কোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যখন আমরা ব্যবহার করি তখন শুরুতেই ভাবি সেটা আমাদের স্কিন ড্যামেজ থেকে সুরক্ষিত রাখবে কিনা। সেই সাথে রিংকেল যেন না পড়ে, স্কিন যেন ব্রাইট হয় সেটাও ভাবনায় থাকে। ময়েশ্চারাইজার, সিরাম, সানস্ক্রিন এমন সব প্রোডাক্ট যেহেতু ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহার করা হয় তাই এগুলোতেই প্রত্যাশা থাকে সবচেয়ে বেশি। বাকি সব প্রোডাক্ট তো বুঝলাম, কিন্তু সানস্ক্রিন কি আসলেই রিংকেল প্রিভেন্টে হেল্প করে বা ব্রাইট স্কিন প্রোভাইড করে? আবার হোয়াইট কাস্ট দেয় যদি? চিটচিটে হলে তো অয়েলিনেস বেড়ে যাবে! এমন নানা সমস্যার কথা আমরা শুনি সানস্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে। আজ আপনাদের এমনই একটি সানস্ক্রিনের কথা জানাবো যেটি একইসাথে স্কিন ড্যামেজ থেকে সুরক্ষা দিবে, হোয়াইট কাস্ট দিবে না, আবার একইসাথে ত্বকও উজ্জ্বল রাখবে।
সানস্ক্রিন কীভাবে কাজ করে?
আমাদের স্কিনে যত ধরনের সমস্যা আছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে সান ড্যামেজ। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির কারণে এই প্রবলেম হয়। এই রশ্মি আবার দুই ধরনের। UVA ও UVB রশ্মি। এই দুটো রশ্মি যেভাবে আমাদের স্কিনে ক্ষতি করে-
ইউভি এ রশ্মি – ত্বকের ডিপ লেয়ারে যেয়ে কোলাজেন প্রোডাকশন কমিয়ে দেয়। যার কারণে দেখা দেয় প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস, ফাইন লাইনস।
ইউভি বি রশ্মি – সান ড্যামেজ হয় মূলত এই রশ্মির কারণে। আমাদের স্কিনে যে পিগমেন্টেশন বা ডার্ক প্যাচেস হয়, সেটাও এই রশ্মির কারণেই হয়।
এসব স্কিন প্রবলেম থেকে যেন ত্বক সুরক্ষিত থাকে, সেজন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
সানস্ক্রিন সাধারণত দুই ধরনের হয়। ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল। ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনকে মিনারেলও বলা হয়। সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিকে রিফ্লেক্ট ও হিটে ট্রান্সফর্ম করে ত্বককে সুরক্ষিত রাখাই এর কাজ। অপরদিকে, আমাদের ত্বকের বাইরের লেয়ারে অ্যাবজর্ব হয়ে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে কেমিক্যাল সানস্ক্রিন।
সানস্ক্রিন ব্যবহারে কি ভিটামিন ডি শরীরে প্রবেশ করে না?
অনেকেরই ভুল ধারণা আছে যে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করলে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হয় শরীরে। নানা গবেষণায় এই তথ্যের তেমন কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে –
১) সানবার্ন ও স্কিন ক্যানসার প্রতিরোধে সানস্ক্রিন বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
২) সানস্ক্রিন ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে প্রতিরোধ করে, কিন্তু ভিটামিন ডি প্রবেশে কোনো বাধা তৈরি করে না।
৩) ডার্মাটোলজিস্টরা সাজেস্ট করেন, সপ্তাহে দুইদিন কিছু সময়ের জন্য আনপ্রোটেক্টেড সান এক্সপোজার করতে পারেন। যেহেতু সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাইয়ের কারণে ইউভি রেডিয়েশন লিমিট হয়ে যাচ্ছে, অনেকের শরীরে ভিটামিন ডি এর প্রোডাকশন এতে কম হতে পারে। এতে স্কিন ড্যামেজ হবে না।
সানস্ক্রিন মিসটেকস
১) অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা
সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করার পর ফেইস গ্রিজি হয়ে যাবে এই ভয়ে অনেকেই খুব অল্প পরিমাণ সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। এটা বেশ বড় একটা মিসটেক। কারণ এতে কখনোই ফুল প্রোটেকশন পাওয়া যায় না। যারা এই ভয়ে আছেন তারা অয়েল ফ্রি, ম্যাট ফিনিশ দেয় এমন সানস্ক্রিন বেছে নিতে পারেন। এতে গ্রিজিনেস হওয়ার ভয় থাকবে না।
কম পরিমাণে ব্যবহার করার আরও একটি কারণ হচ্ছে, অনেকেই ভাবেন একটু বেশি হলেই হোয়াইট কাস্ট দেখা দিবে! বাইরে গেলে অস্বস্তিতে পড়তে হবে। আপনি যদি সানস্ক্রিন থেকে ফুল প্রোটেকশন চান, তাহলে এর পরিমাণও যথেষ্ট হতে হবে। পুরো ফেইসের জন্য দুই আঙুল পরিমাণ সানস্ক্রিন নিলে ফুল ফেইস কভার হবে।
২) রিঅ্যাপ্লাই না করা
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করলেন, সারাদিন বাইরে থাকলেন কিন্তু রিঅ্যাপ্লাই করলেন না। এতেও স্কিন প্রবলেম বাড়তে পারে। কারণ সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা কিছুক্ষণ পর কমতে থাকবে। এতে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি স্কিনে সরাসরি পেনিট্রেট হয়ে স্কিন সেলস ড্যামেজ করে দিতে পারে। তাই ৩/৪ ঘন্টা পর পর অবশ্যই রিঅ্যাপ্লাই করতে হবে। বাসায় থাকলেও এটি মিস করা যাবে না।
৩) শুধু এসপিএফ যুক্ত মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করা
সানস্ক্রিন না লাগিয়ে অনেক সময় এসপিএফ যুক্ত দেখেই বিবি ক্রিম বা মিনারেল পাউডার ব্যবহার করে ফেলেন অনেকে। এতেও ত্বক পুরো সুরক্ষা পায় না। তাছাড়া এতে সানবার্ন হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। প্রোপার প্রোটেকশন পাওয়ার জন্য সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।
Pour La Peau Daily UV Protect Calamine Sun Screen
স্কিন ড্যামেজ থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য সানস্ক্রিন জরুরি এটা তো জানা হলো। কিন্তু একইসাথে রিংকেলস প্রিভেন্ট করবে, হোয়াইট কাস্ট দিবে না এমন সানস্ক্রিন কোনটি? এই সবগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পারে Pour La Peau Daily UV Protect Calamine Sun Screen টি। এটিকে ট্রিপল ফাংশনাল প্রোডাক্ট বললেও ভুল হবে না। কোরিয়ান এই সানস্ক্রিনটি অনেকের স্কিনকেয়ার রুটিনের অ্যাসেনশিয়াল একটি প্রোডাক্ট।
সানস্ক্রিনটির বেনিফিটস
১) আমাদের স্কিন ড্যামেজ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ইউভি এ ও ইউভি বি থেকে ত্বক সুরক্ষিত না থাকা। এই সানস্ক্রিনটি এই দুই রশ্মির ক্ষতি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়।
২) হোয়াইট কাস্ট দেয় না।
৩) রিংকেল ও ফাইন লাইনস প্রিভেন্ট করতে হেল্প করে।
৪) ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে।
৫) এতে আছে পিংক ক্লোরামাইন পাউডার। অ্যাপ্লাইয়ের পর স্কিন টোন পিংক ও ব্রাইট দেখায়।
৬) এটি খুব দ্রুত অ্যাবজর্ব হয়ে যায় কোনো ধরনের স্টিকিনেস ছাড়াই।
৭) মেকআপ বেইজ হিসেবেও সানস্ক্রিনটি ইউজ করা যাবে।
৮) সব ধরনের ত্বকে ব্যবহার করা যাবে।
৯) লাইটওয়েট হওয়ায় অ্যাপ্লাইয়ের পর একদমই হেভি ফিল দেয় না।
১০) ত্বক ময়েশ্চারাইজড রাখে।
ব্যবহারের জন্য কিছু সতর্কতা
সব ধরনের ত্বকে ব্যবহারের জন্য বলা হলেও সব প্রোডাক্ট যে সবাইকে সমানভাবে স্যুট করবে তা নয়। একেকজনের ত্বকে একেক রিয়্যাকশন হতে পারে। যেমন-
১) লালচে ফুসকুড়ি, স্কিন ইরিটেশন বা অস্বস্তি হতে পারে।
২) এই সমস্যাগুলো থাকলে সানলাইটে বেড়ে যেতে পারে।
– যদি এই সানস্ক্রিন ব্যবহারে সমস্যা বেড়ে যায় তাহলে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্টের সাথে কনসাল্ট করুন।
৩) যদি ইনজুরি থাকে, একজিমা বা ডার্মাটিটিস থাকে তাহলে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই এমন হলে ব্যবহার বন্ধ রাখুন।
৪) যদি চোখের সংস্পর্শে আসে, তাহলে পানি দিয়ে চোখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
স্টোরেজ সতর্কতা
১) ব্যবহারের পর অবশ্যই ক্যাপ লাগিয়ে রাখুন।
২) শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
৩) সরাসরি সূর্যের আলো আসে এমন জায়গায় রাখবেন না।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
১) বাইরে যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে দুই আঙুলে সানস্ক্রিন নিয়ে ফেইসে ও গলায় অ্যাপ্লাই করে নিন। ব্যবহারের আগে ময়েশ্চারাইজার এবং পরে ফেইস পাউডার অ্যাপ্লাই করে নিতে পারেন। এতে ফেইস কম ঘামবে।
২) ২/৩ ঘন্টা পর পর রিঅ্যাপ্লাই করুন।
সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করলে ডাবল ক্লিনজিং করতে হবে?
হ্যাঁ। সকালে বাইরে যাওয়ার আগে বা বাসায় থেকেও যদি সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা হয়, তবুও রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ডাবল ক্লিনজিং করতে হবে। নইলে ফেইসে জমে থাকা ডার্ট, সানস্ক্রিন এর কারণে একনে বা পিম্পলস হতে পারে। ডাবল ক্লিনজিং এর জন্য শুরুতে মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে ফেইস ভালোভাবে ক্লিন করে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
সানস্ক্রিন অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে বেশ কিছু তথ্য আজ আপনাদের জানিয়ে দিলাম। যদি বয়সের আগেই ত্বকে বয়সের ছাপ না ফেলতে চান, স্কিন ড্যামেজ হওয়া থেকে সুরক্ষা চান, তাহলে আজই স্কিনকেয়ার রুটিনে সানস্ক্রিন অ্যাড করে নিন। প্রতিটি প্রোডাক্ট ব্যবহারের পর কিছুটা সময় লাগে স্কিনে স্যুট হওয়ার জন্য। তাই অধৈর্য না হয়ে অপেক্ষা করুন এবং নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকুন। স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন চারদিকে থেকে। চারদিকে’র দুটি আউটলেট রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়াতে আল জয়নাল ট্রেড সেন্টারে। ফিজিক্যালি কিনতে চাইলে এই দুটি আউটলেট ঘুরে আসতে পারেন। আর ঘরে বসে প্রোডাক্ট হাতে পেতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন চারদিকে’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপে।
ছবি – চারদিকে, সাটারস্টক