অফিস এটিকেট | প্রফেশনাল লাইফে মেনে চলা উচিত যে বিষয়গুলো  

office etiquette 1

একটি অফিসে অনেক ধরনের মানুষের সাথে কাজ করতে হয়। প্রতিটি মানুষের আলাদা স্বত্তা আছে। আর সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করতে গেলে কখনো কখনো কনফ্লিক্ট হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই কনফ্লিক্ট যদি বেড়ে যায়, তখন নিজের উপর যেমন প্রভাব পড়ে, তেমনই প্রতিষ্ঠানের উপরও প্রভাব পড়ে। তাই অফিসে সবার সাথে মিলেমিশেই যেহেতু কাজ করতে হবে, তাই সবার আগে মেনে চলতে হবে কিছু অফিস এটিকেট। এই এটিকেট কী এবং প্রফেশনাল লাইফে কেন এটি মেনে চলা প্রয়োজন তা নিয়েই আজ বিস্তারিত জানাবো আপনাদের।

অফিস এটিকেট কী?

এটিকেট এর বাংলা শব্দ শিষ্টাচার। অফিস এটিকেট এর অর্থ হচ্ছে অফিসের শিষ্টাচার। আমরা যখন এমন কোনো ব্যক্তিকে দেখি যিনি বেশ নম্র, ভদ্র, মার্জিত ও সুন্দর আচরণ করছেন, সবার সাথে সুন্দর করে কথা বলছেন, তখন আমরা বলি তার শিষ্টাচার বেশ ভালো। ঠিক একইভাবে ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি কর্মজীবনেও এই এটিকেট বা শিষ্টাচারের প্রয়োজন রয়েছে। যা মেনে চললে কর্মজীবনে সফল হওয়া আপনার জন্য সহজ হবে। অফিস এটিকেট হচ্ছে কর্মীদের জন্য অলিখিত এমন কিছু নিয়ম যা প্রফেশনাল লাইফে মেনে চলা জরুরি। একেক অফিসের এটিকেট একেক রকম হলেও, নির্দিষ্ট কিছু এটিকেট আছে, যেগুলো সাধারণত সব অফিসেই থাকে। এগুলো মেনে চলার কারণে কলিগ ও ক্লায়েন্টদের সাথে সম্পর্ক ভালো হয় এবং কর্মীরাও ক্যারিয়ারে অনেকটা পথ এগিয়ে থাকে।

প্রফেশনাল লাইফে যে এটিকেটগুলো মেনে চলতে হবে

১) কুশল বিনিময় করুন

অফিস এটিকেট

প্রতিদিন অফিসে এসে যে মানুষগুলোর সাথে কথা হচ্ছে, দেখা হচ্ছে তাদের সাথে দিনের শুরুতে কুশল বিনিময় করুন। এতে অপরপক্ষও আপনার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখবেন। হাসিমুখে একে অন্যকে শুভ সকাল বা শুভ বিকেল বলা, সবকিছু কেমন যাচ্ছে এই কথাটুকু জিজ্ঞেস করা – এগুলো অফিস এটিকেটের মধ্যেই পড়ে। দিনের শুরুতে, শেষে বা কাজের মাঝে যদি এই কাজটি করেন, তাহলে দেখবেন অন্যদের সাথে কাটানো দিনটা বেশ ভালো যাবে। সবার সম্পর্কে টুকটাক খোঁজ রাখলে একে অন্যের সাথে সম্পর্কও ভালো থাকে। আপনি যদি ইজি হোন, তাহলে অন্যরাও আপনার সাথে কথা বলতে কমফোর্ট ফিল করবে।

২) সময় মেনে চলুন

সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আর কেউই ভাবতে চায় না যে তাদের চেয়ে আপনার সময়ের দাম বেশি। সবার কাজই সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অফিসে সময়মতো আসা, ক্লায়েন্টের সাথে সময়মতো দেখা করা, ডেডলাইন অনুযায়ী কাজ করা – এসব মেনে চললে বোঝা যায় আপনি কাজের বিষয়ে সিরিয়াস এবং অন্যের সময়কেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। যদি কোনো কাজের ডেডলাইন মিস হয় তাহলে পুরো টিমকে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। ক্লায়েন্টের কাজে দেরি হলে তারা ভাবতে পারে আপনি শুধু টাকাই নিচ্ছেন, সময় নিয়ে ভাবছেন না। আর এতে আপনার ইম্প্রেশনই খারাপ হবে। যদি কোনো কারণে কাজের দেরি হয়, তাহলে অপর পক্ষকে জানিয়ে রাখুন এবং কাজের শিডিউল তৈরি করে নিন। অফিস এটিকেট এর মধ্যে সময়ানুবর্তী হওয়া অন্যতম জরুরি একটি বিষয়।

৩) গসিপ করবেন না

কর্মজীবনে গসিপিং এর অভাব নেই। স্বাভাবিকভাবেই অফিসে কাজের লোড বেশি থাকে, তাই কাজ শেষে কার সাথে কতটুকু কী শেয়ার করছেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। আপনি মানুষের সাথে কেমন আচরণ করছেন তা দেখলেই বোঝা যায় আপনি কেমন মানুষ। আপনি যদি অন্য সহকর্মীদের নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেন, তাহলে আপনাকেও সবাই নেতিবাচক ব্যক্তিত্বের বলেই ধরে নিবে। তাছাড়া অন্যরা আপনাকে পরচর্চা করতে দেখলে কোনো বিষয়ে আপনাকে বিশ্বাসও করতে পারবে না। তারা ধরেই নিবে আপনি তাদের ব্যাপারে এভাবেই কথা বলেন।অফিস এটিকেট - গসিপিং করবেন না

৪) ড্রেস কোড মেনে চলুন

সব অফিসেরই কিছু ড্রেস কোড থাকে। আপনার অফিসের ড্রেস কোড কী, সেটা নিশ্চয়ই চাকরিতে জয়েন করার সময়ই জেনেছেন। তাই সেভাবেই পোশাক বাছাই করুন। সেই সাথে খেয়াল রাখবেন, যে পোশাকটি বেছে নিচ্ছেন তা যেন অবশ্যই মার্জিত, মানানসই ও আরামদায়ক হয়। অতিরিক্ত নকশা করা কাপড়, অনেক গহনা বা কড়া পারফিউম ব্যবহার করা উচিত নয়। এক কথায়, সবার সামনে যেন আপনাকে দৃষ্টিকটু না লাগে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।

৫) সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন

আপনি যদি অফিসে অপরিষ্কার পোশাক পরে যান, যদি শরীর থেকে ব্যাড স্মেল আসে, মোজা বা জুতা থেকে যদি গন্ধ বের হয় তাহলে আপনাকে কেউ পছন্দ করবে না এটাই স্বাভাবিক। নিজে অপরিষ্কার থাকা বা পোশাক পরিষ্কার না থাকলে অফিস এটিকেট সঠিকভাবে মানা হয় না। তাই সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে গোসল করে বের হোন। যে পোশাকটি পরছেন সেটি ধোয়া কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। জুতা বা মোজা সবসময় পরিষ্কার রাখুন।

৬) সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন

কাজ করতে যেয়ে অজস্র জিনিস মাথায় চলে আসে। সময়মত কাজ শেষ হবে কিনা, কীভাবে শেষ হবে, পরবর্তী কাজ করতে যেয়ে আরও ঝামেলা হবে কিনা এমন নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। স্বাভাবিকভাবেই সেগুলো বেশ চাপ সৃষ্টি করে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে কলিগ বা বসের সাথে কথা বলুন। এমনও হতে পারে, আপনি বিষয়টিকে যতটা জটিল ভাবছেন এটা হয়ত ততটা জটিলই নয়। আরেকজনের পরামর্শে এমন কিছু দিক সামনে চলে এলো যেটা আপনি আগে খেয়ালই করেননি। তাই মনের ভেতর জমিয়ে না রেখে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন।

৭) কাজের জায়গা পরিষ্কার রাখুনঅফিস ডেস্ক

অফিসে আপনি যে ডেস্কে বসে কাজ করছেন সেটি সব সময় পরিষ্কার রাখুন। কফি খেয়ে কাপ সেখানেই রেখে দেয়া, স্ন্যাকসের প্যাকেট বা অপ্রয়োজনীয় কাগজ না সরানো – এগুলো দেখতে বেশ দৃষ্টিকটু লাগে। কারো অপেক্ষায় না থেকে এগুলো নিজেই সরিয়ে ফেলুন। ওয়ার্কস্পেস সবসময় পরিচ্ছন্ন ও গোছানো রাখা প্রফেশনালিজমেরই একটি অংশ।

৮) উচ্চ শব্দে কথা বলবেন না

অফিসে অনেক মানুষ একসাথে কাজ করেন। কাজের মাঝখানে যদি আপনি অন্য কারো সাথে উচ্চ শব্দে কথা বলেন, তাহলে অন্য কর্মীরা বিরক্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি থাকলে নরমাল টোনে কথা বলুন। যদি দূরত্ব কিছুটা দূরে হয় তাহলে নিজ চেয়ার থেকে উঠে যেয়ে কথা বলুন। অফিসে প্রবেশ করার সাথে সাথেই মোবাইল ফোন সাইলেন্ট করে দিন। আপনার ফোনে আসা নোটিফিকেশন, কল রিং এর কারণে সহকর্মীরা বিরক্ত হতে পারে। তাছাড়া এতে কাজেরও ব্যাঘাত হয়। তাই কাজের সময় বা মিটিং এ মোবাইল সাইলেন্ট বা ভাইব্রেটিং মোডে রাখুন। ল্যাপটপ বা পিসিতে উচ্চ সাউন্ডে গান বাজাবেন না বা ভিডিও দেখবেন না। যদি দেখতে বা শুনতেই হয় তাহলে ইয়ারফোন ব্যবহার করুন।

৯) অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন

অফিসে কাজকর্ম করা মানে নিজেকে গুটিয়ে রাখা বা খুব বেশি রাফ এন্ড টাফ হওয়া না। নিজের কাজের পাশাপাশি অন্যকে যতটা সম্ভব সাহায্য করা, টিম ওয়ার্ক ব্যালান্স করা, কোনো সহকর্মীর সমস্যা হলে তাকে সাহায্য করা এগুলোও অফিস এটিকেট এর একটি অংশ। এতে আপনি যে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল তা বোঝা যায়।

১০) সব ধরনের কমিউনিকেশনে প্রফেশনাল থাকুন

ফোনে, ই-মেইলে বা সরাসরি কথা বলা – সব ধরনের কমিউনিকেশনে প্রফেশনাল থাকা জরুরি। যখন কাউকে ই-মেইল করবেন, তখন মনে রাখতে হবে, আপনার কন্ঠ বা ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন সেখানে নেই। তাই যে ম্যাসেজটাই পাঠাচ্ছেন সেটা যেন ছোট ও ফ্রেন্ডলি হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এমন কিছু পাঠাবেন না যা আপনি মুখে বলতে পারছেন না কিন্তু মেইলে জানাচ্ছেন। সেই সাথে ফোনে কথা বলার সময়ও আওয়াজ স্বাভাবিক রেখে কথা বলবেন। উচ্চ শব্দে বা চেঁচামেচি করে কথা বললে আপনার এটিকেটই নষ্ট হবে। সামনাসামনি কথা বলার সময়ও মার্জিত ভাব বজায় রাখুন।অফিস এটিকেট

অফিস এটিকেট নিয়ে আমরা কিছু কিছু বিষয় জানলেও সেভাবে অনেকেই মানি না। অথচ প্রফেশনাল লাইফে সাকসেস পেতে চাইলে এই এটিকেট ফলো করা জরুরি। আপনার হয়ত মনে হতে পারে এত এটিকেট একসাথে কি মানা সম্ভব? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ সম্ভব। আপনি যখন থেকে কর্মজীবনে প্রবেশ করবেন তখন থেকেই এটিকেট ফলো করা জরুরি। নইলে অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব হবে না। আর নিজের ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে চাইলেও এটিকেট অবশ্যই ফলো করতে হবে।

ছবি – সাটারস্টক

0 I like it
0 I don't like it