অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলা কেন জরুরি?

anti aging treatment

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে নানা পরিবর্তন দেখা দেয়। ত্বকের উজ্জ্বলতা কমতে থাকে, চামড়ায় ভাঁজ পড়ে, চোখের নিচে কালচে দাগ স্থায়ী হতে থাকে, ত্বকে বাড়ে শুষ্কতা, কমতে থাকে ইলাস্টিসিটি। সব মিলিয়ে সমানতালে কমতে থাকে কনফিডেন্স। বয়স ৩০ পার হয়ে গেলে এই সমস্যাগুলো যে হয় সেটা যেন মানতেই ইচ্ছা করে না। তাই বলে কি হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে হবে? একদমই না! ত্বক নিয়ে সবাই এখন বেশ সচেতন। আর তাই বয়সের ছাপ পড়ার আগেই শুরু করতে হবে অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন। কেন ও কীভাবে এই রুটিন মেনে চলবেন সে সম্পর্কে চলুন জেনে নেয়া যাক।

এজিং সাইনস কোনগুলো?

৩০ বছর পার হওয়ার পর থেকেই ত্বকে ফাইন লাইনস ও রিংকেলস ভিজিবল হতে থাকে। তবে এটা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক সময়ে ভিজিবল হতে পারে। কত দ্রুত ত্বকে এজিং সাইনস দেখা দিবে সেটার অনেকটাই নির্ভর করে জেনেটিক্স, স্ট্রেস, এনভায়রনমেন্ট ও লাইফস্টাইলের উপর। কয়েকটি কমন এজিং সাইনস হচ্ছে-

  • ফাইন লাইনস ও রিংকেলস
  • ডার্ক স্পটস
  • রুক্ষ ও শুষ্ক টেক্সচার
  • ডালনেস
  • আনইভেন স্কিনটোন

অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন

অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন এর প্রধান ইনগ্রেডিয়েন্ট কোনগুলো?

যখন অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন শুরু করবেন, তখন এই ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো প্রোডাক্টে আছে কিনা অবশ্যই চেক করে নিবেন।

রেটিনল

অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন এ রেটিনলকে হলিগ্রেইল হিসেবে মানা হয়। এই ভিটামিন এ ডেরিয়েটিভটি ফাইন লাইনস, রিংকেলস, আনইভেন স্কিনটোন এর মতো স্কিন প্রবলেমগুলো সলভ করতে হেল্প করে।

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি এমন একটি পাওয়ারফুল অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যেটি অ্যাপ্লাই করলে ফ্রি রেডিক্যাল থেকে আমাদের ত্বক সুরক্ষিত থাকে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ফাইন লাইনস মিনিমাইজ করতে এটি বেশ কার্যকর।

আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHAs)

AHAs (যেমন- গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড) হচ্ছে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট। স্কিনের সারফেস থেকে ডেড স্কিন সেলস রিমুভ করতে এগুলো হেল্প করে। সেই সাথে স্কিনের সারফেস স্মুথ ও রিফাইন করে ফ্রেশ ও ইয়ুথফুল লুক পেতে হেল্প করে এই উপাদানটি।

আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড

ভিটামিন ই

ভিটামিন ই হচ্ছে ফ্যাট সল্যুবল ভিটামিন যা সাধারণত স্কিনের সিবামে পাওয়া যায়। এই উপাদানটি ত্বকের ময়েশ্চার লক করে ত্বক সফট রাখতে হেল্প করে।

কোলাজেন

স্কিনের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে কোলাজেন। আমাদের ত্বকে এই কোলাজেনের উপস্থিতি ন্যাচারালি থাকে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোলাজেনের প্রোডাকশন কমতে থাকে। যার কারণে স্কিনের টানটান ভাব কমতে থাকে এবং এজিং সাইনস দেখা যায়। এই উপাদান যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ত্বক হয়ে ওঠে প্লাম্পি, পাওয়া যায় ইয়ুথফুল লুক।

নিয়াসিনামাইড

ভিটামিন বি৩ এর একটি ফর্ম হচ্ছে নিয়াসিনামাইড। অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টে এই উপাদানটির উপস্থিতি থাকলে সেটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ডার্ক স্পট কমাতে হেল্প করে। সেই সাথে এনলার্জ পোরস মিনিমাইজ হয়।

অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে ভিজিবল হওয়া এজিং সাইনস নিয়েও চিন্তা বাড়তে থাকে। ফ্রেশ ও রেডিয়েন্ট লুক পাওয়ার জন্য অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন তাই ফলো করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। কীভাবে এই রুটিন ফলো করবেন? জেনে নিন এ সম্পর্কিত কয়েকটি টিপস।

১) জেন্টল ক্লিনজার ব্যবহার করুন

অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন এ ক্লিনজিং

আপনার বয়স যতই হোক না কেন, ক্লিনজিং অবশ্যই করতে হবে। স্কিনকেয়ার রুটিন এর প্রথম ধাপ এটি। এজন্য ত্বকের ধরন বুঝে জেন্টল ক্লিনজার বেছে নিন। হার্শ ক্লিনজার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে ত্বকে ইরিটেশন এবং ন্যাচারাল ব্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্কিন যত ম্যাচিউর হতে থাকে, তত ময়েশ্চার কমতে থাকে, এতে স্কিন শুষ্ক হয়ে যায়। একটি জেন্টল, নারিশিং ক্লিনজার স্কিনের ময়েশ্চার ধরে রাখে।

২) টোনার অ্যাপ্লাই করুন

ক্লিনজিং এর পর স্কিনের পিএইচ লেভেল কমে যায়। এই পিএইচ লেভেল ব্যালেন্স এর কাজটি করে টোনার। তাছাড়া অন্যান্য স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যেন স্কিনে ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হয় সেজন্য স্কিনকে প্রিপেয়ার করে টোনার। টোনারের আরও কয়েকটি বেনিফিট হচ্ছে-

  • স্কিনের ব্যারিয়ার ও টেক্সচার ঠিক রাখে
  • রাফনেস কমায়
  • ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে
  • পোরস টাইট করে

৩) নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করুন

ত্বকের জন্য এক্সফোলিয়েশনের বেশ উপকারিতা রয়েছে। এটা ডেড স্কিন সেলস রিমুভ করে, পোরস ক্লিয়ার রাখে, ফ্রেশ ও গ্লোয়ি স্কিন প্রমোট করে। এজিং স্কিনে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যেন ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হয় সেজন্যও স্কিনকে হেল্প করে। সপ্তাহে অন্তত একদিন এক্সফোলিয়েশন করা ভালো।

৪) টার্গেটেড ফেসিয়াল সিরাম অ্যাপ্লাই করুন

অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন এ সিরাম

স্কিন ক্লিনজিং ও টোনিং এর পর ফেসিয়াল সিরাম অ্যাপ্লাই করুন। স্কিনে যদি কোনো কনসার্ন থাকে তাহলে সেই অনুযায়ী সিরাম অ্যাপ্লাই করলে বেশি বেনিফিট পাওয়া যাবে। কনসার্ন অনুযায়ী আমি কয়েকটি সিরাম সাজেস্ট করছি। এখান থেকে আপনার প্রয়োজনীয় সিরামটি আপনি চুজ করতে পারেন-

Skin’O Advanced Brightening Serum
  • ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে
  • ডিসকালারেশন রিডিউস করে এবং স্কিনটোন ইভেন করে
  • ডার্ক স্পটস ও একনে মার্ক কমায়
  • সাইনস অফ এজিং ও হাইপারপিগমেন্টেশন কমায়
Skin’O Acne + Spot Treatment Serum
  • একনে রিডিউস করতে ইফেক্টিভলি কাজ করে
  • একনে স্পট ফেইড করে স্কিন টেক্সচার স্মুথ করে
  • অয়েল প্রোডাকশন কন্ট্রোল করে
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
  • ব্লেমিশ ও ফাইন লাইনস কমায়
The Ordinary Niacinamide 10% Plus Zinc 1%
  • পোরস মিনিমাইজ করে
  • সিবাম প্রোডাকশন কন্ট্রোল করে
  • স্কিনের ব্লেমিশ কমায়

৫) আই ক্রিম ইউজ করুন

আই ক্রিম

বয়সের সাথে সাথে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়তে থাকে। এই সমস্যা কমাতে আই ক্রিম ব্যবহার করা জরুরি। সকালে ও রাতে চোখের নিচে আই ক্রিম নিয়ে জেন্টলি ম্যাসাজ করুন যতক্ষণ না ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হয়ে যায়।

৬) ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন

ইয়াংগার লুকিং স্কিন পাওয়ার জন্য ত্বক হাইড্রেটেড রাখা জরুরি। বয়সের সাথে সাথে সিবাম প্রোডাকশন কমতে থাকে এবং ফাইন লাইনস ও রিংকেলস দেখা দেয়। ত্বকের ময়েশ্চার ফিরে এলে এই স্কিন কনসার্নগুলোর সাথে ফাইট করতে পারবে এবং এগুলোর ভিজিবিলিটি কমাবে। ময়েশ্চারাইজার কেনার আগে সেগুলোতে পেপটাইড, রেটিনল, নিয়াসিনামাইড, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড আছে কিনা দেখে নিন। এই উপাদানগুলো ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে খুবই কার্যকরী।

৭) ডাবল ক্লিনজিং করুন

অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন এ ডাবল ক্লিনজিং স্টেপটি অবশ্যই অ্যাড করতে হবে। সারাদিন পর বাড়িতে ফিরে রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে ভালোভাবে। মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে স্কিন ক্লিন করে, ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজিং করতে হবে। নইলে ডার্ট, পল্যুটেন্ট, সানস্ক্রিন, মেকআপ পার্টিকেলস জমে একনে বা পিম্পল দেখা দিতে পারে।

৮) ফেইস মাস্ক অ্যাপ্লাই করুন

ত্বকে যখন ময়েশ্চার বুস্ট করার প্রয়োজন হয় তখন ফেইস মাস্ক খুব ভালো একটি চয়েস হতে পারে। স্কিনের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখতে এটি খুবই কার্যকর। রাতের বেলা স্লিপিং মাস্কও অ্যাপ্লাই করতে পারেন।

৯) সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি এ ও ইউভি বি রশ্মি ত্বকের বেশ ক্ষতি করে। যার কারণে রিংকেলস, ফাইন লাইনস, স্যাগিং, এইজ স্পটস দেখা যায়। এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এসপিএফ ৫০ প্লাস সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, এতে সান প্রোটেকশন বেশি পাওয়া যাবে। সেই সাথে ৩/৪ ঘন্টা পরপর অবশ্যই রি অ্যাপ্লাই করতে হবে।

সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই

অ্যান্টি রিংকেল টিপস

এজিং সাইনস এর ভিজিবিলিটি যেন কম হয় সেজন্য জেনারেল কয়েকটি অ্যান্টি রিংকেল টিপস রয়েছে। এগুলো রুটিনে ইনক্লুড করলে বেনিফিট বেশি পাওয়া যাবে।

পর্যাপ্ত ঘুম

বিউটি স্লিপ স্কিনের জন্য কেন জরুরি জানেন? কারণ স্কিন রাতের বেলা নিজে নিজে রিপেয়ার হয় দিনের তুলনায়। তাই রাতের বেলা অন্তত ৭ ঘন্টা ঘুমানো জরুরি। এতে রিংকেলস কম ভিজিবল হবে।

পানি পান

স্কিন হাইড্রেটেড রাখার জন্য শুধু ক্রিম আর সিরামই যথেষ্ট নয়। এজন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। উজ্জ্বল ও ইয়াংগার লুক পাওয়ার জন্য দিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করুন।

স্ট্রেস কমান

স্ট্রেস যত কম হবে তত ফাইন লাইনস ও রিংকেলস হওয়ার চান্স কমবে। এজন্য হালকা ব্যায়াম, মেডিটেশন বা ইয়োগা করতে পারেন।

মেডিটেশন

বয়স বাড়লে এজিং সাইনস হবে এই চিন্তায় বসে না থেকে আগে থেকেই অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন ফলো করা শুরু করুন। তাহলে বয়সের ছাপ পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন চারদিকে থেকে। চারদিকে’র দুটি আউটলেট রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়াতে আল জয়নাল ট্রেড সেন্টারে। ফিজিক্যালি কিনতে চাইলে এই দুটি আউটলেট ঘুরে আসতে পারেন। আর ঘরে বসে প্রোডাক্ট হাতে পেতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন চারদিকে’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপে।

ছবি – চারদিকে, সাটারস্টক

0 I like it
0 I don't like it