ঈদের দিন টেবিলে থাকে খাবারের নানা আয়োজন। সবাই চান সকালটা শুরু হোক মিষ্টি জাতীয় কোনো খাবার দিয়ে। আর সেটা যদি হয় ভিন্ন ধরনের কিছু, তাহলে তো কথাই নেই। তাছাড়া অন্যান্য সময় মেহমানদারীতে বা ঘরোয়া যে কোনো আয়োজনেও ভিন্ন কিছু বানানোর চিন্তা করেন অনেকেই। আজ আপনাদের জানাবো মজাদার ও ভিন্নধর্মী দুটো খাবার বাকলাভা ও কুনাফার রেসিপি সম্পর্কে। চলুন জেনে নেই কীভাবে তৈরি করবেন এই দুটো খাবার।
বাকলাভা ও কুনাফা তৈরির রেসিপি
ঈদ আয়োজন, মেহমানদারী বা যে কোনো অনুষ্ঠানে মিষ্টি আইটেম কিছু না কিছু থাকেই। ভিন্নধর্মী কোনো খাবার হলে আয়োজনের আনন্দ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। এমনই দুটো আইটেম বাকলাভা ও কুনাফার কথা জেনে নেব আজ।
১) বাকলাভা
এই মিষ্টি খাবারটি বানাতে যা যা লাগবে-
- বাটার ২ কাপ (গলানো)
- চিনি ১ কাপ
- পেস্তা ১.৫ কাপ
- ফিলো শিট ২২/২৫ পিস
- কাঠ ও পেস্তা বাদাম ক্রাশ করে নেয়া ১ কাপ
- লেবুর রস ৩ টেবিল চামচ
- লেবুর খোসা ৪/৫টি
- পানি ১ কাপ
যেভাবে বানাবেন
১) বাকলাভা বানানোর শুরুতে আগে কিছু প্রস্তুতি নিয়ে নিতে হবে। যেমন- ১৮০ ডিগ্রিতে ওভেন প্রিহিট করে নিতে হবে ১০ মিনিট। এবার যে পাত্রে তৈরি করবেন সেই মাপ অনুযায়ী ফিলো শিটগুলি কেটে নিন। বেকিং ট্রে তে গলানো বাটার ব্রাশ করে একে একে ১০টি ফিলো শিট বিছিয়ে নিন। শিটগুলোতে বাটার ব্রাশ করা শেষে সেগুলো আবার উল্টে দিতে হবে, যেন বাটারের সাইডটি নিচের দিকে থাকে।
২) এই শিটের উপর ছিটিয়ে দিন কাঠবাদাম ও পেস্তা কুঁচি। তার উপর একটি ফিলো শিট দিয়ে দিন। আবারও হালকা করে বাটার দিয়ে দিন। বাকি যে শিটগুলো আছে সেগুলো ঠিক একইভাবে ব্রাশ করে নিতে হবে। এবার ওভেনে বেক করতে হবে ১৫ মিনিট।
৩) ১৫ মিনিট পর ওভেন থেকে বের করে নিন। এবার ছুরি দিয়ে পছন্দসই শেইপে কেটে নিন। আবারও ওভেনে বেক করুন ১৫ মিনিট। দেখবেন খুব সুন্দর গোল্ডেন ব্রাউন কালার হয়েছে। বের করে শেইপগুলো আবারও একবার ছুরি দিয়ে কেটে নিন। এতে পিস পিস করে তোলা সহজ হবে। এবার ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন ২ ঘন্টা।
বাকলাভার স্বাদ বাড়ায় চিনির শিরা। এবার এই শিরা তৈরি করে ফেলতে হবে। এজন্য যা যা লাগবে-
- চিনি ১ কাপ
- পানি ১ কাপ
যেভাবে বানাবেন
চিনি ও পানি চুলায় বসিয়ে দিন। পানি ফুটে উঠলে এতে দিয়ে দিন লেবুর রস ও লেবুর খোসা। এতে খুব সুন্দর একটি ফ্লেভার আসবে।
এবার শিরা ও বাকলাভা দুটোই তৈরি। এই শিরা ঢেলে দিন ঠান্ডা বাকলাভার উপর। উপরে ছিটিয়ে দিন পেস্তা কুঁচি। অপেক্ষা করুন কিছুক্ষণ। ব্যস! তৈরি হয়ে গেলো মজাদার ও ভিন্নধর্মী স্বাদের বাকলাভা। এই মিষ্টিটি মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও বলকান অঞ্চলে বহুল প্রচলিত। স্বাদের অনন্যতার জন্য বর্তমানে অনেক দেশেই এই খাবারটি তৈরি করা হচ্ছে। বাহির থেকে তো কিনে খাওয়া হয়ই। কিন্তু ঘরেই যদি মজাদার খাবারটি বানিয়ে ফেলা যায়, তাহলে মন্দ কি?
২) কুনাফা
এই মিষ্টি খাবারটি বানাতে যা যা লাগবে-
- লাচ্ছা সেমাইয়ের প্যাকেট ২টি
- দুধ ২ কাপ
- ক্রিম ১টি (ঘরে বানানো ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন)
- চিনি ১/৩ কাপ
- কর্নফ্লাওয়ার ২/৩ টেবিল চামচ (পানিতে গুলিয়ে নেয়া)
- ঘি বা বাটার ১/৩ কাপ
- শিরা বানাতে লাগবে –
- চিনি ১/২ কাপ
- পানি ১ কাপ
ঘরে যেভাবে ক্রিম বানাবেন
ক্রিম তৈরির জন্য গুঁড়ো বা তরল দুই ধরনের দুধই ব্যবহার করা যায়। গুঁড়ো দুধ দিয়ে বানালে অবশ্য এর স্বাদ অনেকটাই বেড়ে যায়।
১) একটি প্যানে গুঁড়ো দুধ নিয়ে নিন। এতে মিশিয়ে দিন পরিমাণমতো পানি। চুলায় মিডিয়াম আঁচে দুধ ঘন করে নিন। এতে দিয়ে দিন কনডেন্স মিল্ক। আলাদা করে চিনি মেশানোর দরকার নেই।
২) এবার ১ টেবিল চামচ কনফ্লাওয়ার পানিতে গুলিয়ে নিয়ে অল্প অল্প করে মিশিয়ে নিতে হবে। পরিমাণ বেশি হলে দুধের মাঝে দলা পাকিয়ে যেতে পারে। এবার অনবরত নাড়তে হবে।
৩) ঘন হয়ে গেলে ক্রিম চিজ দিয়ে দিন খানিকটা। এবার নেড়ে ঠান্ডা করে নিলেই ক্রিম তৈরি।
যেভাবে বানাবেন
১) দুধ, চিনি, কর্নফ্লাওয়ার মিশিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। ঘন হয়ে আসলে নামিয়ে নিন। এবার তাতে ক্রিম মিশিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন ক্রিম যেন পাতলা না হয়। এতে কুনাফা বসবে না। মিশ্রণটি হবে কাস্টার্ডের মতো। ঠিক এমনটাই ঘন করে নিন। এবার রেখে দিন ঠান্ডা হওয়ার জন্য।
২) সেমাইতে ঘি মেনে নিন। এমন পাত্র নেবেন যেন সেটি আর উল্টানোর প্রয়োজন না হয়। নয়তো কুনাফা ভেঙে যাবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি কেক প্যান বেছে নেন।
৩) প্যানে হালকা ঘি ব্রাশ করে সেমাই বিছিয়ে চেপে চেপে সমান করে নিন।
৪) ওভেন ৫/৭ মিনিট প্রি হিট করে নিন। এবার ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ১৫ মিনিট রাখুন। হালকা বাদামি হয়ে এলে বের করে নিন। এবার তার উপর ঢেলে দিন ঠান্ডা করা ক্রিম। এরপর দিয়ে দিন আরও এক লেয়ার সেমাই।
৫) আবারও ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওভেনে বেক করে নিন ২০/২৫ মিনিট। খেয়াল রাখবেন যেন পুড়ে না যায়।
৬) হালকা বাদামি হয়ে গেলে বের করে নিন। এবার তার উপর ছড়িয়ে দিন চিনির শিরা। সব একবারে ঢেলে না দিয়ে ধীরে ধীরে ঢালুন। প্রয়োজন না হলে সবটুকু দেবেন না। কুনাফা গরম থাকা অবস্থাতেই শিরা ঢেলে দিতে হবে।
৭) এবার কুনাফা ফ্রিজে রেখে দিন। ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করুন। এবার খাওয়ার আগে কেটে পরিবেশন করুন ঠান্ডা ঠান্ডা কুনাফা।
চুলাতে যেভাবে কুনাফা তৈরি করবেন
কুনাফা শুধু ওভেনে নয়, চুলাতেও তৈরি করা সম্ভব। যদি চুলায় করতে চান, তাহলে কেক তৈরির মতো নিচে তাওয়া দিয়ে তার উপর কুনাফার প্যান বসিয়ে দেবেন ঢাকনা দিয়ে। মাঝারি তাপে ২০/২৫ মিনিট সময় লাগতে পারে এক্ষেত্রে।
যে ব্যাপারগুলোতে খেয়াল রাখতে হবে
যে ক্রিমটি কুনাফায় ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে চিনি মেশানো আছে। আবার চিনির শিরাও আলাদা করে দেয়া হচ্ছে। এই মিষ্টি খাবারে যদি চিনির পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, তাহলে কুনাফা খেতে ভালো লাগবে না। তাই খেয়াল রাখবেন মিষ্টির পরিমাণ যেন বেশি হয়ে না যায়।
কুনাফা আমাদের দেশে বর্তমানে জনপ্রিয় ডেজার্টের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এই ডেজার্টটি আমাদের দেশীয় নয়। আরব দেশের জনপ্রিয় একটি খাবার এটি অর্থাৎ আরবীয় ডেজার্ট। আগে অনেকেই ধারণা করতেন যেহেতু অন্য দেশের খাবার, তাই হয়তো বাসায় তৈরি করা এটি কঠিন হবে। এই ধারণা এখন বদলেছে। কারণ ঘরেই খুব সহজে এখন বানিয়ে ফেলা যায় মজাদার স্বাদের কুনাফা। রান্নার কৌশল যদি আপনার জানা থাকে, তাহলে আপনিও বাড়িতেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন কুনাফা।
ঈদের দিন কোন মিষ্টি খাবারটি তৈরি করলে সবাই পছন্দ করবে তা নিয়ে কিছুটা চিন্তা থাকেই। বাকলাভা ও কুনাফা বানালে ঘরের সব সদস্যই পছন্দ করবে। আবার কীভাবে বানানো যায় তা নিয়েও দুশ্চিন্তা থাকে। উপরে দুটো ডেজার্টের রেসিপিই জানিয়ে দিয়েছি। তাহলে আর চিন্তা কি? ঝটপট বানিয়ে ফেলুন আর উপভোগ করুন খাবারের স্বাদ। এই খাবার দুটো কিন্তু শুধু ঈদ নয়, যে কোনো ঘরোয়া আয়োজন, মেহমানদারীতেও পরিবেশন করা যাবে। এবার আপনিও ঘরেই বানিয়ে ফেলুন ডেজার্ট দুটি আর কুড়িয়ে নিন সবার প্রশংসা।
ছবি – সাটারস্টক