স্মার্টফোন ছাড়া শিশু একদম খেতে চায় না? জেনে নিন কিভাবে শিশুর সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলবেন

স্মার্টফোন ছাড়া শিশু একদম খেতে চায় না? জেনে নিন কিভাবে শিশুর সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলবেন

ক্ষনিকের স্বস্তি এবং সময় বাঁচানোর জন্য নিজের সন্তানকে ঠেলে দিচ্ছেন না তো ধ্বংসের পথে? অনেক বাবা-মা আছেন যারা তাদের সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য স্মার্টফোনে কার্টুন, গেমস দিয়ে থাকেন। কিন্তু ছোট সন্তান টি যখন স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে যায়, স্মার্টফোন না দিলে আর খেতেই চায় না তখন অভিভাবকদের অভিযোগ আসে, ” কেনো তাদের সন্তান স্মার্টফোন ছাড়া খেতে চায়না “? আসলে এই সমস্যা টা আপনার মাধ্যমেই তৈরি হয়। আপনি নিজেই আপনার সন্তানকে স্মার্টফোনে আসক্ত করান। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য। ছোট মানুষের কাছে টেলিভিশন এবং স্মার্টফোন একটি আকর্ষণীয় বেপার। আপনি যখন তার সামনে ফোন টিপবেন স্বভাবতই সেও ফোন টেপায় আগ্রহী হবে কারণ শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। আবার শিশুটি যখন খেতে চায়না তখন প্রথম প্রথম আপনি তাকে ভোলানোর জন্য স্মার্টফোনে ভিডিও দিয়ে খাওয়াতে চান যা পরবর্তী সময়ে প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে সে আর স্মার্টফোন ছাড়া খেতেই চায় না।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটা চ্যানেলের এডভারটাইজমেন্ট নিচে তুলে ধরা হলো যেখানে একটি ছোট শিশু আদালতে দাঁড়িয়ে বিচারকের উদ্দেশ্যে বলে, ” আমি অপরাধী। আমি ভুল করেছি। কারন আমি স্মার্টফোন ছাড়া এখন আর খেতে চাইনা। কিন্তু আমি যে খেতে চাইনি তাই বলে কেউ আদর-যত্ন করে, গল্প করে খাওয়াইনি তো আমায়! আমাকে প্রথমে স্মার্টফোন দিয়ে ভোলানো হয়েছে। আমিও ভুলেছি। এখন আমার আর স্মার্টফোন ছাড়া খেতেই ইচ্ছে করে না। ” ছোট শিশুটির এমন হৃদয় স্পর্শী বক্তব্য শুনে দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়। আর এরপর শিশুটির বাবা-মার টনক নড়ে। শুধু উল্লেখিত শিশুটি নয় বাংলাদেশের অতি সাধারণ ঘটনাগুলোর ভেতর অন্যতম হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। বাবা-মা তার সন্তানকে ভুলিয়ে রাখতে, তার মনোযোগ কে অন্য দিকে ঘুড়িয়ে দিতে হাতে তুলে দিচ্ছে মোবাইল ফোন যা খুবই মারাত্মক। বাচ্চার যে সময় খেলাধুলা করার কথা সেই সময় সে স্মার্টফোন নিয়ে গেম খেলছে। ফলে শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও স্মার্টফোনে আসক্তির ফলে ছোট শিশুটি কথা বলা, গল্প করা, পড়াশোনা করা থেকে বিরত থাকছে। আর এই সময় শিশুটির মায়ের বোধোদয় হয় কিন্তু ততদিনে হয়ে গেছে অনেক দেরি। এই সবকিছুর পরেও উল্টো দোষ দেওয়া হয় শিশুটি কে, কেনো সে ফোন ছাড়া খেতে চায় না!

এই সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য যেসব বাবা-মার ছোট্ট সোনামণি টি স্মার্টফোন ছাড়া খেতে চায় না তাদের একটু বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।

শিশুদের ছোট থেকেই মানসিক বিকাশ শুরু হয় তাই তার হাতে স্মার্টফোন না দিয়ে তার সাথে গল্প করুন, ছড়া বলুন এবং খাওয়ান। এতে তার মানসিক বিকাশ ইমপ্রুভ হবে। স্মার্টফোন হাতে থাকলে অনেক সময় একটি শিশু অনেক বেশি খেয়ে ফেলে আবার অনেক সময় তারা কম খেয়ে থাকে। এভাবে খেলে পুষ্টির ঘাটতি থেকে যেতে পারে। তাই পুষ্টিকর খাবার প্লেটে সাজিয়ে তার সামনে দিন এবং আপনিও খেতে বসে যান। এতে আপনার খাওয়া দেখে সেও খাবে। আপনি তাকে খেতে উৎসাহিত করুন। দু’জন প্রতিযোগিতা করুন কে আগে ফার্স্ট হয়। এভাবে শিশুর সাথে গল্প করে, মজা করে শিশুকে খাওয়ান। খাবার অবশিষ্ট থাকলে তা আপনি নিজ হাতে খাইয়ে দিন। এভাবে আপনার সন্তান কে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে গড়ে তুলুন। বর্তমান সময়ে আমরা সবাই অনেক বেশি ব্যস্ত। বাড়ির খুদে সদস্য কে ঠিক মতো টাইম দেওয়ার সুযোগ-ই হয়ে ওঠে না। তাই অফিস থেকে ফিরে যতটুকু সময় বের করা যায় বাবা-মা মিলে সন্তানের সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ সন্তান পালন করা, খাওয়ানো এই সবকিছুই বাবা-মা উভয়ের-ই দায়িত্ব। শিশুরা প্রথম সামাজিকীকরণ শেখে তার পরিবারের কাছ থেকেই। তার যতটুকু সময় আপনি বাসায় থাকবেন ততটুকু সময়ে তার সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ভালো লাইফস্টাইল গড়ে তুলুন। তার সাথে কাটানো সময় টুকু আপনি টেলিভিশন কিংবা মোবাইল নিয়ে পরে না থেকে আপনি নিজে বই পড়ুন এবং তাকেও বই পড়তে উৎসাহিত করুন। আপনার পেইন্টিং এর শখ থাকলে আপনি পেইন্টিং করুন এবং তাকেও শেখান। সবাই একসাথে বসে খাবার খান। এতে শিশুর সাথে আপনাদের সম্পর্কের বন্ধনও শক্তপোক্ত হবে। শিশুরা যেহেতু নরম মাটির মতো তাই ছোট বেলা থেকে আপনি তাকে যে ছাঁচে ফেলবেন সে ঠিক তেমন আকার ধারণ করবে। তাই শিশুর সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং লাইফস্টাইল ঠিক করতে আপনাকেই মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

0 I like it
0 I don't like it

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.