পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নারীদের ভোগান্তির শেষ কোথায়?

পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নারীদের ভোগান্তির শেষ কোথায়?

অফিস শেষে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অবশেষে বাসে উঠতে পারলো আফসানা। সন্ধ্যার এই সময়টাতে বাসে এত ভিড় থাকে যে বলার মতো নয়। তাই তাকে বাসে অন্যদের সাথে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েই গন্তব্যস্থলে যেতে হচ্ছে। হঠাৎই কোমরে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ টের পায় আফসানা। সে বুঝতে পারে তার চিৎকার করে সাহায্য চাওয়া উচিৎ। কিন্তু চিৎকার তো দূরে থাক, ভয়ে আফসানা যেন ফ্রিজ হয়ে যায়। এটা কিন্তু তার সাথে প্রথমবার ঘটেনি। বরং পাবলিক ট্রান্সপোর্টে আসা-যাওয়া করার সময় অনেকবারই সে এমন ঘটনার শিকার হয়েছে।

নারীরা মূলত কী কী স্ট্রাগল করেন?
যেসব নারী নিজেদের গন্তব্যস্থলে যেতে নিয়মিত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেন, স্ট্রাগল যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করার সময় একজন নারী যে মূল সমস্যাটা ফেইস করে থাকেন সেটি হলো সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট।

ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা হোক কিংবা সিটে বসে থাকা, বাসে ওঠার সময় হোক কিংবা বাস থেকে নামার সময় – এমন কোনো সময় নেই যখন একজন নারী সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্টর শিকার হন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাশের সিটে বসে থাকা কিংবা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ প্যাসেঞ্জার অথবা বাসের কন্ডাক্টর এ কাজটা করে থাকে। এমনকি দিনের আলোতেও নারীরা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সেক্সুয়ালি হ্যারাজড হন।

যখন একজন নারীকে সবার উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সেক্সুয়ালি হ্যারাজ করা হয়, তখন বেশিরভাগ কেইসেই তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না৷ এখানে তারা যে প্রতিবাদ করতে চান না ব্যাপারটা এমন নয়। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে হ্যারাজমেন্টর শিকার হয়েছেন এমন কিছু নারীর সাথে কথা বললে জানা যায়, তাদের সাথে যখন এ ঘটনাগুলো ঘটে, তখন তারা নাকি ঘটনার আকস্মিকতায় ঠিকমতো চিন্তা করতে পারেন না। তখন তারা ভয়ে এবং বাসের অন্য যাত্রীরা সাপোর্ট করবেনা এ দুটো বিষয় চিন্তা করেই নিজেদের মুখ বন্ধ রাখেন।

তবে সব নারী কিন্তু এমন নন। এমন অনেক নারী রয়েছেন যারা হ্যারাজড হওয়ার পর সাহস করে প্রতিবাদ করেন। তবে প্রতিবাদ করা হলেও বাসের অধিকাংশ যাত্রী হয় নির্লিপ্ত থাকেন অথবা যে হ্যারাজ করেছে তার সাপোর্টে কথা বলেন। নারীদের তো এটাও শুনতে হয়, “অল্পতেই এত গায়ে লাগলে বাসে ওঠার দরকার কী?”এসব দেখার পর যারা হ্যারাজ করে তারা আরো সাহস পেয়ে যায় এবং তারা ক্রমাগতই এই নোংরা কাজটা করতে থাকে।

শুধু তাই নয়, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নারীরা আরো বিভিন্ন প্রবলেম ফেইস করেন। যেমনঃ তারা যখন বাসে উঠতে যান, বাস ড্রাইভার ব্রেক করে না। ফলে অনেকেই উঠতে গিয়ে ব্যথা পান। যদি দুই একজন নারী এটা নিয়ে কোন কমপ্লেইন করতে যান তখন তাদেরকে শুনতে হয় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নাকি নারীদের জন্য নয়। এছাড়াও বাসের কন্ডাক্টর ও হেলপারদের দুর্ব্যবহার আর হুট করে ব্যাগ ছিনতাই হয়ে যাওয়ার ভয়তো রয়েছেই। মেইনলি এসব কারণেই নারীরা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করাকে একটা যুদ্ধের সাথে কম্পেয়ার করেন।

পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলো নারীদের জন্য নিরাপদ করতে কী কী করা যেতে পারে?
পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করার সময় নারীরা হ্যারাজড হলে বা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হলে যে ট্রমাটিক এক্সপেরিয়েন্সের ভেতর দিয়ে যান, সেটা থেকে বের হতে তাদের অনেক সময় লাগে। তাই প্রতিটা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নারীদের জন্য নিরাপদ করে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু কিভাবে? নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ সিসিটিভি ফুটেজগুলো যেন প্রোপারলি মনিটরিং করা হয় সে বিষয়টাও নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও বাস কোম্পানিগুলো থেকে প্রতিটা কোম্পানির বাস যেন ট্র‍্যাক করা হয় সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি নারীদের জন্য আলাদা বাসের সংখ্যা বাড়ানো যায়। বর্তমানে দোলনচাঁপা নামের একটা বাস সার্ভিস রয়েছে যেখানে কেবলমাত্র নারীরাই যাতায়াত করতে পারেন।

তবে দুঃখের বিষয় এই যে, এই বাসের সংখ্যা এখনো অনেক কম। যদি বিভিন্ন রুটে এমন বাস সার্ভিস চালু করা যায়, তাহলে নারীরা আগের চাইতে তুলনামূলক অনেক নিরাপদে নিজেদের গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবেন।

পরিশেষে বলা যায়, পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলো নারীদের জন্য নিরাপদ করে তুলতে প্রয়োজন সম্মিলিত ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা। যদি এখন থেকেই এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে কাজ করা শুরু করা যায়, তাহলে আশা করা যায় খুব দ্রুতই পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোতে নারীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন।

0 I like it
0 I don't like it

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.