চুলের সঠিক যত্ন নিলে চুল ভালো থাকবে এ কথা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু সঠিকভাবে চুল ধুয়ে নিচ্ছি কি? তেল, হেয়ারপ্যাক, কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট সবকিছু করার পর চুল যদি নিয়ম মেনে না ধোয়া হয়, তাহলে কখনোই হেলদি হেয়ার মেইনটেইন করা সম্ভব না। আপনার চুল কেমন দেখাবে বা আপনি কেমন অনুভব করবেন, তার অনেকটাই নির্ভর করে স্টেপ বাই স্টেপ হেয়ার ওয়াশ করার উপর। কারণ একেক ধরনের চুলের প্রয়োজনীয়তা একেক রকম। চুলের ময়েশ্চার লক করে সফট ও নারিশ রাখতে কীভাবে হেয়ার ওয়াশ করবেন চলুন জেনে নেয়া যাক।
হেয়ার ওয়াশ করার স্টেপ বাই স্টেপ গাইড
১) হেয়ার প্রিপেয়ার করা
আপনার চুলের ধরন কেমন, তার উপর নির্ভর করে আপনি কীভাবে চুল ধোয়ার প্রস্তুতি নেবেন। কারণ হেয়ার টেক্সচার জানা থাকলে চুলের যত্ন নেয়া সহজ হয়।
কার্লি হেয়ার
যদি আপনার চুল কার্লি হয়, তাহলে জট বেঁধে যাবে অল্প সময়েই। বিশেষ করে আঁচড়ানোর সময় বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই হেয়ার ওয়াশ করার আগে হাতের আঙুল বা বড় দাঁতের চিরুনি দিয়ে জট ছাড়িয়ে নিন।
স্ট্রেইট হেয়ার
হেয়ার ওয়াশ করার আগে যদি ভালোভাবে চুল আঁচড়িয়ে নেয়া যায় তাহলে হেয়ার ফলিকল ভালো থাকে। তাই চুলের জন্য মানানসই চিরুনি বেছে নিন এবং প্রতিটি সেকশন আলাদা আলাদা করে ভালোভাবে আঁচড়ে নিন।
ওয়েভি হেয়ার
ওয়েভি হেয়ার ওয়াশ করার আগে অয়েল বা কন্ডিশনিং মাস্ক অ্যাপ্লাই করে নিলে জট ছাড়ানো সহজ হবে। মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে পুরো চুল ভালোভাবে আঁচড়ে নিন।
২) নরমাল টেম্পারেচারের পানি দিয়ে চুল ধোয়া
চুল ধোয়ার সবচেয়ে বড় ভুলটি হচ্ছে গরম পানি দিয়ে চুল ধোয়া। এতে চুলের ন্যাচারাল অয়েল স্ট্রিপ আউট হয়ে যায়, চুল শুষ্ক হয়ে যায় এবং দ্রুত ড্যামেজ হয়। আবার, খুব বেশি ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুলেও ময়লা দূর হয় না এবং স্ক্যাল্পে প্রোডাক্ট বিল্ড আপ হয়। তাই নরমাল পানি দিয়ে চুল ধোয়া ভালো। এতে জমে থাকা ময়লা দ্রুত পরিষ্কার হয় এবং ড্যামেজ হয় না।
৩) সঠিক শ্যাম্পু বেছে নেয়া
চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু বেছে নেয়া উচিত। যদি আপনার চুল অয়েলি হয় তাহলে ক্ল্যারিফাইয়িং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন যেটা প্রোডাক্ট বিল্ড আপ করবে না এবং ময়লা দূর করবে। যদি চুল শুষ্ক হয় তাহলে হেয়ার ফলিকল নারিশড রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ব্যবহার করতে পারেন স্কিনো কেরাটিন স্মুথ রিপেয়ার শ্যাম্পু। এই শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল হবে সফট ও স্মুথ, ড্যামেজ চুল রিপেয়ার হবে এবং চুল হবে পরিষ্কার।
৪) শ্যাম্পু অ্যাপ্লাই করা
চুলের পরিমাণ বুঝে শ্যাম্পু নিয়ে ভালোভাবে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। যদি চুলে প্রোডাক্ট বিল্ড আপ হয় বা অয়েল জমে থাকে, তাহলে একটু সময় নিয়ে ম্যাসাজ করুন। চুলেও শ্যাম্পু লাগিয়ে নিন। এবার ভালোভাবে চুল ধুয়ে নিন। খেয়াল রাখুন চুলে যেন প্রোডাক্টের কোনো অংশ লেগে না থাকে। এতে চুল প্রাণহীন দেখাতে পারে এবং স্ক্যাল্প ইস্যুও হতে পারে।
৫) কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করা
চুলের মিডল লেন্থ থেকে শেষ পর্যন্ত কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করুন। অনেকেই স্ক্যাল্পে কন্ডিশনার দেন। এটা কিন্তু একদমই উচিত নয়। কারণ এতে স্ক্যাল্প অনেক বেশি অয়েলি হয়ে যায়। চুলের ধরনের উপর নির্ভর করে প্রোডাক্ট ও মেথড বেছে নেয়া জরুরি। অ্যাপ্লাইয়ের ২/৩ মিনিট পর চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
৬) শুকিয়ে নিন
চুল ধোয়ার পর কটন টি শার্ট বা মাইক্রোফাইবার তাওয়েল দিয়ে চুলের বাড়তি পানিটুকু মুছে নিন। ভেজা চুল দুর্বল থাকে, তাই জোরে জোরে ঘষলে চুল ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চুল পরিষ্কার করা নিয়ে কিছু মিথ
যতবার ইচ্ছা চুল ধোয়া যায়
এটা বেশ বড় একটি ভুল ধারণা। কারণ বারবার চুল ধুলে চুলের ন্যাচারাল অয়েল চলে যায়। এতে চুল বেশি ড্রাই হয়ে ভেঙে যায়।
ঠান্ডা পানি চুলকে শাইনি করে তোলে
এটাও এক ধরনের মিথ। তাপমাত্রার কারণে চুল কখনো চকচকে হয়ে যাবে না। একদম ঠান্ডাও না, আবার গরমও না অর্থাৎ নরমাল টেম্পারেচারের পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করা ভালো। এতে কিউটিকলস ওপেন হয় এবং ভালোভাবে পরিষ্কার হয়।
ভেজা চুল আঁচড়ালে চুল ভাঙা কমে
এটাও ভুল ধারণা। কারণ ভেজা চুল এমনিতেই ভঙুর থাকে। আঁচড়ালে ভাঙার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। তাই ভেজা চুল আঁচড়ানো ঠিক নয়।
দামী শ্যাম্পুই চুলের জন্য ভালো
এটা যে সব সময় ঠিক হবে তা নয়। কোয়ালিটি সব সময় দামের উপর নির্ভর করে না। এমন প্রোডাক্ট চুজ করুন যেটা আপনার চুলের জন্য ভালো।
সঠিকভাবে চুল পরিষ্কার করার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে আজ আপনাদের জানিয়ে দিলাম, সেই সাথে কয়েকটি প্রচলিত মিথও। আশা করি হেয়ার ওয়াশ নিয়ে কনফিউশন ক্লিয়ার হয়েছে। স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন চারদিকে থেকে। চারদিকে’র দুটি আউটলেট রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়াতে আল জয়নাল ট্রেড সেন্টারে। ফিজিক্যালি কিনতে চাইলে এই দুটি আউটলেট ঘুরে আসতে পারেন। আর ঘরে বসে প্রোডাক্ট হাতে পেতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন চারদিকে’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপে।
ছবি – সাটারস্টক