ডিম স্বাস্থ্যকর খাবার এটি তো আমরা সবাই জানি। তবে প্রতিদিন সেই একই ডিম সেদ্ধ, ডিম পোচ বা ভাজি খেতে কার ভালো লাগে বলুন? কেমন হয় যদি এই ডিম দিয়ে তৈরি করে ফেলা যায় সুস্বাদু সব নাস্তা? সন্ধ্যায় নাস্তার টেবিলে এই খাবারগুলো বেশ ভিন্নতা আনবে। সেই সাথে ছোট বড় সবার জন্যই হবে ভরপুর নাস্তা। চলুন তাহলে রেসিপিগুলো জেনে নেয়া যাক।
ডিম দিয়ে বানানো ঝটপট মজাদার নাস্তা
১) মেক্সিকান এগ স্ক্রাম্বল
এই খাবারটি বানাতে যা যা লাগবে-
- ডিম ৪টি
- টমেটো ১টি
- ক্যাপসিকাম ১টি (ছোট)
- পেঁয়াজ ১টা (মাঝারি)
- কাঁচামরিচ ২টি (স্বাদমতো)
- লবণ স্বাদমতো
- তেল ২ টেবিল চামচ
যেভাবে বানাবেন
১) ডিমগুলো ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। ফেটানোর সময় স্বাদমতো লবণ দিয়ে নিন।
২) টমেটো ও ক্যাপসিকামের বীজ ফেলে ছোট কিউব আকারে কেটে নিতে হবে। মাঝারি আকারের একটা পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ একইভাবে কেটে নিতে হবে।
৩) এবার প্যানে ১ চা-চামচ তেল গরম করে নিন। তাতে দিয়ে দিন টমেটো, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ। মিনিট দু-এক ভেজে নামিয়ে নিন। প্যানে বাকি তেল গরম করে ফেটিয়ে রাখা ডিমে ছড়িয়ে দিতে হবে। মিনিট খানিক পর খুন্তি বা চামচ দিয়ে ডিমটা ভেঙে দিতে হবে। এ সময় ভেজে রাখা টমেটো, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজের মিশ্রণটাও দিয়ে দিতে হবে এবং হালকা হাতে ঝুরি করতে হবে। খুব বেশি ভাজা ভাজা করা যাবে না। তাতে শক্ত হয়ে যাবে এবং স্বাদও নষ্ট হয়ে যাবে।
৪) ডিমের কাঁচা ভাব চলে গেলেই প্লেটে নামিয়ে পরিবেশন করতে হবে। চাইলে অল্প করে ধনেপাতাও দেওয়া যেতে পারে। হাতের কাছে পেঁয়াজকলি থাকলে তা-ও কুচি করে ব্যবহার করা যেতে পারে।
দেখলেন তো মজাদার মেক্সিকান এগ স্ক্রাম্বল বানানো কত সহজ! সন্ধ্যার নাশতা এবার বানিয়ে ফেলুন চটজলদি!
২) ডিম ও আলুর মুচমুচে স্যান্ডউইচ
এই খাবারটি বানাতে যা যা লাগবে-
- দেড় কাপ আটা/ময়দা
- লবণ
- দেড় টেবিল চামচ সয়াবিন তেল
ভেতরের পুরের জন্য লাগবে-
- ১টি সেদ্ধ ডিম
- ৩টি সেদ্ধ আলু
- পেঁয়াজ কুঁচি
- মরিচ কুঁচি
- ধনেপাতা কুঁচি
- ধনিয়া গুঁড়া
- গরম মসলা গুঁড়া
- লবণ স্বাদমতো
কোট করার জন্য-
- হাফ কাপ আটা
- লবণ
- মরিচের গুঁড়া
যেভাবে বানাবেন
১) প্রথমে আটা, লবণ, তেল ভালোভাবে ডলে নিন। এবার এতে অল্প অল্প করে নরমাল পানি দিয়ে ডো বানিয়ে নিতে হবে। ডো খুব বেশি শক্ত বা সফট হবে না। এর উপর অল্প তেল দিয়ে আবারও ভালোভাবে নেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে নিতে হবে।
২) এবার ভেতরের পুর তৈরি করার পালা। ডিম আর আলু গ্রেট করে নিতে হবে। সব একসাথে হাত দিয়ে আলতো করে মেখে নিতে হবে।
৩) এবার ডো মথে নিতে হবে। লম্বা করে ডো কেটে নিয়ে রুটি বেলতে হবে আলাদা করে। বাটি ঢেকে রাখতে হবে। নইলে ডো বাতাসে শক্ত হয়ে যাবে।
৪) এবার একটা করে ছোট ডো মথে নিয়ে রুটি বানিয়ে নিতে হবে। রুটি বেশি মোটা বা পাতলা করা যাবে না। রুটিতে আলু ও ডিমের পুর দিয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। সাইডে একটু জায়গা ফাঁক থাকবে। সাইড দিয়ে অল্প পানি দিয়ে দিতে হবে। এতে রুটি গায়ে গায়ে লেগে থাকবে। পরের রুটিটা পুরের উপরে দিয়ে দিতে হবে। ভালোভাবে চেপে দিতে হবে যেন লেগে থাকে। চাইলে আরেকটা লেয়ার এভাবে তৈরি করতে পারেন।
৫) চার সাইড দিয়ে কেটে চারকোণা করে নিয়ে পিজ্জার স্লাইসের মতো করে কেটে নিন।
৬) এবার ব্যাটার তৈরির পালা। আটা, লবণ ও মরিচের গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। অল্প অল্প পানি দিয়ে মিক্স করে ব্যাটার তৈরি করে নিতে হবে। ব্যাটার বেশি পাতলা হবে না।
৭) ফ্রাইপেনে তেল গরম করে নিতে হবে। ব্যাটারে একটি করে স্যান্ডউইচ ডুবিয়ে নিয়ে তেলে দিয়ে দিতে হবে। অল্প অল্প করে ভেজে নিন। ভাজার সময় চুলার আঁচ মিডিয়াম থাকবে। গোল্ডেন ব্রাউন হলে নামিয়ে নিন।
ব্যস! তৈরি হয়ে গেলো ডিম ও আলু দিয়ে তৈরি মুচমুচে স্যান্ডউইচ! ডিম দিয়ে তৈরি ঝটপট এই নাস্তাটি বাসায় তৈরি করেই দেখুন! এর স্বাদ সহজে ভুলবেন না!
৩) মাসালা এগ চপ
এই খাবারটি বানাতে যা যা লাগবে-
- বড় ৪টি আলু, ছিলে কিউব করে কেটে নেয়া
- লবণ স্বাদমতো
- ধনে পাতা ১/৪ কাপ
- ধনিয়া গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ
- জিরা গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ
- মরিচ গুঁড়ো ১/২ টেবিল চামচ
- গরম মসলা গুঁড়ো ১/২ টেবিল চামচ
- সিদ্ধ করা ডিম ৪টি
- ফেটানো ডিম ১টি
- ব্রেড ক্রাম্ব ১/২ কাপ
- তেল
টক মিষ্টি চাটনির জন্য লাগবে-
- কিশমিশ (পানিতে ভেজানো) ১/২ কাপ
- তেঁতুলের ক্বাথ ১/২ কাপ
- লবণ স্বাদমতো
- গরম মসলা ১/২ টেবিল চামচ
- চিলি পাউডার ১/৪ টেবিল চামচ
যেভাবে বানাবেন-
১) পানিতে আলু দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ভালোভাবে সেদ্ধ করে নিন। পানি ফেলে দিয়ে আলু থেকে পানি ঝরিয়ে ভালোভাবে আলু ম্যাশ করে নিন। এবার এতে মিশিয়ে দিন ধনিয়া গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, চিলি পাউডার, গরম মসলা গুঁড়ো ও লবণ। কিছুক্ষণ ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন।
২) এবার অল্প করে আলুর মিক্সচারটি হাতের তালুতে নিয়ে চ্যাপ্টা করে নিন। দুটো বানানো হলে একটি ডিম কভার করে দিন এই প্যাটি দিয়ে। আকৃতি কিছুটা বলের মতো হবে।
৩) এভাবে কয়েকটি চপ বানিয়ে নিন। চপগুলো ডিমে ভিজিয়ে ব্রেডকাম্বে গড়িয়ে নিন।
৪) এবার মিডিয়াম হিটে তেল গরম করে নিন। একটি একটি করে চপ তেলে দিয়ে দিন। ৪/৫ মিনিট করে এক একটি চপ ভেজে নিন। গোল্ডেন ব্রাউন হয়ে আসলে বুঝবেন ক্রিস্পি হয়েছে। এবার নামিয়ে ফেলুন।
৫) চাটনি বানানোর জন্য সবগুলো উপাদান একসাথে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। সব উপাদান ভালোভাবে মিক্সড হয়ে গেলে বুঝবেন চাটনি খাওয়ার জন্য একদম তৈরি!
ব্যস! হয়ে গেলো ডিম দিয়ে তৈরি মজাদার এগ মাসালা চপ! বাড়িতে সন্ধ্যার নাস্তায় অথবা ঘরোয়া যে কোনো আয়োজনে এই খাবারটি বেশ জমবে। ছোট বড় সবাই বেশ মজা করেই খাবে।
ডিমকে বলা হয় নিউট্রিয়েন্ট পাওয়ারহাউজ। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে, যা দেয় নানা ধরনের হেলথ বেনিফিট। এতে আছে আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি১২, ফোলেট, প্রোটিন, সেলেনিয়াম, লুটেইন ও কোলিন। এই নিউট্রিয়েন্ট প্রতিটি আলাদা আলাদাভাবে কাজ করে। যেমন- অ্যানেমিয়া প্রিভেন্ট করতে, হেলদি স্কিন মেইনটেইন করতে, চোখের ভিশন বাড়াতে, হাড় ও দাঁত মজবুত করতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, নতুন কোষ তৈরিতে, ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট করতে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে, কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে ডিম খুব ভালো কাজ করে। অর্থাৎ এই একটি খাবারেই শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে। তাহলে সুস্থ থাকতে ডিম কেন খাদ্য তালিকায় রাখবেন না?
ডিম খেতে কমবেশি আমরা সবাই ভালোবাসি। তবে ছোট বাচ্চারা অনেক সময় স্বাস্থ্যকর এই খাবারটি একদম খেতে চায় না। তখন এইভাবে আপনি বানিয়ে দিতে পারেন। বেশ আগ্রহ নিয়েই খাবে। সন্ধ্যার নাস্তায় অথবা স্কুলের টিফিনেও মাঝে মাঝে দিতে পারেন ডিম দিয়ে তৈরি এই খাবারগুলো। ডিম এমন একটি খাবার যেটি শিশুদের অবশ্যই খাওয়াতে হবে। এমন খাবার যেটি একইসাথে স্বাস্থ্যসম্মত এবং মজাদার, সেটি খেলে কিন্তু স্বাদ ও পুষ্টি দুটোই পাওয়া যাবে। তবে যেহেতু তেলে ভাজা, প্রতিদিন না খেয়ে সপ্তাহে ১/২ বার খেতে পারেন।
ছবি – সাটারস্টক, এগ নিউট্রিশন, ইউটিউব