পবিত্র রমজান মাসে দীর্ঘ একটা সময় না খেয়ে থাকতে হয়। সেই সাথে মেনে চলতে হয় বেশ কিছু নিয়ম কানুন। যদি নিয়মগুলো ঠিকভাবে না মানা হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যেতে পারে। কী কী কারণে রোজা ভেঙে যেতে পারে তা নিয়ে নানা ধরনের দ্বিধা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু লেখা পর্যালোচনা করে কয়েকটি কারণ সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। রোজা ভেঙে যাওয়ার কারণগুলো সম্পর্কেই আজ আপনাদের জানাবো।
রোজা ভেঙে যাওয়ার কারণগুলো
যেসব কারণে রোজা ভেঙে যেতে পারে সেগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে এ নিয়ে দ্বিধা তৈরি হবে না। চলুন তাহলে কারণগুলো জেনে নেয়া যাক-
১) খাবার খেলে ও ধূমপান করলে
রোজা রেখে যে কোনো ধরনের খাবার খাওয়া, পানাহার ও ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। এগুলোর ভেতর যে কোনোটি ইচ্ছাকৃতভাবে সংগঠিত হলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে ভুলক্রমে কোনো খাবার খেলে বা পানি পান করলে সেটা ক্ষমাযোগ্য। সেই ব্যক্তি রোজা পুরোটা রাখতে পারবেন।
২) ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে
কারও যদি অসুস্থতাজনিত কারণে বমি চলে আসে, কোনোভাবেই বমি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায় না, সেক্ষেত্রে বমি করলেও রোজা ভাঙবে না। এক্ষেত্রে রোজা কাজা হবে না। তবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করেন, তাহলে তার রোজা হবে না। সেক্ষেত্রে এই রোজা তার জন্য কাজা হয়ে যাবে।
৩) নাকের ড্রপ ব্যবহারে
রোজা রাখার আরও একটি শর্ত হচ্ছে কোনো কিছু যেন পেট বা শরীরের মধ্য দিয়ে প্রবেশ না করে। আমরা যখন নাকে ড্রপ দেই, তখন শুরুতে গলায় এক ধরনের ঝাঁজ লাগে, এরপর সেটি পেটে চলে যায়। এমন হলে রোজা ভেঙে যাবে। তাই রোজা রেখে নাকে কোনো ড্রপ না দেয়াই উত্তম। ইফতারের পরের সময় থেকে সাহরি পর্যন্ত যে কোনো সময় ড্রপ ব্যবহার করা যাবে।
৪) পাউডার ইনহেলার ব্যবহারে
ইনহেলার কয়েক ধরনের হয়। এর মধ্যে সব ধরনের ইনহেলার ব্যবহারেই যে রোজা ভাঙে তা নয়। যেমন – বাফারিং ইনহেলার। এটি দিয়ে শুধু বাতাস বা অক্সিজেন বের হয়। এটি ব্যবহারে রোজা ভাঙবে না বা কাজা হবে না। তবে যেগুলো দিয়ে ভ্যাপোরাইজেশন হয় বা DPI (Dry Powder Inhaler) – যার মাধ্যমে পাউডার ভিতরে প্রবেশ করে, সেগুলো ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে।
৫) নাক দিয়ে রক্ত পড়লে
নাক দিয়ে রক্ত পড়ে যদি তা মুখে চলে আসে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে অল্প রক্ত বের হলে রোজা ভাঙবে না। সেক্ষেত্রে দ্রুত রক্ত মুছে ফেলতে হবে। দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি থুথুর সঙ্গে ভেতরে চলে যায় এবং এর পরিমাণ যদি থুথুর সমান বা বেশি হয় তাহলে তা রোজা ভাঙার কারণ হবে।
৬) খাবার মুখে রেখে ঘুমালে
সাহরি খাওয়ার পর অনেকেই মুখে পান বা অন্য কোনো খাবার মুখে রেখেই তাসবীহ করতে করতে অনেকে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙার পর যদি উঠে দেখেন যে সুবহে সাদিক হয়ে গিয়েছে এবং খাবারের কিছু অংশ পেটে চলে গিয়েছে, তাহলে রোজা হবে না। ইসলামিক স্কলারদের মতে, পান যেহেতু ইচ্ছা করে চিবানো হয় রস খাওয়ার জন্য, তাই ঘুমানোর সময় অসতর্কতার সাথে কিছু রস ভেতরে চলে যেতেই পারে। তাই রোজাটি কাজা করে নেয়াই ভালো। তবে এ রোজার কারণে কাফফারা দিতে হবে না।
৭) সহবাস করলে
রোজা রাখা অবস্থায় স্বামী স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ভেঙে যাবে। এ অবস্থায় রোজা ভঙ্গের ফলে ৫টি ব্যাপার ঘটে। ১) কবিরা গুনাহ হয় ২) রোজা বাতিল হয়ে যায় ৩) তাকে ঐ দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে ৪) ঐ দিনের রোজা রমজানের পর কাজা করতে হবে ৫) বৃহৎ কাফফারা আদায় করতে হবে। যেমন- দুই মাস একাধারে রোজা রাখা অথবা ৬০ জন মিসকিনকে একবেলা খাবার খাওয়ানো।
৮) রোজা রাখা অবস্থায় মেয়েদের পিরিয়ড হলে
রোজা রাখা অবস্থায় পিরিয়ড হলে রোজা হবে কিনা বা সেইদিন রোজা রাখতে হবে কিনা এই প্রশ্নটি নিয়ে মেয়েদের অনেকের মাঝেই দ্বিধা থাকে। হয়ত সাহরি খাওয়ার পর, দিনের মধ্যভাগে বা ইফতারের কিছুক্ষণ আগে অর্থাৎ দিনের যে কোনো সময়ই পিরিয়ড হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোজা ভাঙা পড়বে। বছরের অন্যান্য দিনের মতো তখন খাবার খাওয়া বা পানি পান করা যাবে।
রোজা ভেঙে যাওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে আজ কিছু আলোচনা করলাম। আবারও বলছি, এগুলো সবই বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত থেকে সংগৃহীত তথ্য। রোজা রেখে নিয়মিত নামাজ পড়া, কোরআন পড়া, ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে চলা বাধ্যতামূলক। এই মাসে যতটুকু সম্ভব আল্লাহর দরবারে হাত তুলুন, দোয়া করুন নিজের গুনাহ মাফের জন্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভালো রাখুক।
ছবি – সাটারস্টক