লোশন ছাড়া ত্বকের যত্ন ভাবতেই অবাক লাগে! একজন মানুষের চেহারার পর সবার প্রথমে আমরা তাকাই তার হাত বা পায়ের দিকে। মানুষের হাত পা দিয়ে তার ব্যাক্তিত্ব এবং রুচির অনেকটাই ফুটে উঠে। কারণ আমরা চেহারার ব্যাপারে যতটা ফিটফাট থাকতে পছন্দ করি হাত পায়ের ক্ষেত্রে ততটা যত্নশীল থাকি না। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে সুন্দর ও পরিষ্কার হাত পা নিজের ব্যাক্তিত্বের কত গুরুত্বপূর্ণ দিক ফুটিয়ে তুলে। আর শীতের দিনে চেহারার তুলনায় হাত পায়ের ত্বক বেশি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাই প্রতিদিনের রূপচর্চার তালিকায় থাকা উচিৎ হাত পায়ের জন্য একটু এক্সট্রা কেয়ার। এখন কথা হচ্ছে বারবার লোশন ব্যবহার করা বিরাট ঝামেলার কাজ আর বাজারে এত এত নামী দামী লোশন, কোনটা রেখে কোনটা ব্যবহার করবো? এত দামী লোশন কেনার পর যদি সেটা স্যুট না করে। তাই আজ চলুন জেনে নেই শীতের দিনে লোশন ব্যবহার না করেই কিভাবে হাত পায়ের নিস্তেজ ও কুচকানো ভাব দূর করা যায়।
১। নারিকেল তেল
লোশন ছাড়া ত্বকের যত্ন এর ব্যাপারে নারিকেল তেল অত্যন্ত সুলভ একটি উপাদান। নারিকেল তেল পাওয়া যাবে না এমন বাঙালি ঘর নেই বললেই চলে। যতই নামী দামী ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার করি না কেনো এক বোতল নারিকেল তেল প্রতি ঘরে থাকবেই। সাধারনত চুলের যত্নে আমরা এই তেল ব্যবহার করলেও অনেকেই জানি না হাত পায়ের যত্নে এই তেল কতটা উপকারী। গোসলের পর অল্প পরিমাণ নারিকেল তেল নিয়ে হাত পায়ে ম্যাসাজ করলে ত্বকের টানটান ভাব দুর হওয়ার পাশাপাশি ত্বকে একধরনের উজ্জ্বল ভাব ফিরে আসবে।
২। অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী। এতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ই যা প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। তাই নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ত্বকের টানটান ভাব ফিরে আসবে এবং কম বয়সে বলিরেখার ছাপ পরার আশংকা অনেকটাই কমে আসবে। প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে এই শীতে ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর হয়ে যাবে। এছাড়া মুলতানি মাটি বা চন্দনের সাথে মধু এবং অলিভ অয়েল মিক্স করে ফেইসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বক হবে কোমল এবং স্মুথ। লোশন ছাড়া ত্বকের যত্ন করতে আমার অলিভ অয়েল ব্যাবহার করতেই পারি।
৩। আমন্ড অয়েল
বাদামের তেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এই তেলে ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড, এসেনশিয়াল ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণই বেশি। তাই এই তেল ত্বকের সুস্থতা এবং উজ্জ্বলতায় বেশি কার্যকরী। প্রতিদিন ব্যবহারে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না এবং বলিরেখা দূর হয়। রাতে ঘুমানোর আগে আমন্ড অয়লে ত্বকে মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে ও হারানো জেল্লা ফিরে আসে। আমন্ড অয়েল শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে।
৪। সূর্যমুখীর তেল
সূর্যমুখীর তেলে তেলচিটচিটে ভাব থাকে না। আর এই তেল ব্যবহারে ত্বক হয় কোমল ও মসৃণ। সব ধরনের ত্বকে এই তেল ব্যবহার উপযোগী। গোসলের পানিতে এই তেল ব্যবহারে সারাদিনের ক্লান্তি ভাব দূর হয়। প্রতিদিন এই তেল ব্যবহারে রোদে পোড়া দাগ কমে যায়। এই তেল শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চার বজায় রাখে এবং ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ এবং বলিরেখা পড়তে দেয় না।
৫। তিলের তেল
তিলের তেল ত্বকে বয়সের বলিরেখা রোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন তিলের তেলের ম্যাসাজ করলে মুখে রক্ত চলাচল বাড়বে এবং ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠবে। তিলের তেল ত্বকের মরা চামড়া তুলে ফেলে এবং ত্বক সতেজ রাখে। এ ছাড়া ত্বকের পোড়া ভাবও দূর করে তিলের তেল। গোসলের আগে তিলের তেল দিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করলে ত্বক ভিতর থেকে পরিষ্কার হয়।
অতএব ত্বকের যত্নে নামী দামী লোশন ব্যবহার করতে হবে এমনটা জরুরী নয়। ঘরে পাওয়া যায় এমন তেলের মাধ্যমেই করতে পারেন হাত পায়ের বাড়তি যত্ন।