তৈলাক্ত ত্বকের স্কিনকেয়ার রুটিন যেমন হওয়া উচিত
স্কিনকেয়ার রুটিন ঠিক করার আগে জেনে নিতে হয় স্কিনের ধরনটা কেমন। সেটা কি ড্রাই নাকি অয়েলি? মানে শুষ্ক ত্বক নাকি তৈলাক্ত? নির্দিষ্ট ধরনের ত্বকের জন্য চাই নির্দিষ্ট স্কিনকেয়ার রুটিন। তৈলাক্তের জন্য এক ধরনের আর শুষ্কতার জন্য অন্য ধরনের। তবে কথা থাকে এখানেও। এখন ত্বক তৈলাক্ত বলেই যে আজীবন তাইই থাকবে এমন কোন কথা নেই। শুষ্কতার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তেমনই। তো ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তাহলে স্কিন কেয়ার রুটিন সাজাবেন কি ভাবে? কোন ধারণা আছে? না থাকলেও সমস্যা নেই। কারণ, আজকের আয়োজনটাই তা নিয়ে।
সকালের রুটিন
১. ক্লিনজার
যে কোন স্কিনকেয়ার রুটিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্লিনজিং। আর যদি হয় তৈলাক্ত ত্বক, তাহলে ক্লিনজারের কোন বিকল্প নেই। তৈলাক্ত ত্বক সকালবেলা পরিষ্কার না করলেই নয়। কেননা, ময়লা, অতিরিক্ত তেল এবং ত্বকের ইম্পিউরিটিসগুলো সারা রাত ভর ত্বকে জমাট বাঁধতে পারে। আর তা স্কিনের পোরসগুলো বন্ধ করে দিতে পারে। তাই দিনের শুরুতে সতেজতার জন্য ব্যবহার করতে হাল্কা ওয়াটার-বেজড ক্লিনজার।
এক্সফোলিয়েশন সমৃদ্ধ ক্লিনজার হলে ভালো; তবে ক্লিনজারের উপাদানে স্যালসিলিক এসিড থাকাটাও নিঃসন্দেহে ভালো। কেননা, এই ক্লিনজার ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে এবং ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার করে পোরসগুলোর বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করে। এই ক্লিনজার ত্বকে আগত পরবর্তী প্রোডাক্টগুলোর কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলে।
২. এক্সফোলিয়েশন
ত্বকে মৃত কোষ বৃদ্ধি, ব্ল্যাকহেডস এবং পোরস বন্ধ করাতে তৈলাক্ত ত্বক বিশেষভাবে প্রভাবিত। উপরন্তু, পরিবেশগত ক্ষতির কারণে ত্বক হয়ে উঠতে পারে রুক্ষ, নিষ্প্রাণ, এবং অসম। একইসাথে ত্বকে বলিরেখা ফুটে ওঠায় চেহারা তার সৌন্দর্য হারায়। তাই, সপ্তাহে অন্তত ২/৩ বার হালকা এক্সফোলিয়েন্টের সাহায্যে এক্সফোলিয়েট করা জরুরী। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট – যেমন এএইচএ (আলফা হাইড্রক্সি এসিড) এবং বিএইচএ (বেটা হাইড্রক্সি এসিড) – চোখের নীচের কালো দাগ দূর করতে এবং নিষ্প্রভ ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে ত্বকের টার্নওভারকে বুস্ট করে। অন্যদিকে, ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট ত্বকের টেক্সচার সুন্দর ও মসৃণ করতে সাহায্য করে।
৩. টোনার
শুষ্ক ত্বকে টোনারের কাজ এবং তৈলাক্ত ত্বকে টোনার কাজ একই। ত্বকের ময়লা ও মেকআপের অবশিষ্টাংষ বর্জন, স্কিনকেয়ার রুটিনের পরবর্তী ধাপের জন্য ত্বক প্রস্তুত করা এবং পরবর্তী প্রোডাক্টের উপাদানগুলো শুষে নিতে ত্বককে প্রস্তুত করে তোলে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য একটা ভালো টোনার ত্বককে শুষ্ক করবে না, আবার তেলবিহীনও করবে না; অথচ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেবে ত্বকের। এমনকি টোনার ত্বকের ময়শ্চার লেভেলও ঠিক রাখে।
৪. সিরাম/এসেন্স/অ্যাম্পুল
এই ধাপে এসে আপনাকে বেছে নিতে হবে ঠিক কোনটা আপনার ত্বকের জন্য জরুরী। যদি মনে হয় ত্বকের হাইড্রেশন দরকার; তাহলে হাইড্রেটিং ট্রিটমেন্ট করতে হবে। যদি মনে হয় ত্বকের সূক্ষ্ম রেখা ও বলিরেখার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দরকার; তাহলে অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট করতে হবে। যদি মনে হয় ত্বকের উজ্জ্বলতা দরকার, তাহলে ব্রাইটেনিং ট্রিটমেন্ট করতে হবে। যেহেতু তৈলাক্ত ত্বক, তাই সহজেই শুষে নেয় এমন ওয়াটারি এবং হালকা ট্রিটমেন্টই বেশি কার্যকর হবে।
৫. ময়শ্চারাইজার এবং আই ক্রিম
ইমালশন বা জেল-জাতীয় ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে। ক্রিম-বেজড ময়শ্চারাইজার ত্বকের পোরসগুলোতে আটকে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আপনার ত্বক যদি সংবেদনশীল বা জ্বালাময় হয়, তাহলে জ্বালা উপশম করার ত্বককে আরাম দেয় এমন ময়শ্চারাইজারও ব্যবহার করা যেতে পারে। আর এরপর চোখের সুরক্ষা ও আরামের জন্য আই ক্রিম ব্যবহার করা উচিত।
৬. সানস্ক্রিন ও লিপ বাম
সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে এবং বয়সের আগে বার্ধক্যজনিত লক্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী। স্কিন টোন যাই হোক না কেন, অন্তত এসপিএফ (সান প্রটেক্টর ফ্যাক্টর) ৩০ সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। আর সবশেষে সকাল বেলার স্কিনকেয়ার রুটিন শেষ করুন লিপ বাম দিয়ে। ঠোঁটে কোনো সেবেসিয়াস গ্রন্থি নেই। তাই তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী হলেও ঠোঁট শুকিয়ে যেতেই পারে। তাই ময়শ্চারাইজিং লিপ বাম ব্যবহার করা উচিত।
সন্ধ্যা/রাতের রুটিন
১. ক্লিনজার
মেকআপ করুন আর নাইবা করুন, আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাহলে রাতের বেলা ক্লিনজিং করলে দারুণ উপকার পাবেন সারা রাতভর। অয়েল বেজড ক্লিনজার ত্বকের অতিরিক্ত সিবাম এবং মেকআপের অবশিষ্টাংশ খুব সুন্দর আর মসৃণভাবে ত্বক থেকে সরিয়ে দেয়। প্রথমে অয়েল বেজড ক্লিনজার দিয়ে ত্বকের ময়লা এবং মেকআপ সরিয়ে দিন। এরপর একটা ওয়াটার বেজড ক্লিনজার ব্যবহার করুন ত্বক পরিষ্কার করতে।
২. টোনার
ক্লিনজারের পর পরবর্তী কোন প্রোডাক্ট প্রয়োগ করার আগে ত্বকে টোনার ব্যবহার করুন। এতে ময়শ্চার লেভেল ঠিক থাকবে এবং ত্বক পরবর্তী প্রোডাক্ট প্রয়োগের উপযুক্তও হবে।
৩. এক্সফোলিয়েশন
এক্সফোলিয়েশন ত্বককে শুষ্ক ও রুক্ষ হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়। সকালের চাইতে রাতের বেলার এক্সফোলিয়েশন ত্বকের জন্য দারুণ কার্যকরী। তাই, সপ্তাহে ২/৩ বার রাতের বেলা এক্সফোলিয়েশন করুন।
৩. শীট মাস্ক
শীট মাস্ক হলো চেহারার আদলে গড়া সিরামে ভেজা একটি ফেইসমাস্ক যাতে বিভিন্ন ধরনের ত্বকের জন্য উপকারী উপাদান থাকে, যেমন – অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল, হায়ালুরোনিক এসিড ইত্যাদি। সব ধরনের ত্বকের জন্যই শীট মাস্ক রয়েছে যাতে ত্বকে হাইড্রেশন, ময়শ্চারাইজিং, নারিশিং, অ্যান্টি-এজিং, পিউরিফাইং এবং ব্রাইটেন করে থাকে। সেরা ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহার করুন।
৪. সিরাম/এসেন্স/অ্যাম্পুল
ঘুমানোর আগে ত্বকে কনসানট্রেটেড ট্রিটমেন্ট করুন যা ম্যাজিকের মতো কাজ করবে ত্বকের জন্য। তবে যেদিন শীট মাস্ক ব্যবহার করবেন সেদিন এই ধাপটা না নিলেও চলবে। কেননা, শীট মাস্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিরাম থাকে।
৫. ময়শ্চারাইজার এবং আই ক্রিম
নারিশিং ময়শ্চারাইজার প্রয়োগ করুন। এতে করে ত্বকে পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ সরবরাহ হবে সারারাত। পাশাপাশি চোখের সুরক্ষায় আই ক্রিম ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন।
৬. লিপ বাম
রাতের বেলা লিপ বাম দারুণ কাজ করে। তাই, পুরু করে লিপ বাম দিন। এতে করে ঠোঁট নরম এবং মসৃণ হবে।
লিংক:
📞 ত্বকের সমস্যার জন্য প্রোডাক্ট সাজেশন পেতে কল করুনঃ 01790 270066 অথবা ইনবক্স করুন। 🌐 ১০০% অরিজিনাল কোরিয়ান প্রোডাক্টঃ https://chardike.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © chardike blog 2021