আজ থেকে কয়েক বছর আগের কথাই যদি আমি বলি, তাহলে বলতে হয়, মেকআপ করা নিয়ে আমাদের মেয়েদের মধ্যে বেশ দ্বিধা কাজ করতো। মেকআপ মানেই মুখ সাদা হয়ে যাওয়া, ত্বকে ঠিকমতো প্রোডাক্ট সেট না হওয়া, কিছুক্ষণের মধ্যেই মেকআপ গলে চেহারা একদম নষ্ট হয়ে যাওয়া। এমন অনেক সমস্যার মুখোমুখিই আমাদের হতে হয়েছে। তবে দিন যত পার হয়েছে, তত মেয়েরা সচেতন হয়েছে। এখন মেকআপ করা নিয়ে তেমন একটা দ্বিধা কারও মাঝে কাজ করে না। বরং কনফিডেন্সের সাথে মেকআপ অ্যাপ্লাই করে অনেকেই এখন প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। এই যে মেকআপ করে প্রশংসা কুড়ানো, এটার শুরুটা হয় কিন্তু পারফেক্ট বেইজ করতে পারলে। আর এই জন্য প্রাইমার বেশ জরুরি একটি প্রোডাক্ট। প্রাইমার কী এবং পারফেক্ট বেইজ মেকআপ এর জন্য কেন এটি জরুরি, তা নিয়েই আজ আলোচনা করব।
প্রাইমার কী?
কসমেটিক জগতে যত প্রোডাক্টের কথা আপনারা জানেন তার মধ্যে প্রাইমার এই মুহূর্তে অন্যতম জরুরি একটি প্রোডাক্ট। মেকআপ শুরু করার আগে এটি ফেইসে অ্যাপ্লাই করতে হয়। প্রাইমার সাধারণত ক্রিমি বা জেল টেক্সচারের হয়। এটির কারণে মুখে একটি লেয়ার তৈরি হয়। এতে মেকআপ অ্যাপ্লিকেশন বেশ স্মুথ হয়। তাই পারফেক্ট বেইজ মেকআপ এর জন্য প্রাইমার ব্যবহার করা জরুরি।
কত ধরনের প্রাইমার হয়?
প্রাইমার সাধারণত কয়েক ধরনের হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে –
১) ম্যাট প্রাইমার
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এই প্রাইমারটি ম্যাট হবে। অর্থাৎ অয়েল কন্ট্রোল করতে হেল্প করবে। যাদের স্কিন অয়েলি, তারা এ ধরনের প্রাইমার ব্যবহার করতে পারেন। পোরস মিনিমাইজ করা, ফাইন লাইনস বা রিংকেলস ইভেন করা, দীর্ঘ সময়ের জন্য ফাউন্ডেশন যেন সেট থাকে – এমন সব কাজই সহজ করে দেয় প্রাইমার। সিলিকন বেইজড যে প্রাইমারগুলো আছে, সেগুলো কিছুটা ট্যাকি হয় বলে ফাউন্ডেশন বা কনসিলার ছড়িয়ে যায় না সহজে। আর ম্যাটিফায়িং প্রোপার্টিজ আছে বলে অয়েলি স্কিনে মেকআপ সহজে মেল্ট বা ক্রিজ হয় না।
২) হাইড্রেটিং প্রাইমার
ড্রাই স্কিনের জন্য এ ধরনের প্রাইমার ব্যবহার করা উচিত। কারণ এই প্রাইমারগুলো সাধারণত অয়েল বেইজড হয়। এগুলোতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও নাইরিশিং প্রোপার্টিজ যেমন – হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে।
৩) কালার কারেক্টিং প্রাইমার
আমাদের অনেকেরই চোখের নিচে কালো দাগ থাকে, স্কিনে লালচে ভাব থাকে। এ ধরনের সমস্যাগুলো রিমুভ করতে হেল্প করে কালার কারেক্টিং প্রাইমার।
৪) ইল্যুমিনেটিং প্রাইমার
এই প্রাইমার ব্যবহারেও স্কিন স্মুথ হয়, আনইভেন টোন ইভেন হয়। এটার বাড়তি সুবিধা হচ্ছে, এটা স্কিনে শাইনি একটা লুক ক্রিয়েট করে। এই প্রাইমার অ্যাপ্লাইয়ের পর ফাউন্ডেশন দিলে স্কিন আরও বেশি গ্লোয়ি দেখায়।
৫) আইশ্যাডো প্রাইমার
আই লিড ম্যাট করতে এ ধরনের প্রাইমার বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যবহারে আরও সুবিধা হচ্ছে, এটি আইশ্যাডো লং লাস্টিং করে, আইশ্যাডোর একচুয়াল কালার ভালোভাবে বোঝা হয় এটি ব্যবহারে।
পারফেক্ট বেইজ মেকআপ এর জন্য প্রাইমার
সরাসরি ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে স্কিন স্মুথ করার পর তো মেকআপ অ্যাপ্লাই করা যায়। কেন প্রাইমার ব্যবহার করতে হবে? কারণ আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে, মেকআপ করার পর আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাক, ফেইস অয়েলি হয়ে যাক বা মেকআপ কেকি হয়ে যাক? তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক পারফেক্ট বেইজ মেকআপ এর জন্য প্রাইমার ব্যবহার করা কেন জরুরি সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
১) পোরস ও ফাইন লাইনস মিনিমাইজ করে
ফেইস প্রাইমার সব ধরনের ত্বকেই ব্যবহার করা যায়। সেজন্য আপনার ত্বকে যদি পোরস বেশি ভিজিবল থাকে, ফাইন লাইনস বা রিংকেলস দেখা যায়, তাহলে এই সমস্যাগুলো ঢাকতে প্রাইমার ব্যবহার করতে হবে। এর ব্যবহারে বেইজ মেকআপ পারফেক্ট হবে এবং বাকি প্রোডাক্টগুলো অ্যাপ্লাই করা সহজ হবে।
২) ম্যাট ফিনিশিং দেয়
পারফেক্ট বেইজ মেকআপ ক্রিয়েট করার জন্য প্রাইমার ব্যবহার করার আরও একটি কারণ হচ্ছে, স্কিনের অয়েল কন্ট্রোল করতে এটি খুব ভালো কাজ করে। অয়েলি স্কিনে সিবাম বেশি প্রোডিউস হওয়ায় স্কিন দ্রুত চিটচিটে হয়ে যায়। তাই এটি ব্যবহারে অয়েলভাব অনেকটাই কমে আসে।
৩) মেকআপ লং লাস্টিং হয়
অনেকেই ভাবেন মেকআপ বেইজ স্মুথ হওয়ার জন্য ফাউন্ডেশনের রাইট শেড ভালোভাবে চেনা জরুরি। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, ফেইস প্রাইমার অ্যাপ্লিকেশন হচ্ছে মেকআপ রুটিনের ফার্স্ট স্টেপ। প্রাইমারই ঠিক করবে ফাউন্ডেশন স্টিক থাকবে কিনা, মেকআপ কেকি হবে না এবং বাকি বিউটি প্রোডাক্টগুলো স্মুথলি বসবে।
৪) লাইটওয়েট ফিল দেয়
প্রাইমার অ্যাপ্লাই করার পর, এটি স্কিনে খুব ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হয়। যার কারণে স্কিনে বেশ লাইট ফিল হয় এবং কেকি হয় না বা ভারী ফিল হয় না।
৫) ফ্ললেস ও ন্যাচারাল গ্লো দেয়
হুটহাট বাইরে যেতে হলে বা ব্যস্ততায় অনেক সময়ই ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করার সুযোগ থাকে না। তখন ইল্যুমিনেটিং প্রাইমার ব্যবহার করতে পারেন। এতে স্কিন ফ্ললেস, হেলদি গ্লোয়িং ও ন্যাচারাল লুক দিবে।
৬) স্কিন টোন ইভেন করে
স্কিনের রিংকেলস, ডার্ক সার্কেল, একনে স্পট সহ নানা স্পটের কারণে ফেইসের গ্লো দ্রুত হারিয়ে যায়। এই সমস্যাগুলো কমাতে সাহায্য করে কালার কারেক্টিং প্রাইমার। স্কিন টোনকে ইভেন করতে সাহায্য করে মেকআপ অ্যাপ্লিকেশনও ইজি হয়।
৭) স্কিন হাইড্রেটেড রাখে
স্কিনের হাইড্রেশন ধরে রাখে প্রাইমার। যাদের স্কিন বেশি ড্রাই, তারা মেকআপ করলে স্কিন আরও রাফ হয়ে ফেটে যাওয়ার চান্স থাকে। তখন মেকআপ দেখতে কেকি লাগে। এই সমস্যা দূর করে প্রাইমার। অনেক প্রাইমারে হাইড্রেশন ধরে রাখার জন্য হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, অ্যালোভেরাও ব্যবহার করা হয়। যার কারণে স্কিন হয় সফট। আবার কিছু প্রাইমার এসপিএফ থাকায় সেগুলো ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে বাঁচায়।
প্রাইমার ব্যবহারের নিয়ম
প্রাইমার ব্যবহারের নিয়ম খুব সহজ। মাত্র ২/৩টি ধাপেই এটি অ্যাপ্লাই করা যায়। সেগুলো হচ্ছে-
১) স্কিনকেয়ার রুটিন শেষ করে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন।
২) এবার অল্প পরিমাণ প্রাইমার আঙুলে নিয়ে পুরো মুখে ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করে নিন। বিশেষ করে যে জায়গাগুলো বেশি অয়েলি সেখানে লাগিয়ে নিন।
৩) প্রাইমার দেয়ার পর ২ থেকে ৩ মিনিট অপেক্ষা করুন। এতে প্রাইমার স্কিনে ভালোভাবে সেট হবে এবং অন্যান্য মেকআপ প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করা সহজ হবে।
এই তো জানিয়ে দিলাম প্রাইমার কী, প্রাইমারের ধরন এবং পারফেক্ট বেইজ মেকআপ ক্রিয়েট করার জন্য প্রাইমার কেন জরুরি সেটা সম্পর্কে। এবার পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিন আপনার প্রাইমারটি। অথেনটিক স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে পারেন চারদিকে থেকে। এজন্য ভিজিট করতে পারেন চারদিকের অ্যাপ, ওয়েবসাইট ও আউটলেট।
ছবি – Chardike, Nirnita, Youtube, Makeup Studio, Shutterstock