সানস্ক্রিন নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা
সানস্ক্রিন ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালেই এটি ব্যবহারের দরকার পড়ে। কিন্তু সানস্ক্রিন নিয়ে বিশ্বব্যাপী নানান ধারণা, মত, ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ইত্যাদি রয়েছে। যদিও বর্তমান সময়ের সানস্ক্রিনগুলো অত্যন্ত উন্নত এবং পূর্বের তুলনায় আরো বেশি সুরক্ষা দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভ্রান্ত ধারণা এখনো টিকে আছে মানুষের মনে। আজকের আলোচনা সানস্ক্রিনকে নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা ও শোনাকথাকে কেন্দ্র করে। কেননা, সত্যিটা মানুষকে ভালোভাবে সানস্ক্রিন ব্যবহারেও দারুণ উপকার দেবে।
সানস্ক্রিন সবসময়ের জন্য না
বেশিরভাগ মানুষই এটা বিশ্বাস করে যে, সানস্ক্রিন কেবল তখনই ব্যবহার করা উচিত যখন শরীর রোদের মধ্যে থাকে; যেমন – সমুদ্র সৈকতে বা সুইমিং পুলে। কিন্তু সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি কি এই তত্ত্বে বিশ্বাসী? শরীর যতটুকু অংশ উন্মুক্ত থাকবে ঠিক ততটুকুই জ্বালিয়ে দিতে পারে সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি।
আবার অনেকে এও বিশ্বাস করে যে, মেঘলা দিনে সানস্ক্রিন ব্যবহার করার কোনো দরকার নেই। কেননা, উক্তদিনে সূর্য এতটাও উত্তাপ ছড়াতে পারে না। কিন্তু এটিও ভুল ধারণা। কারণ মেঘলা দিনে হলেও সূর্য থেকে আগত এক চিমটি আলোও অতি ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি বহন করে নিয়ে আসে, হোক তা যতই মেঘলা দিন।
সারাদিন বাইরে থাকার দরুন হাতের কনুই থেকে নীচের অংশ এবং মুখমণ্ডল, সবচেয়ে বেশি রোদে পোড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অগ্রিম সতর্কতা হিসেবে দেহের উন্মুক্ত স্থানে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন এবং আলাদা সুরক্ষিত জিনিস, যেমন হ্যাট বা টুপি ইত্যাদি পড়ে বের হবেন।
শরীরকে ভিটামিন ডি গ্রহণে বাঁধা দেয় সানস্ক্রিন
ভিটামিন ডি মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান। এবং দেহ সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে এই পুষ্টিকর উপাদানটি গ্রহণ করে থাকে। অন্যদিকে সানস্ক্রিন ব্যবহারে শরীরে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি আসতে পারে না। তাহলে তত্ত্বটা এমন দাঁড়ায় যে, প্রতিনিয়ত সানস্ক্রিন ব্যবহারে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে পরিপূর্ণভাবে ভিটামিন ডি প্রবেশ করতে পারে না।
যদিও কাপড় ভেদ করে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ভেতরে ঢুকতে পারে না। এছাড়াও, সময়ের সাথে সাথে দেহে সানস্ক্রিনের কার্যকারিতাও কমে আসে। উপরন্তু, এমন ভ্রান্ত ধারণার কারণে বেশিরভাগ মানুষই সানস্ক্রিন ব্যবহার থেকে পিছিয়ে যায়।
অথচ বিজ্ঞানী এবং ডারমাটোলজিস্ট গণ বলে যে, প্রতিদিন ৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকলেই দেহ তার চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন ডি নিজেই শুষে নিতে পারে।
সানস্ক্রিনের কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হয়
এই ভ্রান্ত ধারণাটি এসেছে সানস্ক্রিনের অত্যন্ত সক্রিয় একটি উপাদান অক্সিবেনজোন এর উপর করা পুরনো এক গবেষণা থেকে। অক্সিবেনজোনের সংস্পর্শে আসা ল্যাবের ইঁদুরগুলো মারাত্মকভাবে নেগেটিভ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে আর্কাইভস অফ ডার্মাটোলজিস্ট এর একটি চিঠিতে এটি নিশ্চিত করা হয় যে, এই গবেষণায় ইঁদুরগুলোর স্বাস্থ্য সমস্যা পরীক্ষা করতে যেই পরিমাণ এক্সপোজার ব্যবহার করা হয়েছিল তা অতিরিক্ত বেশি ছিল।
পরবর্তীতে এটিও প্রমাণ হয় যে, এটি মানুষের পক্ষে প্রযোজ্য নয়; এমনকি যদি তারা নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহারও করে থাকে। গবেষকরা এই ব্যাপারেও নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, ৪০ বছরের অক্সিবেনজোন সানস্ক্রিনের উপাদান হিসেবে ব্যবহারে মানুষের দেহে কোনো বিষাক্ত প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি।
ডার্ক স্কিনের লোকেদের সানস্ক্রিনের প্রয়োজন হয় না
অনেকেই বিশ্বাস করে যে ডার্ক স্কিন বা গাঢ় ত্বকের অধিকারীদের সানস্ক্রিনের প্রয়োজন পড়ে না। কেননা, গাঢ় ত্বকে থাকা অতিরিক্ত মেলানিন সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মিকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। যদিও একই মেলানিন কিছু ক্ষেত্রে আবার রোদ পোড়া থেকে রক্ষাও করে বটে। কিন্তু এই তত্ত্ব মোতাবেক মেলানিন ত্বককে চরম মাত্রার রৌদ্র থেকে কখনোই সুরক্ষা দিতে পারবে না। গাঢ় ত্বকের লোকেরা সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে হওয়া ক্যানসার থেকে মুক্ত নয়।
সানস্ক্রিন কীভাবে প্রয়োগ করা হয় সেটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না
কীভাবে প্রয়োগ করছেন সেটা অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আপনাকে ব্যবহার করতে হবে এক আউন্স পরিমাণ, মুখ এবং হাতসহ দেহের উন্মুক্ত স্থানসমূহে; যাতে এসপিএফ যর্থার্থভাবে কাজ করতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই একগাদা মেখে নিয়ে নিজেকে এক ধাক্কায় সুরক্ষিত রাখতে চায়। তাছাড়া, সানস্ক্রিনের উপাদানগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন সূর্যের আলোতে যাবার অন্তত ১৫ মিনিট পূর্বে প্রোডাক্টটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই নিয়ম না মানলে সানব্লক কার্যকরী হয় না। তাছাড়া, ঘণ্টা দুয়েক পরপর সানস্ক্রিন ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে যা অনেকেই মানতে নারাজ।
সব ধরণের সানস্ক্রিনই আসলে একই
এটা আরেকটা ভুল ধারণা। কেননা, সানস্ক্রিনে থাকা এসপিএফ বা সান প্রটেক্টর ফ্যাক্টরের মাত্রা অনুযায়ী কার্যক্ষমতা থাকে সানস্ক্রিনে। তাছাড়া, উপাদান এবং সান এক্সপোজারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়ে থাকে সানস্ক্রিন। ইউভিএ এবং ইউভিবি রশ্মি আটকাতে সক্রিয় উপাদান হিসেবে থাকে টাইটেনিয়াম অক্সাইড, জিঙ্ক অক্সাইড এবং ইকামসুল ইত্যাদি। এছাড়া, কেমিক্যাল হিসেবে থাকে অ্যাভোবেনজোন যা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে সানব্লক করে থাকে। সান প্রটেক্টর ফ্যাক্টরে ১৫ বা ৩০ এর মাত্রা থাকে যা আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবহারের নির্দেশিকা রয়েছে।
ইনডোর বা ঘরের ভেতরে সানস্ক্রিন দরকার নেই
তাহলে কি ইনডোর বা ঘরের ভেতরে সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি প্রবেশ করে না? অবশ্যই করে। আর সেজন্যই ইনডোরেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হয়। ইনডোরে থাকা মোবাইল এবং কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইস থেকে আসা নীল আলোও ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলোর জন্য সান প্রটেক্টর ফ্যাক্টরও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সানট্যান ত্বককে সুরক্ষা দেয়
সানট্যান নিঃসন্দেহে ত্বককে সুরখা দেয় কিন্তু সেটা এতটাও নয় যতটা ত্বকের জন্য দরকারি। তাছাড়া, ট্যান নিজেই তো স্কিন ড্যামেজের একটি প্রতীক। তাই, গ্রীষ্মের পূর্বে ট্যান বেড ব্যবহার করাটা ত্বকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সানস্ক্রিন ওয়াটারপ্রুফ
বেশিরভাগ সানস্ক্রিনের লেবেলেই লেখা থেকে ওয়াটার রেসিসট্যান্ট বা ঘাম রেসিসট্যান্ট। কিন্তু কোনো সানস্ক্রিনই ১০০ শতভাগ ওয়াটারপ্রুফ নয়। তাই ঘাম বা পানির কারণে ভেজা অংশ শুকিয়ে পুনরায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হয়।
সানস্ক্রিনের মেয়াদ কখনো ফুরায় না
যে কোন উপাদানেরই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মেয়াদ থাকে তা কার্যকর হবার। উপরন্তু রাসয়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি উপাদানেও তো তা আরো বেশি নির্দিষ্ট করা থাকে। তাই সানস্ক্রিনও একটা নির্দিষ্ট সময় পরে এর মেয়াদ ফুরায় এবং কার্যকারিতা হারায়।
লিংক:
📞 ত্বকের সমস্যার জন্য প্রোডাক্ট সাজেশন পেতে কল করুনঃ 01790 270066 অথবা ইনবক্স করুন। 🌐 ১০০% অরিজিনাল কোরিয়ান প্রোডাক্টঃ https://chardike.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © chardike blog 2021