বয়সের ছাপ দূর করার উপায়
বয়সের ছাপ আপনাকে ছুঁতে আসবেই হয়তো তা সময়ের আগেই কিংবা পরে আপনার জাতিসত্তা, বর্ণ, ত্বকের ধরন যাই হোক না কেন; হয়তো তা সময়ের আগেই কিংবা পরে। একইসঙ্গে এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে, কপাল এবং চোখের চারপাশে যে ভাঁজ পড়ে তা কিন্তু প্রাকৃতিক। সমস্যা যেহেতু আছে সেহেতু সমাধানও আছে। মূলত মানুষ ২০ বছর অতিক্রম করার পর থেকে ত্বকের ভাঁজ এবং সূক্ষ্ম রেখাগুলো ফুটে উঠতে শুরু করে। কিন্তু চিন্তার কোন কারণ নেই।
রুটিন মেনে সৌন্দর্য চর্চা করলে ত্বকের ভাঁজগুলো অনেকটাই মসৃণ থাকে অনেককাল যাবত। নাহ, আলাদা কোন স্কিন কেয়ার রুটিনের দরকার নেই। আপনার নিত্যদিনে রুটিনেই চাইলে আপনি এসব যোগ করে নিতে পারবেন। তবে সেসব উপায় নিয়ে আলোচনার পূর্বে অল্প কথায় বয়সের ছাপ কি এবং কেন হয় তা নিয়ে খানিকটা জেনে নেয়া যাক।
বয়সের ছাপ বা রিঙ্কেলস কি?
রিঙ্কেলসের বাংলা করলে বুঝায় ত্বকের কুঁচকানো ভাব। তবে এই ভাবটা বয়সের ছাপের অন্যতম প্রধান কারণ বিধায় একে এই নামেই অভিহিত করা হয়ে থাকে। সময়ের সাথে ত্বক কুঁচকানোই মূলত রিঙ্কেলস বলা হয়ে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। ফলে ত্বকের নমনীয়তা কমে ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রাকৃতিক তেলের উৎপাদন হ্রাস হতে থাকলে ত্বক শুষ্ক হতে শুরু করে। এবং শুষ্কতা থেকেই মূলত ত্বক সঙ্কুচিত হয়ে কুঁচকানো ভাব ধারন করে।
রিঙ্কেলসও দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটা গতিশীল আর অন্যটা স্থির। মূলত হাসি কিংবা বিরক্তি ভাবে ত্বকে যে কুঁচকানো ভাব আসে সেটাই গতিশীল বা ডায়নামিক রিঙ্কেলস। এটা সাময়িক; কেননা মুখাবয়বের ভাব পরিবর্তন হলেই এটা চলে যায়। অন্যদিকে স্ট্যাটিক বা স্থির রিঙ্কেলস হচ্ছে বয়সের ভাড়ে ত্বকের উপর স্থায়ীভাবে চেপে বসা কুঁচকানো ভাব। মূলত বাহ্যিক কারণেই এই রিঙ্কেলস হয়ে থাকে। সময়ের সাথে সাথে ডায়নামিক রিঙ্কেলসই স্ট্যাটিক রিঙ্কেলসে পরিণত হয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
কেন হয়?
দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যালোকে থাকা, বছরের পর বছর ধূমপান করা, এবং বয়স বাড়া – এসব কিছুই রিঙ্কেলসের জন্য দায়ী। এসবের কারণে এপিডার্মিস পাতলা হয়ে যায়, নমনীয়তা হ্রাস পায় এবং ত্বকের ভঙ্গুরতা ত্বককে কুঁচকানো ভাব আনতে সাহায্য করে। সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে ত্বকের গভীরে থাকা কানেকটিভ টিস্যু (কোলাজেন এবং ইলাস্টিন ফাইবার) ভেঙ্গে দেয় সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি। যার ফলে ত্বকের টানটান ভাব ঝুলে পড়ে এবং অকালে ত্বকে বয়সের ছাপ ফুটতে শুরু করে।
রিঙ্কেল সাধারণত কোথায় হয়?
আপনার শরীরের যে কোন স্থানে রিঙ্কেল হতে পারে। তবে সর্বাধিক প্রচলিত স্থান হচ্ছে মুখমণ্ডল। যেখানে প্রায় ৪২টা স্বতন্ত্র পেশী রয়েছে যেগুলো প্রতিনিয়ত চলমান।
ক্রোস ফিট বা বলিরেখা
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের চেহারায় বলিরেখা দেখা দেয়। তবে দেখা যায় যে, প্রায় ৮৪% নারীদেরই অন্যান্য রিঙ্কেল আসার আগেই বলিরেখা বা ক্রোস ফিট দেখা দেয়। শরীরের অন্য যে কোনো অঞ্চলের ত্বকের চাইতে চোখের চারপাশের ত্বক অত্যন্ত পাতলা। তাছাড়া, রিঙ্কেল থেকে রক্ষা করতে এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কোলাজেন এবং ইলাস্টিন থাকে না।
দ্য ইলেভেনস (গ্লাবেলার লাইনস)
ইলেভেনস হচ্ছে দুটি খাড়া রেখা যেগুলো আপনার ভ্রুজোড়ার মাঝে থাকে। এবং ভ্রুজোড়া বারবার ছাটার ফলে এমনটা হবার সম্ভাবনা থাকে সবচাইতে বেশি। ডায়নামিক রিঙ্কেলের প্রধান উদাহরণ হিসেবে ধরা হয় এটিকে।
লাফ লাইনস
নাম লাফ লাইনস দেয়া হলেও হাসির জন্য এমনটা হয় না। ন্যাসোলেবিয়াল ভাঁজের কারণে এটি হয়ে থাকে। যা নাকের বাইরের দুপাশ থেকে মুখের বাইরের কোণার দিকে প্রসারিত হতে থাকে। আর এমনটা হবার কারণ হচ্ছে মুখের স্বতন্ত্র পেশী সমূহের নড়াচড়া। সাবকুটেনিয়াস ফ্যাট হ্রাস হয় বয়স বাড়লে তখন লাফ লাইনস দেখা দেয়।
ফোরহেড লাইনস
কপাল জুড়ে যে সমান্তরাল কুঁচকানো রেখা থাকে তাই ফোরহেড লাইনস। ভ্রুর নড়াচড়ার কারণে এটি দৃশ্যমান হয় বেশিরভাগ সময়। জেনেটিক এবং লাইফস্টাইলের কারণে কিছু মানুষের আবার অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি ফোরহেড লাইনস দেখা দেয়।
দূর করার উপায় কি?
রিঙ্কেল বা বয়সের ছাপ দূর করা যায় অতি সহজেই। যদিও কিছু কিছু পুরোপুরি এটির অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করা যায় না। কিন্তু এর দৃশ্যমান উপস্থিতি অনেকটাই হ্রাস করা যায়। এবং তা দুই পদ্ধতিতেই করা যায়। ঘরোয়া এবং মেডিক্যাল।
বয়সের ছাপ দূর করার ঘরোয়া উপায়
রেটিনয়েডস
রেটিনয়েডস হচ্ছে রিঙ্কেল এবং বলিরেখা হ্রাস করার সবচাইতে কার্যকরি পন্থা। এতে থাকা ভিটামিন এ ডিরাইভেটিভ কোষগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে শক্তি যোগায় এবং কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি করায়। শুধুমাত্র রিঙ্কেলই হ্রাস করায় না; বরং ত্বক মসৃণ ও নরম করে, এবং গাঢ় দাগ দূর করতেও সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করা যায় এবং অবশ্যই সাথে সাথে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
আন্টি-অক্সিডেন্ট
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট – ভিটামিন সি, নিয়াসিনামাইড এবং রেসভেরাটোল – এগুলো সবই রেডিক্যালের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে; যা আমাদের ত্বকের ড্যামেজ এবং রিঙ্কেলের জন্য দায়ী। আবার এটি কোলাজেনের উৎপাদন মাত্রা বাড়ায় যা ত্বকে নমনীয়তা নিয়ে আসে।
আলফা হাইড্রক্সি এসিড
আলফা হাইড্রক্সি এসিড (এএইচএ) যার মধ্যে গ্লাইকোলিক, সাইট্রিক এবং ল্যাকটিক এসিড রয়েছে; যা কোষের টার্নওভার বৃদ্ধি করে, কোলাজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং রিঙ্কেলের দৃশ্যমান উপস্থিতি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
মেডিক্যাল
নিউরোটক্সিন
ইনজেকশন দেয়ার ব্যাপারে অনেকেই সমস্যা আছে; তবে বোটুনিলাম টক্সিনের এই পাতলা অংশটি দারুণ কাজ করে রিঙ্কেলের বিরুদ্ধে। বোটক্স, জেওমিন এবং জিউভিয়াওয়ের মতো নিউরোটক্সিনগুলো অস্থায়ীভাবে পেশী সংকোচন থামিয়ে ডায়নামিক রিঙ্কেল হ্রাস করে। তবে নিউরোটক্সিন ব্যবহারে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন অবশ্যই জরুরী।
ফিলার্স
ফিলার হলো নরম এবং জেল জাতীয় পদার্থ যা ত্বকের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয় যেন সেগুলো সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে ত্বকের সুরক্ষায়। চোখের নীচের কালো দাগ, গালের হাড় উঁচু করা, ঠোঁট পুরু করা এবং ন্যাসোলেবিয়াল ভাঁজ দূর করতেও ব্যবহার করা হয়। হায়ালুরোনিক এসিড ফিলারগুলো দুই বছরের মতো স্থায়ী হয়।
লেজার
নন অ্যাবলেটিভ রিসারফেসিং লেজার হচ্ছে এমন এক ধরণের লেজার যেটার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বকের উপরিপৃষ্ঠকে আঘাত না করেই এবং বয়সের ছাপের বিভিন্ন ধরণের রেখাগুলো নিরাময়ে দুর্দান্ত কাজ করে। কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ানো লেজারের অন্যতম কাজ। এছাড়া, লোমকূপ পরিষ্কার এবং অদৃশ্য রাখা, গাঢ় দাগ নির্মূল, ত্বকের টেক্সচার এবং স্কিন টোন ন্যাচারাল রাখা। তবে এর নেগেটিভ সাইড হচ্ছে লেজার ত্বকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে উপাকারের চাইতে ক্ষতি হয় বেশি।
ইউএলথেরাপি ও থার্মেজ
ইনজেকশন বা লেজার ব্যবহার ব্যতীত যদি অন্য কোনো উপায় খুঁজেন যা দারুণ কার্যকরী তা হচ্ছে ইউএলথেরাপি ও থার্মেজ। ইউএলথেরাপিতে ত্বকের টিস্যুতে গরম ভাব দেয়া হয়, ফলে দেহের কোলাজেনের গঠন দারুণ কার্যকরী হয়ে উঠে। অন্যদিকে থার্মেজ হচ্ছে আরেকটি ননসার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট; যা ত্বককে টাইট করে আল্ট্রাসাউন্ড এনার্জির মাধ্যমে এবং কোলাজেনের উৎপাদন ত্বরান্বিত করে।
থ্রেড লিফট
এই পদ্ধতিতে ডাক্তার গাল এবং কপালে ছিদ্র করে ১৮টি প্লাস্টিক থ্রেড প্রবেশ করায় ত্বকের মধ্যে। সেগুলো অত্যন্ত টাইট থাকে বিধায় ত্বক অনেকটাই উপরের দিকে উঠে আসে। তবে থ্রেডের কারণে চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং এমনকি ইনফেকশনও হতে পারে।
ফেইসলিফট
ফেইসলিফট মূলত চেহারার নিম্নাংশ এবং ঘাড়ের জন্য কার্যকরী। এটি সাময়িকভাবে ত্বককে দুর্বল করে দেয়। ফলে ত্বকের অতিরিক্ত চর্বি এবং স্বতন্ত্র পেশী নিস্তেজ হতে শুরু করে, এবং ধীরে ধীরে ত্বকের ভাঁজ ও বলিরেখা মুছতে শুরু করে এবং ত্বকে তারুণ্যতা ফিরে আসে।
লিংক:
📞 ত্বকের সমস্যার জন্য প্রোডাক্ট সাজেশন পেতে কল করুনঃ 01790 270066 অথবা ইনবক্স করুন। 🌐 ১০০% অরিজিনাল কোরিয়ান প্রোডাক্টঃ https://chardike.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © chardike blog 2022