ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহৃত সানস্ক্রিন, সানস্টিক ও সানব্লকের মধ্যে পার্থক্য

5-1

সূর্যরশ্মি থেকে ত্বকের সুরক্ষার জন্য সানস্ক্রিনের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। তবে এই যাত্রায় পিছিয়ে নেই সানস্ক্রিন স্টিক ও সানব্লকও। ত্বকের সুরক্ষায় এই সবগুলো প্রোডাক্ট ব্যবহৃত হলেও একটির ধরন অন্যটি থেকে আলাদা। অনেকেই বাসা থেকে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন লোশন অ্যাপ্লাই করে বের হন। কেউ হয়ত ব্যাগে একটা স্টিক রাখেন রিঅ্যাপ্লাই করার জন্য। আবার কারও ব্যাগে সানব্লকটা সব সময় থাকে। তবে প্রোডাক্ট কিন্তু সবগুলোই ইউভি রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিতেই ব্যবহার করা হয়। আজ চলুন এই সবগুলোর ভেতর পার্থক্য নিয়ে কিছু তথ্য জানা যাক।

সূর্যরশ্মি থেকে কীভাবে সুরক্ষা পাওয়া যায়?

আমাদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখা খুবই জরুরি। সানবার্ন, প্রিম্যাচিউর এজিং, স্কিন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষার জন্য সেইফগার্ড হিসেবে কাজ করে সানস্ক্রিন। এখন অবশ্য সানস্ক্রিন ছাড়াও বেটার প্রোটেকশন দেয় এমন অনেক প্রোডাক্ট মার্কেটে এভেয়লেবল। যেমন- সানস্ক্রিন স্টিক, সানব্লক। সবগুলোই ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়ার কাজ করে। তবে এগুলোর ক্যারেক্টারিস্টিকস কিছুটা আলাদা একে অন্যের থেকে। এই তথ্যগুলো জানা থাকলে কেন ও কখন কোনটি বেছে নিবেন সেটা আপনার বোঝা সহজ হবে।

ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহৃত সানস্ক্রিন

ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন, সানস্টিক ও সানব্লকের মধ্যে পার্থক্য 

স্কিনকেয়ার রুটিনে ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং, সিরাম অ্যাপ্লাই এর মতো সবগুলো স্টেপ ফলো করলেও অনেকে সুর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষা দিবে এমন প্রোডাক্ট যেমন- সানস্ক্রিন, সানস্টিক বা সানব্লক স্কিপ করে যান। অথচ এটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেপ। এর একটি কারণ হতে পারে যে অনেকেই হয়ত কোনটা কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে পারেন না। চলুন তাহলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

সানস্ক্রিন

রেগুলার সানস্ক্রিন যেটা সাধারণত লোশন বা ক্রিম আকারে থাকে, সেটা সান প্রোটেকশনের জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। এর বেশ কয়েকটি উপকারিতা আছে। যেমন-

১) কভারেজ ও অ্যাপ্লিকেশন

ত্বকের সুরক্ষায় রেগুলার সানস্ক্রিন বেশ ভালো কভারেজ দেয়। বডিতে অ্যাপ্লাই ও প্রোটেকশন দুটোর ক্ষেত্রেই। শরীরের যে কোনো অংশে এটি ইজিলি অ্যাপ্লাই করা যায়।

২) বহুমুখী উপকারিতা

রেগুলার সানস্ক্রিন এ এসপিএফ এর কয়েকটি লেভেল রয়েছে। সাধারণত স্কিন টাইপ ও সান এক্সপোজারের উপর ডিপেন্ড করে এসপিএফ চুজ করতে বলা হয়। এটি শুধু সূর্যরশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে তাই নয়, বরং ময়েশ্চারাইজার, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও স্কিন নারিশিং কমপাউন্ডের মতো স্পেসিফিক বিভিন্ন স্কিনকেয়ারের প্রয়োজনীয়তাও পূরণ করে এই প্রোডাক্টটি।

৩) কনসিসটেন্সি

রেগুলার সানস্ক্রিনের টেক্সচার সাধারণত বেশ লাইটওয়েট হয় এবং স্কিনে ইজিলি অ্যাবজর্ব হয়ে যায়। এর রেসিডিউ খুবই মিনিমাল থাকে যার কারণে দিনভর লাগিয়ে রাখলে কমফোর্টেবল ফিল হয়।

ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন

৪) রি অ্যাপ্লিকেশন

সাধারণত দুই ঘন্টা পরপর রেগুলার সানস্ক্রিন রি অ্যাপ্লাই করতে হয়। যদি বেশি ঘামেন বা পানির সংস্পর্শে বেশি আসা হয় তাহলে বারবার অ্যাপ্লাই করা জরুরি। লোশন বা ক্রিম ফর্ম হওয়ায় রিঅ্যাপ্লাই করা সহজ হয়।

সানস্টিক 

সানস্ক্রিন জগতে স্টিক এর ব্যবহার খুব বেশিদিন হয়নি শুরু হয়েছে। তবে অ্যাপ্লিকেশন সহজ বলে জনপ্রিয় হয়েছে অল্প সময়েই। এরও বেশ কিছু উপকারিতা আছে। চলুন সেগুলো জেনে নেয়া যাক।

১) পোর্টেবল

ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন কয়েকবার রি অ্যাপ্লাই করার কথা তো বলছি, কিন্তু ব্যাগে রাখলে অনেক সময় লিক হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। কারণ এটি সাধারণত লোশনের ফর্মে থাকে। এই সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য সানস্টিক খুব কাজের একটি জিনিস। পোর্টেবল, লাইটওয়েট বলে ব্যাগে রাখা যায়। আবার লিকুইড নয় বলে লিকেজেরও ভয় নেই। বাইরে যাওয়ার সময় ব্যাগে, পার্সে বা প্যান্টের পকেটে রাখা খুবই ইজি।

২) টার্গেটেড অ্যাপ্লিকেশন

স্টিক ফরম্যাট হওয়ার কারণে অ্যাপ্লিকেশন খুবই ইজি। ফেসিয়াল ইউজ বিশেষ করে নাক, কান ও ঠোঁটের মতো স্পেসিফিক জায়গাগুলোতে ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করা যায়। কোনো ধরনের স্প্রেডিং বা রাবিং ছাড়াই সরাসরি অ্যাপ্লাই করা যায়, একদমই মেসি হওয়ার চান্স থাকে না।

৩) ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স

অনেক সানস্ক্রিন স্টিকে ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট প্রোপার্টিজ থাকার কারণে সাঁতার বা পানি সংক্রান্ত যে কোনো খেলাধুলায় ব্যবহার করা যায় নিশ্চিন্তে। এর স্টিক ফর্মুলেশন স্কিনে খুব ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হয়ে যায়, এমনকি পানি বা ঘামের সংস্পর্শে আসলেও ধুয়ে যাওয়ার চিন্তা থাকে না।

৪) গ্রিজি রেসিডিউ থাকে না

সানস্ক্রিন স্টিকের কনসিসটেন্সি শুষ্ক হওয়ায় ত্বকে কোনো ধরনের গ্রিজিনেস বা গ্রিজি রেসিডিউ থাকে না। এটা অয়েলি বা একনে প্রন স্কিনে সহজে ব্যবহার করা যায়, পোরস ক্লগ হওয়া বা ব্রেকআউট হওয়ার চান্স থাকে না।

ত্বকের সুরক্ষায় সানস্টিক

সানব্লক

সানস্ক্রিন ব্যবহারে ইউভি রশ্মি অনেকটাই বাহির পর্যন্ত থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখলেও কিছু রশ্মি ত্বকে প্রবেশ করতে পারে। এগুলোকে বলে কেমিক্যাল সানস্ক্রিন। অন্যদিকে সানব্লক ত্বকের উপর থেকেই রিফ্লেক্ট করে রশ্মিকে সরিয়ে দেয়। এ কারণে একে ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন বলে।

১) অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট যুক্ত

বেশিরভাগ সানব্লকে টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইড বা জিংক অক্সাইড থাকে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে। এ কারণে এর ফর্মুলা কিছুটা থিক হয়।

২) প্রখর রোদে ব্যবহারের জন্য পারফেক্ট

থিক ফর্মুলেশন হওয়ায় পুরো বডিতে সানব্লক অ্যাপ্লাই করতে অনেকেই আনইজি ফিল করেন। অ্যাপ্লাই করার পর স্কিনে ভেসে থাকবে এটা অনেকেই পছন্দ করেন না। এজন্য সমুদ্রপাড়ে বা প্রচুর রোদযুক্ত জায়গায় এর ব্যবহার অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি। প্রখর রোদে থাকাকালীন নাকে বা ফেইসে সানব্লক অ্যাপ্লাই করলে ত্বকের সুরক্ষা বাড়ে।

ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন

 

কোন বয়স থেকে সান প্রোটেকশন প্রোডাক্ট ইউজ করা জরুরি?

সূর্যরশ্মি বয়স বুঝে ত্বকের ক্ষতি করে ব্যাপারটি এমন নয়। সব বয়সীদের ত্বকেই ইউভি রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে যাদের বয়স ২০ পার হয়ে গিয়েছে তাদের জন্য এটা মাস্ট হ্যাভ প্রোডাক্ট হিসেবে স্কিনকেয়ার রুটিনে অ্যাড করতে হবে। আমরা অনেকেই ভাবি ৩০ বছর হলে তবেই সানস্ক্রিন বা সানস্টিক অ্যাপ্লাই করা শুরু করলেই হবে। কিন্তু প্রোপার স্কিনকেয়ারের অভাবে ২৫ বছর বয়স পার হয়ে গেলেই ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। টিন এইজ বয়সীরা নানা কাজে সারাদিন বাইরে থাকে। এ বয়স থেকেই স্কিনকেয়ার রুটিনে সান প্রোটেকশন প্রোডাক্ট অ্যাড করলে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে।

সানস্ক্রিন ব্যবহারে শরীরে ভিটামিন ডি প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়?

অনেকেই ভাবেন সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করলে ভিটামিন ডি শরীরে প্রবেশ করে না। যার কারণে এটি অ্যাপ্লাই করতে আগ্রহ পান না তারা। অথচ বিভিন্ন গবেষণায় এই তথ্যের তেমন কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং গবেষণা মতে –

১) নিয়মিত সানস্ক্রিন ও সান প্রোটেকশন প্রোডাক্ট ব্যবহার সানবার্ন ও স্কিন ক্যানসার প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।

২) সানস্ক্রিন ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে প্রতিরোধ করে, কিন্তু ভিটামিন ডি প্রবেশে কোনো বাধা তৈরি করে না।

৩) ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, সপ্তাহে দুইদিন কিছু সময়ের জন্য আনপ্রোটেক্টেড সান এক্সপোজার করা যায়। যেহেতু সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাইয়ের কারণে ইউভি রেডিয়েশন লিমিট হয়ে যাচ্ছে, অনেকের শরীরে ভিটামিন ডি এর প্রোডাকশন এতে কম হতে পারে। এতে স্কিন ড্যামেজ হবে না।

সানস্ক্রিন

ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহৃত সানস্ক্রিন, সানস্ক্রিন স্টিক ও সানব্লকের ব্যবহার ও পার্থক্য সম্পর্কে কিছু তথ্য জানিয়ে দিলাম আপনাদের। আশা করি এগুলো নিয়ে কোনো কনফিউশন থাকলে সেগুলো ক্লিয়ার হয়েছে। আপনি যে প্রোডাক্টটাই ইউজ করুন না কেন সেটি যেন ত্বককে সুরক্ষা দেয় সেটি আগে নিশ্চিত করতে হবে। আর সারাদিন পর ঘরে ফিরে অবশ্যই ডাবল ক্লিনজিং করতে হবে। নইলে ত্বকের সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন চারদিকে থেকে। চারদিকে’র দুটি আউটলেট রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়াতে আল জয়নাল ট্রেড সেন্টারে। ফিজিক্যালি কিনতে চাইলে এই দুটি আউটলেট ঘুরে আসতে পারেন। আর ঘরে বসে প্রোডাক্ট হাতে পেতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন চারদিকে’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপে।

ছবি – চারদিকে, বিউটি সেল বিডি, ওপেন দ্য বিউটি

1 I like it
0 I don't like it