গরমে জনজীবন এতটাই বিপর্যস্ত যে ভালোভাবে খাবার হজম হচ্ছে না। আবার একটু এদিক সেদিক হলেই শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। খাবার ইচ্ছাটাও যেন কমে গিয়েছে অনেকখানি। কোন খাবারে গরমে স্বস্তি পাওয়া যাবে সেটাও সহজে বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই। আজ আপনাদের জানাবো এমন কয়েকটি খাবার সম্পর্কে যেগুলো খেলে গরমে স্বস্তিও পাবেন, শরীরও সুস্থ থাকবে।
গরমে স্বস্তি দিবে এমন কয়েকটি খাবার তালিকা
১) দই মুরগী
গরমে সাধারণত মাংস কম খাওয়ার কথা বলা হয়। তবে বড়রা বিভিন্ন স্বাদের খাবার খেতে পারলেও শিশুদের জন্য মানিয়ে নেয়া কিছুটা কঠিন। তাদের জন্য গরু না হলেও মুরগীর মাংস কমবেশি রান্না করতেই হয়। কিন্তু সব সময় মসলা বেশি দিয়ে রান্না করা মাংস খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে, তাছাড়া গরমও লাগবে বেশি। এই সমস্যা এড়াতে দই মুরগী রান্না করতে পারেন। অল্প মসলায় রান্না করা এই খাবারটি সবারই বেশ ভালো লাগবে খেতে।
যা যা লাগবে
মসলা রোস্টের জন্য লাগবে-
- মেথি ২ চামচ
- বড় এলাচ ১টি
- গোলমরিচ ১/২ চামচ
- কয়েকটি লবঙ্গ
এই সবগুলো উপকরণ একসঙ্গে ভেজে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
- মুরগীর মাংস
- লবণ পরিমাণমতো
- আদা ও রসুন বাটা ১ চা চামচ করে
- গোলমরিচ গুঁড়ো সামান্য
- ধনেপাতা কুঁচি ১ চা চামচ
- কাঁচা মরিচ ২/৩টি
- ১/৪ কাপ তেল
এই সবগুলো উপকরণ একসঙ্গে মেরিনেট করে ঘন্টাখানেক ফ্রিজে রাখতে হবে।
- তেজপাতা, জিরা, এলাচ, লবঙ্গ ১/২টি করে
- পেঁয়াজ কুঁচি
- ১ কাপ দই
যেভাবে বানাবেন
১) কড়াইতে তেল গরম করে নিয়ে তাতে তেজপাতা, এলাচ, জিরা, লবঙ্গ দিয়ে খানিকটা নেড়ে নিন। এবার তাতে দিয়ে দিন পেঁয়াজ।
২) পেঁয়াজ লালচে হয়ে যাওয়ার আগেই মাংস দিয়ে ১৫ মিনিট ভালোভাবে কষিয়ে নিন। এবার তাতে দিয়ে দিন দই। ক্রমাগত নাড়তে হবে। এ সময় চুলার আঁচ কম থাকবে।
৩) কয়েক মিনিট পর মাংস সিদ্ধ হয়ে আসবে। এবার রোস্টেড মসলা খানিকটা তরকারির উপর ছিটিয়ে দিন। পরিবেশনের সময়ও এই মসলা ছিটিয়ে দিলে বেশ সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসবে।
ব্যস! তৈরি হয়ে গেলো মজাদার দই মুরগী। অতিরিক্ত মসলার ঝামেলা এড়াতে অল্প সময়েই খাবারটি রান্না করে ফেলতে পারবেন।
২) আম ডাল
ডাল তো সারা বছর খাওয়াই হয়। তবে আম যেহেতু মৌসুমি ফল, সেই হিসেবে এর পুষ্টিগুণ পেতে চাইলে নানাভাবে এটি খাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে আম ডাল। এর রান্না যেমন সহজ, তেমনই খেতেও খুব সুস্বাদু।
যা যা লাগবে
- মাঝারি সাইজের কাঁচা আম ১ টি
- মুসুর ডাল ১/২ কাপ
- হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ
- শুকনো মরিচ ১টি (ঝাল বেশি খেলে মরিচ বেশি দিলেও অসুবিধা নেই)
- পাঁচফোড়ন ১ টেবিল চামচ
- সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ
- লবণ পরিমাণমতো
- পানি ২ কাপ
যেভাবে রান্না করবেন
১) প্রথমে ডাল কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। রান্নার পাত্রে নিয়ে তাতে পেঁয়াজ, আদা রসুন, হলুদ ও তিন কাপ পানি চুলায় বসিয়ে দিন। ডাল সিদ্ধ হয়ে গেলে ভালোভাবে ঘুটে নিন।
২) আমের খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে নিন। এবার এই আম ও ১ কাপ গরম পানি ডালে দিন। ডাল ঘন না হয়ে আসা পর্যন্ত জ্বাল দিতে থাকুন।
৩) এবার ফোঁড়নের পালা। কড়াইতে তেল গরম করে নিয়ে তাতে পেঁয়াজ ও রসুন কুঁচি, আস্ত জিরা ও শুকনো মরিচ দিয়ে দিন। লালচে হয়ে এলে তেলসহ ডালের ভেতর দিয়ে দিন।
ব্যস! তৈরি হয়ে গেলো মজাদার আম ডাল। এবার এই ডাল পরিবেশন করুন গরম গরম সাদা ভাতের সাথে।
৩) শসা কুমড়ো দিয়ে বড়ার তরকারি
গরমে স্বস্তি দিতে শসার জুড়ি নেই। এই সবজিটি শরীর ঠান্ডা রাখতে বেশ কার্যকর। সাধারণত এটি কাঁচাই খাওয়া হয়। তবে তরকারি হিসেবে রান্না করলেও এর পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। হজমেও সমস্যা হয় না। এর রেসিপিটি চলুন জেনে নেয়া যাক।
- বানাতে যা যা লাগবে
- মুসুর ডাল ১ কাপ
- কাঁচা মরিচ বাটা (৮/১০টি)
- পেঁয়াজ ১ টি
- তেজপাতা ২টি
- আদা বাটা ১.৫ চা চামচ
- চীনেবাদাম ২ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ
- শসা টুকরো করে কাটা (৭০০ গ্রাম)
- কুমড়ো টুকরো করে কাটা (৫০০ গ্রাম)
- স্বাদমতো লবণ ও চিনি
- সরিষার তেল প্রয়োজনমতো
যেভাবে রান্না করবেন
১) মুসুর ডাল আগের রাতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ডাল বেটে নিয়ে তাতে পেঁয়াজ কুঁচি, মরিচ বাটা, লবণ মিশিয়ে নিন। ডাল দিয়ে বড়া বানিয়ে নিন। কড়াই গরম করে তাতে বড়াগুলো ভেজে ফেলুন।
২) এবার এই তেলেই তেজপাতা ও ফোঁড়ন দিয়ে তাতে কুমড়ো ও শসা দিন। ভালো করে কষিয়ে নিয়ে লবণ ও হলুদ গুঁড়ো দিন। আদা ও মরিচ বাটা দিয়ে দিন। ভালো করে মিশিয়ে দেড় কাপ পানি দিন।
৩) এবার এতে দিয়ে নিন বাদাম বাটা। ঢাকনা দিয়ে মাঝারি আঁচে কিছুক্ষণ রান্না করুন।
৪) ঝোল ঘন হয়ে এলে বড়াগুলো দিয়ে দিন। এবার এতে অল্প পরিমাণ চিনি দিয়ে আরেকবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। এতে বড়ার ভেতরে রস ঢুকবে ভালোভাবে। ঢাকনা তুলে দেখুন বড়াতে রস গিয়েছে কিনা। যদি যেয়ে থাকে তাহলে রান্না শেষ। পরিবেশনের জন্য খাবার তৈরি।
ব্যস! খুব সহজেই হয়ে গেলো শসা কুমড়ো দিয়ে বড়ার তরকারি। গরমে স্বস্তি পেতে এই খাবারটি যুক্ত করে ফেলুন খাদ্য তালিকায়। আর শরীর রাখুন সুস্থ।
৪) সজনে সর্ষে
সজনে অনেকেরই বেশ পছন্দের সবজি। এই সবজিটি খাওয়া যায় নানাভাবে। যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন, পুষ্টিগুণ এতে বজায় থাকে। আর তাই তো বাঙালির রসনায় এর বেশ খাতির রয়েছে। চলুন সজনে দিয়ে তৈরি মজাদার সজনে সর্ষে এর রেসিপি সম্পর্কে জানা যাক।
বানাতে যা যা লাগবে
- সজনে ডাঁটা ৪টি
- সরিষা বাটা ২ টেবিল চামচ
- সরিষার তেল পরিমাণমতো
- কাঁচা মরিচ ৬টি
- হলুদ ও লবণ পরিমাণমতো
- চিনি সামান্য পরিমাণ
- লাল মিষ্টি আলু ২টি
যেভাবে রান্না করবেন
১) সজনে ডাঁটা ও আলু লম্বা করে কেটে নিতে হবে।
২) কড়াইয়ে তেল দিয়ে সবজিগুলো ভালো করে নেড়েচেড়ে আধা সেদ্ধ করে নিন। পরে সর্ষেবাটা দিয়ে কাঁচা মরিচের ফালি দিন। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে ঢেকে কষিয়ে নিন। নামানোর সময় সামান্য পরিমাণে চিনি দিন।
ব্যস! তৈরি হয়ে গেলো মজাদার সজনে সর্ষে। এই খাবারটি খেতে যেমন মজাদার, তেমনই পুষ্টিগুণেও ভরপুর।
৫) ঝিঙে আলু পোস্ত
ঝিঙে নামক সবজিটি পছন্দ করেন না এমন ব্যক্তি বোধহয় কমই আছেন। এর স্বাদের কারনেই রসনায় এটি আলাদা জায়গা দখল করে আছে। এই সবজিটি পোস্ত দিয়ে রান্না করলে খুবই মজা হয়। চলুন রেসিপিটি জেনে নেয়া যাক।
যা যা লাগবে
- ঝিঙে ৫০০ গ্রাম
- আলু ৩টি
- পোস্ত বাটা ৩ টেবিল চামচ
- কাঁচা মরিচ ২টি
- পাঁচফোড়ন ১/৪ চা চামচ
- জিরে গুঁড়ো ১/২ টেবিল চামচ
- হলুদ গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ
- স্বাদমতো লবণ
- তেল ও পানি
যেভাবে রান্না করবেন
১) প্রথমে ঝিঙে আর আলু ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে কেটে নিন।
২) এবার কড়াইয়ে তেল গরম হলে পাঁচফোড়ন ফোড়ন দিয়ে ঝিঙে আর আলু দিতে হবে। তারপর লবণ, হলুদ, জিরে গুঁড়ো দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৩) ঝিঙে আলু সিদ্ধ হয়ে গেলে আগে থেকে লবণ কাঁচা মরিচ দিয়ে বেটে রাখা পোস্ত বাটা দিয়ে ৭ মিনিট এর মতো নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিতে হবে। এবার পরিবেশন করুন।
ব্যস তৈরি হয়ে গেলো ঝিঙে আলু পোস্ত! বাড়িতে সবার সাথে মিলে খেয়ে ফেলুন মজাদার এই খাবারটি।
গরমে স্বস্তি পেতে খাবার নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই। এই খাবারগুলো আপনাকে যেমন আরাম দিবে, তেমনই শরীরও ভালো রাখবে। তাহলে আজই ট্রাই করে ফেলুন পছন্দের রেসিপিটি!
ছবি – সাটারস্টক, ইউটিউব