মেয়েদের গ্ল্যাম রুটিনের কথা যদি বলি, তাহলে একটি বিউটি প্রোডাক্ট সব সময় লিস্টের উপরের দিকে থাকবে। সেটা হচ্ছে ফাউন্ডেশন। মেকআপ লুককে পারফেক্ট করার জন্য ফাউন্ডেশন মোস্ট ইম্পরট্যান্ট একটি প্রোডাক্ট হলেও সব সময় এটি অ্যাপ্লাই করা সম্ভব হয় না। হুটহাট কোনো কাজ, অফিস বা ঘরোয়া কোনো দাওয়াতেও গ্ল্যাম মেকআপ ভালো লাগে না, আবার একদম মেকআপ ছাড়া গেলে দেখতেও ডাল লাগে। যারা ভাবছেন, ফাউন্ডেশন ছাড়া মেকআপ রুটিন সম্পন্ন হয় না, তাদেরকে বলছি ফাউন্ডেশন ফ্রি মেকআপ লুক কিন্তু এখন বেশ হাইপড। জানতে চান কীভাবে করে এই মেকআপ? চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক।
ফাউন্ডেশন ফ্রি মেকআপ লুক
কীভাবে এই মেকআপ লুক ক্রিয়েট করা যায় তার আগে চলুন জেনে নেই স্কিনের জন্য এটি কেন ভালো। এই মেকআপের আরও একটি নাম হচ্ছে নো ফাউন্ডেশন মেকআপ লুক। যে যেই নামে ডাকুক, মেইন হচ্ছে এই মেকআপে ফাউন্ডেশন থাকে না। মাঝে মাঝে ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই না করার বেনিফিট হচ্ছে এতে স্কিন ব্রিদ নিতে পারে, আপনাকে ফ্রেশ দেখায় ও ফ্রেশ ফিল করায়। হয়ত ভাবতে পারেন, সব সময় একভাবে মেকআপ করছেন, হুট করে ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই না করলে অদ্ভুদ লাগবে না? অথবা এটা করা কি সহজ হবে? দুটো প্রশ্নেরই উত্তর হচ্ছে, আপনি এটাকে যতটা জটিল ভাবছেন ব্যাপারটি আসলে এতটা জটিল নয়। ফাউন্ডেশন ফ্রি মেকআপ লুক ক্রিয়েট করার জন্য কী কী স্টেপ ফলো করবেন, চলুন এবার সেগুলো জেনে নেয়া যাক।
কী কী স্টেপ ফলো করতে হবে?
১) স্কিন প্রিপারেশন
যে কোনো মেকআপ লুক ক্রিয়েট করার প্রথম শর্ত হচ্ছে স্কিনে হাইড্রেশন প্রোভাইড করা। স্কিন যদি ময়েশ্চারাইজড থাকে, তাহলে মেকআপ লুক আরও ন্যাচারাল লাগে এবং ইনার রেডিয়েন্স ইনহ্যান্স হয়। কীভাবে স্কিন ময়েশ্চারাইজড রাখবেন? সবার আগে স্কিন টাইপ অনুযায়ী একটি ক্লিনজার দিয়ে ফেইস ক্লিন করে নিন। এবার ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে নিন। আপনার স্কিন টাইপ যেমনই হোক না কেন, হাইড্রেশন ও ময়েশ্চারাইজেশন ধরে রাখার জন্য এমন ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করতে হবে যেন সেটি নন গ্রিজি ও লাইট অয়েট হয়। নইলে ফেইস ঘামতে থাকবে, চিটচিটে হয়ে যাবে। ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করেছেন? এবার আপনি মেকআপ করার জন্য একদম রেডি!
২) প্রাইমার অ্যাপ্লিকেশন
প্রাইমার যে শুধু গ্ল্যামারাস লুক ক্রিয়েট করার জন্য ব্যবহার করতে হয়, তা কিন্তু নয়। এটির মেইন বেনিফিট হচ্ছে, এটি মেকআপ বেইজ ক্রিয়েট করতে হেল্প করে। পোরস ভিজিবিলিটি কমাতে, ম্যাট ফিনিশ দিতে এটি অ্যাপ্লাই করতে হয়। তাই ফাউন্ডেশন ফ্রি মেকআপ লুক ক্রিয়েট করার সময়ও প্রাইমার অ্যাপ্লাই করে নিতে হবে। এজন্য চুজ করুন লাইট ওয়েট, পোর মিনিমাইজিং প্রাইমার।
৩) কনসিলার অ্যাপ্লিকেশন
ফাউন্ডেশন ফ্রি মেকআপ লুক ক্রিয়েট করার জন্য কনসিলার অ্যাপ্লাই করতে হবে। কারণ আমাদের ফেইসে হাইপারপিগমেন্টেশন, ব্লেমিশ, স্পটস, রেডনেস, ডার্ক আন্ডার আই থাকতে পারে। আর এই কনসার্নগুলো কভার করে কনসিলার। আবার কনসিলার যে কোনোটা চুজ করলেই হবে না। এজন্য কিছু ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। যেমন-
- এই মেকআপ লুক ক্রিয়েট করার সময় হাইড্রেটিং কনসিলার চুজ করতে হবে। অনেকের স্কিন ড্রাই বা ডিহাইড্রেটেড থাকে। তারা যদি ম্যাট কনসিলার ইউজ করেন তাহলে মেকআপ ক্রিজি হয়ে যেতে পারে। তবে হ্যাঁ, স্কিন যদি অয়েলি হয়, সেক্ষেত্রে ম্যাট কনসিলার বেছে নিতে পারেন। কনসিলার চুজ করার আগে তাই স্কিন টাইপ বোঝা জরুরি।
- ফুল কভারেজ কনসিলারও এক্ষেত্রে বেস্ট চয়েস হতে পারে। এক্ষেত্রে কনসিলার খুব অল্প পরিমাণে অ্যাপ্লাই করতে হবে।
- ফেইসের যে যে এরিয়াগুলো আপনি কভার করতে চাচ্ছেন সেখানে ভালোভাবে কনসিলার অ্যাপ্লাই করে নিন। ফ্ললেস, ফাউন্ডেশনের মতো ফিনিশিং পাওয়ার জন্য ব্লেন্ডারের সাহায্যে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন।
৪) ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার দিয়ে সেট করে নেয়া
ভালোভাবে কনসিলার অ্যাপ্লাই করার পর এবার ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার দিয়ে সেট করে নিন। কনসিলার অ্যাপ্লিকেশনের জায়গাগুলোসহ টি জোনে পাউডার লাগিয়ে নিন। স্কিনের এক্সেস অয়েল এতে অ্যাবজর্ব হয়ে যাবে।
৫) ব্লাশ অ্যাপ্লিকেশন
মেকআপ একটু হালকা হলেও অল্প পরিমাণ ব্লাশ অ্যাপ্লাই করলেও ন্যাচারাল লুক দিবে। এজন্য চিকবোনে সামান্য ব্লাশ লাগিয়ে নিন। যদি নো মেকআপ মেকআপ লুককে সান কিসড কমপ্লেক্সন দিতে চান, তাহলে নাকের উপরেও খানিকটা ওয়ার্ম টোনের ব্লাশ লাগিয়ে নিতে পারেন।
৬) মিনিমাল আই মেকআপ
ফাউন্ডেশন ফ্রি মেকআপ লুক মানে আই মেকআপটাও গর্জিয়াস হবে না। আই লিড এক্ষেত্রে যতটা মিনিমাল হয় তত ভালো। এজন্য সিম্পলি আইলিডে আই লাইনার অ্যাপ্লাই করতে পারেন। বাইরে বের হলে স্ম্যাজ না হয়ে যায় সেজন্য ওয়াটারপ্রুফ ও স্ম্যাজপ্রুফ আইলাইনার চুজ করুন। চোখ সাজানোর জন্য ভারী কিছুর বদলে ক্রিম আইশ্যাডো অ্যাপ্লাই করতে পারেন। আইলুক ইনহ্যান্স করার জন্য আই ইনার কর্ণারে শিমারি আইশ্যাডোও লাগাতে পারেন। আইল্যাশের ভলিউম বাড়ানোর জন্য মাশকারা দিয়ে কোট করে নিতে পারেন। মেকআপ মিনিমাল হলেও আইব্রো শেইপ ডিফাইন করে নিবেন। নইলে আই লুক দেখতে ভালো লাগবে না।
৭) লিপস্টিক অ্যাপ্লিকেশন
সবশেষে লিপস্টিক অ্যাপ্লাই করার পালা। সব স্টেপ শেষ, এবার জাস্ট লিপস্টিক অ্যাপ্লাই করে নিলেই হলো, এমনটি আবার ভাবতে যাবেন না কিন্তু! আপনার ঠোঁট যদি ময়েশ্চারাইজড না থাকে, তাহলে পছন্দের ব্র্যান্ডের যে শেইডই অ্যাপ্লাই করুন না কেন, কোনো লাভ নেই। তাই সবার আগে লিপ বাম দিয়ে ঠোঁট ময়েশ্চারাইজ করে নিন। এটা অবশ্য মেকআপের শুরুতেই করতে হবে। এরপর একদম লাস্ট স্টেপে লিপস্টিক অ্যাপ্লাই করতে হবে। যেহেতু মিনিমাল মেকআপ, তাই ন্যাচারাল স্কিনটোনকে কমপ্লিমেন্ট করবে এমন শেইড চুজ করতে হবে।
লিপস্টিক অ্যাপ্লাইয়ের পর স্ম্যাজ হয়ে যাওয়া খুব কমন একটি প্রবলেম। এই প্রবলেম যেন না হয় সেজন্য একটি টিপস শেয়ার করি। লিপস্টিক দেয়া শেষে একটি টিস্যু পেপার আপার ও লোয়ার লিপসের মাঝে চাপ দিয়ে ধরুন। বাড়তি লিপস্টিকটুকু এতে উঠে আসবে। সহজে স্ম্যাজ হওয়ার চান্স থাকবে না, আবার দাঁতে লেগে ইমব্যারেন্সডও হতে হবে না। যে লিপস্টিকটি চুজ করছেন সেটি যেন লং লাস্টিং হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। যদি লিপস্টিক অ্যাপ্লাই করতে না চান, সেক্ষেত্রে টিন্টেড লিপ বাম ইউজ করতে পারেন।
৮) সেটিং স্প্রে অ্যাপ্লাই করা
মেকআপ শেষে সেটিং স্প্রে অ্যাপ্লাই করে নিন। এতে মেকআপ সেট থাকবে, দেখতেও ন্যাচারাল লাগবে। সারাদিনের জন্য যখন মেকআপ করে বাইরে যাওয়া হয়, তখন ফেইস যেন হাইড্রেটেড থাকে, সেটাও আগে থেকে ঠিক করে নিতে হবে। এজন্য ব্যাগে একটি ফেইস মিস্ট রাখতে পারেন। যেন ২/৩ ঘন্টা পর পর ফেইসে অ্যাপ্লাই করা যায়। স্কিন যদি হাইড্রেটেড থাকে, তাহলে দিনশেষেও ফেইসে ক্লান্তির ছাপ থাকে না।
ফাউন্ডেশন ছাড়াও যে মেকআপ করা যায়, এবার বুঝলেন নিশ্চয়ই? স্টেপগুলো কি খুব কঠিন লাগছে? মনে হয় না। মিনিমাল একটা মেকআপ লুক ক্রিয়েট করার জন্য এতটুকু ইফোর্ট তো দেয়াই যায়, তাই না? অনেক প্রোডাক্ট ছাড়াও মিনিমাল ও একইসাথে ফ্ললেস লুক ক্রিয়েট করা পসিবল। মাঝে মাঝে স্কিনকেও ব্রিদ নিতে দিন। এতে স্কিনও ভালো থাকবে, মেকআপ ফ্ললেসও হবে। স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন চারদিকে থেকে। চারদিকে’র দুটি আউটলেট রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়াতে আল জয়নাল ট্রেড সেন্টারে। ফিজিক্যালি কিনতে চাইলে এই দুটি আউটলেট ঘুরে আসতে পারেন। আর ঘরে বসে প্রোডাক্ট হাতে পেতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন চারদিকে’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপে।
ছবি – সাটারস্টক