স্কুলে বাচ্চাদের টিফিন হিসেবে কী দেয়া যায় তা নিয়ে মায়েদের টেনশনের শেষ নেই। কোন খাবার দিলে বাচ্চারা সব খাবে, বাটি খালি নিয়ে ফিরবে এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই মায়েদের অর্ধ বেলা ফুরিয়ে যায়। জানি, সব বাচ্চাদের খাওয়ার টেস্ট সমান না। আবার একেক বাচ্চার পছন্দও একেকরকম। তবে কিছু খাবার আছে যেগুলো সব বাচ্চারাই বেশ আগ্রহ নিয়ে খাবে। আজ এমনই কয়েকটি রেসিপি সম্পর্কে জানাবো।
বাচ্চাদের টিফিন এর ৪ রেসিপি
১) মিঠা ফ্রেঞ্চ টোস্ট
এই টোস্টটি বানানো হয় পাউরুটি দিয়ে। শুধু পাউরুটি দিলে বাচ্চারা নাও খেতে পারে। এভাবে বানিয়ে দিলে কেউ না করবে না।
এটি বানাতে যা যা লাগবে
- পাউরুটি ৩/৪ পিস
- অল্প পরিমাণ দুধ
- মধু ১ টেবিল চামচ
- ডিম ২টি
- মাখন ১ টেবিল চামচ
যেভাবে বানাবেন
১) পাউরুটিগুলোর সাইডের অংশটুকু কেটে নিন। এরপর লম্বা করে কেটে নিন। চাইলে আস্তও রাখতে পারেন। শেইপ আপনার পছন্দমতো করে নিতে পারেন। এবার দুধ, ডিম, মধু একসাথে মাখিয়ে নিন।
২) এবার এই মিশ্রণে পাউরুটিগুলো ডুবিয়ে নিন।
৩) এখন ফ্রাইপ্যানে মাখন দিয়ে মচমচে করে ভেজে নিন।
ব্যস তৈরি হয়ে গেলো মিঠা ফ্রেঞ্চ টোস্ট! ও হ্যাঁ আরেকটা কথা! বাচ্চার টিফিন বক্সে রুমাল বা টিস্যু দিয়ে দিতে ভুলবেন না যেন! এতে হাতে তেল লেগে হাত তেলতেলে হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
২) থাই নুডলস
নুডুলস বাচ্চাদের এমনিতেই পছন্দের খাবার। আর এটিকে যদি ডিম ও নানা সবজি দিয়ে মজা করে বানিয়ে দেয়া তাহলে তো কথাই নেই। এমনই একটি রেসিপি হচ্ছে থাই নুডুলস।
এটি বানাতে যা যা লাগবে
- ১ প্যাকেট থাই নুডলস
- ৬/৭টি মাঝারি সাইজের চিংড়ি (খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া)
- মুরগির বুকের মাংস (লম্বা করে কাটা ১/২ কাপ)
- ক্যাপসিকাম ৩ রঙের (১টাও নিতে পারেন। আপনার সুবিধামতো)
- গাজর ১/২ কাপ (লম্বা করে কাটা)
- মটরশুঁটি ১ কাপ
- টমেটো সস ২ টেবিল চামচ
- সয়াসস ২ টেবিল চামচ
- লবণ স্বাদমতো
- কাঁচামরিচ অল্প পরিমাণে (লম্বা করে কাটা)
- পেঁয়াজ ২টি (মোটা করে কাটা)
- রসুন চার কোয়া (লম্বা করে কাটা)
- সয়াবিন তেল ১/২ কাপ
- ডিম ২টি
- আদা বাটা ১/২ চা চামচ
যেভাবে বানাবেন
১) পাতিলে বেশি করে পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। পানি বলক এলে লবণ ও কয়েক ফোঁটা সয়াবিন তেল দিন। এরপর পুরো প্যাকেট থাই নুডলস দিয়ে নেড়ে দিন। সিদ্ধ হলে নামিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
২) এই ফাঁকে মুরগির বুকের মাংস সয়াসস ও আদা বাটা দিয়ে ১০ মিনিট মেরিনেট করে রাখুন।
৩) এবার ফ্রাইপ্যান নিয়ে তাতে সয়াবিন তেল ও রসুন কুচি দিয়ে একটু নেড়ে নিন। এবার তাতে দিন পেঁয়াজ কুচি। মেরিনেট করা মুরগির মাংস দিয়ে দিন এই তেলে। ভালোভাবে নাড়ুন।
৪) এরপর চিংড়ি মাছ দিয়ে একটু নেড়ে ডিম ফেটিয়ে দিয়ে দিন। তারপর সব সবজি দিয়ে নেড়ে সিদ্ধ নুডলস দিয়ে একটু নেড়ে দিন। এবার প্যাকেটে নুডলসের মসলা দিয়ে সয়াসস, টমেটো সস দিয়ে ভালো করে নেড়ে কাঁচা মরিচ দিয়ে নামিয়ে নিন।
ব্যস! এই তো তৈরি হয়ে গেলো থাই নুডুলস। বাচ্চাদের টিফিন বক্সে যখন নুডুলস দিবেন তখন ফয়েল পেপার দিয়ে দিতে পারেন। এতে খাবার গরম থাকবে।
৩) ওটস রুটি
ওটস শুধু বড়দের জন্য নয়, ছোটদের জন্যও বেশ স্বাস্থ্যকর। ওটসের সুবিধা হচ্ছে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। তবে এর স্বাদের জন্য বাচ্চারা পছন্দ নাও করতে পারে। এজন্য এই খাবারটি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদে বানিয়ে দিলে বাচ্চারাও বেশ মজা করে খাবে।
বানাতে যা যা লাগবে
- ১ কাপ প্লেইন ওটস
- ১ কাপ টক দই
- ২টি ডিম
- টমেটো কুচি ১/২ কাপ
- গাজর কুচি ১/২ কাপ
- কাঁচা মরিচ ২ টি
- গোলমরিচ ১ টেবিল চামচ
- চাট মসলা ১ টেবিল চামচ
- লবণ স্বাদমতো
- সয়াবিন তেল ১ টেবিল চামচ
- চিনি ১ চা চামচ
যেভাবে বানাবেন
১) টক দই দিয়ে ওটস মাখিয়ে রাখুন ১ ঘন্টা। এবার এতে দিয়ে দিন টমেটো, গাজর, কাঁচা মরিচ, লবণ, চাট মসলা, চিনি, গোল মরিচ, ডিম। সব উপকরণগুলো ভালো করে মাখিয়ে নিন।
২) ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে দিন। তেল গরম হয়ে গেলে তাতে মাখিয়ে রাখা মিশ্রণটি দিয়ে দিন। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন ৩/৪ মিনিট। রুটিটি উলটে ঠিক আগের মতো করে ঢেকে রাখুন ৩/৪ মিনিট। দেখবেন বেশ ফুলে উঠেছে।
ব্যস! ওটস রুটি একদম তৈরি বাচ্চাদের টিফিনে দেয়ার জন্য। খুব বেশি সময় লাগে না বলে বানাতেও তেমন ঝামেলা হয় না। আর বাচ্চারাও বেশ আগ্রহ করেই খায়।
৪) বানানা চকো মিনি মাফিন
মাফিন মানেই বাচ্চাদের কাছে পছন্দের খাবার। আর যদি সেটা হয় চকলেট ফ্লেভারের তাহলে তো কথাই নেই। তবে দোকান থেকে কিনে আনা প্রচুর সুগার দেয়া মাফিনের কথা বলছি না কিন্তু। বলছি ঘরে বানানো স্বাস্থ্যকর মাফিনের কথা। ঘরে মাফিন বানানো হ্যাসেল লাগছে? অল্প সময়ে ও অল্প উপকরণে কীভাবে চকো মাফিন বানাতে পারবেন তারই রেসিপি জানিয়ে দিচ্ছি আজ।
এই মাফিন বানাতে যা যা লাগবে
- পাকা কলা ২টি ছোট সাইজের
- ১টি ডিম
- ময়দা ১/২ কাপ
- কোকো পাউডার ২ চা চামচ
- বেকিং পাউডার ১ চা চামচ
- বেকিং সোডা সামান্য
- লবণ স্বাদমতো
- চিনি (৪ চা চামচ। এই পরিমাণ নিজের পছন্দমতো)
- দুধ ১/৩ কাপ
- ভ্যানিলা এসেন্স ২-৩ ফোঁটা
- গলানো মাখন/ভেজিটেবল অয়েল ৩ টেবিল চামচ
যেভাবে বানাবেন
১) উপকরণগুলো খুব ভালোভাবে মিক্স করে নিতে হবে। এগ বিটার বা ইলেকট্রিক হ্যান্ড মিক্সার যেটা আপনার সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ছাড়া কাঁটা চামচ দিয়েও দ্রুত গতিতে করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে মিশ্রণ যেন দানা দানা না থেকে যায়।
২) মাফিন ট্রে-তে কাগজের তৈরি মাফিন কাপগুলো বসিয়ে তাতে তেল ব্রাশ করে নিন। এবার কাপের ২/৩ অংশতে মিশ্রণ ঢেলে দিয়ে ২০ মিনিট বেক করুন। যদি মাইক্রোওয়েভে করতে চান তাহলে ওভেনপ্রুফ বাটিতে তেল/ঘি ব্রাশ করে নিন তাতে মিশ্রণ ঢেলে ৪ মিনিট বেক করুন।
ব্যস! তৈরি হয়ে গেলো মজাদার বানানা চকো মিনি মাফিন। এই খাবারগুলোও বাচ্চারা বেশ পছন্দ করে। সব সময় এক ধরনের খাবার খেতে বাচ্চাদেরও বোরিং লাগে। স্বাদে ভিন্নতা আনতে এই মাফিনগুলো বাচ্চাদের জন্য বেশ মজাদার আইটেম হয়ে উঠতে পারে।
টিফিনের সাথে সাথে কিছু পরামর্শ
১) বাচ্চারা যদি পুরো খাবার না খেয়ে বাড়ি ফেরে তাহলে অবশ্যই তাকে আগে খেতে দিন। যেহেতু সারাদিন পুরো খাবার সে খায়নি, তার মানে পুরো পুষ্টিও সে পায়নি। বাচ্চারা ঘরে ফিরলে হাত মুখ ধুয়ে খাবার পর্বটা আগে সেরে ফেলুন।
২) অবশ্যই বাচ্চাদের ব্যাগে ফুটানো পানির বোতল দেবেন।
৩) ব্যাগে সব সময় একটি রুমাল রাখবেন যেন শিশু ঘেমে গেলে মুছতে পারে।
৪) অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া শিশুকে দিবেন না।
৫) যদি বাড়িতে ফিরে ফল খেতে না চায় তাহলে ঘরে বানানো ফলের জুস দিতে পারেন টিফিনে। তবে এটা প্রতিদিন দেয়া জরুরি নয়। সাথে টিফিন বক্সেও কিছু ফল দিয়ে দিতে পারেন। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে করতে খেতেও পারে।
বাচ্চাদের জন্য নিত্যদিন টিফিন বানানো মায়েদের জন্য বেশ ঝক্কির ব্যাপারই বটে। এরপর যদি বাচ্চা খেতে না চায়, তাহলে তো দুর্দশার শেষ নেই। উপরে যে রেসিপিগুলোর কথা বললাম সেগুলো ঘরে ট্রাই করে দেখতে পারেন। বাচ্চারা বেশ আগ্রহ নিয়েই খাবে। আর ঘরে বানানো বলে পুষ্টির দিকটাও ঠিক থাকছে ষোল আনা।
ছবি – সাটারস্টক