বৈশাখে মাছের ৩ পদ

Shorshe Ilish

বৈশাখ চলেই এলো। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বাঙালিরাও প্রস্তুত। শুধু সাজসজ্জাতেই নয়, খাবারের আয়োজনেও এ সময় প্লেটে থাকে নান্দনিক সব বাঙালি খাবার। ভাত, ভর্তা, মাছের নানা পদ, মিষ্টি – কি থাকে না পাতে! খাবারের আয়োজনে যদি ষোল আনা বাঙালিয়ানাই না থাকে, তাহলে কি আর ভুরিভোজটা জমে? আর এই বাঙালিয়ানা বোঝা যায় প্লেটে যখন ভাতের সাথে সাজানো থাকে মাছের নানা পদ। ইলিশ ছাড়াও এ সময় অন্যান্য মাছ দিয়েও নানা রান্না করা হয়। আজকে বৈশাখে মাছের ৩ পদ কীভাবে রান্না করতে পারেন সে সম্পর্কেই জানাবো।

বৈশাখে মাছের ৩ পদ

আজকের রেসিপিতে থাকছে ইলিশ, কাচকি ও রুই মাছ দিয়ে তৈরি ৩টি ভিন্ন স্বাদের রান্না। এগুলো থেকে যে কোনোটি অথবা ৩টি রান্নাই আপনি করতে পারেন বৈশাখে। চলুন তাহলে রেসিপিগুলো জেনে নেয়া যাক।

১) সরষে ইলিশ

বৈশাখ মানেই ইলিশ মাছ খাওয়ার ধুম পড়ে যায় চারদিকে। এই মাছটির স্বাদও অনেক বেশি। আর এটিকে রান্নাও করা যায় নানাভাবে। ইলিশের মালাইকারি, ভুনা ও পাতুরি ছাড়াও সরষে ইলিশটা সবার খুব পছন্দের। তবে অনেকেরই ধারণা সরষে ইলিশ রান্না করা বোধহয় কঠিন। মোটেও তা নয়। একদম সহজ উপায়ে সরষে ইলিশ রান্নার উপায়টি আজ আপনাদের জানাবো।

বৈশাখে মাছের ৩ পদ - সরষে ইলিশ

এই রান্না করতে যা যা লাগবে-

  • ইলিশ মাছের টুকরো ৫/৬টি
  • সরিষা বাটা ২ টেবিল চামচ (সাদা সরষে ব্যবহার করলে ভালো। কালো সরষেতে ঝাল বেশি লাগতে পারে)
  • পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ
  • রসুন বাটা ১/২ চা চামচ
  • আদা বাটা ১/২ চা চামচ
  • পোস্তদানা ১/২ চা চামচ (অপশনাল)
  • সরিষার তেল ১/২ কাপ
  • কাঁচামরিচ বাটা ১ চা চামচ
  • কাঁচামরিচ আস্ত ১০/১২টি
  • হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ
  • জিরা গুঁড়া ১/২ চা চামচ
  • লবণ পরিমাণমতো

যেভাবে বানাবেন

১) পাত্রে প্রথমে নিয়ে নিচ্ছি সরিষা বাটা। এরপর এতে বাকি উপকরণগুলো দিয়ে দিচ্ছি। সরিষা ইলিশের মূল বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সরিষার তেল। তাই এখানে অন্য তেল ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। এবার সবগুলো উপকরণ হাত দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিতে হবে।

২) মাখানো হয়ে গেলে এবার এই মিশ্রণে মাছের টুকরোগুলো নিয়ে নিন। মসলাটুকু মাছের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।

৩) মাখানো মাছের পাত্রটি ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন ওভাবেই। এবার চুলায় একটি প্যান বসিয়ে তাতে দিয়ে দিন ১ চা চামচ সরিষার তেল। এই তেলে ফোড়ন দেয়া হবে শুধু। কয়েকটি কালোজিরা ছিটিয়ে দিন। এতে মাছে সুন্দর ফ্লেভার আসবে।

৪) এবার এতে দিয়ে দিন মাছগুলো। মসলা যেটুকু পাত্রে আছে পুরোটাই ভালোভাবে মুছে দিয়ে দিন। এই পাত্রটা ধুয়ে সামান্য পানি দিয়ে দিন মাছে। আলাদা করে কোনো পেঁয়াজ কুঁচি এখানে দেয়ার প্রয়োজন নেই।

৫) এবার ৫ মিনিটের জন্য পাত্রটা ঢেকে রাখুন। একবার যে পানি দেয়া হয়েছে এরপর আর পানি দেয়ার দরকার নেই। খুব অল্প সময়েই এ রান্নাটা হয়ে যায়।

৬) মাছগুলোকে খুব সাবধানে উলটে দিন। এবার মাছের উপর দিয়ে দিন কাঁচামরিচগুলো।

ব্যস! হয়ে গেলো সরষে ইলিশ রান্না! রেসিপি দেখে কি খুব কঠিন কিছু মনে হচ্ছে? একদমই সহজ, তাই না? এই বৈশাখে তাহলে হয়ে যাক সরষে ইলিশ!

২) টক মিষ্টি ঝাল রুই

মাছ তো বুঝলাম, কিন্তু এটা আবার টক মিষ্টি স্বাদের কীভাবে হবে? খেতেই বা কেমন লাগবে? এটাই ভাবছেন তো? বলছি! গতানুগতিক মাছের স্বাদের থেকে এই রান্নার স্বাদ কিছুটা আলাদা। আর তাই তো খেতেও অন্যরকম।বৈশাখে মাছের ৩ পদ - টক মিষ্টি ঝাল রুই

এই মাছ রান্নার জন্য যা যা লাগবে-

  • রুই মাছ ৫০০ গ্রাম
  • নারিকেল কোড়ানো অর্ধেক
  • পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ
  • রসুন বাটা ১ চা চামচ
  • কাঁচা মরিচ ৮/১০টি (চিড়ে নেয়া)
  • ধনেপাতা কুঁচি ৩ টেবিল চামচ
  • তেঁতুলের ক্বাথ ৩ টেবিল চামচ
  • হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ
  • চিনি ২ টেবিল চামচ
  • রোস্টেড সাদা তিল ও তিল বাটা বাটা ২ টেবিল চামচ করে
  • তেল ১/৪ কাপ

যেভাবে বানাবেন

১) মাছ ধুয়ে লবণ দিয়ে মেখে রেখে দিন ২০/২৫ মিনিট। এরপর আবারও পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। লবণ ও হলুদ গুঁড়া দিয়ে মেখে তেলে ভেজে নিন।

২) এই তেলেই দিয়ে দিন কোড়ানো নারিকেল, রসুন বাটা ও কাঁচা মরিচ।

৩) একটি বাটিতে তিল বাটা, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্টটি তেলে দিয়ে নেড়ে অল্প পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। একটু পর দিয়ে দিন ১ কাপ পানি।

৪) ঝোল ফুটে উঠলে মাছগুলো মাঝারি আঁচে কিছুক্ষণ রেখে তাতে দিয়ে দিন চিনি ও তেঁতুলের ক্বাথ। কিছুক্ষণ পর মাছগুলো উলটে দিন। আঁচ কমিয়ে ঢেকে রাখুন।

৫) অপেক্ষা করুন কয়েক মিনিট। এবার এতে দিয়ে দিন ধনেপাতা কুঁচি ও কাঁচা মরিচ। ২/৩ মিনিট পর চুলা বন্ধ করে দিন।

৬) পরিবেশনের সময় মাছের উপর ছিটিয়ে দিন সাদা তিল।

ব্যস হয়ে গেলো টক মিষ্টি ঝাল রুই। আমার মনে হয় রুই মাছের নানা পদ আগে খেলেও এটা নিশ্চয়ই বানানো হয়নি কখনো, তাই না? তাহলে এবার বৈশাখি রেসিপিতে যুক্ত করে ফেলুন মজাদার এই মাছের রেসিপিটি!

৩) কাচকি মাছের পাতুরি

কাচকি মাছের পাতুরি

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার হচ্ছে পাতুরি। সাধারণত কলাপাতা, লাউপাতা, কুমড়ো বা চালকুমড়ো পাতায় মুড়ে পাতুরি রান্না করা হয়। কম তেলে সেঁকে রান্না করা হয় বলে গ্রামে এখনও খাবারটি ব্যাপক প্রচলিত। ধীরে ধীরে শহুরে জীবনেও এই পাতুরি অনেকাংশেই জায়গা করে নিয়েছে। নানা ধরনের মাছ দিয়েই এটি তৈরি করা যায়। আজ আপনাদের জানাবো কাচকি মাছ দিয়ে পাতুরি তৈরি করার রেসিপি।

এই রান্নাটি করতে যা যা লাগবে-

  • কাচকি মাছ ২০০ গ্রাম
  • আলু কুঁচি ২ কাপ
  • পেঁয়াজ কুঁচি ১ কাপ
  • হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ
  • নারিকেল কোড়ানো ৪ টেবিল চামচ
  • সরিষা ২ চা চামচ
  • সরিষার তেল ১/৪ কাপ
  • ধনে পাতা কুঁচি ১/৪ কাপ
  • লেবু পাতা ১/২টি
  • কাঁচা মরিচ ৪/৬টি
  • কলাপাতা ১/২ টি
  • লবণ স্বাদমতো

যেভাবে বানাবেন

১) কাচকি মাছ ভালো করে কেটে ধুয়ে নিন। আলু ও পেঁয়াজ কুঁচি কুঁচি করে কাটুন। কাঁচা মরিচের সঙ্গে সরিষা মিহি করে বেটে রাখুন।

২) একটি পাত্রে আলু, পেঁয়াজ, হলুদ ও মরিচ গুঁড়া, লবণ ভালোভাবে মেখে নিন। এতে দিয়ে দিন ধুয়ে রাখা কাচকি মাছগুলো। এবার এতে কোড়ানো নারিকেল, সরিষা বাটা, ধনেপাতা কুঁচি, সরিষার তেল, চিড়ে রাখা কাঁচা মরিচ ও লেবুর পাতা দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিন। সব মসলা ভালোভাবে মেখে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন।

৩) কলাপাতা ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। পাতার দুই পাশে সরিষার তেল মাখিয়ে নিন। প্রতিটি টুকরো এপিঠ ওপিঠ করে আগুনে হালকা সেঁকে নিন। এবার যতগুলো পাতুরি বানাবেন ততগুলো টুকরো করে নিন। প্রতিটি পাতার মধ্যে অল্প অল্প করে মাছ ভরে সুতা দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে দিন। খেয়াল রাখবেন মাছ যেন ভেতর থেকে বের হয়ে না আসে।

৪) চুলায় ননস্টিকি পাত্র গরম করে তাতে সামান্য তেল দিন। এবার কলাপাতার দুই পিঠ অন্তত ৫ মিনিট করে সেঁকে নিন। ভাজা হলে নামিয়ে নিন।

ব্যস! তৈরি হয়ে গেলো কাচকি মাছের পাতুরি। গরম গরম ভাতের সঙ্গে এটি পরিবেশনের জন্য এখন একদম প্রস্তুত।

বৈশাখ নিয়ে আমাদের কত ধরনের পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু কী রান্না করা যায় তা নিয়ে ভাবতে বসলেই শুরু হয়ে যায় কনফিউশন। এখন নিশ্চয়ই আর কনফিউশন নেই? বৈশাখে মাছের ৩ পদ থেকে বেছে নিন আপনার রেসিপিটি আর ঝটপট বাসায় তৈরি করে ফেলুন।

ছবি – সাটারস্টক, নট এ কারি

0 I like it
0 I don't like it