ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে সজীব রাখবে ভিটামিন সি যুক্ত ফেইসওয়াশ

8

‘বাইরে বের হলেই কিছুক্ষণের মধ্যে ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে ধুলোবালি, ঘাম থেকে মুখের ত্বক একদম রেহাই পাচ্ছে না। এদিকে মুখে কিছু লাগালেও তৈলাক্ততার কারণে বেশিক্ষণ থাকছে না। বারবার মুখ মুছে ফেলতে হচ্ছে।’ সমস্যাটি কি পরিচিত লাগছে? এই সমস্যায় যেমন আমিও পড়েছিলাম, ঠিক আপনাদের মধ্যেও অনেকেই আছেন যারা এই সমস্যার ভুক্তভোগী। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কী? সমাধান হচ্ছে ভিটামিন সি যুক্ত দারুণ একটি ফেইসওয়াশ। ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে সজীবতা ধরে রাখতে এই ফেইসওয়াশটি খুবই হেল্পফুল। আজ এটির রিভিউ জানাবো আপনাদের।

ত্বক কেন তৈলাক্ত হয়?

কখনো কি ভেবে দেখেছেন আমাদের ত্বক কেন তৈলাক্ত হয়? আমাদের ত্বকে সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড নামক ক্ষুদ্র গ্রন্থি থেকে ন্যাচারালি সিবাম প্রোডিউস হয়। ত্বক ময়েশ্চারাইজড ও প্রোটেক্টেড থাকে এই সিবামের কারণেই। অ্যান্ড্রোজেন হরমোন সিবাম প্রোডিউস করার জন্য এই গ্ল্যান্ডকে সিগন্যাল পাঠায়। ফেইসের টি জোন অর্থাৎ ফোরহেড, নোজ ও চিন এরিয়াতে এই গ্ল্যান্ডগুলো বেশি অ্যাকটিভ থাকে বলে অয়েল বেশি প্রোডিউস হয়। সিবামের মেইন কাজ হচ্ছে আমাদের ত্বকে প্রোটেক্টিভ লেয়ার তৈরি করা, যার কারণে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু আক্রমণ করতে না পারে। কিন্তু এটিরও আবার লিমিটেশন আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সিবাম নরমালি প্রোডিউস হয়, ততক্ষণ সিবামের উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু বাড়তি সিবাম যখন প্রোডাকশন হবে, তখন ত্বকের তৈলাক্ততা বেড়ে যাবে। আর এ থেকে দেখা দিবে ক্লগড পোরস, একনে ইত্যাদি। এজন্য অয়েল কন্ট্রোল করার জন্য সিবাম প্রোডিউস কন্ট্রোল করা জরুরি।

ত্বকের তৈলাক্ততা

স্কিনো ভিটামিন সি অয়েল কন্ট্রোল ফেইসওয়াশ

ত্বক কেন তৈলাক্ত হয় সে সম্পর্কে তো জানা হলো। এখন আপনার ত্বকে যখন অতিরিক্ত অয়েল প্রোডিউস হচ্ছে, তখন সেটা কীভাবে কন্ট্রোল করবেন? এই সমস্যার জন্য আমি বেছে নিয়েছিলাম স্কিনো ভিটামিন সি অয়েল কন্ট্রোল ফেইসওয়াশ (SKINO VITAMIN C OIL CONTROL FACEWASH (LEMON))। ত্বকের তৈলাক্ততা কমিয়ে কীভাবে সজীবতা ফেরানো যায় তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে চারদিকে’র ওয়েবসাইট ঘুরে এই ফেইসওয়াশটির খোঁজ পেয়ে যাই। এটি ব্যবহারে কী কী বেনিফিট পেয়েছি সে সম্পর্কে জানাচ্ছি এখন।

মেইন ইনগ্রেডিয়েন্ট

যে কোনো প্রোডাক্ট কেনার আগে তার ইনগ্রেডিয়েন্ট সম্পর্কে জানা জরুরি। এই ফেইসওয়াশের মেইন ইনগ্রেডিয়েন্ট হচ্ছে লেমন এক্সট্র্যাক্ট ও স্যালিসাইলিক অ্যাসিড। আসুন এই দুটোর উপকারিতা জেনে নেই।

লেমন এক্সট্র্যাক্ট

১) ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়

লেবুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি আছে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও সুস্থ ত্বক পেতে লেবু খুবই কার্যকর। ফ্রি রেডিক্যালের কারণে আমাদের স্কিন দ্রুত ড্যামেজ হয় এবং আর্লি এজিং দেখা দেয়। লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই ফ্রি রেডিক্যালের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাছাড়া হাইপারপিগমেন্টেশন, আনইভেন স্কিন টোন ইভেন করতে, স্কিনকে আরও রেডিয়েন্ট করে তুলতে লেবুর জুড়ি নেই।

২) এক্সেস অয়েল রিমুভ করে

লেবুতে থাকা অ্যাসট্রিনজেন্ট এর কারণে একে ন্যাচারাল স্কিন টোনার বলা হয়। এতে আরও আছে সাইট্রিক অ্যাসিড, যা পোরস মিনিমাইজ করে, একনে ব্রেকআউট কমায়, ডেড স্কিন সেলস রিমুভ করে, এক্সেস অয়েল কন্ট্রোল করে।

ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে লেমন

৩) স্কিন এক্সফোলিয়েট করে

লেমনে আছে এক্সফোলিয়েটিং প্রোপার্টিজ, যা প্রাণহীন ও নিষ্প্রাণ ত্বকে সজীবতা ফেরায়। ডেড স্কিন সেলস ডিজলভ করে সেল টার্নওভার করে অর্থাৎ নতুন সেল তৈরি হয়। এই এক্সফোলিয়েশন ত্বকের জন্য জরুরি। ভিটামিন সি অর্থাৎ লেমনযুক্ত ফেইসওয়াশ নিয়মিত ব্যবহারে ফাইন লাইনস, রিংকেলস, ব্লেমিশ ধীরে ধিরে ফেইড হতে থাকে।

৪) একনে কমায়

লেবুতে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রোপার্টিজ, যা একনে ও ব্লেমিশ এর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড একনে কজিং ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, অ্যাসট্রিনজেন্ট প্রোপার্টিজ পিম্পল ড্রাই করে দেয়।

৫) স্কিনের হাইড্রেশন ধরে রাখে

তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের প্রথম শর্তই হচ্ছে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা। আর ময়েশ্চার লেভেল ধরে রাখতে লেমনের জুড়ি নেই। এতে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়। লেবুতে আরও আছে হাইড্রেটিং প্রোপার্টিজ, যা ড্রাই ও ফ্লেকি স্কিনকে করে তোলে হাইড্রেটেড ও স্মুথ।

স্যালিসাইলিক অ্যাসিড

এই উপাদানটি মূলত একনেকে টার্গেট করে কাজ করে। যাদের একনে প্রবলেম আছে তাদের জন্য এই উপকরণটি খুবই উপকারি। এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজের কারণে একনে দ্রুত কমে যায় এবং স্কিনে সুদিং ফিল দেয়। তাছাড়া স্কিনও এক্সফোলিয়েট হয় বলে স্কিন থাকে সফট। বাইরের ধুলোবালি, মেকআপ পার্টিকেলস, ইমপিওরিটিস ভালোভাবে ক্লিন না হলে স্কিনে জমে পোরস ক্লগ হয়ে যেতে পারে। এতে একনে প্রবলেম আরও বাড়তে পারে। পোরস আনক্লগ করে স্কিনকে ফ্রেশ রাখতে হেল্প করে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড

ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে ফ্রেশ স্কিন পাবেন যেভাবে

এক নজরে ফেইসওয়াশটির কার্যকারিতা

স্কিনো ভিটামিন সি অয়েল কন্ট্রোল ফেইসওয়াশে থাকা ইনগ্রেডিয়েন্টস সম্পর্কে তো জানা হলো। এবার চলুন এক নজরে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে জানা যাক-

  • ডেড সেলস রিমুভ করে দেয় ফ্রেশ, উজ্জ্বল ত্বক
  • অয়েল কন্ট্রোল করে
  • একনে থেকে সুরক্ষা দেয়
  • রিফ্রেশিং ফ্রেগ্রেন্সযুক্ত
  • নারী-পুরুষ সবাই ব্যবহার করতে পারবে
  • অয়েলি স্কিনের জন্য স্যুইটেবল হলেও সব ধরনের স্কিনেই ব্যবহার করা যাবে

স্মেল ও টেক্সচার

শুরুতে ফেইসওয়াশটির প্যাকেজিং নিয়ে বলি। এই ব্র্যান্ডের সব প্রোডাক্টের প্যাকেজিংই আমার ভালো লাগে। সবগুলোর ডিজাইনই মিনিমাল। দেখতে বেশ সুদিং লাগে। এই প্রোডাক্টটিও ঠিক তেমন। হালকা হলুদ ও সাদার মিশ্রণে টিউবটি দেখতে বেশ ভালো লাগে। ১১০ মি.লি. এর টিউবে পাওয়া যাচ্ছে। টেক্সচার জেল টাইপ। এর ফ্রেগ্রেন্স বেশ রিফ্রেশিং। ব্যবহারের পর ফেইসে সুদিং ফিল হয়।

ব্যবহারের নিয়ম

  • অল্প পরিমাণ স্কুইজ করে হাতের তালুতে নিয়ে নিন।
  • আলতো করে ঘষে মুখে লাগিয়ে নিন।
  • জেন্টলি ম্যাসাজ করুন।
  • এবার পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন।

স্কিনো লেমন ফেইসওয়াশ

আমার অভিজ্ঞতা

ত্বকের তৈলাক্ততা নিয়ে মাঝে মাঝে আমাকে বেশ বিড়ম্বনাতেই পড়তে হতো। বাইরে বের হলেই তেল চিটচিটে ভাব, সারাদিন ময়লা, ঘাম জমে চেহারার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যেত। বাসায় ফিরে মনটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। সেই সাথে ত্বক প্রাণহীন হয়ে যাওয়া, একনে প্রবলেম বাড়তে থাকার মতো সমস্যা তো ছিলই। এই ফেইসওয়াশটা ব্যবহারের পর থেকে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। আগের মতো অয়েলি ভাব নেই। ত্বক আগের চেয়ে বেশ উজ্জ্বল হয়েছে, সজীবতাও ফিরেছে, ত্বক মসৃণ ও কোমল হয়েছে। একনে স্পটস ফেইড হওয়ার সাথে সাথে নতুন একনে ব্রেকআউটও হয়নি। তাই আমার তো এটি খুবই ভালো লেগেছে। এখন তো স্কিনকেয়ার রুটিনে এটি আমি অ্যাড করে নিয়েছি।

আপনাদের কেন সাজেস্ট করছি?

এই ফেইসওয়াশটি অয়েলি স্কিনের জন্য স্যুইটেবল হলেও সব ধরনের ত্বকেই ব্যবহার করা যাবে। যারা ভাবছেন স্কিনের রিফ্রেশমেন্টের জন্য কোনো ফেইসওয়াশ চুজ করবেন, তারা নির্দ্বিধায় এটি বেছে নিতে পারেন। লেবুর গুণাগুণ আপনার ত্বকে দিবে এক্সট্রা বেনিফিট। অনেকেই আছেন যারা বাজেট ফ্রেন্ডলি ফেইসওয়াশ খোঁজেন। তারা অনায়াসেই এটি বেছে নিতে পারেন। বাজেটের মধ্যে এই ফেইসওয়াশটি মোটামুটি সবগুলো ক্রাইটেরিয়া ফিলআপ করবে।

স্কিনো ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টে হার্মফুল ইনগ্রেডিয়েন্ট নেই বলে এগুলো ব্যবহারে ত্বক থাকে নিরাপদ। এর আগেও আমি এই ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার করেছি। ভরসা ছিল এটাও খারাপ হবে না। সত্যি বলতে, আমার সিদ্ধান্ত একদম ঠিক ছিল। ব্যবহার করে আমি উপকার পেয়েছি বলেই আপনাদের সাজেস্ট করছি।

স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন চারদিকে থেকে। চারদিকে’র দুটি আউটলেট রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়াতে আল জয়নাল ট্রেড সেন্টারে। ফিজিক্যালি কিনতে চাইলে এই দুটি আউটলেট ঘুরে আসতে পারেন। আর ঘরে বসে প্রোডাক্ট হাতে পেতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন চারদিকে’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপে।

ছবি – চারদিকে, সাটারস্টক

0 I like it
0 I don't like it