ল্যান্ট। শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জিতে যারা ভুগছেন, তারা সুস্থ থাকতে এই গাছটি ঘরে রাখতে পারেন। ঘরের ভেতর এই গাছ বাঁচানো বেশ সহজ। এই প্ল্যান্টেরও অনেক ভ্যারিয়েশন আছে। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ফর্মালডিহাইড ও জাইলেনের মতো দূষিত পদার্থ বাতাস থেকে টেনে নেয় এই গাছ। যার কারণে ঘর বিশুদ্ধ থাকে। শিশু ও পোষা প্রাণীরাও এই গাছ থেকে নিরাপদ। নাসা’র একটি গবেষণা মতে, যত ধরনের ইনডোর প্ল্যান্ট আছে, তার মধ্যে স্পাইডার প্ল্যান্টের ৯৫ শতাংশ রিমুভাল রেট আছে।

স্নেক প্ল্যান্ট

ঘর থেকে ফর্মালডিহাইড দূর করতে আরও একটি দারুণ গাছ হচ্ছে স্নেক প্ল্যান্ট। এই গাছটি রাতে অক্সিজেন দেয়, বেডরুমে থাকতে প্রশান্তি লাগে। তবে গাছটি যেহেতু কিছুটা হিউমিডিটি চায়, তাই বাথরুমে রাখলে এটি বেশ ভালো থাকে। ঘরের বাতাস বাইরে বাতাসের চেয়ে ২-৫ গুন বেশি দূষিত হতে পারে। তাই এই গাছকে ঘরে রাখলে বাতাসও পরিশুদ্ধ থাকে। তাহলে নিজের সুস্থতার জন্য এমন একটি গাছ কেন আপনি নিজ ঘরে রাখবেন না?

এরিকা পাম ও ব্যাম্বু পাম

এই গাছগুলোর রয়েছে টক্সিন দূর করে বাতাস বিশুদ্ধ করার দারুণ ও কার্যকরী ক্ষমতা। তাছাড়া বাতাসে এই গাছগুলো যুক্ত করে ময়েশ্চার, যা শ্বাসকষ্টের রোগীদের আরাম দেয়। যার কারণে শ্বাস নেয়া সহজ হয়।ব্যাম্পু প্ল্যান্ট

অ্যালোভেরা

শুধু ত্বক ও চুলের জন্যই নয়, অ্যালোভেরার রয়েছে বাতাস থেকে টক্সিন দূর করে পিউরিফাই করার ক্ষমতাও। বাতাসে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ দূর করতে পারে বলে এই গাছটি ঘরে রাখলেও বাতাস বিশুদ্ধ হয়। তাই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য এবং একইসাথে ত্বক ও চুল ভালো রাখার জন্যও গাছটি ঘরে রাখা জরুরি।

গাছের যেভাবে যত্ন নিবেন

গাছ ভালো লাগে বলে পছন্দসই যে কোনো গাছই বাসায় আনতে পারেন। এগুলোর মধ্যে কিছু গাছ থেকে রেণু উড়ে আসে, আবার গাছে ধুলো জমে বা অতিরিক্ত পানির কারণে গাছ মরে যায়। কীভাবে ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন নিবেন চলুন জানা যাক-

  • গাছের পাতায় যখন ধুলো জমে তখন একটি ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। পানি দিয়ে ধুলেও ধুলো চলে যাবে।
  • অতিরিক্ত পানি দিলে মাটি কাদা কাদা হয়ে ঘর নোংরা হতে পারে। তাই ঘরের গাছে অল্প পানি দিন, তবে নিয়মিত দিন। প্রয়োজনে নতুন মাটি দিন।
  • গাছে পোকা হলে সেগুলোর জন্য ওষুধ প্রয়োগ করুন।
  • ড্রেইনেজ সিস্টেম ঠিক রাখুন। এতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাবে। পানি জমে থাকলে পোকা বা পিঁপড়ে হতে পারে।
  • সূর্যের আলো, তাপমাত্রা থেকে গাছকে সুরক্ষিত রাখুন।

শ্বাসকষ্টের সমস্যা কেন হয়?

শুধু ঘরেই না, অফিস, স্কুল বা ইনডোর বিভিন্ন জায়গা থেকেই শ্বাসকষ্ট সমস্যা হতে পারে। যেসব বিষয় বেশি ট্রিগার করে সেগুলো হচ্ছে-

ধুলা – যে কোনো ইনডোর স্পেসে ধুলো সহজেই জমে। এই ধুলো নিঃশ্বাসের সাথে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে। আর এ থেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। তাছাড়া যাদের ডাস্ট অ্যালার্জি আছে, তারাও বেশ ভোগান্তিতে পড়েন এর কারণে।

রেণু – ফুল থেকে রেণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। আর এই রেণু নানাভাবে ঘরে প্রবেশ করে। যেমন- জানালা, দরজা, এমনকি ব্যক্তির পোশাকের গায়ে লেগেও অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

পোষা প্রাণী – পোষা প্রাণীর লোম থেকেও এ সমস্যা হতে পারে।

পল্যুটেন্ট – ধূমপান, পারফিউম, এয়ার ফ্রেশনার বা অন্যান্য কেমিক্যাল থেকে এই পল্যুটেন্ট শরীরে প্রবেশ করে এসব সমস্যা তৈরি করতে পারে।

শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকতে করণীয়শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকতে ফার্ণিচার নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে

যারা এই সমস্যাগুলোতে ভুগছেন তারা জানেন ঘর পরিষ্কার রাখা কতটুকু জরুরি। কীভাবে এই পরিষ্কারের কাজ করবেন চলুন জেনে নেই-

  • ঘরে যে হিটিং ও কুলিং সিস্টেম আছে সেগুলো অবশ্যই পরিষ্কার ও ধুলোমুক্ত রাখুন
  • ঘরে ধূমপান করবেন না
  • ফার্ণিচার নিয়মিত মুছুন
  • যেসব জায়গায় ধুলো বেশি জমে যেমন- ফার্ণিচারের পেছনে, খাটের নিচে, জানালায়, রান্নাঘরের তাকে – এমন জায়গাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
  • গাছ ধুলোমুক্ত রাখুন

শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি সমস্যায় কোন গাছগুলো আপনি ঘরে রাখতে পারেন সে সম্পর্কে তো জানিয়ে দিলাম। ইনডোর প্ল্যান্টগুলো শুধু এই অসুস্থতায় আপনাকে ভালো রাখবে তাই নয়, প্রচণ্ড গরমে আপনি যখন হাঁসফাঁস করছেন, তখন এই গাছগুলোই আপনাকে স্বস্তি দিবে। ঘরে বা বারান্দায় গাছ রাখলে ঘরে বইবে ঠান্ডা বাতাস। তাছাড়া ঘরের বাতাস ইমপ্রুভ করার জন্য ইনডোর প্ল্যান্ট হতে পারে দারুণ একটি উপায়। বিশেষ করে সেসব গাছ যেগুলো শুধু অক্সিজেনই দেয়, কোনো ধরনের রেণু ছড়ায় না সেগুলো তো এয়ার ফিল্টারিং এর দারুণ উপায়। রোগ হলে ওষুধ খেতে হবেই, তাই বলে কি পরিবেশ ভালো রেখে সুস্থ থাকাটাও জরুরি নয়? তাই জেনেবুঝে নিশ্চিন্তে গাছ লাগান, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

ছবি – সাটারস্টক

7 I like it
0 I don't like it