প্রেগন্যান্সি প্রতিটি নারীর জীবনে সব থেকে গুরুত্বপুর্ণ অধ্যায়। এ সময় গর্ভের বাচ্চার পরিপুর্ণ বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য গর্ভবতী মাকে তুলনামুলকভাবে অনেক বেশি খাবার খেতে হয় এবং বিশ্রামে রাখা হয়; তাই খুব সহজেই ওজন বেড়ে যায়। প্রেগন্যান্সির সময় ওজন বৃদ্ধিটা তেমন কোন সমস্যা হিসেবে ধরা হয় না। কিন্তু সমস্যাটা তখনই হয় যখন প্রেগন্যান্সির পরও এই ওজন বাড়ার ধারাবাহিকতা অটুট থাকে।
অধিকাংশ নারীই তখন এই বাড়তি ওজন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায়। এসময় সমাধান হিসেবে অনেকেই ডায়েট করার সিদ্ধান্ত নেন, যা একেবারেই অনুচিত। কারণ এই ডায়েট ব্রেস্টফিডিং বেবির জন্য হতে পারে মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ। তাহলে উপায়? ওজন কমবে কিন্তু বেবির জন্য পুষ্টি ঘাটতি হবে না এরকম কিছু টিপস নিয়েই আমাদের আজকের এই ব্লগ।
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ওজন বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলো কি?
চিকিৎসক এবং গবেষকদের মতে, প্রেগন্যান্ট অবস্থায় একজন সুস্থ নারীর ওজন ১১.৫-১৮ কিলোগ্রাম পর্যন্ত বাড়তে পারে। এটি মোটেও অসুস্থতার কোন লক্ষন নয়। বেবির ওজনের পাশাপাশি আরো কিছু ফ্যক্টর রয়েছে; যা এই বাড়তি ওজনের জন্য দায়ী। নিচে একটি এভারেজ ক্যালকুলেশন দেখানো হল-
১. প্রেগন্যান্সির সময় এমনিওটিক ফ্লুয়েডের পরিমান বেড়ে যায়। ফলে ওজন বাড়ে প্রায় – ০.৯৮ কেজি।
২. প্লাসেন্টা আকারে বড় হয়ে যাওয়ায় ওজন বাড়ে প্রায়- ০.৬৮ কেজি।
৩. হরমোনাল প্রভাবে ব্রেস্ট টিস্যুর বিভাজন বেড়ে যায়। ফলে ব্রেস্টের আকার এবং ওজন দুটোই বৃদ্ধি পায় – ০.৯০ কেজি।
৪. স্বাভাবিকভাবেই জরায়ুর আকার বেড়ে যাওয়ায় ওজন বৃদ্ধি পায় – ০.৯০ কেজি।
৫. মেটাবলিজমের হার কমে যাওয়ায় অতিরিক্ত সঞ্চিত খাবার জমে ওজন বাড়ে – ৩ কেজি বা তারও বেশি।
৬. রক্তের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ওজন বাড়ে – ১.৮০ কেজি।
৭. অন্যান্য তরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ওজন বাড়ে প্রায় – ১.৮০ কেজি।
৮. বাকিটা বেবির ওজন – সাধারনত ২.৫-৩.৫ কেজি হয়ে থাকে।
অধিকাংশ নারীর ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সির পরও এই ওজন তেমন একটা কমতে দেখা যায় না; বরং আনুপাতিক হারে বাড়তেই থাকে। এক্ষেত্রে বাচ্চা জন্মের দুই মাস পর থেকে ওজন নিয়ন্ত্রণ করাটা জরুরি।
প্রেগন্যান্সি পরবর্তী সময়ে মায়ের বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণের কিছু কার্যকরী উপায় –
ডায়েট এড়িয়ে চলা – এ সময় অনেকেই ডায়েট শুরু করে দেন। কিন্তু এতে ব্রেস্ট ফ্রিডিং বেবি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পায় না, যা বাচ্চার বিকাশের পথে প্রধান বাধা। তাই ডায়েটের কথা মাথাতেও আনা যাবে না। এক্ষেত্রে পুষ্টি উপাদান ঠিক রেখে, শুধু ক্যালরির পরিমাণ কমাতে হবে।
কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া – যে সব খাবারে পুষ্টি বেশি কিন্তু ক্যালরি কম সেসব খাবারই পারবে সুস্থতা বজায় রেখে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে। যেমন-
১. ফলমুল: ফল আমাদের ভিটামিন এবং পুষ্টি ঘাটতি পুরণ করে,, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে। ফলে ক্যালরি অনেক কম থাকায় এটি আমাদের ওজন বাড়তে দেয় না। তবে খুব বেশি রসালো ফল যেমন আম, কাঁঠাল, পেপে, লিচু এসব এড়িয়ে চলুন। রসালো ফলে ওজন বাড়ে।
২. সালাদ আইটেম: গাজর, শসা, টমেটো, ব্রকলি, লেবু, এসব কিছুই ভিটামিন সি এর দারুন উৎস। ভিটামিন সি ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে এবং একই সাথে ত্বক সুন্দর করে।
৩. আধা সেদ্ধ সবুজ সবজি: সবুজ শাক, ব্রকলি, মটর শুটি, বরবটি আধা সেদ্ধ অবস্থায় স্যুপ করে খাওয়াটা গর্ভবতী নারীর জন্য ভীষণ উপকারি। এটি একদিকে খিদে মেটায়, অপরদিকে ক্যালরি খুব কম থাকায় একেবারেই ওজন বাড়ায় না।
৪. ডাল: মসুর ডাল, খেসারির ডাল, ছোলার ডালে প্রোটিনের পরিমান প্রায় মাংসের কাছাকাছি। কিন্তু ডালে ক্যালরির পরিমাণ মাংসের চেয়ে কম। তাই ওজন কমাতে প্রোটিনের চাহিদা পুরণে ডাল জাতীয় খাবার খান।
শর্করাজাতীয় খাবার কম খাওয়া – প্রেগন্যান্সির সময় খিদে বাড়ায় অনেকেই প্লেট ভর্তি করে ভাত খেয়ে থাকেন। শর্করা খাবারে ওজন বাড়ানোর ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। শর্করা খুব সহজেই সঞ্চিত হয়ে দ্রুত ওজন বাড়ায়।
প্রোটিন জাতীয় খাবার – অনেকেই ভাবেন মাছ, মাংস খেলেই ওজন বাড়ে। এটা ভুল। প্রোটিন আমাদের ব্রেনের বিকাশে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখে। প্রোটিনের ঘাটতি হলে ব্রেস্ট ফিডিং বেবির মেধার বিকাশ কমে যাবে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকেন, মাছ, দুধ, ডাল খেতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত প্রোটিন এড়িয়ে যাওয়া ভাল। যেমন গরুর মাংস।
দুগ্ধ জাতীয় খাবার কম খাওয়া – দুধ সুষম খাবার; এতে খাদ্যের সব উপাদানই বিদ্যমান। এটি ব্রেস্ট ফিডিং শিশুর বিকাশে খুব উপকারী হলেও দুধে ক্যালরির পরিমান অনেক বেশি। তাই সীমিত পরিমানে দুধ খাওয়া উচিত।
সেদ্ধ বা পোচ ডিম – যেখানে ভাজি ডিমে ক্যালরির পরিমাণ ১৫০ গ্রাম, সেখানে সেদ্ধ বা পোচ ডিমে ক্যালরি ৮০ গ্রাম। তাই ওজন কমাতে ডিম সেদ্ধ খাওয়া উচিত।
চর্বিযুক্ত ও তেল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা – গরুর মাংস, খাসির মাংস, হাঁসের মাংস, মহিষের মাংস এসবে প্রচুর ক্যালরি এবং চর্বি থাকে যা সহজেই ওজন বাড়ায়। তাছাড়া সয়াবিন তেল এবং তেলে ভাজা খাবারে ক্যালরি থাকে অনেক বেশি। তাই ওজন কমাতে এসব এড়িয়ে চলতে হবে। সম্ভব হলে খাবারে অলিভ ওয়েল এবং সরিষা তেল ব্যবহার করতে হবে।
সামুদ্রিক মাছ : কোল্ড ওয়াটার ফিস কিংবা সামুদ্রিক মাছে আয়োডিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যা ব্রেস্ট ফ্রিডিং বেবির ব্রেন এবং নার্ভাস সিস্টেম গঠনে ভুমিকা রাখে।
ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার- ক্যালসিয়াম শিশুর বোন বা হাড় গঠনে সাহায্য করে। আয়রন শিশুর রক্ত কনিকা গঠন করে। পটাশিয়াম পেশি টিস্যুর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। দুধ, সামুদ্রিক মাছ, মুরগি, ছোট মাছ, কচু, কলা, ছোলা, সবুজ সবজি এসবে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি হলেও ক্যালরির পরিমাণ খুব। তাই এটি শিশুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে কিন্তু মা এর ওজন বাড়ায় না। তবে পালংশাক এড়িয়ে চলা উচিত কারণ পালন শাক আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম শোষনে বাধা দেয়।
ফার্স্টফুড, চকলেট, অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা – চকলেট, আইসস্ক্রিম, কোল্ড ড্রিংকস খেতে অনেকেই খুব পছন্দ করে। কিন্তু এসবে রয়েছে হাই সুগার যা খুব দ্রুত ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে। এতে ক্যালরি অনেক কম এবং এটি মানসিক স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
নিয়মিত এক্সারসাইজ করা – এক্সারসাইজ মানেই জিমনেসিয়াম নয়। ঘরে বসেই এক্সারসাইজের মাধ্যমে সহজেই ওজন কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে পেটের চর্বি কমানো, পেশির, ঘাড়ের চর্বি কমানোর সহজ কিছু ব্যায়াম নিয়মিত করে যেতে হবে। তাছাড়া সকাল-বিকাল হাটাহাটি করলে ক্যালরি বার্ন হয়, ফলে ওজন কমে।
ব্রেস্ট ফিডিং চালিয়ে যাওয়া – অনেকেই ফিগার ফিট রাখার জন্য বেবিকে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে চায় না। কিন্তু এতে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নিয়মিত এবং ঘন ঘন ব্রেস্ট ফিডিং যেমন শিশুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তেমন মায়ের ওজন কমাতেও খুব কার্যকারী।
পর্যাপ্ত পানি পান করা – ডিহাইড্রেশন আমাদের মেটাবলিজম হার কমিয়ে দেয়। ফলে সহজেই ওজন বাড়ে। তাই প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করা জরুরি। এতে মেটাবলিজম হার বাড়ে, ফ্যাট কাটে এবং ওজন কমে।
পর্যাপ্ত ঘুম – প্রতিদিন ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। ঘুম কম হলে স্ট্রেস বাড়ে, মেটাবলিজম কমে, এতে ওজন বাড়ে।
পরিমাণে কম কিন্তু ঘন ঘন খাবার খাওয়া – পোস্ট প্রেগন্যান্সির সময়টায় ব্রেস্ট ফিডিং বেবির বৃদ্ধি ও বিকাশ ঠিক রেখে মায়ের ওজন নিয়ন্ত্রণ একটা চ্যলেঞ্জের বিষয়। তাই বেশি ক্যালরি যুক্ত খাবার এড়িয়ে পরিমিত পুষ্টিযুক্ত খাবার পরিমাণে কম করে ঘন ঘন খেতে হবে। এতে সঞ্চিত খাবারের পরিমাণ কমবে, মেটাবলিজম ভালো হবে, ওজনও কমবে।
ওজন কমানো কেন জরুরি :
১. অতিরিক্ত ওজন বা ওবিসিটি ইমিউনিটি সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয়।
২. প্রেগন্যান্সির সময় অনেকেরই ওজন বাড়ার জন্য টাইপ ৩ ডায়াবেটিস দেখা দেয়। পরবর্তীতে ওজন না কমানো হলে ডায়েবেটিকস স্থায়ীভাবে থেকে যায়।
৩. ওজন বাড়লে হার্টের সমস্যা বেড়ে যায়।
৪. বিপাক হার কমে যায়, কিডনি সমস্যা দেখা যায়।
৫. প্রেশারজনিত সমস্যা, আর্থাইটিস ইত্যাদি দেখা দেয়।
৬. অতিরিক্ত ওজন এবং ব্যাড কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে বিভিন্ন রকমের ফ্যাক্টর সিন্ড্রম দেখা দেয়, যা শারীরিক বিকলাঙ্গতা তৈরি করতে পারে।
📞 ত্বকের সমস্যার জন্য প্রোডাক্ট সাজেশন পেতে কল করুনঃ 01790 270066 অথবা ইনবক্স করুন। 🌐 ১০০% অরিজিনাল কোরিয়ান প্রোডাক্টঃ https://chardike.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © chardike blog 2021
সোর্স: 1. 8 Tips for Losing Weight After Pregnancy. 02. প্রেগন্যান্সির পরে বাড়তি ওজন চটজলদি কমাবেন কীভাবে?