স্কিনে কালচে দাগ হলে কি করণীয়?
স্কিনে কালচে দাগ কালচে দাগে ঢেকে গেছে পুরো চেহারাটাই। নারীদের কাছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আর এই কালচে দাগ কি কেবলই রোদে পুড়ে কিংবা ব্রণের কারণে হয়? মোটেও না। ত্বকে কালচে দাগ হয় আরো বিভিন্ন কারণে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাইপারপিগমেন্টেশন। স্কিনকেয়ার ফর্মুলাতে হাইপারপিগমেন্টেশন অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হাইপারপিগমেন্টেশনকে ঘিরে।
হাইপারপিগমেন্টেশন কি?
হাইপারপিগমেন্টেশন ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা। এটি এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যার ফলে ত্বকের কিছু অংশ অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক বেশি গাঢ় হয়ে যায়। এটি অল্প একটু জায়গায় হতে পারে; আবার মুখমণ্ডলের বড় একটা অংশেও হতে পারে; কিংবা পুরো শরীর জুড়েই এটা ছড়াতে পারে। সাধারণত পিগমেন্টেশনের বৃদ্ধি ক্ষতিকারক কিছু নয়; তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে মেডিক্যাল কন্ডিশনের পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।
হাইপারপিগমেন্টেশনের প্রকারভেদ
হাইপারপিগমেন্টেশনের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। কমনগুলোর মধ্যে রয়েছে মেলাজমা, সানস্পটস এবং পোস্ট-ইনফ্লেমেটরি হাইপারপিগমেন্টেশন।
মেলাজমা
মেলাজমা সাধারণত হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে থাকে। এবং গর্ভাবস্থায় এর বিকাশ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। শরীরের যে কোন জায়গায়ই হাইপারপিগমেন্টেশনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পেট এবং মুখমণ্ডল।
সানস্পটস
লিভার স্পটস বা সোলার লেনটিগাইনস নামেও পরিচিত সানস্পট একদমই কমন। সময়ের সাথে সাথে এগুলো সূর্যের সংস্পর্শে আসতে থাকে। তাই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সূর্যালোক অবাধে প্রবেশ করে এমন এরিয়াগুলোতেই সানস্পটস দেখা দেয়। যেমন – হাত আর মুখমণ্ডল।
পোস্ট
ইনফ্লেমেটরি পিগমেন্টেশন – এটি মূলত ত্বকে আঘাত বা প্রদাহের ফলে হয়ে থাকে। এই ধরনের একটি সাধারণ কারণ হলো ব্রণ।
হাইপারপিগমেন্টেশন কেন হয়?
হাইপারপিগমেন্টেশন একটি সাধারণ কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদন। মেলানিন হচ্ছে প্রাকৃতিক একটা পিগমেন্ট বা রঞ্জক পদার্থ; যা ত্বকে রঙ দেয়। এটি মেলানোসাইটস নামে পরিচিত ত্বকের কোষ দ্বারা উৎপাদিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে মেলানিনের উৎপাদন পরিবর্তন হতে পারে। কিছু ওষুধ আছে যেগুলো হাইপারপিগমেন্টেশনের কারণ হতে পারে। আবার, কেমোথেরাপি কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরূপ এমনটি হয়ে থাকে।
নারীদের গর্ভাবস্থা চলাকালীন হরমোন পরিবর্তন হয় এবং এজন্যও ত্বকে মেলানিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে। অ্যাডিসনের ব্যাধি নামে একটি বিরল অ্যান্ড্রোক্রাইন রোগ হাইপারপিগমেন্টেশন তৈরি করতে পারে। যা সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি যেসব জায়গায়, যেমন – মুখ, হাত, ঘাড়, কনুই ইত্যাদিতে হাইপারপিগমেন্টেশন ঘটাতে পারে। হাইপারপিগমেন্টেশন হল আপনার শরীরে হরমোনের বর্ধিত স্তরের প্রত্যক্ষ ফলাফল যা ফলস্বরূপ মেলানিনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।
হাইপারপিগমেন্টেশনের লক্ষণ ও ঝুঁকির কারণ
ত্বকের গাঢ় অঞ্চলগুলিই মূলত হাইপারপিগমেন্টেশনের প্রধান লক্ষণ। ছোপ ছোপ দাগগুলো আকারে পরিবর্তন হতে পারে এবং শরীরের যে কোনো জায়গায়ই হতে পারে।
সাধারণ হাইপারপিগমেন্টেশনের জন্য প্রধান ঝুঁকির কারণ হচ্ছে সূর্যের এক্সপোজার এবং প্রদাহ। কেননা, দুটোই মেলানিন উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য দায়ী। সূর্যের এক্সপোজার যত বেশি হবে ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশনের মাত্রাও তত বৃদ্ধি পাবে। অন্যান্য আরো যেসব ঝুঁকির কারণ রয়েছে তা হচ্ছে –
- ওরাল কন্ট্রাসেপটিভের ব্যবহার বা গর্ভাবস্থা, যেমনটা মেলাজমার সঙ্গে।
- গাঢ় ত্বকের ধরন, যা পিগমেন্টেশন পরিবর্তনের ঝুঁকিতে বেশি থাকে।
- যে ওষুধগুলো সূর্যের আলোতে আপনার ত্বকের সংবেদনশীলতা আরো বাড়ায়।
- চামড়ার ট্রমা, যেমন ক্ষত বা অতিমাত্রায় পোড়ার দাগ।
- হাইপারপিগমেন্টেশন থেকে পরিত্রাণের উপায় – মেডিক্যাল
লাইটেনিং ক্রিম
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য লাইটেনিং ক্রিমে থাকা উপাদানগুলো পিগমেন্টেশন হ্রাস করতে সাহায্য করে। দিনে ১/২ বার ব্যবহার করার নিয়ম রয়েছে এই ক্রিমের। অবশ্য ক্রিমের বদলে জেলও পাওয়া যায়। হাইড্রোকুইনন, লিকোরাইসের নির্যাস, এন-এসিটাইলগ্লুকোসামিন এবং ভিটামিন বি-৩ (নিয়াসিনামাইড) থাকে লাইটেনিং ক্রিমে। মেলাজমা আর সানস্পটসের বিরুদ্ধে দারুণ কার্যকরী এই ক্রিম।
ফেইস এসিড
ফেইস এসিড বা স্কিন এসিড ত্বকের উপরের স্তরে এক্সফোলিয়েন্ট বা শেডের মতো কাজ করে। যখনই আপনি ত্বকে এক্সফোলিয়েন্ট করেন তখনই পুরনোগুলোকে সরিয়ে নতুন ত্বকের দেখা মিলে। বিভিন্ন ধরনের ফেইস এসিড রয়েছে। আলফা হাইড্রক্সি এসিড, যেমন গ্লাইকোলিক, ল্যাকটিক, সিট্রিক, ম্যালিক এবং টারটারিক এসিড; অ্যাজেলেইক এসিড, কোজিক এসিড, স্যালিসালিক এসিড এবং ভিটামিন সি (এল-আসকোরবিক এসিডের আকারে)।
রেটিনয়েডস
ভিটামিন এ থেকে প্রাপ্ত, রেটিনয়েডগুলোর ছোট ছোট অণু কাঠামো ত্বকের গভীর প্রবেশ করতে পারে; এবং এপিডার্মিসের নীচের স্তরে চিকিৎসায় কাজ করে। তবে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে নেয়া উচিত।
কেমিক্যাল পিলস
কেমিক্যাল পিলস এসিডের মাধ্যমে এপিডার্মিস অপসারণ করে হাইপারপিগমেন্টেশনের উপস্থিতি হ্রাস করে। তবে কেমিক্যাল পিলস ব্যবহারে সাবধান এবং অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা, এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশংকা রয়েছে। তবে কেমিক্যাল পিলস এমন কারোরই ব্যবহার করা উচিত যে কিনা নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করে। সানস্পটস, সান ড্যামেজ, মেলাজমা এবং ব্লচি স্কিনের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
লেজার থেরাপি
হাইপারপিগমেন্টেশন হ্রাস করতে লেজার থেরাপিও দারুণ কার্যকরী। অ্যাবলেটিভ লেজার থেরাপিতে ত্বকের স্তর সরিয়ে ফেলা হয়। আর নন-অ্যাবলেটিভ লেজার থেরাপিতে কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ানো হয় এবং ত্বক টাইট করা হয়।
হাইপারপিগমেন্টেশন হলে কি করণীয়?
অ্যালোভেরা
অ্যালোসিন একটি যৌগ যা অ্যালোভেরায় উপস্থিত থাকে; এটি হাইপারপিগমেন্টেশনকে হালকা করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি মেলানিনের উৎপাদনে বাঁধা দিতেও কাজ করে। সরাসরি উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত অ্যালোভেরা জেলও ব্যবহার করা যেতে পারে প্রতিদিন।
লিকোরাইস
লিকোরাইসের নির্যাস হাইপারপিগমেন্টেশন হ্রাস করতে উপকারী। লিকোরাইসের নির্যাস গ্লাবিড্রিনে থাকে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ত্বক ঝকঝকে করার উপাদান। তাই এটি পিগমেন্টেশন কমাতে দারুণ কাজ করে থাকে।
গ্রীন টি
হাইপারপিগমেন্টেশনের দাগ নির্মূলে গ্রীন টির নির্যাসও দারুণ কার্যকরী। কেননা, এতে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান।
লিংক:
01. What You Should Know About Hyperpigmentation.
02. What to know about hyperpigmentation.
03. 8 Treatment Options for Hyperpigmentation.
📞 ত্বকের সমস্যার জন্য প্রোডাক্ট সাজেশন পেতে কল করুনঃ 01790 270066 অথবা ইনবক্স করুন। 🌐 ১০০% অরিজিনাল কোরিয়ান প্রোডাক্টঃ https://chardike.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © chardike blog 2021